গুলাল আবু বকর ‹›

Abstract Fantasy Others

3  

গুলাল আবু বকর ‹›

Abstract Fantasy Others

একদিনের রাজা

একদিনের রাজা

3 mins
418


আমাকে বলা হলো, “একদিনের জন্য প্রচুর ক্ষমতা আর বিপুল অর্থ পেলে কী করবে?”


ভাবতে শুরু করলুম। কি করতে পারি.....

King for a day—fool for a lifetime! একদিনের রাজা আর বাকি জীবন কী? ........ভজা? নাকি কর্তাভজা!

কল্পনা বিলাসে আমিও ডুব দিই, অনেকেই দেন। সেসব ছোটখাটো বিলাস। এতো বড়ো বিলাসী স্বপ্ন আজকেই প্রথম দেখছি। প্র-চু-র অর্থ.......প্রচুর! মানে, গুনে শেষ করা যায় না। পড়ে, জিবটা যে শুধু লক লক করছে তাই নয়, লালা ঝরছে। তা অর্থের বিচারে সেই পরিমাণ কত হবে জানতে পারি! কত গো? .....কত বিলিয়ন ডলার? হ্যাঁ, অর্থটা আমি ডলারেই চাই। ইন্টারন্যাশনাল কারেন্সি কিনা। এর মজাই আলাদা।

অনেকদিন আগের কথা। তা প্রায় দু’বছর হবে। একবার লোকাল ট্রেনে জার্নি করছি। দু’টি বাচ্চা মেয়ে, একটির বয়স দশ বছর হবে, আরেকটি ছোট। ট্রেন থামলে মাঝপথে একটি প্লাটফর্ম থেকে আমাদের কামরায় তারা উঠলো। ছোটটির হাতে একটি বাদ্যযন্ত্র হাতে ঠুকে বাজাতে হয় ঝুনঝুনির মতো আওয়াজ। বড়ো মেয়েটি গান করে। তার হাতে মাউথ অর্গান।

দুটি গান শেষ করার পর, এবার দক্ষিনা নেওয়ার পালা। যখন ওরা আমার সামনে এলো, জিজ্ঞেস করলাম,

— কে আছে তোর বাড়িতে?

প্রথমবার প্রশ্নের কোনো উত্তর পেলাম না। আবার প্রশ্নটি রিপিট করলাম। এবার উত্তর এলো।

— বাবার ভারি অসুখ, কাজে যেতে পারে না। আমরা মায়ের হাতে পয়সা দিলে মা কোনোরকমে সংসার চালায়। 

পকেট থেকে পাঁচশ’ টাকার একটা নোট বার করে ভাঁজ করলুম তারপর তার হাতে দিতে চাইলুম। অবিশ্বাসে সে আমার মুখের দিকে চেয়ে রইলো। ভাবছে, এটা রসিকতা নাকি! বললুম,

—ধরবি তো এটা...।

টাকাটা হাতে নেওয়ার আগে তার হাত কেঁপে গেলো। স্বগতোক্তির মতো সে অবাক বিস্ময়ে বলে ফেললো,

— এতো টাকা!!

ততক্ষণে পরবর্তী স্টেশন এসে গেছে। টাকাটা নিয়ে তারা গান বন্ধ করে কামরা থেকে দ্রুত নেমে গেলো।

সেদিন প্রথম আমার উপলব্ধি হয়েছিলো পাঁচশ’ টাকা মানে প্র-চু-র টাকা। এই চাহিদা যার কাছে যেমন! কামরায় অনেকে আমার দিকে চোখ বড়বড় করে তখন তাকিয়ে। একজন সহযাত্রী বলেই ফেললো,

— এইভাবে আসকার দিয়ে আপনারা এই ভিখারীগুলোকে উৎসাহিত করেন!

অথচ তিনি একটি পয়সা দেননি, কিন্তু আমার দানে তিনি সামাজিক অবক্ষয় দেখতে পাচ্ছেন। আমি ছিলাম পিন পতন নিরুত্তর।

সুতরাং আমি এখন জানতে চাইছি, সেই প্রচুর অর্থ কি পাঁচশ’ টাকার থেকে বেশি হবে? ঠিক আছে, তাহলেই চলবে! যদি আবার কখনো তার সাথে দেখা হয়, এটি আবার তার হাতে তুলে দেবো। সেই সমস্ত ভ্রূকুটি উপেক্ষা করে।


আবার একবার আরো একটি প্রশ্ন করতে ইচ্ছা করছে। ক্ষমতা কি প্র-চু-র?....তবু ওটা কতটা হবে, একটু মাপজোক অন্তত দয়া করে দেন!

