চন্দ্রবিন্দু থেকে চ - ৩
চন্দ্রবিন্দু থেকে চ - ৩
চন্দ্রবিন্দু থেকে চ - ৩
শুভময় মণ্ডল
মেয়েটির নাম স্বপ্না দাস, সেই আইকার্ডে যে নামটা ছিলো সেটা না! তার আসল বাড়ি মালদা, সঠিক ঠিকানাটা তাঁর জানা ছিলো, কিন্তু সেই মুহুর্তে মনে করতে পারেননি। পড়াশুনার কারণে স্বপ্না আড়িয়াদহে থাকতো, তাঁর কাছে আসতো রোজ নৌকায় গঙ্গা পেরিয়ে। অনেকদিন ধরেই রীলেশান তাঁদের। সবে তিনি কলেজে লেকচারার হিসাবে জয়েন করেছেন। ঠিক করেছিলেন তার নেট পরীক্ষাটা হয়ে গেলেই বিয়ের কথা বলবেন বাড়িতে। কিন্তু এই নিয়েই মাস খানেক আগে নাকি, নিজেদের মধ্যে একটু কথা কাটাকাটি হয়েছিলো তাঁদের।
স্বপ্না এখনই বিয়ের জন্য রাজী ছিলো না। কোনো বিশেষ কারণও ছিলো না তার মানা করার। শুধু এত তাড়াতাড়ি বিয়ে করতে চায় না সে, এমনটাই বলে হঠাৎ রাগ করে উঠে চলে গিয়েছিলো ঘর থেকে। মোবাইলটা রাগ করে সে ওখানেই ফেলে গেছে দেখে, তাকে সেটা দেবার জন্য উনি লঞ্চঘাটে দৌড়েছিলেন।
কিন্তু সেখানে এসে দেখেন, স্বপ্না ওখানে যায়ই নি! আড়িয়াদহে স্বপ্নার মেসের রুমমেট ছিলো রত্না, সেও তাঁর ছাত্রী। তাই তাকেই কল করেন তিনি খবরটা জানাতে। কিন্তু রত্না জানায়, স্বপ্না নাকি তার কয়েকদিন আগেই ওখানকার ঐ মেস ছেড়ে, চলে এসেছে উত্তরপাড়ায়! এখন সে নাকি উত্তরপাড়াতেই কোনো মেসে থাকে! অথচ তিনিও জানতেন না এ বিষয়ে কিছুই!
দু'তিন দিন বাদেও যখন না তো স্বপ্না এলো, না রত্না দিতে পারলো তার কোনো খোঁজখবর, তিনি থানায় মিসিং ডায়রী করেন, সেও প্রায় মাস খানেক আগে। তার রিসিপ্টও ছিলো তাঁর কাছে। মোবাইলের কল-হিস্ট্রি থেকে, রত্নার সঙ্গে কলের ডেটটাও দেখান তিনি। ঐ তারিখেই তিনি লাস্ট কল করেছিলেন রত্নাকে। স্বপ্নার সেই মোবাইলটাও দেখালেন তিনি। স্বপ্না, রত্না দু'জনেরই ফোন নম্বরও কাগজে লিখে দেন তিনি।
ক্লাবের ছেলেরা বরানগর থানায় মেয়েটার সেই মিসিং-ডায়রীর কপি, আর তাদের দুজনের ফোন নম্বরদু'টো জমা করে দেয়। স্বপ্নার বাড়ির সঠিক ঠিকানাটা পাওয়া গেলো না তবুও। মোবাইল নম্বরের সাবস্ক্রাইবার ডিটেলস থেকে জানা গেলো, প্রিঅ্যাক্টিভেটেড সিম ব্যবহার করছিলো সে। তাই সাবস্ক্রাইবারের নাম ঠিকানা কোনো কিছুরই হদিশই পেলোনা পুলিশ। অভিরূপ রায় নিজেও পরে বরানগর থানায় এসে, বড়বাবুকে সেই মিসিং-ডায়রীর অরিজিনাল রিসিপ্টটা জমা দেন।
নেট পরীক্ষার জন্য নাকি গাইড করছিলেন তিনি স্বপ্নাকে। সেই থেকেই প্রেমের সূত্রপাত হয় তাঁদের, তাও প্রায় বছর খানেক আগে। স্বপ্না নিজের বাড়ির ব্যাপারে কিছু বলতে বিশেষ উৎসাহ দেখাতো না, তিনিও জোরাজুরি করতেন না। তবে এটা জানতেন যে, মালদারই কোনো গ্রামে তার বাড়ি, নামটা একটু আনকমন বলে এখন মনে নেই তাঁর।
স্বপ্নার মার্কশীট বা পাস সার্টিফিকেটগুলো পাওয়া গেলে, সেই ইন্স্টিটিউট থেকে হয়তো জানা যেতে পারতো তার ঠিকানা। তার স্কুলের পড়াশুনার ব্যাপারে স্বভাবতই তাঁর কিছুই জানা ছিল না। এদিকে দক্ষিণ-ভারতের কোন কলেজ, কোন ইউনিভার্সিটি থেকে যে গ্রাজুয়েশন আর মাস্টার্স ডিগ্রী করেছিলো সে, তাও তো মনে করতে পারলেন না তিনি। মোট কথা, মেয়েটির বিষয়ে নতুন করে আর কোনো কিছুই জানা গেলো না তার সেই লেকচারার প্রেমিকের থেকে!
পুলিশের কাছে এখন একটাই পথ খোলা ছিলো, যদি রত্নার থেকে কোনও খোঁজখবর মেলে। বেলঘরিয়া থানার মেজবাবু অপূর্ব সাহাকে তাই কল করলেন বড়বাবু। তাঁকে সব ঘটনা জানিয়ে, রত্নার ফোন নম্বরটাও দিয়ে, তার থেকে যা যা দরকার সব জানতে অনুরোধ করলেন।
বেলঘরিয়া থানার মেজবাবু, প্রথমে রত্নাকে একটা কল করাই ঠিক হবে ভাবলেন। রত্না ফোনটা ধরতেই, তিনি নিজের পরিচয় দিয়ে বেলঘরিয়া থানায় একবার আসতে বললেন তাকে।
-চলবে-
