Manasi Ganguli

Abstract Fantasy

3  

Manasi Ganguli

Abstract Fantasy

প্লুটো সরগরম

প্লুটো সরগরম

4 mins
152



   সৌরজগতে আজ দারুণ হইচই। প্লুটোর বিখ্যাত টেকনিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার অরূপ বসুরায় ৩৬৫৪ ও অণ্বেষা বসুরায় ২৫৪এর একমাত্র কন্যা ডাক্তার রাই বসুরায় ৯৮৪৭এর আজ বিয়ে।অবশ্য এই ২২১৭ সালে একমাত্র কথাটার কোনো মানে হয় না যখন সৌরজগতের নিয়ম অনুসারে কোনো কাপলের একাধিক সন্তান থাকতে পারবে না। আর এই নামের পাশে নম্বরটা একটা বিশেষ ব্যবস্থা। একই নামের দুই বা ততোধিক মানুষ থাকতে পারে কিন্তু সৌরজাগতিক নিয়মে একই নম্বরের দুটো মানুষ থাকউতে পারবে না। এই নম্বরই সব পরিচয় বহন করবে। কোনো প্যান কার্ড, আধার কার্ড, পাসপোর্ট, ভিসা কিচ্ছু লাগবে না। এই এক নম্বরেই সব কাজ চলবে আর তাদের গতিবিধি, কাজকর্ম সব ধরা পড়বে যদিও সৌরজগতে অসাধুতা ব্যাপারটা এখন নেই বললেই চলে।জীবন এখন অনেক সহজ হয়ে গেছে।

    বিয়ের অনুষ্ঠান বামন গ্রহ প্লুটোতেই হবে।ঠান্ডা পরিবেশে বিয়ের আসর ভালই জমবে।প্লুটো আজ সরগরম। গতকালই রাই ভেনাস থেকে বিয়ে করতে এসে পৌঁছেছে প্লুটোতে "ভ্যালেন্টিনা" মহাকাশযান চেপে। প্রথম প্রথম কদিন ভেনাস থেকেই যাতায়াত করছিল রাই তবে distance টা একটু বেশি হয়ে যায়, ফলে যাতায়াতেই ৭-৮ঘন্টা সময় চলে যায়।আর আরো অসুবিধে হল প্লুটোর আবহাওয়া অত্যন্ত ঠাণ্ডা আর ভেনাস সূর্যের কাছাকাছি হওয়ায় অনেকটাই গরম যদিও এখন পোশাকও সেইরকম তৈরি হয় যেটা all weather comfortable. পোশাকে oxygen এরও ব্যবস্থা থাকে কারণ এখন অনেকেই বিভিন্ন গ্রহে পড়াশোনা,কাজকর্ম করতে অভ্যস্ত আর বিভিন্ন মহাকাশযানে যাতায়াত করাটাও এখন খুবই মামুলি একটা ব্যাপার। এতসব সফিসটিকেটেড মহাকাশযান রয়েছে যাতে করে অল্প সময়ে সমস্ত বিশ্বব্রহ্মাণ্ড ঘুরে আসা যায়। কিন্তু রাইয়ের মায়ের কাছ থেকে যাতায়াত করতে গেলে ঐ দেখাটুকুই হয়।জার্নির ধকলটাও হয় তাই ক'দিন পর থেকে ভেনাসে থাকাই স্থির করে রাই। Weekend এ বাবা-মার কাছে আসতো। কিন্তু এখন বিয়ে করতে এসেও রাইয়ের আর বেশিদিন কাটাবার উপায় নেই। সে এখন ভেনাসে খুবই ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। ইদানীং মাসে একদিনও বাবা-মার কাছে আসতে পারছিল না, ঐ ফোনের মাধ্যমেই দেখাশোনা। আজকাল ফোনেই ভিডিও অপশন থাকে, whatsapp বা skype এর পাট নেই।সহজ সরল ব্যাপার।

    বিয়ে হচ্ছে মঙ্গলগ্রহের ডাক্তার অশোক পানিগ্রাহি ৪৫৬৭এর সাথে। এক conference এ আলাপ দু'জনের।অণ্বেষা খুব খুশি মেয়ে তার উপযুক্ত মনের মানুষ নিজে খুঁজে নেওয়ায়।যেহেতু একটা কাপলের একটাই সন্তান হতে পারবে তাই বর্তমানে দেখা যাচ্ছে রাইএর age groupএ ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের সংখ্যা অত্যন্ত বেশি হয়ে গেছে। তাই সব মেয়েদের মনের মত বিয়ে হওয়া মুশকিল হয়ে যাবে, হয় বয়সে ছোট ছেলের সাথে বা এখন যেটা চলে যন্ত্রমানবের সাথেও বিয়ে হতে পারে অথবা এক পুরুষের সাথে দুই বা তার বেশি মেয়ের বিয়েও হতে পারে,সেরকমই ভাবনা চিন্তা চলছে আইন পাশ করার ব্যাপারে। যাক, রাইয়ের যখন পাত্র ঠিক হয়ে গেছে, অণ্বেষা অত আর ভাবতে চায় না।

