Unveiling the Enchanting Journey of a 14-Year-Old & Discover Life's Secrets Through 'My Slice of Life'. Grab it NOW!!
Unveiling the Enchanting Journey of a 14-Year-Old & Discover Life's Secrets Through 'My Slice of Life'. Grab it NOW!!

Gopa Ghosh

Fantasy Others

5.0  

Gopa Ghosh

Fantasy Others

ইচ্ছা পূরণ

ইচ্ছা পূরণ

6 mins
510


বিনয় অফিসে বেরোতে গিয়ে দ্যাখে কুমকুম তখনও ওর টিফিন টা রেডি করে রাখে নি, ব্যাস মটকা গরম,

"সকাল থেকে করো টা কি বলতো আমার টিফিন টাও রোজ সময় মত রেডি করতে পারো না আর তাই আমার রোজ অফিস যেতে দেরি হচ্ছে"

কুমকুম ব্যস্ত হয়ে ঘরে ঢোকে

"আসলে আজকে তুমি বেরিয়ে গেলেই দোলাকে আনতে যাবো, ওর আজ এক পিরিওড আগে ছুটি হবে তাই রেডি হচ্ছিলাম , আর তোমার টিফিন টা রান্না ঘরেই ভুলে রেখে এসেছি , দাঁড়াও এনে দিচ্ছি"

কুমকুমের ঠান্ডা গলার উত্তর।

বিনয় টিফিনটা নিয়ে বের হতে যাচ্ছে এমন সময় কুমকুম পেছন থেকে বলে উঠলো

"শোনো আজ ফেরার সময় যদি মনে থাকে তাহলে দোলার জন্য একটা ভাল্লুক কিনে এনো"

বিনয় ভ্রু কুঁচকে কুমকুমের দিকে তাকিয়ে বলে

"এত কিছু থাকতে আবার তোমার মেয়ের ভাল্লুক দরকার হলো কেন?"

"আরে ও কাল স্কুলে শুনেছে আজ নাকি টেডি ডে, তাই সবাই টেডি বিয়ার উপহার পাবে"

এটুকু বলেই কুমকুম থেমে গেল, মানে কুমকুম জানে এখন বিনয়ের কাছে খুব একটা টাকা পয়সা নেই , মাসের অর্ধেক পড়ে রয়েছে , তাও দোলার বায়নায় ও আজ বলতে বাধ্য হল। স্কুলে ঢোকার সময় দোলা বার বার মাকে বলেছে ওর একটা ভাল্লুক চাই মানে টেডি বিয়ার , না হলে সব বন্ধুরা ওকে দেখাবে কিন্তু ও দেখাতে পারবে না । কুমকুম জানে না টেডি বিয়ারের দাম কত । খুব একটা বাইরে বেরোনোর অভ্যাস ওর নেই, বাজার দোকান সব বিনয় করে। তবে দোলা স্কুলে ভর্তি হওয়ার পর মেয়েকে পাশের পাড়ার স্কুলে দিতে আর নিতে যায়, তাও বিনয় বাড়ি থাকলে ওকে আর যেতে হয় না। বাইরের জগত সম্পর্কে অতটা ওয়াকিবহাল নয় কুমকুম। ওদের সংসারে পয়সার অভাব থাকতে পারে কিন্তু সুখের অভাব নেই। কুমকুম জানে বিনয় সারাদিন হার খাটুনি খেটে ওদের মুখে হাসি ফোটাতে আরও একটা কাজ করার চেষ্টা করছে । এটাতে অবশ্য কুমকুমের আপত্তি কারণ ও চায়না বিনয়ের কষ্ট। সারাদিন এতো খাটনি করে ও আবার আর একটা কাজ নিলে বিনয়ের শরীরে আর কিছু থাকবে না। এই নিয়ে স্বামী-স্ত্রীতে মতান্তর অবশ্যই হয়েছে কিন্তু মনান্তর হয়নি। বিনয় জানে কুমকুম ওর কষ্টের জন্যেই পার্টটাইম কাজটা করতে দিতে চায় না।

বিনয় একটা বেসরকারি অফিসের ক্লার্ক। খুব একটা বেশি মাইনে ওর নয় , আর বাড়ার ও খুব একটা সম্ভাবনা নেই। অন্য চাকরির চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে কিন্তু ভাগ্যটা ওকে সাহায্য করছে না। দু'বেলা দু'মুঠো অন্নের সংস্থান ও করতে পারে বটে কিন্তু মেয়ে আর বউয়ের প্রায় কোন শখ পূরণ করতে পারে না তবে আপ্রাণ চেষ্টা করে। এর জন্য কুমকুম কখনোই নিজের ভাগ্যকে দোষ দেয় না কারণ ও জানে বিনয়ের মত ছেলেকে স্বামী হিসাবে পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার। বিনয় একটু মাথা গরম করে ফেলে বটে কিন্তু বউ আর মেয়ে ওর গোটা জগৎ।

