মডেল হত্যা রহস্য (তৃতীয় পর্ব)
মডেল হত্যা রহস্য (তৃতীয় পর্ব)
ফাইলগুলো দেখতে দেখতে বিক্রমের অনেকগুলো জায়গায় খটকা লাগল। ও তাই ঠিক করল সব শুরু থেকে খোঁজখবর নেবে। তাই ও ওর এক পুরোনো বিশ্বস্ত লোককে ফোন করল। কিছুক্ষণ ফোন বেজে যাওয়ার পর ওপ্রান্ত থেকে শোনা গেল,
-নমস্কার, স্যার। কেমন আছেন?
-আমি ভালো আছি। তুই কী করছিস আজকাল?
-এই তো স্যার, আপনার দয়ায় ভালোই আছি।চাউমিনের দোকানটাও এখন ভালোই চলছে।
-বাহ বেশ। শোন, আমার একটা কাজ করতে হবে।
-হ্যাঁ স্যার, বলুন।
-কতগুলো ফটো পাঠাচ্ছি। এদের ব্যাপারে সব খবর, ভূত-ভবিষ্যত-বর্তমান সব আমার চাই। আর এখন থেকে এদের উপর নজরও রাখতে হবে। কখন কোথায় যাচ্ছে, কী করছে সব।
-বুঝতে পেরেছি স্যার। আপনি কোনো চিন্তা করবেন না।
-হুম।
ফোনটা কেটে দিয়ে বিক্রম রঘুকে ছবিগুলো পাঠিয়ে দিলো।
রঘুর সাথে বিক্রমের পরিচয়টা খুব অদ্ভুতভাবে হয়েছিল। একদিন বিক্রম অনেক রাত করে বাড়ি ফিরছিল। তখন সবে সবে এই ফ্ল্যাটে এসেছে। সঙ্গে গাড়ি না থাকায় অফিসের গাড়ি ওকে রাস্তার মোড় পযর্ন্ত ছেড়ে দিয়ে গেছে। বাকিটা হেঁটেই ফিরছিল হঠাৎ অনেকগুলো লোকের চিৎকার-চেঁচামেচি শুনে এগিয়ে গিয়ে দেখে পাড়ার কতগুলো লোক একটা ছেলেকে ধরে বেধড়ক মারছে। ছেলেটা নাকি চুরি করতে গিয়ে ধরা পড়েছে। সেদিন কোনো রকমে ওই লোকগুলোকে শান্ত করে নিজের পরিচয় দিয়ে ওদের হাত থেকে ওকে ছাড়িয়ে নিজের ফ্ল্যাটে নিয়ে এসেছিল। পুলিশ শুনে রঘু প্রথমে তো খুব ঘাবড়ে গিয়েছিল। কিন্তু থানায় না নিয়ে গিয়ে নিজের ফ্ল্যাটে নিয়ে আসায় একটু অবাক হয়েছিল। এরপর বিক্রম ওকে জিজ্ঞেস করেছিল,
-এই লাইনে তো নতুন, তা কতদিন হলো এসেছিস? আর হঠাৎ এই লাইনে কেন?
বিক্রমের প্রশ্ন শুনে প্রথমে রঘু চমকালেও কিছুক্ষণ পর ধীরে ধীরে বলেছিল,
-বাড়িতে অসুস্থ মা আছে, বাবা নেই, একটা ছোট বোন আছে।
-তাই তুই সব ছেড়ে চুরি করবি?
-অনেকদিন ভালো করে খাওয়া-দাওয়া হয়নি। মায়ের ওষুধ কেনার পয়সা নেই। তাই..
-কোনো কাজ করতে পারতিস।
-কেউ কাজ না দিলে কী করব?
-কেউ কাজ দিলে করবি?
রঘু মুখে কিছু না বলে শুধু ঘাড় নেড়েছিল। বিক্রম কিছু টাকা ওর হাতে দিয়ে বলেছিল এনে এই টাকাগুলো নিয়ে এখন বাড়ি যা। ওষুধ, খাবার কিনে নিস। কালকে আমার কাছে আবার আসবি। মনে থাকবে তো?
-হ্যাঁ, মনে থাকবে।
রঘু চলে যাওয়ার আগে বিক্রমকে বলল,
-একটা কথা জিজ্ঞেস করব স্যার?
-কী বল।
-আপনি কী করে জানলেন আমি এই লাইনে নতুন?
