জন্ম-মৃত্যু
জন্ম-মৃত্যু


সুখের সংসার রমলাদেবীর। সকাল থেকে ঘরের সব কাজ সামলে ছেলে মেয়েদের পড়াশোনা দেখা, অফিসে দশটা পাঁচটার চাকরি করা সবকিছুই দক্ষ হাতে সামাল দিচ্ছেন বিগত কুড়ি বছর ধরে।
যখন মাত্র পঁয়ত্রিশ বছর বয়সে বিমল মানে রমলাদেবীর স্বামী মারা যান; ছেলেটার দশ বছর আর মেয়েটার পাঁচ বছর বয়স। সেইদিন উনি ভাবতেই পারেননি যে একা হাতে ছেলে-মেয়েকে মানুষ করতে পারবেন। আজ যখন পেছন ফিরে তাকান তখন অজান্তেই দীর্ঘ নিঃশ্বাস বেরিয়ে আসে।
আজ ছেলের বউয়ের সিজার করে বাচ্চা হবে তাই হাসপাতালে যাবার তাড়ায় সবকিছু বারেবারে ভুল হয়ে যাচ্ছে। ছেলেটার আবার জরুরী কাজে মুম্বাই যেতে হয়েছে। সব দায়িত্ব একা রমলাদেবীর। অবশ্য মেয়ে আর জামাই বলেছে ওরা সরাসরি হাসপাতালে চলে যাবে।
বৌমার বাপের বাড়ির লোকজনও থাকবে। তাও মায়ের কাজ থেকেই যায়।
তাড়াতাড়ি করে ঘরদোর পরিস্কার করে ঠাকুরের আসনে মাথা ঠুকে বেরিয়ে পড়লেন রমলাদেবী। এতদিনে সংসার পরিপূর্ণ হতে চলেছে। এখন ছেলেই সংসারের বেশিরভাগ খরচ চালায়। ছেলে ওনাকে বলেও দিয়েছে বাচ্চা নিয়ে বৌমা ফিরলে আর ওনাকে চাকরিতে যেতে হবেনা। বাড়িতে থেকে বৌমার সাথে সংসার আর বাচ্চা সামলাবে।
হাসপাতালে পৌঁছে দেখলেন বৌমাকে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে গেছে। বৌমার বাবা-মা বাইরের লাউঞ্জে বসে আছে। হঠাৎ লাউঞ্জের বিশাল টিভি স্ক্রিনে নজর পড়তেই স্তব্ধ হয়ে গেলেন। যে হোটেলে ছেলের মিটিং হওয়ার কথা সেখানে বিস্ফোরণ হয়েছে। ছিন্ন ভিন্ন দেহগুলো দেখে সংজ্ঞা হারানোর আগে নবজাতকের কান্নার স্বর ভেসে এল।