কে চোর
কে চোর
প্রোমোটার বাজাজ খামটা ভবেশ দত্ত কে দিয়ে বললেন-" নোটবন্ধির পর ব্যবসা খুব মার খাচ্ছে দাদা। এবার এর বেশি আর পারছি না.....।"
করপোরেশনের ইঞ্জিনিয়ার ভবেশ বাবুর হাত দিয়েই সব প্ল্যান পাশ হয়। উপরিটা বেশ ভালোই আসে। বাজাজ বেরিয়ে যেতেই খামটা খুলে গুনতে শুরু করলেন এক তাড়া পাঁচশো আর দু হাজারের নতুন ঝকঝকে নোট।
-"আসবো বাবু ?" দরজায় সনাতন, ওনার ড্রাইভার। ওর বৌ বাড়ির কাজ করে। আউট হাউসেই থাকে ওরা। সনাতনের দশ বছরের ছেলে বিলু হাসপাতালে ভর্তি। এপেনডিস্ক অপারেশন হবে।
বিরক্ত ভবেশ বাবু নোট ভর্তি খামটা টেবিলে রাখতেই কাঁচুমাঁচু মুখে সনাতন এসে বলে -"বাবু প্রায় পাঁচ হাজার টাকা কম হচ্ছে। কাল টাকাটা জমা করলে অপারেশন হবে। কিন্তু...."
-"তোকে তো ফ্রি বেড করে দিলাম। টাকাও কিছু কমিয়েছে হাসপাতাল!! এরপরও কম পরছে ?"
-"ওরা অপারেশনের জন্য পনেরো চেয়েছে। অনেক করে দশ জোগাড় হয়েছে। এর পর ওষুধ পথ্যের খরচ আছে...."
সনাতনের চোখ খামটার দিকে। বিরক্ত ভবেশ দু টো পাঁচশো টাকার নোট ছুড়ে দিয়ে বললেন বাকিটা অন্য কোথাও দেখ।খামটা ড্রয়ারে রেখে ফাইলটা তুলে নিতেই স্ত্রী এসে ডাকে ভেতরের ঘরে ফোন এসেছে চেয়ারম্যানের। ভবেশ বাবু ব্যস্ত হয়ে উঠে যান। সনাতন চলে যায়, পর্দার আড়ালে দুটো ছোট ছোট পা এতক্ষণ দাঁড়িয়ে সব শুনছিল। বাড়িতে বিলুই এক মাত্র ওর খেলার সাথী। বিলু হাসপাতালে তাই ওর মন ভালো নেই।
চেয়ারম্যানটা চামারেরও অধম। সব ব্যপারে কমিশন চাই। ভবেশ বাবুর মাথাটা গরম হয়ে গেছিল। খামের টাকাটা গুনে আরো বিরক্ত, মোটে তেতাল্লিশটা নোট!! এতো কম!! একটু আগে কি খামটা ভারি লাগছিল!! বাজাজ কে বলতে হবে তো !! মনটা খচখচ করছে!! এমন আগেও দু একবার হয়েছে, আসলে এসব টাকা তো গুনে নেওয়া হয় না কখনো!!
ড্রয়ারে মোচরানো নোট গুলো রেখে বলাকা তাড়াতাড়ি রান্নাঘরে যায়। একটু বেশি নোট বার করে ফেলেছে কি? ভবেশ অবশ্য গুনে রাখে নি। টের পাবে না। বলাকাও গোনে নি। কাল গুনবে ভবেশ চলে গেলে। একটা দারুণ গলার হার পছন্দ হয়েছে। বেশ কিছু জমিয়েছে, হয়ে যাবে পূজার আগেই মনে হয়। সনাতনের বৌ মনমরা, টাকাটা জোগাড় হয় নি। একটা পাঁচশো ওকে দিতে হবে।
পরদিন বিকেলে ভবেশ বাবু শুনলো সনাতনের ছেলের অপারেশনটা হয়েছে। আবার মনটা খচখচ করে ওঠে। টাকাটা কি সনাতন নিলো তবে!! এমন দোষ তো ওর ছিল না!! ছেলের অসুখে মানুষ বদলে যায়!!
বলাকার বার বার মনে হচ্ছে নোট কয়েকটা কম। ও না গুনলেও বেশ বুঝতে পারে নোট বেশ কয়েকটা ছিল। মাত্র চারটে পাঁচশো দেখতে পাচ্ছে!! অথচ দু হাজারের নোটও সরিয়েছিল ও।তবে কি সনাতনের বৌ....!! কিন্তু মনা তো খুব বিশ্বাসী!! ও তো বলল ঠাকুরের ঘট ভেঙ্গে বাকি টাকাটা পেয়েছে!! এতো টাকা ঘটে....!!
ঠাকুর ঘরে দাঁড়িয়ে ছোট্ট ছেলেটা জোড় হাত করে বলছে -"বিলুকে ভালো করে দাও ঠাকুর। আমি চুরি করিনি। বিলুর জন্য টাকাটা নিয়ে মনা মাসির ঠাকুরের বাক্সে ফেলেছিলাম। ওরা যে ঠাকুরের ঘট ভাঙ্গবে বলছিল... । তাই তো মায়ের আলমারী থেকে নিয়ে ওখানে ফেলেছিলাম।....."
সনাতনের বৌ বিলুর মাথাটা কোলে নিয়ে দু হাত জোড় করে মনে মনে ভাবে -"ঠাকুর বিলুকে বাঁচালো, ঘটে কখনো বড় নোট ফেলি নি। অথচ এতো গুলো বড় নোট...."