শ্রাবণধারায়
শ্রাবণধারায়
আজ শ্রাবণ মাসের প্রথম সপ্তাহ, রবিবারের সকাল ছুটির দিন, সকাল থেকেই অঝোরে শ্রাবনের ধারা ঝরে পড়ছে, মাঝে মাঝে অবশ্য কিছুক্ষনের জন্য বিরাম নিচ্ছে। যেহেতু ছুটির দিন তাই অল্পবিস্তর কিছু ঘরের কাজকর্মের মধ্যে দিয়ে সকালটা অতিবাহিত করলাম। বিকেল হতেই আকাশের মুখ ভারী হয়ে এলো, এমনিতেই সকাল থেকে বৃষ্টি পড়ে যাচ্ছে আর বিকেল হতেই আকাশে ঘন কালো মেঘ জমাট বাধঁতে শুরু করলো, পুবদিকটা অন্ধকার করে এলো, বেশ বুঝতে পারলাম জোরে বৃষ্টি নামবে। আজকে বিকেলে তাই আর কোথাও বেরোলাম না, কিছুক্ষনের মধ্যেই ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি চলে এলো। আমি ঘরে এসে শুয়ে পড়লাম বাহিরে তখন বেশ জোরে বৃষ্টি পড়ছে, বিছানার পাশের জানলাটা খোলা ছিল সেখান দিয়ে ঠান্ডা হাওয়া আর বৃষ্টির জলের ফোঁটা এসে আমার গায়ে লাগছিলো। শুয়ে আবহাওয়া উপভোগ করতে করতে ছেলেবেলার কিছু স্মৃতি মনে পড়ে গেল, যখন স্কুলে পড়তাম তখন বৃষ্টি হলে স্কুলের মাঠে বৃষ্টিতে ভিজে দৌড়া দৌড়ি করতাম, জলের উপর লাফাতাম, বৃষ্টিতে ভিজে মাঠে ফুটবল খেলতে যেতাম তারপর সারা গায়ে কাদা মেখে বাড়িতে ফিরে মায়ের বকুনি খেতাম, এছাড়াও ছিল বাড়ির জানলা দিয়ে রাস্তার জমা জলে কাগজের নৌকা ভাসানো- এগুলোই ছিল আমার ছেলেবেলাকার স্মৃতি। এইসব স্মৃতিচারণ করতে করতে কখন সন্ধ্যা হয়ে গেছে বুঝতেই পারিনি, এইবার উঠে পড়লাম ঘরের আলো জ্বালিয়ে ঘড়িতে দেখলাম সন্ধে ৬টা বেজে গেছে। বাহিরে তখনো মুষলধারে বৃষ্টি পড়ে যাচ্ছে। একটা গল্পের বই হাতে নিয়ে বারান্দার দিকে পা বাড়ালাম, বারান্দার রেলিং ধরে ঝুকে রাস্তার দিকে তাকাতেই দেখতে পেলাম প্রবল বর্ষণে রাস্তায় জল জমে গেছে। আমি একটা চেয়ার টেনে নিয়ে গল্পের বই হাতে বারান্দায় বসে পড়লাম, এমন সুন্দর আবহাওয়া বৃষ্টির সাথে আবার ঠান্ডা হাওয়া দিচ্ছে এই বৃষ্টিভেজা সন্ধ্যায় গল্পের বই পড়তে পড়তে বৃষ্টি উপভোগ করার মজাই অন্য রকমের। তবে বেশিক্ষন গল্পের বইতে মন বসলো না, গল্পের বইটা পাশে রেখে দিয়ে বৃষ্টি দেখতে লাগলাম। এইরম ভাবে বেশকিছুটা সময় অতিবাহিত হওয়ার পর কোথা থেকে যেন আমার পোষা মেনি বেড়াল টা এসে আমার গায়ের কাছ ঘেঁষে বসলো, আমি তার মাথায় একটু হাত বুলিয়ে আদর করে দিলাম সে খুশিতে ল্যাজ নাড়িয়ে মিউ শব্দ করল। বাহিরে বৃষ্টিটা তখন আরও বেড়েছে, হটাৎই কোথা থেকে এক যুগল দৌড়াতে দৌড়াতে এসে বৃষ্টি থেকে বাঁচতে আমার