-দুটো কারণে জেনেছি। প্রথমত, এই সন্ধ্যেবেলায় সচরাচর কোনো ওস্তাদ চোর চুরি করার বোকামি করে না যেখানে বাড়িতে লোক রয়েছে। দ্বিতীয়ত, তুই যদি ওস্তাদ হতিস তাহলে এতো সহজে ধরা পড়তিস না। এবার বাড়ি যা।
(পরেরদিন...)
রঘু সকালবেলা ওর কাছে এলে, ও রঘুকে নিয়ে যায় একটা রেস্টুরেন্টে। এই রেস্টুরেন্টটা ওর বন্ধুর হওয়ায় সেখানে বলে ওকে কাজে ঢুকিয়ে দেয়। তার সাথে এটাও বলে-এখানে মন দিয়ে কাজ করবি আর আমি যখন ফোন করে ডাকব তখন চলে আসবি।
কথা শেষ করে ওর হাতে একটা নতুন ফোন ধরিয়ে দেয়। তারপর দেখতে দেখতে পাঁচবছর হয়ে গেছে। এখন রঘু নিজেই একটা চাউমিনের দোকান খুলেছে। আর বিক্রম যখন যার খবর জোগাড় করতে বলেছে তখনই সেটা করেছে।
****
-ধুর্, সেই কখন থেকে ফোন করছি। একবারও ফোনটা ধরল না।
শ্যামলী এই নিয়ে প্রায় পনেরোবার অনলকে ফোন করেছে কিন্তু অনল একবারও ফোন ধরেনি। তাই ও এবার একটা মেসেজ করল,
"ফোনটা একটু ধরো। জরুরী কথা আছে।"
সঙ্গে সঙ্গে রিপ্লাই আসে,
"আজকে কাজের খুব চাপ। একটা জরুরী কেস এসেছে। পরে কথা বলব।"
ফোনটা রেখে দিয়ে শ্যামলী রান্নাঘরের দিকে পা বাড়ালো।
***
শ্যামলীকে মেসেজ করে ফোনটা পকেটে ঢুকিয়ে অনল বিক্রমের কেবিনে আসে,
-স্যার আসব?
বিক্রম এতক্ষণ অনলের জন্যই অপেক্ষা করছিল। ওকে আসতে দেখে ও বলল,
-হ্যাঁ, এসো, বসো। কতদূর কি হয়েছে তাড়াতাড়ি বলো।
চেয়ারে বসতে বসতে অনল বলল,
-এখনো পর্যন্ত চুরির সন্দেহে ওরা একজনকে গ্রেফতার করেছে। তারপর কেসটা আমাদের কাছে আসায় ওরা আর এই ব্যাপারে এগোয়নি।
-কাকে গ্রেফতার করেছে? দোকানে রাতে যে পাহারা দেয়, মানে সিকিউরিটি গার্ডকে, তাই তো?
-আপনি কি করে জানলেন স্যার?
-এটা তো খুব সাধারণ ব্যাপার। চুরি হলে আগে দোকানের সিকিউরিটি গার্ডকেই ধরবে।
-হ্যাঁ, সেটা ঠিক স্যার।
-আচ্ছা, মৃতদেহ প্রথম কে দেখেছে?
-ওই সিকিউরিটি গার্ডটাই। ওই তো পুলিশে আর দোকানের মালিককে ফোন করে খবর দিয়েছিল।
-আচ্ছা, ঠিক আছে। তুমি এক কাজ করো "সেন এন্ড সন্স জুয়েলার্স"-এর মালিক রজতাভ সেনের সাথে দেখা করো। ওনার থেকে কিছু জানা যায় কিনা দেখো। লোকাল পুলিশের দেওয়া ফাইলে তথ্য খুব কম সম্ভবত ওরা বেশি সময় পায়নি বলে বেশি তথ্য দিতে পারেনি। ওনার থেকে জেনে নিয়ে আমাকে বলো।
-ঠিক আছে স্যার।
-এখন চলো বেরনো যাক। আমাকে ওই ফ্যাশন শো যেখানে হচ্ছিলো সেখানে নামিয়ে দিও। তোমার যাওয়ার পথেই পড়বে। আর শোনো, তুমি তোমার কাজ করে বাড়ি চলে যেও। বিকেলে আমার বাড়ি এসে রিপোর্ট করো।
-ঠিক আছে স্যার।
ওরা দুজনে গাড়ি করে বেরিয়ে গেল।
(৬)
প্রায় তিনঘন্টা গাড়িতে যাওয়ার পর ওদের গাড়িটা "কলাকৃৎ" অডিটোরিয়ামের সামনে এসে থামল। এখানেই কাল সন্ধ্যায় ফ্যাশন শোয়ের আয়োজন করা হয়েছিল। অনল ওকে নামিয়ে দিয়ে চলে গেল। বিক্রম এখানে আসার আগে ওর পুলিশের ইউনিফর্ম খুলে সাধারণ পোশাক পরে নিয়েছিল। তাই এখানে সেরকম ভাবে ওকে কেউ চিনতে পারছে না। ও গেট দিয়ে ভেতরে ঢুকল। দূর থেকে একটা ছেলেকে আসতে দেখে বিক্রম তাকে হাত নেড়ে কাছে ডেকে জিজ্ঞেস করল-ও ভাই, বলছি ফ্যাশন শো-এ নাকি গন্ডগোল হয়েছে শুনলাম। তা ব্যাপারটা কি একটু খুলে বলা যাবে?
