STORYMIRROR

Soumo Sil

Children Stories Inspirational Children

3  

Soumo Sil

Children Stories Inspirational Children

স্বতন্ত্র সংগ্রামে দেশনায়ক

স্বতন্ত্র সংগ্রামে দেশনায়ক

4 mins
9

১৯৪১ সাল, ১৬-ই জানুয়ারী 

সময়টা তখন রাত্রি ১০-টা, এলগিন রোডের একটি বাড়ির ভিতর থেকে সশব্দে আওয়াজ করে স্টার্ট নিলো ওয়ান্ডারার গাড়ি এবং গাড়ির ভিতরে ইনসিওরেন্স এজেন্ট মহম্মদ জিয়াউদ্দিন চাপিয়ে গাড়ির চালক দ্রুত গতিতে গাড়ি ছোটালো, তখন চারিদিক নিস্তব্ধ।

গাড়ি গিয়ে থামলো গোমো স্টেশনে, গাড়ির ভিতর থেকে বেরিয়ে এলেন মহম্মদ জিয়াউদ্দিনের ছদ্দবেশধারী "সুভাষচন্দ্র বসু", চালকের আসন থেকে তাঁর ভাইপো "শিশির কুমার বসু" বেরিয়ে এসে তাঁকে শেষবারের মতো বিদায় জানালেন। ব্রিটিশ পুলিশ দের নজরবন্দি এড়িয়ে স্টেশন পর্যন্ত আসতে তিনি সক্ষম হলেন, এরপরেই শুরু হলো তাঁর জীবনের আসল সংগ্রাম....

সুভাষচন্দ্র বসু গোমো স্টেশন থেকে কালকে মেল ধরে রওনা দেন পেশওয়ারের দিকে, পেশওয়ার পৌঁছে তিনি তাঁর বন্ধু এবং তাঁর দলের সদস্যদের সাহায্য নিয়ে ভারতবর্ষ ত্যাগ করেন এবং আফগানিস্তানের কাবুলে পৌঁছন। আফগানিস্তান থেকে তিনি ইতালিয়ান ভদ্রলোক "কাউন্ট অরল্যান্ডো মাজোত্তা-র" ছদ্দবেশে মস্কোতে পৌঁছান, মস্কো থেকে তিনি রোমে পৌঁছান এবং সেখান থেকে জার্মানিতে পাড়ি দেন। সুভাষচন্দ্র বসু জার্মানিতে পৌঁছানোর পরে হিটলারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং হিটলারের কাছে তিনি সাহায্য প্রার্থনা করেন। সুভাষচন্দ্র বসু জার্মানিতে যুদ্ধবন্দি ভারতীয় সেনাদের নিয়ে একটি বাহিনী গঠন করেন কিন্তূ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ভয়ানক পরিস্থিথিতে জার্মানি পিছু হঠে যার ফলে সুভাষচন্দ্র বসু বুঝতে পারেন তিনি জার্মানিতে থাকলে তাঁর কার্যসিদ্ধি করতে পারবেন না, তিনি দেরি না করে জলপথের মাধ্যমে জাপান চলে যান। 

সেই সময় জাপানের টোকিও শহরে রাসবিহারী বসু "স্বদেশ ও স্বরাজ " নামক এক সশস্ত্র শক্তিশালী দলকে ভারতীয় স্বাধীনতা আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত করছিলেন।

সুভাষচন্দ্র বসু জাপান সরকারের থেকে কোনপ্রকার সহায়তা না পাওয়ার ফলে তিনি রাসবিহারী বসুর সঙ্গে যোগাযোগ করেন এবং পরিকল্পনা করে ১৯৪৩-সালের ২-রা জুলাই তিনি সিঙ্গাপুরে পৌঁছন। ৪-ঠা জুলাই তিনি রাসবিহারী বসুর সঙ্গে দেখা করেন এবং রাসবিহারী বসু তাঁর হাতে স্বদেশ ও স্বরাজ নামক দলটির দায়িত্ব অর্পণ করেন।

পরবর্তীকালে সুভাষচন্দ্র বসু স্বদেশ ও 

স্বরাজ নামক দলটির নাম পরিবর্তন করে আজাদ হিন্দ ফৌজ নামকরণ করেন, তিনি ১৯৪৩-সালের ২২-শে অক্টোবর আজাদ হিন্দ ফৌজ থেকে মহিলা যোদ্ধা নিয়ে তিনি একটি যুদ্ধ ইউনিট উদ্বোধন করেন এবং নামকরণ করেন ঝাঁসি রেজিমেন্টের রানী, মহিলা রেজিমেন্টের প্রধান ছিলেন রানী লক্ষ্মীবাঈ।

১৯৪৪- সালের মে মাসে সুভাষচন্দ্র বসু ভারতবর্ষকে স্বাধীন করার অদম্য ইচ্ছা এবং বুদ্ধি প্রয়োগ করে আজাদ হিন্দ ফৌজ বাহিনীকে নিয়ে ভারতে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে অতর্কিত আক্রমণের পরিকল্পনা করেন , তিনি সকল ভারতবাসীকে উদ্দেশ্য করে স্লোগান তোলেন "দিল্লি চলো" "জয় হিন্দ", সুভাষচন্দ্র বসুর দেশ স্বাধীন করার প্রবল ইচ্ছা এবং এই স্লোগান শুনে কবিগুরু "রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর" সুভাষচন্দ্র বসুকে "দেশনায়ক" উপাধি দেন। তিনি ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে আজাদ হিন্দ ফৌজের অভিযানটির নামকরণ করেন "ইউ গো অভিযান" এবং ভারতবর্ষের ব্রিটিশদের ওপর আজাদ হিন্দ ফৌজের অতর্কিত আক্রমণের ফলে তাঁর এই পরিকল্পনাটি সফল হয়। আজাদ হিন্দ ফৌজ ইম্ফল ও কোহিমা সহ তার আশেপাশের ছোটখাটো এলাকা দখল করে নেয়।