সামনের বাড়ির ব্যালকনির নিচে দাঁড়ালো। আমি কৌতূহলী চোখে দেখতে থাকলাম তাদেরকে, ছেলেটা আর মেয়েটা বৃষ্টিতে প্রায় অর্ধেক ভিজেই গেছে, মেয়েটা তার আধভেজা শাড়ির আঁচলটা দিয়ে ছেলেটার মাথা মুছিয়ে দিতে লাগলো এরপর ছেলেটা পকেট থেকে একটা রুমাল বার করে মেয়েটার মুখটা সযত্নে মুছিয়ে দিলো। আমি মন্ত্রমুগ্ধর মতো তাদের দিকে চেয়ে রইলাম, তাদের মধ্যে একে অপরের প্রতি ভালোবাসা দেখে আমার বেশ ভালো লাগলো। ইতিমধ্যেই একটা কুকুর বৃষ্টিতে পুরো ভিজে অবস্থায় ছুটে এসে তাদের থেকে একটু দূরত্বে ব্যালকনির নিচে দাঁড়ালো। যুগলটি কুকুরটিকে দেখে হয়তো ভয়ে পেয়ে একটু সরে দাঁড়ালো, ছেলেটি মেয়েটিকে খানিকটা জড়িয়ে ধরেই দাঁড়িয়েছিল। বৃষ্টির মধ্যে রাস্তার ল্যাম্পপোষ্টের আবছা আলোয় পরিবেশটা কেমন যেন মায়াবী লাগছিলো, আমি বসে বসে সে দৃশ্য উপভোগ করছিলাম তখন আমার মনেও প্রেম প্রেম ভাবটা জেগে উঠছিলো, আর এমন সুন্দর বৃষ্টিভেজা ঠান্ডা পরিবেশ পেলে কারোর কেনই বা প্রেম প্রেম রোমান্টিক ভাব জেগে উঠবে না। বৃষ্টির মধ্যে এতক্ষনে একটু অস্পষ্ট ভাবে ছেলেটার চেহারাটা লক্ষ করলাম সুদীর্ঘ লম্বা শরীর, শরীরের গঠন দেখে বোঝা যায় যে সে নিয়মিত ব্যায়াম করে বেশ সুষ্ঠ সবল দেহের গঠন, এরপর চোখ ফেরাতেই তার পাশে থাকা সঙ্গিনী মেয়েটিকে অস্পষ্ট দেখতে পেলাম তার গায়ের রঙ ফর্সা হালকা কোমল ভাব রয়েছে, কপালের টিপটা বৃষ্টির জল লেগে লেপটে গেছে, নাকে একটা ছোটো নাকছাবি রয়েছে আর কানে দুটো দুল ঝুলছে, মেয়েটার মুখশ্রীটা বেশ সুন্দর, সব মিলিয়ে যুগলটিকে আমার বেশ ভালো লাগছিলো। বসে বসে বৃষ্টিতে তাদের সুন্দর প্রেম দৃশ্য উপভোগ করতে থাকলাম, এইরম ভাবে বেশকিছুক্ষন কাটার পর বৃষ্টিটা একটু ধরে এলো তখন যুগলটি ব্যালকনির নিচ থেকে রাস্তায় বেরিয়ে এলো, তারা নিজেদের মধ্যে কথা বললো, হয়তো তারা বললো "বৃষ্টিটা ধরেছে চলো এইবার যাওয়া যাক।" ল্যাম্পপোস্টের আবছা আলোয় দেখতে পেলাম রাস্তায় জমা জলের উপর দিয়ে যুগলটি একে অপরের হাত ধরে ধীর গতিতে হেঁটে এগিয়ে গেল সামনের রাস্তার দিকে, আর জমা জলের উপর দিয়ে তাদের হাঁটার শব্দ হতে লাগলো ছপাৎ! ছপাৎ! হালকা ঠান্ডা হাওয়া আমার গায়ে এসে লাগলো, আমি মন্ত্রমুগ্ধর মতো এক দৃষ্টিতে চেয়ে রইলাম যুগলটির চলে যাওয়ার পানে।।
শ্রাবণধারায় আমার চোখে এক সুন্দর প্রেমের চিত্র ফুটে উঠলো এবং আমি সেটাই গল্পাকারে কলম ছোঁয়ালাম। ধন্যবাদ।
~ গল্পের স্কেচ - অন্বেষা