Soumo Sil

Children Stories Inspirational Children tragedy

3  

Soumo Sil

Children Stories Inspirational Children tragedy

নেতাজির অমর সংগ্রাম

নেতাজির অমর সংগ্রাম

4 mins
188


সালটা ১৮৯৭, তখন ভারতবর্ষ ব্রিটিশ শাসকদের অধীনে। সেই সময় সকল বিপ্লবী, ব্রিটিশ শাসকদের অধীন থেকে নিজেদের মাতৃভূমির অধিকার রক্ষার উদ্দেশ্যে একের পর এক শহীদ হচ্ছিলেন কিন্তু ব্রিটিশ শাসকদের তাদের ক্ষমতা থেকে টলাতে সক্ষম হচ্ছিলেন না। ঠিক সেই সময় বছরের প্রথম দিকে এক বাঙালি ভারতবর্ষের মাটিতে জন্মগ্রহণ করেন এবং এক নতুন সূর্যের উদয় হয়। কেউই হয়তো জানতো না এই সূর্যই একদিন ভারতবর্ষে এমন উত্তাপ ছড়াবে যার উত্তাপে ব্রিটিশরা ভারত ছাড়া হবে। উড়িষ্যার কটক শহরে ধীরে ধীরে বেড়ে উঠতে থাকে সেই বাঙালি ভারতমাতার সন্তান। বিপ্লবী মানসিকতা তাঁকে প্রেরণা দিয়েছিলো এক মহৎ উদ্দেশ্য সাধনের। কে জানতো এই বাঙালি বীর ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হবে, কে জানতো রাসবিহারী বসুর স্বপ্নের সেনাবাহিনী এনারই হাত ধরে আজাদ হিন্দ ফৌজ প্রতিষ্ঠা হবে! বাঙালির শরীরের গরম রক্তের তেজ এবং জেদ তাঁকে মহৎ উদ্দেশ্য সাধন করতে সাহস দেখিয়েছিল। ব্রিটিশরা তাঁকে গৃহবন্দি করেও ধরে রাখতে পারেনি তিনি ছদ্দবেশ ধারণ করে ভারত ছেড়েছিলেন। তিনি জানতেন ভারতে থাকলে ব্রিটিশ শাসকদের চোখ এড়িয়ে চলা বেশিদিন সম্ভব নয়, ব্রিটিশ শাসকরা তাঁর উদ্দেশ্য সাধনের পথে বাধা হয়ে দাঁড়াবে। তাঁর তৈরী করা আজাদ হিন্দ ফৌজ বাহিনী ১৯৪৪ সালের এপ্রিল মাসে তাঁর নেতৃত্বে ব্রহ্মদেশ পার হয়ে মণিপুর রাজ্যে প্রবেশ করে এবং কোহিমা ও মৈরাং সহ ভারতীয় এলাকার প্রায় ১৫০ মাইল ব্রিটিশ শাসন মুক্ত করে। আজাদ হিন্দ ফৌজের হটাৎই এমন আক্রমণ দেখে ব্রিটিশ সরকার পিছু হটতে বাধ্য হয়েছিল, তারা বুঝতে পেরেছিলো তাদের ক্ষমতা প্রবল গতিতে কমে যাচ্ছে, ভারতে তাদের দিন শেষের পথে। এই বাঙালি বীরের নেতৃত্বে আজাদ হিন্দ বাহিনি চরম আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে ভারতবাসীর স্বাধীনতা ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করেছিল। ভারতের অভন্তরীণ রাজনীতির কারণস্বরূপ তাঁর উদ্দেশ্য তিনি অর্ধেক সাধন করতে পেরেছিলেন। ১৯৪৫ সালে তাঁর মৃত্যুর গুজব রুটিয়ে দেওয়া হয় সারা বিশ্বে, এটা ছিল হয়তো তাঁর পরিকল্পনামাফিক কারণ তাঁর পিছনে পড়ে গেছিলো ব্রিটিশ সরকার। তাঁর পরিচিত কিছু বিশ্বস্ত লোকের থেকে পরে শোনা যায় ভারতবর্ষ স্বাধীনতার অনেকদিন পর্যন্ত তিনি ভারতের বাহিরে ছিলেন এবং এর কারণও ছিল সেই রাজনীতি।