বিনয় অফিসে এসেছে প্রায় ঘন্টা দুই হয়ে গেল প্রায় তিনটে চিঠি ওর টাইপ করা ও শেষ কিন্তু মনটা কেমন যেন খারাপ হয়ে আছে। আসলে দোলা কিছু চাইলে ও কখনোই না করতে পারে না বা সেটা দেওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করে। আজ সত্যিই ওর কাছে একটা টেডি কেনার টাকা নেই, কি করবে ভাবতে ভাবতেই মোবাইল বেজে উঠল, ধরতেই দোলার কচি গলা

"বাবা তুমি আজ মনে করে আমার একটা ভাল্লুক কিনে এনো, যেন ভুলে যেয়ো না"

"আচ্ছা মা আমি নিয়ে যাব, তুমি লক্ষী মেয়ে হয়ে থাকো"

পাশে বসা ননী বাবু বিনয় কে বলল

"ও মেয়ের বায়না বুঝি, তা তোর মেয়ে অনেক কমই বায়না করে, আমার নাতনি র বায়না সামলাতে ওর বাবা-মায়ের মাথা খারাপ হয়ে যাচ্ছে"

বিনয় মুচকি হেসে আবার কাজে মন দেয়।

কিন্তু কাজে মন বসাতে পারেনা শুধুই দোলার বায়নার কথাটা মাথায় ঘুরতে থাকে। টিফিন টা খুলতে যাবে এমন সময় বসের তলব।

"বিনয় আজ একটা কাজ করে দিতে হবে তোমাকে, আসলে আমি আজ একটা পার্টিতে ব্যস্ত থাকবো না হলে তোমাকে বলতাম না"

"হ্যাঁ বলুন আমি নিশ্চয়ই করে দেবো"

এবার বস ঘোষ বাবু একটা খুব বড় সড় গিফট প্যাক বিনয়ের হাতে দিয়ে বললেন

"এটা আমার মেয়ের বাড়িতে একটু পৌঁছে দিতে হবে, আমার নাতনির জন্য এটা আমি সিঙ্গাপুর থেকে আনিয়েছি, আর আজ ওকে গিফট দেওয়ার জন্য এটা রেখে দিয়েছিলাম"

বিনয় কোন প্রশ্ন করেনা কিন্তু ঘোষ সাহেব ঠিক বুঝতে পারে, বিনয় ভাবছে এটা আগে কেন কাউকে দিয়ে পাঠানো হয়নি।

"আসলে আজ টেডি ডে তাই আমার নাতনি কে আমি আজ ই এই উপহারটা দিতে চাই কিন্তু এই পার্টিতে আমার থাকাটা খুবই জরুরী , তুমি এটা এখনই গিয়ে দিয়ে আসো আমি ড্রাইভারকে বলে দিচ্ছি"

বিনয়ের চোখে তখন শুধুই দোলার মুখ। ভাবলো স্যারকে যদি কিছু টাকা অগ্রিম দেওয়ার জন্য বলে তাহলে দোলার ইচ্ছেটা পূরণ করতে পারবে

"স্যার একটা কথা একটু বলতে চাই, আমার কিছু টাকা অগ্রিম হলে ভালো হতো , আপনি মাইনে থেকে ওটা বাদ দিয়ে দেবেন"

ঘোষ স্যার বেশ বিরক্তির সঙ্গে বললেন

"এটাই তোমাদের দোষ , কিছু অনুরোধ করলেই তোমরা তার সুযোগ নিতে চাও , শোনো আমি এখন কোন টাকা দিতে পারব না, তাতে যদি যেতে হয় যাও বা না চাইলে কাল থেকে আর অফিসে এসো না'

বিনয় বসএর থেকে এই কথাটা আশা করেনি , ওর খুব খারাপ লাগলো তাও চাকরি না বাঁচালে ও দুটো মানুষকে বাঁচিয়ে রাখতে পারবে না। অপমান সহ্য করে বসের মেয়ের বাড়ির উদ্দেশ্যে গিফট নিয়ে রওনা দিল।

বছর আট বয়স তিন্নির, এর মধ্যেই ঝড় ঝরে ইংরেজি তে কথা বলে। দেখতেও যেনো মোমের পুতুল। খুব মিশুকে হয়েছে মেয়েটা। বিনয়কে দেখেই বলে উঠলো

"তুমি আমার দাদু কে আনো নি?"

