ঈশ্বরের পুত্র
ঈশ্বরের পুত্র


যেটা হবার কথা ছিল না সেটাই হল। অমন সাদাসিধে সরল প্রাণের মানুষ সুজিত,সর্বদা মুখে তার অমায়িক হাসি,এমনটা তার সঙ্গে খুব খারাপই হল। বাবার অগাধ সম্পত্তির মালিক দুই ভাই। পৈত্রিক বাড়ি,জমি,পুকুর সেসবও কম নয়,এছাড়া বাবার ব্যবসা সেও তো কোটি কোটি টাকার। তা এই ভোলাভালা মানুষটির সেসব দিকে কোনও নজর নেই,খেতে একটু ভালোবাসে এই যা। কি জামাকাপড় পড়ছে তাও তার খেয়াল থাকে না,যা হাতের কাছে পায় তাই গলিয়ে বেরিয়ে পড়ে। দেখতেও যেমন রাজপুত্রের মতো,তার থাকার কথাও তো রাজপুত্রের মতোই। এমন মানুষকে ঠকাতে,তার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করতে যে কোনো মানুষেরই বিবেকে বাধার কথা,কিন্তু না বিবেক যে সবার থাকে না তাই তো সুজিতের মত মানুষদের ঠকতে হয়,বিশ্বাসঘাতকতার শিকার হতে হয়।
দুই ভাই রঞ্জিত ও সুজিত,সুজিত ছোট। বড় রঞ্জিত একটু বড় হবার পরে বাবার ব্যবসা বুঝে নিতে থাকে। সে দায়িত্ববান,তার ওপর নির্ভর করা চলে,আর ছোট সুজিত আপনভোলা,খামখেয়ালি,শিল্পী সে,সেতার বাজায় বুঁদ হয়ে,বাজনাই তার ধ্যান-জ্ঞান,নিজের খেয়ালই সে রাখতে পারে না,অন্যের খেয়াল রাখবে কেমন করে? না তার ওপর নির্ভর করা যায় না মোটেই। কারো সাতে পাঁচে থাকে না,কারো সঙ্গে ঝামেলাও করে না,মানুষকে বিশ্বাস করে আর তাই সেই বিশ্বাসের মূল্য চোকাতে বড্ড ঘা খেতে হল কে।
বয়স জনিত কারণে বাবা অবসর নিয়েছেন বড় ছেলের উপর সমস্ত কাজের দায়িত্ব দিয়ে। ক্রমে দেখেছেন, সে একা সব গ্রাস করতে চাইছে তাঁর ওপর নির্ভরতাকে মূলধন করে। বৃদ্ধ বাবা বিবেকের দংশনে ব
জ্বলেছেন তখন। মনে হয়েছে ছোট ছেলেটি তাঁর বঞ্চিত হবে সমস্ত সম্পত্তি থেকে।
উপায়ান্তর না দেখে তিনি তার বিশাল অঙ্কের টাকা ছোট ছেলের নামে লিখে দেন তাকে বলেন, "শোন এই টাকাটা তোকে দিলাম তোর ভবিষ্যতের জন্য, দাদা যেন জানতে না পারে।" ছোটর তাতে কোনও হেলদোল নেই, দাদাকে সে ভালোবাসে খুব। ছোট থেকেই নিজের নতুন কিছু এলেই সে আগে তা দাদাকে ব্যবহার করতে দিত,নতুন সাইকেল, নতুন টি-শার্ট, নতুন বাইক। দাদাকে অদেয় তার কিছুই নেই। দাদার নামে কেউ কিছু বললে ওর কাছে ও লেগে পড়ত দাদার হয়ে সালিশি করতে। সেই দাদা কোনোভাবে জানতে পারে বাবা সুজিতকে মোটা অঙ্কের টাকা দিয়েছেন,তাই সবার অজান্তে ছোট ভাইটিকে ডেকে ইনিয়ে বিনিয়ে বলতে থাকে, "ব্যবসার অবস্থা খুব খারাপ,টাকার দরকার। বাবা তোকে যে টাকাটা দিয়েছে সেটা দে না হলে ব্যবসা ডুবে যাবে একেবারে।" আবেগপ্রবণ ভাইটির মন দাদার কাঁচুমাচু মুখের দিকে তাকিয়ে কষ্টে বিগলিত হয়ে গেল। সমস্ত টাকা বিশ্বাস করে দাদার হাতে তুলে দিল সে। সে টাকা ফেরত দেওয়া তো দূর অস্ত, ভাইকে উঠতে-বসতে সে ও তার বউ এমন আচরণ করে যেন সে দাদার আশ্রিত। তার এই ভালমানুষীর জন্য ভুক্তভোগী সে তো বটেই, সঙ্গে তার স্ত্রী পুত্র। সব থেকেও বঞ্চিত হয়ে তারা তা মানতে পারেনি। ক্রমে সুজিতের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক খারাপ হতে থাকে। বাবা গত হয়েছেন, নিরীহ মা দেখেন সব,কিছু বলার সাধ্য তার নেই। ভাইটিকে সবাই বোকা বলে আর ভাইটি মনে মনে বলে, "ঈশ্বরের ওপর আমি সব ছেড়ে দিয়েছি। আমি বোকা নই,আমি বিশ্বাস করেছিলাম নিজের মায়ের পেটের বড় ভাইকে। সবাই তাকে বুদ্ধিমান বলে,আমি তা মনে করি না। সে আমার দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে আমার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। আমি তাকে বিশ্বাস করেছিলাম তার মূল্য সে দিতে পারেনি,সে হতভাগা,সে আমার কাছ থেকে ভিক্ষা নিয়েছে।"