নারী শক্তি
নারী শক্তি
সকাল থেকে শুরু হয়ে গেছে কমলাদেবীর গঞ্জনা। বিপাশার কাছে এ কোনো নতুন ঘটনা নয়। বিগত বিশ বছর ধরে ভোর থেকে রাত পর্যন্ত এক জিনিস চলে আসছে। তবুও মানুষের মন বলে কথা, মেনে নিতে বড়ই কষ্ট হয়।
বিপাশা যেদিন হাসপাতাল থেকে তোয়ালে জড়ানো পুতুলের মতো পিউকে নিয়ে এ বাড়িতে ঢুকেছে; সেদিন থেকে কমলাদেবীর আসল রূপ দেখতে পেয়েছে। মাঝেমাঝে কমলাদেবী নিজে নারী না পুরুষ সেই নিয়ে বিপাশার সন্দেহ হয়।
বিপাশার স্বামী সৌমিক পর্যন্ত মায়ের কথায় দ্বিতীয় সন্তান নেওয়ার জন্য বিপাশাকে বোঝাবার চেষ্টা করেছে। বিপাশা সেই প্রস্তাবে রাজী হয়নি তার একটাই কারণ হল ভয়। এমনিতেই এ বাড়ির কেউ পিউকে ভালোবাসেনা। তারপর যদি একটা ছেলে হয় তাহলে তো ওকে এরা আরো অত্যাচার করবে। আবার যদি একটা মেয়েই হয়! তাহলে বোধহয় বিপাশাকেই বাড়ি থেকে মেয়েদের সঙ্গে বার করে দেবে।
এই পিউয়ের জন্য যে আয়াকে রেখে বিপাশা অফিসে যেত, তাকে দিয়ে নিজেদের ঘরের কাজ করাতেন কমলাদেবী। যেদিন পিউ খাট থেকে পড়ে আটমাস বয়সে মাথা ফাটালো সেদিন বিপাশা চাকরি ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিল। সেইদিন থেকে চোখ-কান বন্ধ করে শুধুমাত্র পিউকে মানুষ করার কাজেই বিপাশা নিজেকে ব্যস্ত রেখেছে।
কমলাদেবীর গলা শুনলেই ভয় হয় যে, পিউ আবার কী করল।
আজ আবার কমলাদেবীর সাথে সৌমিকেরও উত্তেজিত স্বর শোনা যাচ্ছে। গ্যাসটা নিভিয়ে রান্নাঘর থেকে বাইরের ঘরের দিকে প্রায় দৌড়ে গেল বিপাশা। যাওয়ার পথে পিউয়ের পড়ার ঘরে উঁকি দিয়ে দেখল মেয়ে সেখানে নেই। তারমানে যা ভয় করছিল তাই হয়েছে, নির্ঘাৎ পিউয়ের কোনো কাজে দুজনে বিরক্ত হয়েছে।
বাইরের ঘরে গিয়ে বিপাশা স্তম্ভিত হয়ে দেখল, পিউ ঠাকুমার কোলের কাছে সোফায় বসে আছে আর তার বাবা মানে সৌমিক এক হাতে খবরের কাগজ নিয়ে আর অন্য হাতে মোবাইল ফোন নিয়ে কাকে কিসব বলছে। শুধু একটা কথা শুনেই বিপাশা নিশ্চিন্ত হল। শুনল সৌমিক বলছে, “আমার মেয়ে তো ছোটবেলা থেকেই স্পোর্টসে প্রথম হয়।“
বিপাশা স্তম্ভিত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে দেখে ফোন রেখে সৌমিক বলল, “পিউ গতকাল একজন ছিনতাইকারীকে তাড়া করে ধরে একজনের সোনার হার উদ্ধার করেছে। আজ খবরের কাগজে বেরিয়েছে।“ বিপাশাকে আরো অবাক করে কমলাদেবী বললেন, “আমি আগেই জানতাম। আমার নাতনি একদিন বিশাল কিছু করবে।“
পিউ দেখল মিটিমিটি করে হাসছে।