    অশোকের বাবা-মা থাকেন জুপিটারে।এরপর আবার সেখানে অনুষ্ঠান হবে। অশোকের মঙ্গলগ্রহের বাসস্থানে রাই বেশ কয়েকবার গিয়ে কাটিয়ে এসেছে। দু'জনে অনেক মধুর রাত্রি যাপনও করেছে ওরা সেখানে। অশোকের বাড়ী রাইয়ের বেশ পছন্দ হয়েছে যদিও এইমূহুর্তে রাই ভেনাস ছেড়ে মঙ্গলে এসে অশোকের সাথে সেভাবে সংসার করতে পারবে না, আসা-যাওয়াই করতে হবে। পরে ম্যানেজ করতে হবে। ওদের মধ্যে জানাশোনা, ঘনিষ্ঠতা তো হয়েই গেছে,বিয়েটা মায়ের ইচ্ছেয় লৌকিকতা মেনে।সন্ধ্যেবেলায় অশোক আসবে মঙ্গল থেকে প্লুটোয় 'কল্পনা চাওলা' স্পেস শিপে চেপে বন্ধুদের নিয়ে।পৃথিবী মানে মূলত ভারত থেকে অণ্বেষা ও অরূপের কিছু আত্মীয় স্বজন আসবে 'রাকেশ শর্মা এক্সপ্রেস' চেপে সঙ্গে নহবতের টিম নিয়ে।অণ্বেষার তেমনই ইচ্ছে।

   প্লুটো একটু বেশি ঠাণ্ডা, তাই ভেনাস, জুপিটার, মঙ্গল ও পৃথিবী থেকে যারা আসবে তাদের কথা ভেবে অরূপ বসুরায়ের আন্ডারে একটা টিম ১০দিন ধরে কাজ করে চলেছে যেখানে আত্মীয়স্বজন থাকবে, বিয়ে হবে, নহবত বসবে, সেই জায়গার temp.control করার জন্য যেন তারা স্বচ্ছন্দে থাকতে পারে সেখানে।ক্যাটারিং ও এসেছে পৃথিবী থেকে, এমন উপাদেয় খাবার অন্য কোনো গ্রহের ক্যাটারার বানাতে পারবে না। কেবল আইসক্রিমটা প্লুটোরর নিজস্ব ক্যাটারিং, অমন আইসক্রিমও আর কোনো গ্রহ বানাতে পারবে না। এমনিতে তো আজকাল রান্নার পাট নেই। সবই মেসিনে।একসাথে আলাদা আলাদা চেম্বারে দিয়ে অপশন দিয়ে দিলেই সময়মত রান্না তৈরি। কিন্তু বিশেষ দিনে তো বিশেষ রান্না, তাই এই ব্যবস্থা।

   বাঙালী বিয়ে, পুরোহিত চাই।সেও এসেছে পৃথিবী থেকে। অবশ্য অশোকের বাবা-মা জুপিটার থেকেও একজন পুরোহিত ও আত্মীয় স্বজন নিয়ে কিছুক্ষণের মধ্যেই পৌঁছে যাবেন "Armstrong space ship"এ চেপে। আরেই বিয়ের সম্প্রচার শুরু হবে যখন এক এক করে বিভিন্ন গ্রহ থেকে সবাই আসতে শুরু করবেন।সমগ্র ব্রহ্মান্ডেই টিভির মাধ্যমে সম্প্রচার হবে যাঁরা ইচ্ছুক দেখতে পাবেন বা যাঁরা ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও আস্তে পারেননি কোনো ব্যক্তিগত অসুবিধার জন্য, সকলেই এই অনুষ্ঠান লাইভ দেখার সুযোগ পাবেন।

   অণ্বেষা একেবারে ভারতীয় নারীরর মত বাঙালী বিয়ের ঐতিহ্যটা বজায় রেখেছেন।তাঁদের বিয়েও এইভাবেই হয়েছিল।মুখে পানপাতা চাপা দিয়ে রাইকে নিয়ে আসা হলে অশোক ভাবে, 'এ কে'? তারপরই শুভদৃষ্টির সময় তার চোখের পলক পড়ে না। দু'জনে দু'জনাতে মুগ্ধ। সবাই অট্টহাস্য করে উঠলে অশোক ও রাইয়ের চমক ভাঙ্গে। লজ্জা পেয়ে যায় ওরা।তারপর মালাবদল সবই হল।

    বিয়ের আসরে রাইকে দেখে মুগ্ধ হচ্ছে অশোক, এমনটা আগে কখনো কাউকে দেখেনি।লাল জরিদার শাড়ী, মাথায় লাল ওড়না দিয়ে নববধূরূপে অপূর্ব লাগছে রাইকে। অশোক রাইকে দু'বছর ধরে দেখছে, তার জ্ঞানের পরিধি সম্বন্ধে জেনেছে আবার কত ঘনিষ্ঠ মূহুর্তে কত রূপে অশোক তাকে দেখেছে বহুবার তবু আজ রাইয়ের এই নববধূরূপ অশোককে অস্থির করে তুলেছে কখন তাকে নিবিড়ভাবে পাবে বলে।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Abstract