Madhumita Mukherjee

Inspirational

3  

Madhumita Mukherjee

Inspirational

পাশ - ফেল

পাশ - ফেল

3 mins
614


আজ সকাল থেকে প্রচন্ড ঝড়-বৃষ্টি শুরু হয়েছে, মনে হচ্ছে যেন পৃথিবী ধ্বংসাত্মক তান্ডব লীলা চালাচ্ছে। রেহান ছটফট করে বারেবারে জানলা দিয়ে বাইরের দিকে দেখছে। আজকে কেমিস্ট্রির ফাইনাল প্র‍্যাকটিকাল পরীক্ষা আছে। এদিকে খবরে বলছে একটা ঘূর্ণিঝড় পশ্চিমবঙ্গের উপকূলে আছড়ে পড়েছে। ও যে বাড়িতে পেইংগেস্ট থাকে সেখানে এখন ছাত্র বলতে রেহান একাই আছে। বাকি দুজন বড় দাদা চাকরি করে। ওরা অফিসে ফোন করে ছুটি নিয়ে নিয়েছে। মেস মালিকের ঘরে টেলিভিশনে নাকি দেখে এসেছে যে গাছ পড়ে রাস্তা-ঘাট বন্ধ হয়ে গেছে, চারদিকে জল জমে বাস-ট্রাম বন্ধ হয়ে গেছে। আর ঘন্টাখানেকের মধ‍্যে না বেরোতে পারলে দুটোর মধ‍্যে কলেজে পৌঁছাতে পারবেনা। বুঝতেও পারছেনা যে পরীক্ষা স্হগিত হয়েছে নাকি।

হঠাৎ মনে পড়ল বন্ধু সৌরভের কথা। সৌরভের বাবা তো বিশ্ববিদ্যালয়ের উঁচু পদে আছেন, উনি নিশ্চই পরীক্ষার ব‍্যাপারে জানতে পারবেন। মোবাইলে ফোন করতে একবারেই সৌরভ ফোনটা ধরল। রেহান বলল, "পরীক্ষার কোনো খবর আছে নাকিরে? এত দূর্যোগের মধ‍্যে পরীক্ষা হবে?"

সৌরভ বলল, "ওহো! তুই খবর পাসনি? পরীক্ষা তো একমাস পিছিয়ে দিয়েছে রে।"

রেহান স্তিমিত স্বরে বলল, "এ...ক মা...স! আমার অবস্হা তো জানিস। মেস তো আগামীকাল ছেড়ে বাড়ি চলে যাওয়ার কথা। আরো একমাস হলে..."

"আরে! তুই বাড়ি চলে যা আগামীকাল। সামনের মাসের পনেরো তারিখে পরীক্ষাটা ফেলেছে। আগেরদিন এসে সস্তার কোনো হোটেলে উঠে পরীক্ষা দিয়ে দিবি। ফালতু একমাসের ভাড়া গুনবি কেন?"

সৌরভের এই কথাটা রেহানের মনে ধরল। আসলে বাবা স্ট্রোকে পঙ্গু হয়ে যাওয়ার পর মা অনেক কষ্ট করে সেলাইয়ের কাজ করে সংসার চালাচ্ছেন। রেহান পাশ করে স্কুল সার্ভিসের পরীক্ষা দিয়ে চাকরি পাবে এটাই মায়ের আশা। তাই জোর করেই ছেলেকে কলকাতার কলেজে ভর্তি করিয়েছেন। সেইজন‍্য বাবার অফিস থেকে পাওয়া জমানো টাকা জলের মত খরচা হয়ে যাচ্ছে। রেহান তাই পড়াশোনা ছাড়া অন‍্য কোনো দিকে মন দেয়না। চাকরি ওকে পেতেই হবে।

