গুলাল আবু বকর ‹›

Comedy Others

3  

গুলাল আবু বকর ‹›

Comedy Others

আবারও ভূত

আবারও ভূত

3 mins
225


“গা ছমছমে ভূতের গল্প লেখা কি চ্যালেঞ্জিং?”


প্রশ্নটা শুনে আমি মোটেও ঘাবড়ে যাইনি।

এই বিষয়টা মোটামুটি কাজ চলার মতো ব্যাখ্যা করে বলছি। তবে ভালো ফলাফল করতে গেলে কম করে দুটো জিনিসের ওপর রচনাকারের ভরসা করতে হবে।

এক নম্বর হলো, কাহিনীকার নিজে যদি মাকড়সার মতো ভীতু না হন এবং শ্মশান, গোরস্থান, ভাগাড় আর মর্গে একা একা নির্জন নিশুতি রাতে টো টো করে ঘুরে বেড়ানোর একটানা তিন বছরের অভিজ্ঞতা থাকে, তার পক্ষে এই সামান্য চ্যালেঞ্জ নেয়া জলখাবারের মতো সহজপাচ্য।

দুই নম্বর হলো, ভূতের কোয়ালিটি, ভূতের পারফরম্যান্স, ভূতের বংশ-বনিয়াদ, ভূতের বাসস্থান, রাগী ভূত নাকি বন্ধুবৎসল, ছেঁকা খাওয়া ভূত নাকি ফ্রেশ, দড়িতে ঝোলা ভূত নাকি বাসে কচলে দেওয়া, স্বেচ্ছায় নাকি সুপারি দেওয়া ভূত, মেছো ভূত নাকি গেছো ভূত প্রভৃতি ঠিকঠাক ম্যাচ করে লিখে গেলে সহজেই দাঁও মারা যাবে। ওর কাছে তখন এটা আহামরি কোনো চ্যালেঞ্জই মনে হবে না। পকেট তাক করে ক্যারমের শুধু একটা ঘুঁটি ফেলার মতো পরিশ্রম হবে।


পাঠক পাঠিকার কাছে এই গল্প তখন নিছক গা ছমছমে গল্প হয়ে গুটিয়ে শুটিয়ে থাকবে না, পাঠক পাঠিকার অন্তরকে আচ্ছন্ন করে পেঁচিয়ে কাবু করে ফেলবে আর ঘুমের মধ্যে বারংবার তিনি শিউরে শিউরে উঠবেন। এদের মধ্যে কিছু যারা দুর্বল শ্রেণীর মধ্যে পড়েন তারা এমনভাবে কঁকিয়ে উঠবেন যে পুরো পরিবার ঘটনার তদন্তে তৎক্ষণাৎ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হবে।


এই তো গেলো চ্যালেঞ্জ নেওয়ার জন্য অব্যর্থ দুটি হাতেগরম কৌশল। এছাড়া তৃতীয় একটি মাঝারি মানের ব্যবস্থা খোদ ভূতপেত্নী সংযুক্ত মোর্চার তরফ থেকে অতি সম্প্রতি লঞ্চ করা হয়েছে। সেই বিজ্ঞাপনটি এখন সোস্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল। সেখানে বলা আছে, “সম্পূর্ণ ব্যবস্থা বাছাই করা ভূত ও পেত্নী দ্বারা পরিচালিত। ভূতের গল্প লেখার গোপন কৌশল শেখানো হয়। তিন মাসের condensed course. আসন সীমিত। শুধুমাত্র ভূতের বাচ্চাদের জন্য কয়েকটি আসন সংরক্ষিত আছে। মুখ্য ট্রেনার ‘নিশি’ ভূতের শেওড়া গাছের অফিসে রাত ১ টা ১৯ মিনিটের পর একা যোগাযোগ করুন। মনে রাখবেন, আমাদের অফিস সিসিটিভি আওতাভুক্ত।”