ছেলেটি কিছুক্ষণ ওকে ভালো করে দেখে নিয়ে বলল-আপনি কি কোনো সংবাদপত্র থেকে এসেছেন?তাহলে দেখুন, আমি সত্যিই কিছু জানি না।
বিক্রম এবার গলার স্বর আরও কিছুটা নামিয়ে বলল-আরে, না না, আমি কোনো সংবাদপত্র থেকে আসিনি। আমি তো এমনিই জিজ্ঞেস করছিলাম।
বিক্রম কথাটা শেষ করে একটা একশো টাকার নোট ছেলেটার পকেটে গুঁজে দিয়ে বলল,
-কালকে এখানে ঠিক কি হয়েছিল?
-আমি তো স্যার সেরকম কিছু জানি না। আমিতো এখানে শুধু চা-বিড়ি-সিগারেট যার যা লাগে সেগুলো এনে দিই। রাতুল স্যার সব বলতে পারবে আপনাকে।
- রাতুল কে?
-উনি কুশল স্যারের ম্যানেজার। উনি এই সবকিছু দেখভাল করেন।
-আচ্ছা। তাকে কোথায় পাওয়া যাবে?
-এখন তো উনি এখানেই আছেন। স্যার আপনি এই গেট দিয়ে ভিতরে চলে যান। প্রথম যে ঘরটা পড়বে সেটাই রাতুল স্যারের।
ছেলেটা চলে গেলে বিক্রম ওর নির্দেশমতো ভিতরে চলে যায়। প্রথম ঘরের দরজায় টোকা দিতেই ভেতর থেকে গলার স্বর ভেসে আসে,
-ভিতরে আসুন।
বিক্রমকে দেখে রাতুল প্রথমে অবাক হয়ে যায়। তারপর বিরক্ত হয়ে প্রশ্ন করে,
-আপনি কে? কোন মিডিয়ার লোক নাকি? দেখুন এখন কারো সাথে কথা বলার মত অবস্থা আমার নেই?
এখানকার ম্যানেজার, রাতুল দত্ত প্রথমে কথা বলতে চাইলে বিক্রম ওর আইডি কার্ডটা দেখায়। সেটা দেখে রাতুল ওকে চেয়ারে বসতে বলে। ওর পরিচয় জানার পর আর না করার সাহস পায়নি।
চেয়ারে বসে বিক্রম বলে,
-আমার আপনার কাছে কয়েকটা ব্যাপারে জিজ্ঞাসা ছিল।
রাতুল ওকে বলে,
-বলুন, কি জানতে চান?
- এই ফ্যাশন শোটা কারা আয়োজন করেছিল? তাদের ব্যাপারে যা জানেন সবটাই আমাকে বলুন।
রাতুল জলের গ্লাসে একটা চুমুক দিয়ে রুমালে মুখটা মুছে বলতে শুরু করল,
"এই ফ্যাশন শোটা 'রায় এন্ড রায় গার্মেন্টস' আয়োজন করেছিল। এই গার্মেন্টস কোম্পানিটার মালিক মি.কুশল রায়। আগে অবশ্য এটা ওনাদের পারিবারিক ব্যবসা ছিল। কিন্তু গত দুবছর ধরে এটার একছত্র মালিক কুশলবাবুই। দুবছর আগে ওনাদের বাবা, মানে হরিহরণবাবু মারা যান। তারপরই ওনারা দুই ভাই, কুশল আর কুন্তল দুজনে এই ব্যবসাটা ভাগাভাগি করে নেন। যদিও ওনারা সবাই এখনও এক বাড়িতেই থাকেন। কারণ বাড়িটা ওনার মায়ের নামে। আর ননীবালাদেবী চান না ওনার ছেলেরা কেউ ওনার থেকে দূরে থাকুক। তাই ওনারাও সপরিবারে এখনও একসাথেই থাকেন। কুশলবাবুর একটি ছেলে, রাহুল রায়। সেও নিজের পড়াশোনা শেষ করে এখন বাবার সাথে ব্যবসা সামলাচ্ছে। কুন্তলবাবুর একটি মেয়ে, দিঠি রায়। এই বছর সবে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছে। তবে কুশলবাবুর ব্যবসা বেশ রমরমিয়ে চললেও কুন্তলবাবুর ব্যবসা একবছর ধরে ভালো চলছে না। এই জন্য দাদার কাছে সাহায্যও চেয়েছিলেন। কিন্তু সেরকম কোনো সুবিধা হয়নি। আর..?
