গুলাল আবু বকর GAB

Comedy

3  

গুলাল আবু বকর GAB

Comedy

হাসি পেলে হাসুন, কিম্বা...৬

হাসি পেলে হাসুন, কিম্বা...৬

4 mins
203


             • লেখালেখি •

লেখালেখির কথা লিখতে বসে আজকের শুরুটা অন্যরকমভাবে করতে হচ্ছে। লেখালেখি নিয়ে অনেকের অনেক কৌতুহল আছে। যেমন, কিভাবে লেখা শুরু করতে হয়, কিভাবে ভালো লেখা তৈরি করতে হয়, লিখে কি লাভ, ভালো লেখা কোথায় পড়বো ইত্যাদি।         

        নিউজিল্যান্ড দেশে বেড়ে ওঠা প্রচলিত ইংরেজিতে ছোট গল্পের লেখিকা ক্যাথরিন ম্যান্সফিল্ড একবার মত প্রকাশ করেছিলেন, “অতীতে তাকিয়ে আমি ভাবি, আমি সবসময় লিখছি। যদিও অর্থহীন কথাবার্তা, কিন্তু কিছু না লেখার থেকে অর্থহীন কথাবার্তা লেখাও অনেক ভালো।”

         ব্রিটিশ ক্রাইম ফিকশন লেখিকা রুথ রেন্ডেলকে অনেক পাঠক পাঠিকা চিঠিপত্র পাঠাতেন। তাদের বহু চিঠিতেই থাকত একটা খুব সাধারণ জিজ্ঞাসা, “আমি লেখক হতে চাই। আমাকে কী করতে হবে বলবেন কি?” জনপ্রিয় এই লেখিকা রসিকতা করে একবার উত্তর দিয়েছিলেন, “এক কাজ করুন, আমাকে চিঠি লেখা বন্ধ করে খাতাপত্র নিয়ে লিখতে বসে যান!”

        পৃথিবীর অনেক লেখক কমবেশি এই ধরনের প্রশ্ন একবার হলেও শুনেছেন। সত্যিই তো, লেখক হতে গেলে আসলে কী করতে হবে? যারা লেখা শুরু করতে চান তাদের কাছে এটা বেশ দামী সমস্যা। কতক্ষণ আর বসে বসে মাথা চুলকে কাটানো যায়! ভাবনা মাথায় রাজ্যের আসে কিন্তু মনের মতো নামানো যায় না।...হ্যাঁ, এমনটাই হয় তাই এবার আরেকটি কাজের কথায় আসি। অন্য এক ব্রিটিশ লেখক ব্রায়ান ক্লার্ক আমাদের ১০টি পরামর্শ দিয়েছেন এ ব্যাপারে। তাঁর পরামর্শগুলো বরং বলি—

১) লেখো।

২) আরও লেখো।

৩) আরও বেশি লেখো।

৪) তার চাইতেও বেশি লেখো।

৫) তখনো লেখো, যখন লিখতে ইচ্ছে করছে না।

৬) লেখো, যখন লিখতে ইচ্ছে করছে।

৭) কিছু বলার থাকলে লেখো।

৮) লেখো, যখন বলার কিছু নেই।

৯) প্রতিদিন লেখো।

১০) লিখতেই থাকো...।

এই ১০টি পরামর্শের সবগুলো আসলে ১টি পরামর্শ। সুতরাং এটা পড়ার পর একটাই কাজ পড়ে থাকে। লিখতে বসে যাওয়া। এরপর এব্যাপারে ঐ সকল লেখক লেখিকাগণের আশীর্বাদ মাথার ওপর ঝরে পড়বে বলাইবাহুল্য।

        হাসির লেখক শিবরাম চক্রবর্তী’র ছোট বেলায় পড়ার খুব নেশা ছিল। এটা দেখে তার বাবা খুশি হয়ে তাকে বললেন,

— যারা গ্রন্থ নিয়ে পড়ে থাকে তারা সত্যি পণ্ডিত হয়।

শিবরামের মা এটা শুনলেন। তারপর তাকে বললেন,

— ঠিকই বলেছেন তোর বাবা। যারা বইতে মুখ গুঁজে পড়ে থাকে, তাদের সবকিছু পণ্ড হয়ে যায়, আর সেইজন্য তারা পণ্ডিত হয়।...

       এই আমরা যারা ছাপোষা পাঠক পাঠিকা, এটা ভালোরকম জানি যে, না পড়ে পণ্ডিত হওয়া যায় না, আর পণ্ডিত না হলে ভালো লেখক বা লেখিকা হওয়া যায় না। শুধু অভিজ্ঞতা অর্জন করে কোনো একজন যশস্বী রচনাকার হওয়া যাবে... এরূপ ঘটনা বিরল।

        দুরন্ত এক ঝড়ঝঞ্ঝার ঠিক দু’দিন পর দুই লেখকবন্ধুর মধ্যে সাক্ষাৎকার ঘটলো। পরিবেশে তখনও ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে প্রকৃতির তাণ্ডবের টাটকা সাক্ষর। কোথাও গাছের ডাল ভাঙা, টালি খসে পড়েছে, ছাদে রাখা জলের ট্যাঙ্কের ঢাকনা উড়ে গেছে, ইলেকট্রিক তার ছেঁড়া...।


এখন প্রথম লেখক দ্বিতীয়জনকে বললেন,

— বন্ধু, কয়দিন আগে তোমার মুখে শুনেছিলাম যে প্রকৃতির দুর্যোগ সম্পর্কে একখানা লেখা তুমি শুরু করেছিলে। দুর্যোগে কিভাবে সতর্ক থাকা যায় সেটা তুমি ওখানে বলতে চাও...