মনে হয় এই তৃতীয় পদ্ধতি বেশিরভাগ রচনাকার এড়িয়ে চলার চেষ্টা করবেন। তারা প্রথম দুটো পদ্ধতির ওপর বেশি ভরসা রাখবেন। নিশির ডাক অনেকের সহ্য হয় না।

অনুমান করি, যারা ভূতের গল্প লেখেন তাদের হার্ট খুব মজবুত হয়। নচেৎ ঐরূপ ভয়ংকর সব জীবগুলো নিয়ে কারবার করা সম্ভব হতো না। সে তুলনায় আমার হৃদয় একেবারে তুলতুলে। ভূতের বই নিয়ে লোহার সিন্দুকে রাখতে হয়। কয়েকটি ভয়ংকর গল্প পড়তে গিয়ে মাঝরাতে কয়েকবার অজ্ঞান হয়ে গিয়েছি। তারপর কে যে চোখে জল ছিটিয়ে জ্ঞান ফেরাতে সাহায্য করেছিলো আজও সেসব অজানা থেকে গেছে। তাই এই বয়সে অন্ধকারে একা থাকলে আমি বেশ আতঙ্কে ভুগি। সুতরাং চ্যালেঞ্জ নেওয়ার জন্য আমি যে একজন পুঁচকে খেলোয়াড় তা বিলক্ষণ জানি।

ফুটপাত থেকে কিনে আনা ’শাঁকচুন্নির প্রতিহিংসা’ গল্প পড়ে আমার ধারণা হয়েছিলো ভূত বলতে কেবল রক্তচোষা হয় ও কঙ্কাল সর্বস্ব শরীর থাকে। টিভিতে অনেক সুপার মডেলকে দেখেছি ঐ চেহারার সঙ্গে একেবারে মিলে যায়। বিশিষ্ট লেখক হুমায়ূন আহমেদের যে কয়টি ভূতের গল্প পড়েছি তার সবকটি ভূত একেবারে গোবেচারা ও মানবদরদী। এইধরনের ভূত অনেক উপকারী। পড়ে মোটেও গা ছমছম করে না। বরঞ্চ মনে হয়, এই ধরণের ভূতের গা-ঘেঁষে বসি।

ভেবে মাঝে মাঝে অবাক হয়ে যাই, ভূতেরা সবসময় মানুষের পিছনে লাগে কেন, তাদের কি অন্য কোনও কাজ নেই! নাকি নিজেদের সেই কাজ নিয়ে তারা সন্তুষ্ট নয়। বিষয়টা এক বিরাট ধাঁধা হয়ে আছে আমার কাছে।


কিছু সংখ্যক ভূত আছে, যারা গভীর রাতে ঘোড়ায় চড়ে। যে সে ঘোড়া তাদের পছন্দ নয়, তাদের পছন্দ night-mare.

ভূতেরা নাকি ইচ্ছেমতো নিজেদের চোখ খুলতে পারে লাগাতে পারে। কাজ মিটে গেলে তাই খুলে রাখে। একবার এক ভূত শিক্ষক বাচ্চাদের পড়াচ্ছিলেন। তিনি বোর্ডের ওপর কিছু লিখলেন। এবার বাচ্চাদের জিজ্ঞেস করলেন,

—তোমরা বলো, বোর্ডে আমি কি লিখেছি।

বাচ্চারা বললো,

—আমরা লেখা দেখতে পাচ্ছি না।

ভূত শিক্ষক বললেন,

—তোমরা তোমাদের চোখগুলো কোন্ বাক্স থেকে নিয়েছো? লাল নাকি হলুদ?

বাচ্চারা বললো,

—হলুদ বাক্স থেকে নিয়েছি।

শিক্ষক বললেন,

—শিগগির রেখে এসো, ওগুলো মানুষের চোখ। যেসব মানুষ আমাদের নিয়ে রসিকতা করেছে তাদের চোখ উপড়ে নিয়ে আমরা ঐ হলুদ বাক্সে রেখে দিয়েছি।

           ||এখানে থামছি||


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Comedy