এর পরে কেটে গেছে অনেক বছর, ১৯৬১ সালে উত্তরপ্রদেশের অযোধ্যা এলাকায় হটাৎই আবির্ভাব হয়েছিল এক গেরুয়া বসন পরিহিত সাধুবাবার এবং তিনি ছিলেন বাঙালি, তিনি খুব একটা কারোর সাথে মেলামেশা করতেন না দেখা দিতেন খুব কম মানুষকে।যারা তাঁর দেখা পেতেন না তাদের কাছেই এই সাধুবাবা অথবা ভক্তদের কথায় ভগবানজি হয়ে উঠেছিলেন "গুমনামী বাবা"। তাঁর পোশাক সাধু সন্ন্যাসী দের মতো হলেও তিনি রোলেক্স ঘড়ি পড়তেন, বিদেশী সিগারেট খেতেন তাঁকে নিয়ে তাঁর ভক্ত দের মাঝে অনেক রহস্য জল্পনা ছিল। ১৯৮৫ সালের ১৬-ই সেপ্টেম্বর অনেক জল্পনা রহস্য অমীমাংসিত রেখে বর্ধক্যজনীত কারণে গুমনামী বাবার মৃত্যু ঘটে। মৃত্যুর দুদিন পরে অযোধ্যার সরযূ নদীর তীরে গুপ্তার ঘাটে গুমনামী বাবার শেষকৃত্ত সম্পন্ন করা হয়। তার সাথে সরযূ নদীর জলে মিলিয়ে যায় গুমনামী বাবার অস্থি।

জানেন কী? এই গুমনামী বাবা কে ছিলেন? তিনি আর কেউ নন, তিনি ছিলেন,১৮৯৭ সালের ২৩ জানুয়ারী উড়িষ্যার কটক শহরে জন্মগ্রহণ করা জানকীনাথ বসু এবং প্রভাবতী দেবীর নবম-তম সন্তান, ভারতের বীর বাঙালি নেতা,স্বাধীনতা সংগ্রামী, ফরওয়ার্ড ব্লক নামের রাজনৈতিক দলের প্রতিষ্ঠাতা, আজাদ হিন্দ ফৌজের প্রতিষ্ঠাতা এবং সকলের চোখের অলক্ষে থাকা গুমনামী বাবা আসলে একজনই এবং তিনি হলেন সকলের প্রিয় দেশের নেতা "নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু"। সুভাষচন্দ্র বসুকে তাঁর নেতাজি উপাধি দিয়েছিলেন বিশ্বকবি কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের চোখে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু ছিলেন দেশনায়ক। মৃত্যুকালে গুমনামী বাবা ওরফে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর বয়স হয়েছিল ৮৮ বছর। ভারতের রাজনীতির কারণে তিনি দেশ স্বাধীনের পরেও আত্মগোপন করে বসবাস করছিলেন এটিই ছিল সুভাষচন্দ্র বসুর অনেক বড়ো আত্মত্যাগ। ১৯৪৫ সালের বিমান দুর্ঘটনাটা ছিল নামমাত্র আসলে বিমান দুর্ঘটনায় নেতাজি মারা যাননি, তিনি তাঁর কিছু বিশ্বস্ত ভক্তের সাহায্যে আত্মগোপন করেছিলেন।