-আর কী? থামলেন কেন? বলুন।
-এই ফ্যাশন-শোটা কুশলবাবুর জন্য খুব জরুরী ছিল। এটা ঠিকঠাক হলে উনি একটা বিশাল বড়ো টাকার অর্ডার পেতেন। তাই এরকম একটা অঘটন ঘটে যাওয়ায় উনি খুব আঘাত পেয়েছেন। এর থেকে বেশি আর কিছু আমি জানি না।"
ম্যানেজারের সাথে কথা বলে আর বেশি কিছু জানা গেল না। কারণ রাতুল ঘটনার সময় স্টেজের সামনেই ছিলো। তাই কখন, কী করে স্নেহা এখান থেকে বেরিয়েছে সেটা ও জানে না। তাই বিক্রম জিজ্ঞেস করল,
"সেদিন তাহলে স্নেহার নিখোঁজ হওয়ার খবরটা সবাই কী করে জানলেন?"
রাতুল বলল,
"আমাদের এখানকার একজন স্টাফ পুরো ঘটনাটা জানিয়েছিল।"
"-তাহলে তাকে একবার ডাকুন। আমি তার সাথে কথা বলব।"
রাতুল ফোন করে কাউকে একটা ওর ঘরে আসতে বলল। কিছুক্ষণ পর একটা বছর ছাব্বিশের মেয়ে রাতুলের ঘরে প্রবেশ করল। রাতুল ওকে দেখিয়ে বিক্রমকে বলল,
-স্যার, এ হলো মিতালী দাস।
বিক্রম ঘাড় ঘুরিয়ে দেখল একটা ছিপছিপে চেহারার শ্যামলা বর্ণের মেয়ে ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ওকে দেখে বিক্রম বলল,
-তুমি এই চেয়ারটায় বসো।
মেয়েটি আগের মতোই চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকল। রাতুল আরও কিছু বলতে যাচ্ছিল। বিক্রম ওকে থামিয়ে দিয়ে বাইরে যেতে বলল। মিতালীকে একটা চেয়ারে বসতে বলে ও বলল-মিতালি, ভয় পেও না। আমি কয়েকটা প্রশ্ন করছি তার ঠিক ঠিক উত্তর দাও।
-....।(মিতালি শুধু ঘাড় নেড়ে সায় দিল।)
-সেদিন তুমি ঠিক কি কি দেখেছিলে বলো তো।
মিতালী এবার ধীরে ধীরে বলল-আমি যা দেখেছি সব পুলিশকে আগেই বলে দিয়েছি।
-তাও আমাকে আর একবার বলো। আচ্ছা, আমিই তোমাকে এক এক করে প্রশ্ন করছি। প্রথমে বলো, তোমাকে এখানে কী কাজ করতে হয়?
-স্যার, আমার কাজ হচ্ছে যে সমস্ত মডেলরা র্যাম্পে হাঁটবে তাদের নামের একটা লিস্ট বানিয়ে সেই অনুযায়ী ওনাদের এক এক করে ডাকা।
-আচ্ছা। সেদিন স্নেহাকেও ডেকেছিলে?
-হ্যাঁ, আমি ওনাকে দশমিনিট আগে একবার বলে গিয়েছিলাম। উনি তখন মেকাপ রুমের ভেতর থেকেই সাড়া দিয়েছিলেন।
-তুমি ভেতরে যাওনি?
-না, আসলে ম্যাডাম সবসময় দরজা বন্ধ রাখতেন। আর উনার ঘরের ভেতরে যাওয়াটা উনি ঠিক পছন্দ করতেন না। তাই আমরা ঘরের বাইরে থেকেই ওনার সঙ্গে কথা বলতাম।
-আচ্ছা, তারপর?
