STORYMIRROR

SHUBHAMOY MONDAL

Action Others

4  

SHUBHAMOY MONDAL

Action Others

চন্দ্রবিন্দু থেকে চ - ৬

চন্দ্রবিন্দু থেকে চ - ৬

3 mins
394

চন্দ্রবিন্দু থেকে চ - ৬

শুভময় মণ্ডল

দু'সপ্তাহ বললেও, রাজীবদা অতটাও তাড়াতাড়ি সব কাজ করে উঠতে পারেনি। প্রায় মাস দু'য়েক পর, একদিন সন্ধ্যাবেলায় রাজীবদা কল করে ডাকলো - ভাই, সমস্ত তথ্য পাওয়া গেছে, চলে আয়। চলে গেলাম।

রাজীবদা আমাকে দুটো সিডি আর একটা এফোর সাইজের সিল্ড এনভেলপ দিয়ে, বলল - আই-কার্ডে পাওয়া কল্যাণী ইউনিভার্সিটির সেই মেয়েটা জানিয়েছে যে, তাদের প্রফেসর অভিরূপ রায়ের গার্লফ্রেন্ড বলেই স্বপ্নাকে দলে নিয়েছিল তারা। এছাড়া, স্বপ্নার সঙ্গে তাদের গ্রুপের কারোরই কোনো সম্পর্ক ছিল না।

এই উত্তরটা আমার আশানুরূপই ছিল। তাই খবরটা শুনে খুশি হলাম দেখে, রাজীবদা বলল - ওর থেকে তো কাজের কিছুই জানা গেল না, তবুও তুই খুশি হচ্ছিস কেন?

বললাম- দাদা, আমি এক্সপেক্টই করেছিলাম যে ওই মেয়েটি বা তার সঙ্গী সাথীরা বিশেষ কিছুই জানবেনা এই স্বপ্না নামের মেয়েটির সম্পর্কে। তদন্তকে ভুল পথে চালনা করার জন্যই সম্ভবত ইচ্ছা করে ওর পকেটে ওই কাগজটি রাখা হয়েছিল। জেন্টস রুমালটাও সম্ভবত সেই কারণেই রাখা।

খুনি জানতো যে কোনো না কোন ভাবে লাশটা পুলিশের হাতে এসে যেতেই পারে‌। সেক্ষেত্রে যথাসম্ভব নিজেদের বাঁচাবার জন্য, বেস্ট প্ল্যান করে কেসটা সাজিয়ে দিয়েছিলো। একটা সাধারণ ঘটনা হিসাবে, এই কেসটাতে পুলিশ যতটা তদন্ত করতে আগ্রহী হতে পারে, ততটা পর্যন্তই প্রকাশের উপযোগী করে বাকি সমস্ত ঘটনা সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন করে রেখে দিয়েছে।

তাদের অনুমান ছিল যে বেওয়ারিশ একটা লাশের জন্য পুলিশ নিশ্চয়ই স্বর্গ-মর্ত্য এক করে অনুসন্ধান করবে না, তাদের আরো অনেক কাজ আছে। সুতরাং তাদেরকে বিরক্ত হয়ে হাল ছেড়ে দেওয়ার মতো অবস্থায় নিয়ে যাওয়ার জন্য যা যা করণীয় তাই করে রেখেছে কেসটায়।

তুমি কি এই সিডিআর-গুলো বা ইউজিসির রিপোর্ট বা টাওয়ার লোকেশনগুলো চেক করে দেখেছো? তাহলে হয়তো তুমিও অনেক কিছুই বুঝতে পারতে। এটাও পরিষ্কার বুঝতে যে আমি কোন দিকে ইঙ্গিত করছি।

রাজীবদা - না রে, আমি আর ওগুলো চেক করিনি। তুই নিজেই যখন দায়িত্ব নিয়েছিস, এই বিষয়টায় আলাদা করে সময় দিচ্ছিস, তদন্তটা করছিস, তখন আমি আর এখানে নাক গলাতে চাইনা। তোর তদন্ত শেষ হলে তোর থেকেই শুনবো সব, আর যদি কিছুর দরকার পড়ে আমাকে বলিস, আমি চেষ্টা করব।

বাড়ি ফিরে আমি বসলাম রত্না আর অভিরূপ রায়ের কল-ডাটা রেকর্ড চেক করতে। একটু সময় লাগলো রিপোর্টগুলোকে এডিটেবল ভার্সনে ট্রান্সফার করে নিতে। আর সেটা হয়ে যেতেই, যথারীতি রহস্যের জালও খুলতে শুরু করলো।

ইউজিসির ডকুমেন্টসগুলো খুঁটিয়ে দেখলাম - না, স্বপ্না কোন দক্ষিণ ভারতের স্কুল, কলেজ বা ইউনিভার্সিটি থেকে পাস করেনি। সে দক্ষিণবঙ্গের বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা করেছিল। তার স্কুলের ঠিকানায় গিয়ে হাজির হলাম পরদিন সকালেই।

হেডমাস্টার মশাইটি নতুন এসেছেন, কিন্তু স্কুলের বড়বাবুটি বেশ পুরনো। স্বপ্নার মাধ্যমিকের পাস সার্টিফিকেটের কপিটা তাঁকে দেখিয়ে, তার সঠিক ঠিকানা জানতে চাইলাম। তিনি ভালো করে সেটা দেখে একটু চিন্তা করে, হাঁক দিলেন - ভবতারণ!

একজন ছিপছিপে চেহারার মাঝবয়সী লোক এসে হাজির হলো। মুখ থেকে তার ভুর ভুর করে বেরোচ্ছে দেশী কারণের গন্ধ, জর্দা দেওয়া পানের পিকে লাল ঠোঁট। সে এসে আমাকে আপাদমস্তক দেখতে দেখতে বলল - বলুন স্যার, কি আনতে হবে?

বড়বাবু বললেন - ২০০০ সালের আগের মাধ্যমিকের রেজিস্টারটা নিয়ে এসো।

ভবতারণ একখানা ইয়াব্বড় জাবদা খাতা এনে হাজির করলো তাঁর সামনে। তিনি একটু উল্টে পাল্টে দেখে, একটা কাগজে খসখস করে একটা ঠিকানা লিখে আমার হাতে ধরিয়ে দিলেন। বললেন - নাম ঠিকানা সব লিখে দিলাম। কিন্তু ওখানে গিয়ে কোনো লাভ নেই, তারা সব বহুদিন আগেই মারা গেছে।

 

- চলবে -


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Action