সেই সময় এমন অতর্কিত আক্রমণের ফলে ব্রিটিশ বাহিনী ছত্রভঙ্গ হয়ে গেছিল, পরবর্তী সময়ে অস্ত্র, গোলা, বারুদ এবং খাদ্যের অভাবে আজাদ হিন্দ বাহিনী ছন্নছাড়া হয়ে পরে এবং ব্রিটিশ সরকারের হাতে ধরা পরে যায়।

ব্রিটিশরা বুঝতে পেরেছিলো এ দেশে তাদের সময় ফুরিয়ে আসছে, প্রত্যেক ভারতবাসীর মনে সুভাষচন্দ্র বসু এবং তাঁর আজাদ হিন্দ ফৌজ বাহিনী স্বাধীনতার আশা জাগিয়ে তুলেছিল। সুভাষচন্দ্র বসু ভারতবাসীর স্বাধীনতার চেতনা জাগ্রত করতে এবং তাদেরকে উজ্জীবিত করতে ভাষণ দিয়েছিলেন "তোমরা আমাকে রক্ত দাও আমি তোমাদের স্বাধীনতা দেব।" এই ভাষণ শুনে ভারতের কোনায় কোনায় থাকা প্রত্যেকটি সশস্ত্র বিপ্লবীর মনে স্বাধীনতার চেতনা জাগ্রত হয়েছিল এবং বারংবার তারা ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন সংঘটিত করছিল এবং আক্রমণ করছিলো।

তাদের আন্দোলনের চাপে পড়ে দোষী সাব্যস্ত হওয়া আজাদ হিন্দ ফৌজের সেনাদের ব্রিটিশ সরকার মুক্তি দেয় এবং অবশেষে ১৯৪৭-সালের ১৫-ই অগাস্ট মধ্য রাতে ভারতবর্ষের শাসন ক্ষমতা ভারতবাসীর হাতে তুলে দিতে তারা বাধ্য হয়।

ব্রিটিশদের হাত থেকে ভারতবর্ষকে স্বাধীন করার প্রবল ইচ্ছাশক্তি এবং প্রখর বুদ্ধি নিয়ে সুভাষচন্দ্র বসু আজাদ হিন্দ ফৌজকে নেতৃত্ব দিয়ে চালিত করেছিলেন এবং তার এই পরিকল্পনা সফলতার খুব কাছাকাছি পৌঁছে গেছিল, ভারতবর্ষের তৎকালীন অভ্যন্তরীণ রাজনীতির কারণে আজাদ হিন্দ ফৌজ তাদের লক্ষ্য সম্পূর্ণরূপে সফল করতে পারেনি ঠিকই কিন্তূ তারা প্রত্যেক ভারতবাসীকে স্বাধীন ভারতবর্ষের স্বপ্ন দেখাতে সক্ষম হয়েছিল, তারা অনুপ্রাণিত করেছিল স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশ নেয়া সশস্ত্র বিপ্লবীদের।

সুভাষচন্দ্র বসু ভারতবর্ষকে স্বাধীন করার লক্ষ্যে বিদেশি শক্তি গুলোর সাহায্য নিয়ে এবং আজাদ হিন্দ ফৌজ গঠন করে ভারতবর্ষেকে স্বাধীন করার 

লক্ষ্যে সঠিক পথ অনুসরণ করেছিলেন তা মানতেই হয়। তাঁর অন্তরে ছিল স্বতন্ত্রতাবোধ, ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে তাঁর এই দুঃসাহসিক কার্যকলাপকে সম্মান জানিয়ে আজাদ হিন্দ বাহিনীর ফৌজেরা এবং বার্লিনে ভারতের স্পেশাল ব্যুরো-র কর্মকর্তারা তাঁকে "নেতাজি" উপাধিতে ভূষিত করেন। 

ভারতবর্ষকে স্বাধীনতা এনে দেয়ার জন্য তাঁর আত্ম বলিদান এর কথা প্রত্যেক ভারতবাসীর মনে গেঁথে রয়েছে, "দেশনায়ক নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু" - তাঁকে ছাড়া স্বাধীন ভারতবর্ষ এবং স্বাধীনতার কথা স্মরণ করা একেবারেই অসম্ভব। 

ভারতবর্ষে যদি ভবিষ্যতে কখনো কোনো সংকট এসে উপস্থিত হয় তখন প্রত্যেক দেশবাসীর কন্ঠে ফুটে উঠবে "দেশনায়ক নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর" দৃপ্ত সাহসী স্বর "জয় হিন্দ" এবং তারা নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর আদর্শকে সামনে রেখে ঝাঁপিয়ে পড়বে সংকটের বিনাশে।।


Rate this content
Log in