— আর বোলো না ভাই, ঐ লেখার পাণ্ডুলিপি রাখা হয়েছিলো ঘরের একটি খোলা জানালার পাশে একটি টেবিলের ওপর। সেদিনের ঐ ঝোড়ো বাতাসে কাগজগুলো জানালা গলে বাইরে কোথায় যে উড়ে গেলো, পিছু ধাওয়া করে অনেক খুঁজেও হদিস পেলাম না। অবশ্য এখন নতুন করে ঠিক করেছি ঝড়ের পরের ধাক্কা কীভাবে কাটিয়ে ওঠা যায়, সেটা নিয়ে লেখা শুরু করবো।...


        আমরা উপরে পড়লাম যে প্রাকৃতিক দুর্যোগের ওপর লেখার পাণ্ডুলিপি হারিয়ে গেলো প্রকৃতির নিজস্ব ঈশারায়। বাস্তবে এমন ঘটনা ঘটে, আমরা হয়তো খোঁজ রাখিনা। যেমন, একজন লেখক যিনি হয়তো অসুখ বিসুখ নিয়ে লেখালেখি করে থাকেন। একবার ঠিক করলেন হাইপারটেনশন নিয়ে একটি বই বার করবেন। এজন্য তাকে অনেক পরিশ্রম করতে হচ্ছে। কে জানে হয়তো অতি পরিশ্রমে নিজেই একদিন টেনশনগ্রস্থ হয়ে পড়লেন।

এমনও দেখতে পাওয়া যায়, যে লেখক পরচর্চার কুফল অনুধাবন করার জন্য খুব সুন্দর একটি লেখা লিখলেন এবং পাঠক পাঠিকা পড়ে নিতান্ত চমৎকৃত হলেন। সেই লেখকের স্ত্রী স্বয়ং পরিচিত মানুষজনকে সমালোচনা না করে সুস্থ থাকেন না। ঘটনার বৈপরীত্য জীবনের অঙ্গ।


একজন খ্যাতনামা অভিনেতা যার জীবন ছবির মতো ঠিকঠাক এগিয়ে যাচ্ছিলো, দাম্পত্য সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ার ভয়াবহ পরিণতি সম্পর্কে যিনি অন্তত হাফ ডজন ছবিতে ডায়লগ আউড়েছেন, একদিন তার নিজের জীবনে ভাঙনের কালো মেঘ অন্ধকার করে ঘনিয়ে আসবে না, কে বলতে পারে। এগুলো হয়তো কাকতালীয় ব্যাপার তবে এধরনের অনেককিছু কখনো কোথাও পড়েছেন বা শুনেছেন।


        সবশেষে লেখালেখি নিয়ে একটি করুণ কাহিনী বলতে চাই। এই লেখার শিরোনাম দেখে নিশ্চয় বুঝতে পেরেছেন যা আমি বলবো তার আগাপাস্তলা হাসিয়ে ছাড়বে এমন নয়। ভাবার জন্য কিছু তো রাখতে হয়।

        এক ভদ্রলোক তার স্ত্রী’র সুইসাইড নোটে কি লেখা আছে পড়তে শুরু করলেন। যত বেশি পড়েন তিনি তত অভিভূত হয়ে যান। চমৎকার করে গুছিয়ে লেখা। লেখার প্রতিটি বাক্য তাকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে পরের লাইনটি পড়ার জন্য। পড়তে পড়তে তার মনে হলো, কোনো একজন লেখিকার একটি গল্পের একটি পৃষ্ঠা তিনি পড়ছেন। একজায়গায় এসে থেমে গেলেন। লেখা আছে, “... আমি এটা মন থেকে চাইনি। তবু এপথ আমাকে বেছে নিতে হলো। আমার আত্মহত্যার অন্যতম একটি কারণ হচ্ছে তোমাকে সকল কিছু সহজ করে বোঝাতে পারতাম না। এটা আমার ব্যর্থতা। মুখে উচ্চারণ করাটা বরং আমার কাছে জটিল মনে হতো। কোনোকিছু বুঝিয়ে বলতে না পারার অব্যক্ত বেদনা আমার অন্তরকে কুরে কুরে খেতে শুরু করেছিলো। অথচ লেখার সময় আমি ছিলাম সাবলীল। লিখে খুব সুন্দর করে হয়তো তোমাকে বোঝাতে পারতাম। এটা বুঝতে আমার বড় দেরি হয়ে গেছে। ইতিমধ্যে মৃত্যুদূতকে আমি আমার ভিতরে আহ্বান করে ফেলেছি... আমি যখন এটি আবিষ্কার করেছি তখন পিছনে ফেরার আর কোনো রাস্তা নেই...”

© ভারাক্রান্ত হৃদয়ে এখানে শেষ করতে হচ্ছে।

# পরবর্তী ৭নং বা সপ্তম পর্ব যথাশীঘ্র পাবেন।



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Comedy