জব্দ
জব্দ


“ আজ রাতে একটা মজা হবে।” কিশোরের কানে কানে কথাগুলো বলল শুভ।
শুভ আর কিশোর দুজন হরিহর আত্মা বন্ধু। ওরা রামকৃষ্ণ মিশনের বোর্ডিং স্কুলের ক্লাস সিক্সে পড়ে। আগের বছর ওরা এই স্কুলে ভর্তি হয়েছে। প্রথম দিন থেকে ওরা একই ঘরে থাকে। কিশোর খুব শান্ত আর শুভ ভীষণ দুরন্ত। শুভ যা যা দুষ্টুমি করে সব এসে ওর কিশোরকে বলা চাই।
“ আবার কি করলি?” কিশোরের গলায় আতঙ্ক।
“ সেরম কিছু না। ঐ বিশ্বাসঘাতকটাকে একটু জব্দ করার ব্যবস্থা করে এলাম।“
ওদের ক্লাসে তারাপদ বলে একটি ছেলে আছে। তার জীবনের একমাত্র কাজ হল এর ওর নামে নালিশ করা।
একবার মহারাজদের ঘরের সামনের পোস্ট বাক্সতে কেউ কয়েকটা চকোলেট বোমার সঙ্গে ধূপ লাগিয়ে রেখে দিয়েছিল। সবাই ঘুমিয়ে পড়ার পর, রাত্তির এগারোটা নাগাদ সেই বোমগুলো বীভৎস আওয়াজ করে ফাটে। পরের দিন প্রার্থনার সময় যখন জিজ্ঞাসাবাদ শুরু হল তখন ঐ তারাপদ হঠাৎ উঠে দাঁড়িয়ে বলে দিল,” স্যার আমি না শুভকে কাল দেখেছি ঐ পোস্ট বাক্সর সামনে।“
আর ব্যাস সেদিন শুভকে সারা ভবনের মেঝে মুছে পরিষ্কার করতে হয়েছিল। অবশ্য তারাপদ খুব ভুল বলেনি। অপকর্মটি শুভরই ছিল।
তারপর সেদিন যেদিন লাঞ্চে ছেলেদের খুব ছোট ছোট মাছের পিস দেওয়া হয়েছিল, সেদিন শুভ মাছের পিসগুলো নিয়ে গিয়ে ক্যান্টিনের সামনের নোটিস বোর্ডে আলপিন দিয়ে ঝুলিয়ে দিয়েছিল। সেই কথাও তারাপদ গিয়ে লাগিয়ে দিয়েছিল মহারাজদের।
তাই শুভর খুব রাগ তারাপদর ওপর। ও অনেকদিন ধরেই ওকে একটা শিক্ষা দেবার চেষ্টা করছিল। আজ সুযোগ পেয়েছে।
“ রাতে দেখিস।“ দুষ্টু হাসল শুভ।
রোজ রাতে খাবারের পর ওরা যখন নিজেদের ঘরে ঘুমোতে চলে যায় ওদের ভবনের ওয়ার্ডেন অভেদানন্দ মহারাজ ওদের করিডোরে ঘুরতে ঘুরতে মোবাইলে কারুর সঙ্গে কথা বলেন। অভেদানন্দ মহারাজকে সবাই ভয় পায়। আসলে উনি ভীষণ বদরাগী। একবার একটি ছেলেকে কি একটা কারনে সারাদিন লাইব্রেরীতে বন্ধ করে দুর্গা নাম লিখিয়েছিলেন।
রাত্রে খাবার পর যখন কিশোর ঘরে শুতে যাচ্ছে মহারাজদের ঘরের দিক থেকে একটা চেঁচামিচির আওয়াজ পাওয়া গেল। খানিকক্ষণ বাদে অভেদানন্দ মহারাজ ওদের ক্যান্টিনের হরিদাকে নিয়ে করিডোর দিয়ে হন্তদন্ত হয়ে হেঁটে গেলেন।
“আপনি একবার কল করে দেখুন না...।“ বলতে বলতে গেল হরিদা। বোঝা গেল মহারাজের মোবাইলটি পাওয়া যাচ্ছে না।
এর মিনিট পাঁচেকের মধ্যে তারাপদর গলা পাওয়া গেল,” আমি কিছু জানিনা স্যার। আমি কিছু করিনি।“
“ তুমি কিছু করনি? হতভাগা, সবার নামে তুমি নালিশ কর আর আজ তোমায় হাত নাতে ধরেছি আমি। আমার মোবাইল তোমার আলমারিতে কি করে পৌঁছল?”
“ আমি জানিনা স্যার।“
“ আজ তুই লাইব্রেরীতে বসে সারা রাত দুর্গা নাম লিখবি।“
পাশের খাট থেকে শুভর খুক খুক হাসির শব্দ পেলো কিশোর।
অভেদানন্দ মহারাজ তারাপদকে নিয়ে লাইব্রেরীর দিকে যেতেই কিশোর শুভকে চেপে ধরল, “ এটা তোর কাজ তাই না?”
“ আর নয় তো কি ?”
“ তুই ওনার মোবাইলটা পেলি কোথায়?”
“ তুই তো জানিস যে মাঝে মাঝে ঘুম না এলে রাতে আমি ভবনের কার্নিশে কার্নিশে ঘুরে বেড়াই। কাল রাতে বেড়াতে বেড়াতে দেখি স্যার মোবাইলটা জানলার ধারে রেখে ঘুমোচ্ছেন। আমি ওটা তুলে নিয়ে চলে এলুম। তারপর আজ সকালে সবাই যখন প্রার্থনায় গেছে তখন রেখে এলুম তারাপদর আলমারিতে।“