গুলাল আবু বকর ‹›

Tragedy Others

2.0  

গুলাল আবু বকর ‹›

Tragedy Others

হিজাব

হিজাব

3 mins
247


ফায়জা এক আদর্শ স্কুলছাত্রী। আগামী মাধ্যমিক পরীক্ষায় তার অতি উজ্জ্বল একখানা রেজাল্ট হবে, স্কুলের প্রতিটি শিক্ষিকা সে ব্যাপারে স্থিরনিশ্চিত আছেন। ছোটবেলা থেকে ওর দীর্ঘ পরিশ্রমের ফল অতঃপর আটকায় কে!

একটি ঘটনায় অকস্মাৎ বোবা হয়ে পড়লো ফায়জা’র সমগ্র পরিবার। মিলিয়ে গেলো একটি মেধা, একটি ভবিষ্যৎ, একটি স্বপ্ন। দেশকে ভালোবেসে, দেশের সম্মান উদ্ভাসিত করার মন্ত্র বুকে নিয়ে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে ওদের সেবা করার যে অটুট বিশ্বাস ভিতরে ভিতরে লালন করেছিলো, মুহূর্তে তা ভেঙে খান খান হয়ে মাটিতে মিশে গেলো।

আকাশ ভেঙে পড়লো মাথায়। এ লজ্জা রাখবে কোথায়! শরীর কুঁকড়ে, হৃদয় মুচড়ে দুমড়ে এতটুকু হয়ে গেলো। স্কুল বোর্ড সার্কুলার জারি করেছে, হিজাব ছাড়াই ফাইনাল পরীক্ষায় বসতে হবে। কারো এতটুকুও ছাড় দেওয়া হবেনা। 

এর অর্থ স্পষ্টভাবে দাঁড়ায়— মাথা, গ্রীবা, বুক প্রতিটি কোণ সবার নজরে পড়া চাই। শরীরের খাঁজ ও সৌন্দর্যের সামান্য অংশও আড়াল করা যাবে না। হ্যাঁ, সেরকমটাই চাওয়া হচ্ছে। লোভী কামুক চ্যুতিয়া দৃষ্টিগুলোকে কোনোরূপ ফাঁকি দেওয়া যাবে না। বোঝো না, এটা পুরুষশাসিত সমাজ! কোন্ স্পর্ধায় হিজাব পরে পথ চলা! নারী শরীর থেকে চুঁইয়ে পড়া সবটুকু রস সে এভাবে আস্বাদন করবে, প্রয়োজনে জোর করেই করবে! এটা তার বাবাকেলে অধিকার। মায়ের গর্ভ থেকে পড়ার সাথে সাথে সে এ অধিকার অর্জন করে ফেলেছে। যদিও সে জানে না কোন্ পুরুষের ঔরসে নিজে জাত হয়েছে। কোনোদিন সেই গ্যারান্টি সংগ্রহ করার কোনো আগ্রহ তার নেই।


খবরটা শোনার পর ধীরস্থিরভাবে নিজ কামরায় ঢুকে পড়লো ফায়জা। একে একে দরজা, প্রতিটি জানালা বন্ধ করে দিলো। এঁটে দিলো প্রতিটি খিল, প্রতিটি ছিটকিনি। বিশাল পৃথিবী তার জন্য পরিণত হলো দশ বাই দশ সীমাবদ্ধ এক কুঠুরিতে। কান্নায় ভেঙে পড়ে লুটিয়ে গেলো মেঝেতে। অথচ সবসময়ই সে ছিলো দৃঢ়চেতা। আজ সে হেরে গিয়েছে কুপ্রবৃত্তির কাছে, কুদৃষ্টির কাছে। সে তার গন্তব্য ইতিমধ্যে স্থির করে ফেলেছে। ‘মন্ত্রের সাধন অথবা শরীর পাতন।’ একটা দীর্ঘ চিঠি সে লিখে রেখে গেলো তার উত্তরসূরীদের জন্য, যাতে তারা যেন তার অপূর্ণ স্বপ্নকে বুকে ধারণ করে। সে লড়াইয়ে তার অতৃপ্ত আত্মা সর্বদা তাদের সাথেই থাকবে।