"না দাদু তোমার জন্য এই গিফট টা পাঠিয়েছেন, তুমি পরে ফোন করে জানিও গিফট কেমন লাগলো?

তিন্নি এবার চটপট করে গিফটের ওপরের মোরক টা খুলতে লাগলো। ভেতর থেকে একটা বেশ বড় সাইজের খুব সুন্দর টেডি বেরোলো। সেটা দেখে তিন্নি খুব নিরাশ হলো বিনয়ের মনে হল কেননা তিন্নি ওই টেডি বিয়ার টা হাতে করে নিয়ে পাশের ঘরে ছুঁড ফেলে এসে বিনোয় কে বললো

"আজ আমি প্রায় বারোটা টেডি গিফট পেয়েছি কিন্তু আমি এসব চাই না, শুধু বাবা মা আর দাদু দিদার সাথে দিন টা কাটাতে চাই, ওরা এতই ব্যস্ত যে আমার জন্য ওদের হাতে সময় নেই "

তিন্নির চোখটা ছল ছল করে উঠলো।

বীনয় বেরোনোর সময় পাশের ঘরে উঁকি মেরে দেখলো গোটা ঘরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছ টেডি। সত্যি কি অদ্ভুত,. কারো কাছে অর্থ আছে, তো সময় নেই, আবার কারো অর্থ না থাকলেও বহুমূল্য ভালোবাসা আছে হৃদয়ে, আর আছে ভালোবাসার মানুষের জন্য সময়।


সেদিন বাড়ি ফিরতে একটু রাত হলো বিনয়ের। ও জানে বাড়ি ফিরলেই দোলা ছুটে এসে ওর টেডি দেখতে চাইবে। কিন্তু ঘরে ঢুকে বিনয় অবাক হয়ে গেলো, খাটে বসে দোলা একটা বেশ বড়ো টেডি নিয়ে খেলছে। বিনয়কে দেখেই বলে ওঠে

"বাবা তুমি খুব ভালো টেডি দিয়েছ, আমার খুব পছন্দ হয়েছে, কাল বন্ধুদের দেখবো"

তিন্নির খুশি যেনো উপচে পড়ছিল।

কুমকুম ওর হাত থেকে ব্যাগটা নিয়ে টেবিলে রাখতে রাখতে বলে

"তুমি যে ননী বাবুকে দিয়ে ওটা পাঠালে, সেটা একটু ফোন করে জানাবে তো, উনি কিছু না খেয়েই চলে গেলেন"

এবার বিনয় বুঝতে পারলো ননী বাবু ওর নাম করে টেডি টা দোলাকে নিজেই কিনে দিয়েছেন। আসলে স্যার এর সাথে ওর যা কথা হয়েছে সেটা হয়তো ননী বাবু শুনেছিলেন আর তার আগে দোলার করা ফোনটাও ওনার জানা ছিলো। বিনয়কে জানিয়ে আসতে গেলে যে বিনয় কিছুতেই রাজি হতো না সেটা উনি ভালোভবেই জানতেন।

বিনয় মোবাইল টা তুলে ননী বাবুকে ফোন করে,

"এটা তুমি কি করলে ননী দা, আমাকে একবার বলতে তো পারতে"

"আমি জানালে তুই কি আমাকে ওটা কিনতে দিতিস বুকে হাত দিয়ে বল তো?"

একটু থেমে আবার বলেন

"দোলা কি আমার কেউ নয় শুধু তোর ই মেয়ে, আমি সব শুনেছি, সত্যি খুব কষ্ট পেয়েছি । তোর মেয়ের একটা ইচ্ছে পূরণ করতে তোকে কত টা অপমান সহ্য করতে হলো, তাও টাকা।দিল না, কিছু মনে করিস না আমি তোকে না জানিয়েই তাই দোলাকে ওর টেডিবিয়ার দিতে বাড়িতে এসেছিলাম"

বিনয় আর কিছু বলতে পারে না। ভাবে ননী বাবুর আর্থিক অবস্থা ও এমন কিছু ভালো না, কিন্তু অন্তরে টাকা পয়সার চেয়ে ও দামী স্নেহ ভালবাসা উপচে পড়ছে, যা তিন্নি পায় না তার পরিবারের থেকে। মোবাইলটা রেখে দোলার কাছে আসে, দোলার হাতটা নিজের হাতে নিয়ে বলে ওঠে

"হ্যাপি টেডি ডে"


Rate this content
Log in

More bengali story from Gopa Ghosh

Similar bengali story from Fantasy