অপেক্ষায়
অপেক্ষায়


হেমন্তের পড়ন্ত এই বিকেলগুলো বড় মনখারাপ করা, কেমন নিঝুম নিঝুম ভাব। মনে হয় যেন জনশূন্য চারিধার, অন্ধকার নামে বড্ড তাড়াতাড়ি বিকালকে ক্ষণস্থায়ী করে।
এই বিকালের সাথে কত সুখস্মৃতি তবু খেলা করে মধুর মনের মাঝে। প্রথম ভালবাসার পরশের রোমাঞ্চটুকু যে এই হেমন্তের হাত ধরেই এসেছিল তার জীবনে। ছাদে আকাশপ্রদীপ জ্বালতে গিয়ে নাগাল পাচ্ছিল না যখন, সুমন্ত এগিয়ে এসেছিল সাহায্য করতে। তার হাতের ওপর হাত দুটো রেখে প্রদীপ ধরেছিল যখন, বুকের ভেতর দিয়ে শিরশির করে একটা কাঁপুনি বয়ে গিয়েছিল মধুর। সেই শুরু। তারপর কত সন্ধ্যে কাটিয়েছিল তারা আকাশপ্রদীপের দিকে তাকিয়ে, হাতে হা
ত রেখে। হালকা শীতের আমেজটুকু কেটে গিয়েছিল সুমন্তর উত্তাপে।
গ্রামের বাড়ীতে নবান্নর উৎসবে দাদার বন্ধু হওয়ায় সুমন্তরও নিমন্ত্রণ ছিল। ভোরের আলো আঁধারিতে গ্রামের পথে পাকা ধানের শীষের দোলা দেখতে দেখতে মধুও সুমন্তর গায়ে আহ্লাদে ঢলে পড়েছিল সেদিন। হেমন্তের প্রথম শিশির পায়ে মেখে, হালকা ঠান্ডার আমেজে, নিজেকে নতুন করে আবিষ্কার করেছিল মধু সুমন্তর দুটি চোখের ছায়ায়। সুমন্ত ঘাসের ডগা থেকে শিশির ধার করে দু'হাত ভরে নিয়ে মধুর দু'গালে মাখিয়ে তার গালে গাল রেখেছিল সেদিন দু'হাত দিয়ে আদর করে জড়িয়ে ধরে।
ঠিকানা না রেখে হারিয়ে গেছে সুমন্ত। কত হেমন্ত পার হল তার পর। মধু আজও তার অপেক্ষায়।