ব্যার্থ স্বপ্ন
ব্যার্থ স্বপ্ন
১৫-ই অগাস্ট ভোরবেলায় নেতাজি পার্কের সামনে প্রবল হইচই শোনা যাচ্ছে, পার্কের সামনে কত লোকের ভিড়, কেউ ব্যাস্ত শিকলি টাঙাতে আবার কেউ ভারতের পতাকা হাতে নিয়ে এদিক-সেদিক দৌড়া-দৌড়ি করছে।
স্বাধীনতা দিবস উদযাপনের শেষ পর্বের প্রস্তুতি চলছে....
নেতাজি পার্কের সামনে বিরাট বড়ো মঞ্চ প্রস্তুত করার হয়েছে, সকাল ১০-টা বাজতেই অনুষ্ঠানের উদ্যোক্তাদের মধ্যে একজনকে মাইকে ঘোষণা করতে শোনা গেল, পতাকা উত্তোলন করতে আসছেন পানিফল দলের সভাপতি স্বনামধন্য "শ্রী বাঘেশ্বর দৈত্য" মহাশয়।
রঙচঙে পোশাক পড়ে হেলে দুলে এসে তিনি পতাকা উত্তোলন করলেন, তারপর তিনি তাঁর গাড়ির ভিতর থেকে একটা জামার প্যাকেট নিয়ে রাস্তার ওপারে চলে গেলেন, কিছু চ্যাংরা ছেলের দল নেতাদের মতো ভাব নিয়ে তাঁর পিছন পিছন গেল। রাস্তার ধরে বসে জুতো পালিশ করতে থাকা একটা বাচ্চা ছেলের দিকে জামার প্যাকেটটা এগিয়ে দিয়ে নিউজ-মিডিয়ার উদ্দেশ্যে সম্মানীয় সভাপতি মহাশয় বললেন "এই তোরা আমার একটা সুন্দর করে ফটো তোল।"
পরের দিন....
নেতাজি পার্কের উল্টোদিকে একটা বিশাল বড়ো কালো গাড়ি এসে থামলো, গাড়ি থেকে নেমে এলেন "শ্রী বাঘেশ্বর দৈত্য মহাশয়"। বাচ্চা ছেলেটার দিকে তিনি তাঁর পা এগিয়ে দিয়ে বললেন "নে ছোঁড়া ভালোভাবে জুতোটা পালিশ করে দে", জুতো পালিশের শেষে তিনি চলে যাচ্ছিলেন তখন বাচ্চা ছেলেটা তাঁর পা-টা টেনে বলল "আপনার ১০-টাকা হয়েছে সেটা দিয়ে যান", পিছন ফিরে দৈত্য বাবু খেঁকিয়ে উঠলেন "কিসের টাকা রে? জানিস তুই কার থেকে টাকা চাইছিস, কাল তোকে না একটা জামা দিয়েছি! এরপর বেশি টাকা টাকা করলে ওই জামাটা কেড়ে নিয়ে নেব।"
বাচ্চাটা করুন মুখ করে ছলছল চোখে দৈত্য বাবুর বিশাল কালো গাড়িটা যতদূর না মিলিয়ে যায় ততদূর অবধি সে চেয়ে রইলো।
বাচ্চাটির অবোধ মনে উচ্চস্বরে ক্রন্দিত হলো - "আমরা স্বাধীন নই", হৃদয়বিদারক করুন কণ্ঠ প্রতিফলিত হলো পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের অসহায়, নিপীড়িত, লাঞ্চিত, বঞ্চিত বাচ্চাদের মনে....
