বল্টুদার শুভ পরিণয়
বল্টুদার শুভ পরিণয়
আমাদের সবার প্রিয় বল্টুদা, ভালো নাম অবশ্য একটা আছে তবে সবাই বল্টুদা বলেই ডাকে। কোনো এক অজ্ঞাত কারণবশত এই নামটা বেশী জনপ্রিয় হয়ে গেছে। বল্টুদার জীবনে সবকিছুই বড্ড মাখনের মতো। এটা কিন্তু ভালো অর্থে মোটেই বলিনি। এর আসল কারণটা হলো যা কিছুই বল্টুদার জীবনে আসে সব কেমন যেন মাখনের মতো ফসকে চলে যায়। মানুষটা কিন্তু বেশ খোলামেলা। সবার উপকার করে। আট থেকে আশি সবাই একবাক্যে বলে "বল্টুদা তোমায় ভালোবাসি"।
সকালবেলা কচুরির দোকানে,
বল্টুদা : "আজ মন চেয়েছে আমি হারিয়ে যাব, হারিয়ে যাব আমি তোমার সাথে "
হাবলু: আরে বল্টুদা আসছে তাড়াতাড়ি কচুরিগুলো শেষ কর বাবলু।
বল্টুদা : কী ব্যাপার মানিকজোড়, আমাকে ছাড়াই সকাল সকাল কচুরি খাওয়া হচ্ছে? আমি না তোদের গুরু, আমাকে না দিয়ে খাওয়া মহাপাপ। তোরা জানিস না?
বাবলু : জানি তো তুমি আমাদের গরু থুরি গুরু। তাই তো আমরা আগে থেকে খেয়ে দেখছি কেমন খেতে। তুমি এবার খাও।
দোকানদার : বলছি ও ভাই তোমাদের কচুরির টাকাটা...
বাবলু : এই তো আমাদের গুরু এসে গেছে। উনিই সব দিয়ে দেবেন।
বল্টুদা : সকাল সকাল আমার পকেটটাই পছন্দ হলো? ঠিক আছে। শোন, একটু পরে বেলার দিকে ক্লাবে আসবি। আগমনীর অনুষ্ঠান নিয়ে আলোচনা করব।
ঠিক এইসময় রাস্তা দিয়ে একটা মেয়ে হেঁটে যাচ্ছিল। মেয়েটাকে দেখে বল্টুদার কচুরি হাত থেকে আর মুখে যায় না। অনেকক্ষণ ধরে অপেক্ষা করতে করতে কচুরি বেচারা নিজেই হাত ফসকে মাটিতে পড়ে গেল। বল্টুদার এরকম অবস্থা আমরা কোনোদিন দেখিনি।
হাবলু : ও বল্টুদা কী হলো? এরকম স্ট্যাচু হয়ে গেলে কেন?
বল্টুদা : ফালতু বকিস না। তোদের যখন আসতে বললাম তখন চলে আসিস।
বাবলু : বুঝলি হাবলু, ব্যাপারটা হাইলি সাসপিসিয়াস। বল্টুদা ওই মেয়েটাকে দেখে ওরকম ভ্যাবলা কার্তিক হয়ে গেল, ডাল মে কুছ তো কালা হ্যায়। তুই বাড়ি যা আমি একটু আসছি।
হাবলু : তুই আবার এখন কোথায় যাচ্ছিস? মিটিংয়ে যাবি না? বল্টুদা কিন্তু দেরীতে এলে হেব্বি ঝাড়বে।
বাবলু : তুই চিন্তা করিস না আমি ঠিক সময়ে পৌঁছে যাব।
ক্লাব ঘরে...
বল্টুদা : কীরে তুই একা কেন? বাবলু কোথায়?
বাবলু : (দৌড়াতে দৌড়াতে) এই তো আমি এসে গেছি।
বল্টুদা : আচ্ছা...শোন সবাই, প্রতিবারের মতো এইবারও আমরা আগমনীর অনুষ্ঠানের আয়োজন করছি। শুরুতেই গান, তারপর নাচ, আবৃত্তি এবং সবশেষে নাটক দিয়ে আমাদের অনুষ্ঠানের সমাপ্তি।
হাবলু : আবার নাটকের কী দরকার?
বল্টুদা : কেন তোর কোনো অসুবিধা আছে? আমি তোদেরকে তালিম দেব নাটকের।
হাবলু : না, অসুবিধা নেই। কিন্তু আগের বার তুমি এমন ধুতি পড়িয়েছিলে যে স্টেজে উঠে সবার সামনে খুলে গেছিল। আমার মান-সম্মানের পুরো হালুয়া বানিয়ে দিয়ে ছিলে।
বল্টুদা : ওটা তোর দোষ ছিল। তুই যদি এখন নিজেকে সত্যি সত্যিই হনুমান ভেবে লাফ দিস তাতে আমার দোষ?
