ভূতের সাক্ষাৎকার
ভূতের সাক্ষাৎকার
খুব সন্তর্পনে অত্যন্ত গোপনীয় একটি কথা প্রথমেই বলে রাখতে চাই।
ভূতের সঙ্গে কোনোরূপ আলোচনা বা সাক্ষাৎকার প্রকাশ্যে বলে দেওয়ার কোনও আইন আমার দেশে না থাকায় ফৌজদারি কার্যবিধির আওতায় এটি নাকি অপরাধ! কোনো ভূত বা পেত্নীর পারমিশন ছাড়া জনসমক্ষে ঐসব আনা তাই আমার পক্ষে আদৌ সম্ভব নয়।
মজার কথা তবুও থেকে যায়। আমাদের আইন যাই বলুক না কেন, খোদ ভূতেদের আইনের বইতে এমন কোনো ধারা পাওয়া যায়নি যেখানে এসব প্রকাশের ব্যাপারে তীব্র আপত্তি করা হয়েছে। আইন থাকলেও আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে গলে গিয়ে অনেকে অনেককিছু করে। সেজন্য আমারও সাধ হয়েছে সেই সাক্ষাৎকার আজ আমি প্রকাশ করে হাটে হাঁড়ি ভেঙে দেবো। ভূত বা পেত্নীরা অনেক সত্য কথা বলে যা আমি মানুষের চামড়া গায়ে নিয়েও এখনো বলতে পারিনি।
সেইসাথে ঘোষণা করছি, ভূতেদের তরফ থেকে যদি কোনো প্রতিবাদ থেকে থাকে তবে যেন আগামী তিন ঘন্টার মধ্যে আমাকে জানানো হয়। অন্যথায় অভিযোগ বাতিল বলে গণ্য হবে।
ব্যক্তির গোপনীয়তার অধিকার—আইনের আওতায় উক্ত ভূতের পরিচয় সম্পূর্ণ গুপ্ত রাখা হলো। এবিষয়ে উনি আমাকে অনুরোধ করে কঠোর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন। সতর্ক করে বলেছেন, “অন্যথা হলে আপনাকে সংবাদের হেড লাইনে পাঠিয়ে দেবো।”
কী সাংঘাতিক! আমি ‘উফ্’ বলে লাফিয়ে উঠে সামনে থেকে কেটে পড়েছি। সুতরাং পরিচয় তার নিষেধাজ্ঞা ভাঙবো না। ধীরে সুস্থে সংক্ষিপ্ত সাক্ষাৎকার এখন প্রকাশ করি।
সাক্ষাৎকারের বিশেষ অংশ :
আমি—আপনি কতদিন হলো ভূতের কাজ করছেন?
ভূত—ভূতের কাজ মানে! পুরো ভূত হয়ে গেছি মশাই। আমি আপনাদের দো-আঁশলা ভূত নয়। মানুষ থেকে ভূত হইনি। আমার বাবার বাবাও ভূত ছিলেন। এখন তারা সবাই স্বর্গে গেছেন।
আমি—মাফ করবেন, বুঝতে পারিনি। আপনার বাবার বাবা কিভাবে ভূত হলেন?
ভূত—শুনেছি তিনি ভূত হওয়ার আগে মানুষ ছিলেন। ইংরেজদের সাথে লড়াই করে শহীদ হন। আমি সেই শহীদের বংশধর।
আমি—ও আচ্ছা। তাহলে তো আপনার গৌরবময় বংশ পরিচয় আছে। তা বাড়িতে আপনার কে কে আছে?
ভূত—ধরুন গিয়ে, সবাই আছে। আমি আছি, পেত্নী আছে। মানে আপনারা ঐ যাকে পত্নী বলেন।... ছেলে আছে, মেয়ে আছে। ছেলেটি ছোট, মেয়েটি উঁচু ক্লাসে পড়ছে। মাধ্যমিক দেবে। ভূতনাথ বিদ্যালয় থেকে।
আমি—আপনারা শিক্ষাগ্রহণ করেন নাকি! তা সেসব ইস্কুল পাঠশালা কেমন?
