STORYMIRROR

Soumo Sil

Drama Tragedy Inspirational

4  

Soumo Sil

Drama Tragedy Inspirational

বাংলায় প্রতিবাদ

বাংলায় প্রতিবাদ

3 mins
7

সদ্য রমিত বাবুর চাকরিটা হারিয়েছেন, কোথায় যাবেন? কী করবেন? সেইসব চিন্তায় অগত্যা তাঁকে বাড়ি ছেড়ে বেরোতেই হলো।
১৫-ই অগাস্ট, ভোর বেলায় গুজরাট স্টেশনে ট্রেন এসে থামলো এবং একটা ঝোলা কাঁধে নিয়ে চোখ কচলাতে কচলাতে ট্রেন থেকে নেমে এলেন রমিত বাবু, একবার এদিক ওদিক তাকিয়ে গট গট করে হেঁটে দ্রুত স্টেশন চত্বর ছেড়ে বড়ো রাস্তার দিকে বেরিয়ে গেলেন।
কিছুক্ষন পরে, রমিত বাবু একটা ইলেট্রিক দোকানের সামনে এসে দাঁড়ালেন, দোকানের ভেতরে একজন মধ্য বয়স্ক লোক কে তিনি দেখতে পেয়ে ডাকলেন "দাদা ও দাদা শুনছেন" ভেতর থেকে মধ্য বয়স্ক লোকটার গম্ভীর স্বর ভেসে এলো "হান জী বলিয়ে", রমিত বাবু এগিয়ে এসে বললেন "বলছিলাম কী দাদা এখানে করার মতো কোনো কাজ আছে?" তাঁর কথা শুনে সেই মধ্য বয়স্ক লোকটা চোখ-মুখ কুঁচকে বললো "তুম বাংগালী হো ক্যায়া?" রমিত বাবুর হিন্দি খুবই খারাপ তাই তিনি বাংলা-হিন্দি মিশিয়ে বললেন "হা ম্যায় বাংগালী আছি দাদা" এই শুনে মধ্য বয়স্ক লোকটা দোকানের ভেতর থেকে মুখ বাড়িয়ে বললো "ইয়ে সাবলোগ কাহা কাহা সে আতে হ্যায়!" রমিত বাবু কিছুই বুঝলো না, এদিকে দোকানের ভেতর থেকে লোকটা বলে যাচ্ছে "তুম লোগ বাংগালী হো, বাংলাদেশ সে আতে হো, কাজরা হো তুমলগ কাজরা " রমিত বাবু ঠিক মতো হিন্দি না জানলেও বেশ বুঝতে পারলো লোকটা তাঁকে অপমান করছে, তিনি বললেন "বাংলাদেশি নেহি পশ্চিমবঙ্গের আদমি আছি আমি", কীন্তু দোকানের লোকটা এবার বেশ রেগে চেঁচিয়ে বললো "ও সাব এক ই হ্যায় বাংলা বাংলাদেশি সাব এক।" রমিত বাবু কী করবেন বুঝতে না পেরে অসহায়ের মতো চেয়ে রইলেন দোকানটার দিকে, কিছু তো করার নেই একটা কাজ তো তাঁকে জোটাতেই হবে নইলে বাড়িতে বৌ বাচ্চা আছে, তাদের নিয়ে পেট চলবে কিভাবে? এইসব ভাবছেন ঠিক তখনই তাঁর ঘোর কাটে দোকানের সেই লোকটার চিৎকারে - "আরেহ ক্যায়া হো বাংলাদেশি বাবু! গুস্সা হো ক্যায়া?" এই বলে বেদম জোরে হেসে উঠলো, "হা হা হা হা!"