-তারপর আমি আবার স্টেজের সামনে চলে গিয়েছিলাম। কিন্তু অনেকটা সময় হয়ে গেলেও সেদিন যখন স্নেহা ম্যাডাম র্যাম্পে হাঁটার জন্য আসছিলেন না তখন আমি ওনাকে আবার ডাকতে গিয়েছিলাম। তখন দরজা খোলা থাকায় আমি ভেতরে ঢুকে পড়ি। কিন্তু..?
-কিন্তু কী?
-উনি তখন কারোর সাথে ফোনে কথা বলছিলেন। আমাকে ঘরে দেখে খুব রেগে যান। চিৎকার করে আমাকে ঘর থেকে বেরিয়ে যেতেও বলেন।
-তারপর?
-আমি বেরিয়ে চলে যাই। সবটা ম্যানেজার স্যারকে জানাই। তারপর আমি আর উনি দুজনে আসি। আমরা এসে দেখি দরজা বন্ধ। তখন আমরা দরজায় ধাক্কা দিয়ে ওনাকে ডাকি। অনেক ডাকাডাকি করেও যখন দরজা খুললেন না তখন ম্যানেজার স্যার দরজা ভেঙে ভেতরে ঢোকেন। কিন্তু ভেতরে গিয়ে দেখি স্নেহা ম্যাডাম ওখানে নেই। আর...
-আর?
-উনি যে ঘরটায় ছিলেন সেই ঘরের পেছনের দিকের দরজাটা খোলা ছিল। এর থেকে বেশি আর কিছু আমি জানি না।
-আচ্ছা, ফোনে কি কথা হচ্ছিল তুমি কি কিছু শুনেছিলে?
-না, স্যার।
-আচ্ছা ঠিক আছে। তুমি এখন আসতে পারো। আর ম্যানেজারবাবুকে (রাতুল) একটু পাঠিয়ে দাও।
রাতুল এলে বিক্রম ওকে জিজ্ঞেস করে,
"সেদিন স্নেহার ব্যবহারে কোনো অস্বাভাবিক কিছু লক্ষ্য করেছিলেন?"
রাতুল অনেক ভেবে বলল,
-একটা অস্বাভাবিক ব্যাপার তো হয়েছিল। জানি না সেটা এই কেসের জন্য কতটা জরুরী।
-আপনি বলুন ঠিক কী হয়েছিল।
-স্নেহার সাথে আমরা এর আগেও অনেক কাজ করেছি। ও সবসময় সবার প্রথমে র্যাম্পে হাঁটতে চাইতো। আসলে যাতে সবাই ওকে সবার প্রথমে দেখতে পায় তাই জন্যই ও সবসময় আগেই থাকতে চাইত। কিন্তু সেদিন হঠাৎ আমাকে বলল ও সেদিন সবার শেষে হাঁটবে।
-আচ্ছা, স্নেহার ব্যাপারে আর কিছু বলতে পারবেন?
-ওর ব্যক্তিগত জীবন সম্পর্কে কিছু বলতে পারব না। তবে কাজের দিক থেকে ভীষণ ভালো। সবসময় টাইমে আসত। কখনোও দেরি করত না। আর এমনিতে ও খুব বেশি উচ্চাকাঙ্ক্ষী ছিল।
-আচ্ছা, ধন্যবাদ রাতুলবাবু।
বিক্রম ওখান থেকে বেরিয়ে অনলকে ফোন করে বলে স্নেহার ফোনের কলডিটেইলসটা নিয়ে বিকেলে ওর বাড়িতে আসতে। ফোনটা রেখে একটা ট্যাক্সি নিয়ে বাড়ি চলে আসে। বাড়িতে ঢোকার আগে মোড়ের দোকান থেকে কিছু খাবার কিনে নেয়। বাড়ি এসে ফ্রেশ হয়ে খাবার খেয়ে হাত-মুখ ধুয়ে ল্যাপটপটা খুলে বসে। চুরি হওয়া দোকানের ফোটোগুলো ভালো করে দেখে নেয়। তারপর দোকানের শেষ কয়েকদিনের সি.সি.টি.ভি ফুটেজ ল্যাপটপে চালিয়ে খুব মনোযোগ সহকারে দেখতে থাকে। হঠাৎ একটা জায়গায় গিয়ে ওর চোখটা আটকে যায়।
(ক্রমশ)