ভূত—পাঠশালা কি বলছেন মশাই, সেসব প্রকৃতি বিশ্ববিদ্যালয়। আমরা যেখানেই ঝাঁকড়া গাছ পাই সেখানে বিদ্যালয় তৈরি করি।
(বাকিটা তিন ঘন্টা কেটে গেলে)
আমি—আপনি কি জানেন আমি কেন এই সাক্ষাৎকারটি নিচ্ছি...?
ভূত— জানি।
(তার এই ‘জানি’ বলায়, চমকে তিন হাত পিছিয়ে এলুম। তিনি আমার মতলব জানলেন কিভাবে!)
অবাক হলেন বুঝি? জানেন তো, এর আগে আমি বহু ইন্টারভিউ দিয়েছি। সবাই এটা জিজ্ঞাসা করে এবং আমার সব উত্তর একই হয়। পাবলিককে গেলানো, তাই না! তারা এসব বড্ড খায়।
আমি—কিন্তু তারা তো সেলিব্রেটিদের গসিপ খায়। আমার এটা খাবে কেন— আপনি কি সেলিব্রেটি?
ভূত—নয়তো কি! তাহলে আমাদের নিয়ে এতো এতো গপ্প ফাঁদো কেন বাপু। ‘ভূতের মুখে রাম নাম’ কথাটি কি আমরা চালু করেছি নাকি! এটা ঠিক যে, ভূতের আর সেকাল নেই। এখন আমরা মানুষের মাথা বেছে বেছে চড়ে বসি।
আমি—ব্যাপারটা কি বুঝিয়ে বলবেন?
ভূত—ধরুন গিয়ে, ব্যাঙ্ক থেকে আপনাদের গচ্ছিত কাঁড়ি কাঁড়ি টাকাগুলো যে ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে, সেগুলো আমরাই তো করাচ্ছি। মানে, আমাদের ভূত প্রজাতির মধ্যে দুষ্টু ভূতগুলো শিল্পপতিদের কারও মাথায় কারও বা ঘাড়ে বসে এসব করাচ্ছে। বুঝেছেন?
আমি—কিন্তু আমরা জানি এগুলোতে পাকা রাজনৈতিক যোগ আছে... কথাটা ভুল?
ভূত—বিলকুল ভুল। সবেতেই ভূতের হাত আছে। ভূত ছাড়া কিছু হাপিস করা মুশকিল। রাজনীতিকরা বুদ্ধি দিতে পারে, কিন্তু ভূত ছাড়া কিচ্ছু হবে না।
আমি—তাহলে কি রাজনীতিকদের ঘাড়েও ভূত চড়ে বসে?
ভূত—না পারে না, ভূত ওদেরই কাছে শুধু ঘেঁষতে পারে না। ওদের ঘাড়ে চড়তে পারে একমাত্র শয়তান। তবে ওদের সকলের ঘাড়ে নয়।
আমি—এখন বাদ দিন ওসব। শুনে, আমার ঘাড়টা কেমন টনটন করছে।.... আপনারা কি কি খান?
ভূত—তাহলে ঘাড় ঢেকে রাখবেন, যেন শয়তান বাসার জায়গা না পায়। শোনেন, আমরা বাতাস খাই আর গোবর খাই।
আমি—বাতাস কেমন করে খান?
ভূত—কেন?... চিবিয়ে চিবিয়ে খাই। বস্তায় ভরে এনে গোবর মিশিয়ে তারপর কাঁড়ুশ কাঁড়ুশ। খুব টেস্টি।
আমি—ওয়াক্—এবার পালাবো, আপনাকে আমার শেষ প্রশ্ন। যদি সম্মান দিয়ে আপনাকে কোনো সভায় নিয়ে গিয়ে সভাপতি করতে চাই, যাবেন?
ভূত—না যাবোই না। আপনাদের মধ্যে এখন কে যে মানুষ আর কে যে ভূত বোঝা দায়। আপনাদের মধ্য থেকে বরং কাউকে বেছে নিয়ে কাজ চালিয়ে নিন। আমাকে এসবে নিয়ে টানাহেঁচড়া করবেন না। মানুষ যা পারে আমরা তা আর পারিনা। ভবিষ্যতে পারবো না।
|| সমাপ্ত ||