এইবার আর রমিত বাবু চুপ করে থাকতে পারলেন না, বেশ জোরালো স্বরে বাংলায় বলে উঠলেন "হ্যাঁ আমি বাঙালী আর আমাদের বাঙালি বিপ্লবীদের রক্ত, বলিদান আজকের এই স্বাধীনতায় মিশে আছে ", দোকান থেকে লোকটা বেরিয়ে আসলেন এবং ধাক্কা দিয়ে রমিত বাবুকে সরিয়ে বললেন "হা হা ও সাব জানতা হ্যায় ও তুমহারা যো আদমি হ্যায় ক্যায়া নাম ক্যায়া নাম! হা ক্ষুদিরাম সিং! হামলগ সাব জানতে হ্যায়।" রমিত বাবু হটাৎ সামনের দিকে এগিয়ে গিয়ে দোকানের সেই লোকটার গালে সপাটে বসিয়ে দিলেন এক বাংলা থাপ্পড়, "নে এবার বোঝ।" ততক্ষনে সেখানে লোকজন জড়ো হয়ে গেছে, থাপ্পড় খেয়ে দোকানের লোকটা খানিকটা থতমত খেয়ে গেছে, এদিকে সেখানে উপস্থিত সকলকে উদ্দেশ্য করে রমিত বাবু জোড়ে চিৎকার করে খাঁটি বাংলায় বলছেন "হ্যাঁ আমি বাঙালী এবং অনেক বাঙলী স্বাধীনতা সংগ্রামী তাদের প্রাণ দিয়ে দেশকে স্বাধীন করেছেন তাতে আমি গর্ববোধ করি, আমি পশ্চিমবঙ্গে থাকি, অনেক অপমান সহ্য করেছি আর নয়, আমার কাজের দরকার নেই গুজরাটে, ফিরে যাচ্ছি বঙ্গে, পেট চালাতে প্রয়োজনে চপ ভাজবো তবুও অবাঙালিদের কাছে কর্মভিক্ষা চাইতে যাবো না।"

কথা শেষ করে তিনি চলেই যাচ্ছিলেন, কী মনে হতে রমিত বাবু পেছনে ফিরে চিৎকার করে বললেন "শোন্ গর্ধভের দল উনি ক্ষুদিরাম সিং নন, মহান স্বাধীনতা সংগ্রামি শহীদ বীর ক্ষুদিরাম বসু।" বলে তিনি দ্রুত গতিতে স্টেশনের দিকে এগিয়ে চললেন।

স্টেশনে পৌঁছে রমিত বাবু দেখতে পেলেন স্টেশনে পতাকা উত্তোলন হচ্ছে, তিনি দাঁড়িয়ে গেলেন। পতাকা উত্তোলন শেষ হতেই সবাই মিলে গেয়ে উঠলো "জনগণমন-অধিনায়ক জয় হে ভারতভাগ্যবিধাতা!" রমিত বাবুও গলা মেলালেন "জয় হে, জয় হে, জয় হে, জয় জয় জয় জয় হে।"

রমিত বাবু ট্রেনে করে বাড়ি ফিরতে ফিরতে নিজের মনেই হেসে বির বির করে বলে উঠলেন "গর্ধভদের এত টুকুও জ্ঞান নেই, ভারতের জাতীয় সংগীতটাও এক নোবেলজয়ী মহান বাঙালীর বাংলা ভাষায় রচনা করা, নির্বোধের দল সব!" 

ট্রেন তার ছন্দে এগিয়ে চলে, উল্টো দিকে বসে রমিত বাবু ভাবতে থাকে "এটা কী ধরণের স্বাধীন ভারত? যেখানে ভাষার কোনো স্বাধীনতা নেই!"



(উচ্চস্বরে প্রতিবাদ - ভেবে দেখুন যেখানে ভারতবর্ষের স্বাধীনতা সংগ্রামের নেতা মহান বীর নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু বাঙালী, সেখানে অশিক্ষিত অবাঙালিরা কিভাবে বাংলা ভাষাকে অপমান করার সাহস পায়? দৃপ্ত কণ্ঠে বলুন আমি ভারতীয়! আমি বাঙালী! এবং আমিই শ্রেষ্ঠ!)

স্বাধীনতা দিবসের শুভেচ্ছা সকলকে....


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Drama