তাঁর মৃত্যুর পরে তাঁর ঘর থেকে একটি ট্রাঙ্ক পাওয়া যায় যেখান থেকে জানকীনাথ বসু এবং প্রভাবতী দেবীর ছবি পাওয়া যায় তাছাড়াও সেখানে নেতাজির ব্যবহৃত সোনালী ফ্রেমের চশমা, তামাকের পাইপ, জার্মানির ডাকটিকিট,বাইনোকুলার,মূল্যবান রোলেক্স ঘড়ি এবং একটি ভগবত গীতা পাওয়া যায়।এছাড়াও মিলে ছিল নেতাজির ছোট বয়েসের কিছু ছবি তাঁর পরিবারের ছবি। সেই ট্রাঙ্কের পাশ থেকে গুমনামী বাবার হাতে লেখা কিছু পত্র পাওয়া যায় সেগুলির হাতের লেখার সাথে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর হাতের লেখা হুবহু মিলে যায়। একজন সাধু সন্ন্যাসীর ঘর থেকে এমন কিছু জিনিস পাওয়া কম আশ্চর্যের নয়।

নিঃসন্দেহে, চিনতে ভুল হয়না গুমনামী বাবা-ই ছিলেন নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু। তাঁর মৃত্যু ঘটে ১৯৮৫ সালের ১৬-ই সেপ্টেম্বর।

নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু-কে ছাড়া ভারতবর্ষ স্বাধীনতা অর্জনে অক্ষম ছিল, তাঁর সাহসী প্রচেষ্টা ১৯৪৪-সালে ভারতবর্ষে স্বাধীনতার বীজ বপন করে গেছিলো।

তাঁর দেশকে স্বাধীন করার অদম্য ইচ্ছা এবং দেশপ্রেম ভারতবর্ষকে স্বাধীনতার পথে একধাপ এগিয়ে দিয়েছিলো। হুঙ্কার দিয়ে বলেছিলেন দিল্লি চলো, ব্রিটিশ সরকার তাঁর হুঙ্কারে স্তব্ধ হয়ে গেছিলো। "তোমরা আমাকে রক্ত দাও, আমি তোমাদের স্বাধীনতা দেবো" এই একটি উক্তি জাগ্রত করেছিল গোটা ভারতবর্ষের বিপ্লবীদের। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বিপ্লবীরা ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু-কে সাহায্যের উদ্দেশ্যে। নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু এক নতুন বিপ্লবের জন্ম দিয়েছিলেন, তাঁর চিন্তাধারা বদলে দিয়েছিলো ভারতবর্ষের ব্রিটিশবিরোধী বিপ্লবী কার্যকলাপকে।

নেতাজি অমর তাঁর মৃত্যু নেই, তিনি সকল ভারতবাসীর হৃদয়ে বেঁচে রয়েছেন, তাঁর শরীরের গরম রক্ত প্রতিমুহূর্তে আমাদের শরীরে প্রবাহিত হচ্ছে। অমর নেতাজি! সকলের আদর্শ নেতাজি!


তুমি আদর্শ, তুমি নায়ক, তুমি অমর নেতাজি!

ভারতবাসী তোমার অবদান আজও ভোলেনি।

অসীম সাহসে খুলে দিয়েছিলে তুমি আলোর দ্বার!

ব্রিটিশ শাসনের পতন ঘটিয়ে, ঘোচালে অন্ধকার।

অসংখ্য প্রাণ বলিদান যাইনি বৃথা, হয়নি ব্যার্থ,

সফল তিনি হয়েছিলেন, তাঁর লক্ষ ছিল অবর্থ্য।

ভারতবাসী গর্বিত আজ নেতাজি তোমায় পেয়ে!

জন্মদিবসে সম্মান জানাই, জাতীয় সংগীত গেয়ে।



ভারত মাতার সন্তান মহান বীর বাঙালি নেতা নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর -১২৫ তম জন্মবার্ষিকীতে তাঁর দেশপ্রেম, সাহসিকতা, স্বাধীনতা সংগ্রাম এবং ভারতভূমির জন্য আত্মত্যাগের -শ্রদ্ধায় জানাই শতকোটি প্রণাম 🙏🏻



২৩-শে জানুয়ারী, সাল ২০২৩

~ কলমে - সৌম্য শীল 

 


Rate this content
Log in