কোনো আইন পারে কি কাউকে তার মর্যাদার পোষাক শরীর থেকে খুলিয়ে দিতে? না— কোনো আইনই পারে না কাউকে তার পোষাক থেকে বিচ্যুত করতে, বিশেষ করে সে পোষাক যদি হয় শালীন এবং মর্যাদার প্রতীক। সেই রকম কোনো আইনই পারে না, কাউকে আইনের মর্জিমাফিক পোষাক পরিয়ে দিতে যদি কোথাও কোনো সীমালঙ্ঘন না হয়। স্বতন্ত্র এই স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করা একটি গুরুতর সঙ্কট।

কামুক পুরুষ নারীকে বেপর্দা দেখতে চাইবে, এটাই স্বাভাবিক। ধূর্ত যুক্তি দাঁড় করিয়ে যেনতেন সে হিজাবকে খুলতে চাইবে, জানা কথা।


নারী ও বালিকাদের হিজাব খুলে রাখতে বলা মানে তাদের ইজ্জত ও সম্ভ্রমকে ধুলোয় মিশিয়ে দেওয়া। এর ফলে চোখের ‘ধর্ষণকে’ করা হয় উন্মুক্ত। কারা এই নোংরামী করতে চাইছে এবং এতে নিরন্তর মদত যোগাচ্ছে?!.....

এদের সবাই প্রায় তথাকথিত ‘চরিত্রহীন’। এই পুরুষের কাছে অবৈধ যৌনাচার কোনো অপরাধ নয়। বিবেকের দংশনে এরা কখনো ভোগে না। হয়তো সুরাপান ওদের বিবেককে আচ্ছন্ন করে ফেলেছে। এরা নারীর স্বাভাবিক লজ্জাকে হঠিয়ে দিয়ে নগ্নতা কামনা করে এবং এইভাবে তারা নারীকে ক্রমান্বয়ে ভোগের সামগ্রী করে তুলতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। সমাজে ‘ধর্ষণে’ উস্কানি সৃষ্টির উপাদান এভাবে সংগঠিত হয়। এটা হয়তো আশ্চর্যের নয় যে, এই ধরণের লুচ্চা পুরুষই নিষিদ্ধ পর্ণগ্রাফিসমূহের একনিষ্ঠ গুণগ্রাহী। কারণ, সমাজের চলতি ছবিগুলো তো ক্রমশঃ নীল ছবিগুলোর অভিমুখে ধাবিত হয়ে চলেছে, সেখানে তার প্রতিবাদ কই!

হিজাব সরিয়ে ফেলে ওরা শুধু নারীর সম্ভ্রম নষ্ট করে তাই নয়, সেই সাথে তার শিক্ষার অধিকারকে কেড়ে নেয়। এই কৌশল অবলম্বনে একটা প্রজন্ম থেকে অপর প্রজন্মের কোমর ওরা ভেঙে ফেলতে চায়। নষ্ট চরিত্রের ওই মানুষগুলো দেশের মঙ্গল, নিজ ধর্ম ও মনুষ্যত্বের সামগ্রিক শিক্ষা সম্পর্কে চরম অজ্ঞই থেকে যায়!

মাতৃজাতির একটি অংশ পিছিয়ে যাওয়ার সারমর্ম হলো, দেশকে পিছিয়ে পড়তে বাধ্য করা। অতএব, শিক্ষাকে নিরুৎসাহিত করার ফলস্বরূপ  অভিশপ্ত বাল্যবিবাহকে প্ররোচিত করা হয় যা দেশের জন্য মঙ্গলজনক নয়।

                 [সমাপ্ত]


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Tragedy