সৌরভকে অনেকবার ধন‍্যবাদ জানিয়ে ফোন রেখে গোছগাছ শুরু করে দিল রেহান। অপরপ্রান্তে ফোনটা হাতে নিয়ে নিষ্ঠুর হাসি খেলে গেল সৌরভের মুখে। নিজের মনেই বলে উঠল, "শালা গাঁইয়া ছেলে একটা! পেটে খাবার না থাকলেও রূপ আছে ষোলোয়ানা। সাথে পড়াশোনায় ক্লাসের মধ‍্যে এক নম্বর! যাহ্ ব‍্যাটা বাড়ি গিয়ে ঘুমিয়ে থাক, পরীক্ষা একসপ্তাহ পরেই হয়ে যাবে। তুই বসে বসে ফেল কর।"

সেই ঘটনার পর নদী দিয়ে বহু জল গড়িয়ে গেছে। একমাস পরে পরীক্ষা দিতে এসে রেহানের কী অবস্হা হয়েছিল কিছুই জানার চেষ্টা করেনি সৌরভ। ও কোনোরকমে দ্বিতীয় বিভাগে পাশ করে গেছে। এম এস সি তে যে এইভাবে পাশ করে সুযোগ পাবেনা সে সৌরভ জানত। বাবাও আর ক্ষমতা খাটিয়ে ভর্তি করার চেষ্টা করেননি, বুঝেইছিলেন এভাবে পাশ করানো যাবেনা।

পদস্হ বাবা চেষ্টা চরিত্র করে বিশ্ববিদ্যালয়ে একটা কণিষ্ঠ করণিকের চাকরি জুটিয়ে দিয়েছিলেন।

***********

ছোটোবেলা থেকে স্বাচ্ছন্দ‍্য ও ক্ষমতার কোলে বড় হওয়া সৌরভ নিজের চাকরির সাথে মানিয়ে চলতে পারতোনা। এদিক সেদিক করে অর্থ উপার্জনের চেষ্টা করত প্রথম থেকেই। যদিও সেই সব চেষ্টাই অসৎ হত। মাত্র বছ‍র পাঁচেক চাকরির পরেই একটা প্রশ্নপত্র ফাঁসের ব‍্যাপারে সৌরভকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়।

*************

চিরজীবন সসম্মানে চাকরি করা বাবা তাই সৌরভকে দু বেলা যাচ্ছেতাই ভাবে অপমান করেন। সৌরভ কদিন ধরে একটু মনমরা হয়ে আছে।

এরমধ‍্যে একদিন খবরের কাগজ খুলে একটা সাক্ষাৎকার দেখে চমকে উঠল সৌরভ। রেহান দাস নামে একজন যুবকের সাক্ষাৎকার। আরে ছবিতে একটু মোটা লাগলেও এ তো সেই রেহান! ভালো করে খুঁটিয়ে পড়তে লাগল সৌরভ। রেহান বলেছে, একজন বন্ধুর দৌলতে পরীক্ষা না দিতে পেরে স্নাতকস্তরে ফেল করে। তা নাকি ওর জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেওয়া ঘটনা! পরিবারের আরো একবছর ওর পড়ার খরচ টানা সম্ভব নয় বলে ও আর পরীক্ষা না দিয়ে গ্রামের ঘরে ঘরে সব বেকার শিক্ষিত যুবক যুবতীদের নিয়ে দল গড়ে। তারপর সকলে মিলে বিভিন্ন হাতের কাজ, বড়ি, পাঁপড় বানিয়ে বিক্রি করতে শুরু করে। একসময়ে ব‍্যাঙ্কের থেকে লোন পায়। বিশাল কারখানা তৈরি করে। বিদেশেও ওদের কারখানায় বানানো জিনিসপত্র যায়। এবছর নাকি সরকার থেকে 'কণিষ্ঠ উদ‍্যোগপতি' হিসেবে পুরস্কার পেয়েছে!

খবরের কাগজ হাতে নিয়ে সৌরভ ভাবতে থাকে... রেহানকে পরীক্ষায় যতই কায়দা করে ফেল করাক সৌরভ; জীবনের আসল পরীক্ষায় রেহান পাশ করে গেছে আর সৌরভ ডাহা ফেল।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Inspirational