শুনেছি ক্ষমতা পেলে মানুষের মাথা নাকি ঘুরে যায়। সচরাচর যা শুনি শুধু সেই অভিজ্ঞতায় কথাটা বললাম। তাহলে আমার মাথা যদি বনবন করে ঘুরতে শুরু করে? তখন? মানে—কতটা ক্ষমতা আমার সহ্য হবে সেটা না বুঝলে ফালতু কাঁটার এই মুকুট পরে কী হবে!

দেখেননি, ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতার অলিন্দে ঢুকে কি নাকালটাই না হলেন বেচারি। ছিলেন বড় দোকানদার, হয়ে গেলেন পৃথিবীর সর্বোচ্চ ক্ষমতাধর। ছিলো রুমাল হয়ে গেলো বেড়াল।

আমার এই রুমাল মনটাকে বেড়াল বানাতে চান নাকি!!

আমি জানিই না কোন্ ক্ষমতা কীভাবে কাজে লাগাতে হয়। তার আগে একটা দশদিনের ট্রেনিং প্যাকেজের ব্যবস্থা করবেন তো! তারপর আমি ক্ষমতা কাকে বলে.....ভয় নেই, আপনার ট্রেনিং অনুসারেই সবকিছু হবে।

কি বলতে চান বলুন, কোনো স্কুল কলেজের প্রিন্সিপ্যালের ক্ষমতা, নাকি গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধানের ক্ষমতা, নিদেনপক্ষে একখান পিটুনি-মন্ত্রীর (রোমিও দেখলেই ছড়িপেটা হবে)?

আশ্বাস কিছু একটা তো দেন। ক্ষমতা মানে তো ভানুমতির খেল। যা খাওয়াবো তাই-ই খেতে হবে, না হলে হাওয়া খাওয়াবো আর উপরি হিসাবে ছড়িপেটা!

জানেন তো, আমার খুব ইচ্ছা ক্ষমতা হলে আমি সমুদ্রে ডুবুরি হবো। নীল তিমির পিঠে চড়ার খুউব ইচ্ছা। শুনেছি নীল তিমির হৃৎপিণ্ড নাকি খুব বড়ো হয়। মানুষের উচ্চতার থেকেও বড়ো। তাই ধরে নেওয়া যায় ওরা অনেক উদার হবে....


আজেবাজে কথা অনেক হলো। এবার থাক।

শিল্প শুধু জীবন নিয়ে কিন্তু নয়। জীবন, বাস্তবতা, কল্পনা, পরা-বাস্তবতা, ইচ্ছাপূরণ....এসব নিয়েই শিল্পের অঙ্গন। শিল্প যেমন জীবনের কাছে যায়, জীবন তেমন শিল্পের কাছে যেতে চায়। লিওনার্দো দা ভিঞ্চির শিল্পের কাছে আমরা জীবনকে নিয়ে গিয়েছি। বার করে এনেছি বায়ুযান। আমরা দিবাস্বপ্ন দেখতে পছন্দ করি। মনের ইচ্ছেগুলোকে দিবাস্বপ্ন দিয়ে বারবার পূরণ করি। স্বপ্নকে নানাভাবে ডিজাইন করি, রঙিন করার চেষ্টা করি। আকাঙ্ক্ষাকে সুখী করার চেষ্টা করি। ইচ্ছাপূরণের গল্প তাই একটি ভালো শিল্প হয়ে উঠতে পারে। বহু উদাহরণ আছে। ভালো শিল্প সবসময় কল্পনার ডানা বিস্তার করে চলতে চায়। এটা কোনো স্কিজোফ্রেনিয়া (schizophrenia) বা psychoanalytic disorder নয়। ইচ্ছা পূরণের ভাবনা সব সুস্থ মানুষের অন্তরে লালিত হয়।

প্রশ্নগুলোকে অবাস্তব, আশাহত ইত্যাদি বলে কান্না জুড়ে দেওয়ার প্রকৃত কারণ নেই। কল্পনাশক্তি দিয়ে এ প্রশ্নের মোকাবিলা করা যায়। এটাই আমার উপলব্ধি।

           ||এখানে থামছি||


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Abstract