হাবলু : আমি কিন্তু এইবার আর হনুমানের রোল করব না।
বল্টুদা : ওটা তুই ছাড়া কেউ করতে পারবে না। তাই এবারেও তুই করবি। বাবলু বড়ো করে ব্যানার বানাবি। তাতে সুন্দর করে লিখবি এবারের নাটক "মা দূর্গার অকালবোধন"।
বাবলু : ঠিক আছে বল্টুদা।
বল্টুদা : বাবলু, এবারে স্পেশাল অতিথি আনার দায়িত্ব কিন্তু তোর।
বাবলু : আমার মনে আছে। তুমি চিন্তা করো না। এমন অতিথি আনব তুমি পুরো অবাক হয়ে যাবে।
হাবলু : নিশ্চয়ই ওর মাথায় কোনো বদ মতলব আছে (মনে মনে)।
দেখতে দেখতে অনুষ্ঠানের দিন চলে এল। সকাল থেকেই সবাই খুব ব্যস্ত।
বল্টুদা : সব আয়োজন হয়ে গেছে, সন্ধ্যায় শুধু অনুষ্ঠানটা ভালোয় ভালোয় মিটে গেলেই হয়।
বাবলু : আমিও ঠিক সময় অতিথিদের নিয়ে চলে আসব।
হাবলু : খাবারের কী ব্যবস্থা করেছ বল্টুদা? আমি কিন্তু তোমার কথা মতো হনুমান হচ্ছি।
বল্টুদা : হ্যাঁ রে, সব ব্যবস্থা আছে। তুই চিন্তা করছিস কেন। সবার জন্য একটা করে গজা, একটা করে সিঙ্গারা আর দুটো করে রসগোল্লার আয়োজন করেছি।
কথাটা শুনেই হাবলুর মুখে জল চলে এল। ওর মনে হচ্ছে এখনি গিয়ে সব খেয়ে এলে ভালো হয়। ওর মনের ভাব বল্টুদা বুঝতে পেরে বলল….
বল্টুদা : নাটকে যদি কোনো গুবলেট করেছিস তাহলে ওই গজা আর সিঙ্গারা তোর কপালে তো জুটবে না উলটে ওই রসগোল্লার খালি হাঁড়ি আমি তোর মাথায় ভাঙব এই বলে দিলাম।
দেখতে দেখতে অনুষ্ঠানের দিন চলে এল। সকাল থেকে সবাই খুব ব্যস্ত। সন্ধ্যায় অনুষ্ঠানের সমস্ত আয়োজন আর একবার ভালো করে দেখে নিয়ে বল্টুদা বাড়ি গেল। অনুষ্ঠান ভালো ভাবেই এগোচ্ছিল। প্রথমে উদ্বোধনী সঙ্গীত, তারপর একে একে নাচ, গান, আবৃত্তি সব ভালোয় ভালোয় মিটে গেছে। আসল গন্ডগোলটা হলো নাটকের একবারে শেষ দৃশ্যে এসে। রাবণকে তীর মারতে গিয়ে বল্টুদা নার্ভাস হয়ে হনুমানের পিছনে তীর মেরে দিয়েছে। যথারীতি পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য তাড়াতাড়ি পর্দা ফেলে দিতে হয়েছে। প্রতিবারের মতো এবারও নাটক অসমাপ্ত রেখেই অনুষ্ঠান শেষ করতে হলো। আসল রহস্য ফাঁস হলো ক্লাবঘরে।
হাবলু : আঃ, আসতে আসতে মলম লাগা টুকাই।
টুকাই : আচ্ছা, তুই চুপ করে থাক। বেশী কথা বলিস না। বাবলুটা কোথায় রে?
হাবলু : কী ব্যাপার খুব তো বলেছিলে গুবলেট হলে মাথায় হাঁড়ি ভাঙবে। হাঁড়িটা আনি? নিজের মাথায় এবার ভাঙো।
বল্টুদা : বাবলু কোথায় রে? আজ ওর একদিন কী আমার একদিন।
বাবলু : শয়তান কা নাম লিয়া আর শয়তান হাজির। কেমন দিলাম বল্টুদা? বলেছিলাম না পুরো চমকে যাবে।
বল্টুদা : নাটকের বারোটা বাজিয়ে এখন জিজ্ঞেস করছিস কেমন দিলাম।
বাবলু : রাগ করো না। তোমার জন্য আর একটা সারপ্রাইজ আছে।
বল্টুদা : আমার আর কোনো সারপ্রাইজের দরকার নেই। তুই হাবলুকে বাড়ি দিয়ে আয়।
বাবলু : আরে ওসব পরে হবে। তোমার আর নন্দিনীদির বিয়েতে মাস্টারমশাই রাজি। উনি খুব শিগগিরই তোমাদের বাড়িতে যাবেন।
এইরকম একটা সারপ্রাইজের আশা বল্টুদা করে নি। খবরটা শুনে পুরো হতবাক হয়ে গেছে। বাবলু পুরো ব্যাপারটা সবাইকে খুলে বলব। কীভাবে বল্টুদা আর নন্দিনীদির আলাপ হয়েছিল, কেন ওদের বিয়েতে আপত্তি ছিল মাস্টারমশাইয়ের। সবথেকে মজার ব্যাপার হল অভিরূপ থেকে বল্টুদা হওয়ার কারণটাও আজ সবার কাছে পরিস্কার হলো। বল্টুদা আগে খুব মোটা ছিল তাই নন্দিনীদি বলেছিল এরকম নাটবল্টুর মতো দেখতে কাউকে ও বিয়ে করবে না। কিন্তু কদিন আগে ওকে দেখে নন্দিনীদি ওর মত পাল্টায়। তাই তো আজকে আমাদের এই অনুষ্ঠানে এসেছিল বল্টুদার নাটক দেখতে। কিন্তু...
হাবলু : যাক, নাটকের খাওয়াটা হলো না বলে আমার আর কোনো আফশোস নেই। একেবারে বল্টুদার বিয়ে-বৌভাত দুটো মিলিয়ে সবটা পুষিয়ে নেব।
সবাই ওর কথা শুনে হো হো করে হেসে উঠল। শেষপর্যন্ত বল্টুদার উপর প্রজাপতি দেবতা সদয় হলেন আর শুভ পরিণয়টা হয়েই গেল।
(সমাপ্ত)