Sudeshna Mondal

Drama Crime Thriller

3  

Sudeshna Mondal

Drama Crime Thriller

মডেল হত্যা রহস্য(দ্বিতীয় পর্ব)

মডেল হত্যা রহস্য(দ্বিতীয় পর্ব)

7 mins
262


(৩)


ডি.আই.জি স‍্যারের ফোন পাওয়ার একঘণ্টার মধ্যেই বিক্রম চলে এসেছিল। এখন ও ডি.আই.জি অরুণ সান‍্যালের চেম্বারে বসে আছে। কিন্তু অনলের দেরী দেখে বিক্রম মনে মনে ওর উপর বেশ রেগেই গেল। বিক্রম মনে মনে ভাবল-আজকের মিটিংটা অত্যন্ত জরুরী বলার পরেও অনল সঠিক সময়ে এসে পৌঁছাতে পারল না। কী এমন মহান কাজ করছে কে জানে। তারপর এসে তো একগুচ্ছের অজুহাত শোনাবে।

ওর এইসব ভাবনার মাঝেই ডি.আই.জি অরুণ সান‍্যাল ওনার ঘরে প্রবেশ করলেন। হাতে বেশ কয়েকটা ফাইল দেখে বিক্রম ভাবল এগুলো হয়তো ওই কেস সংক্রান্ত ফাইল। বিক্রম ওনার মুখের দিকে তাকিয়ে দেখল উনি যেন আজকে অন্য দিনের থেকে একটু বেশিই গম্ভীর হয়ে আছেন। ওনাকে দেখে বিক্রম উঠে দাঁড়াল। উনি হাতের ইশারায় ওকে বসতে বলে নিজেও চেয়ারে বসলেন।

তারপর বললেন-বিক্রম, তোমাকে যে কেসটার জন্য ডেকেছি সেটা অত্যন্ত জরুরী একটা কেস। বাকী আর পাঁচটা কেসের মতো এটা নয়। তাই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তুমি এটার সমাধান করবে। মনে রেখো, এই কেসটায় ওপরতলার অনেক চাপ আছে, বেশি দেরী হলে কেসটা কিন্তু সি.বি.আই-এর কাছে চলে যাবে। আর সেটা আমাদের ডিপার্টমেন্টের জন্য অত্যন্ত লজ্জাজনক হবে।

ওনার কথা শুনে বিক্রম বলল-স‍্যার, আমি আমার যথাসাধ্য চেষ্টা করব যাতে কেসটা তাড়াতাড়ি সমাধান করতে পারি।

-এই কেসটা খুব সাবধানে তোমাকে দেখতে হবে। এর সাথে অনেক নামিদামি মানুষের নাম জড়িয়ে আছে। আর আমি জানি তুমিই পারবে। তাই তো তোমাকে এত জরুরী তলব দিয়ে ডেকে পাঠালাম। আর সময় নষ্ট না করে তোমাকে যা বলার জন্য ডেকেছি সেটাই বলছি।

পুরো তিনঘন্টা ধরে কথাবার্তা হওয়ার পর ও ডি.আই.জি-র ঘর থেকে বেরিয়ে দেখল অনল ওর ঘরের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। ওকে এত দেরীতে আসতে দেখে বিক্রমের রাগ হলেও মুখে কিছু বলল না। ওকে ইশারা করে ওর ঘরে আসতে বলে নিজে ভেতরে ঢুকে চেয়ারে বসল।

(কিছুক্ষণ পর...)

-আসব স‍্যার ?

-হ‍্যাঁ, এসো।

ভেতরে ঢুকে অনল কিছু একটা বলতে যাচ্ছিল কিন্তু ওকে বলতে না দিয়ে বিক্রম বলল-তুমি আগে ঠিক ক‍রো কাজ করবে নাকি একেবারে ছুটি নিয়ে নেবে।

অনল ঠিক এই ভয়টাই পাচ্ছিল। ও অফিসে এসে শুনেছে আজকের মিটিংটা খুব জরুরী ছিল। আর ডি.আই.জি স‍্যার নাকি পুরো তিনঘন্টা ধরে মিটিং করেছেন এই কেসটার ব‍্যাপারে।

বিক্রমের মুখটা দেখে ও কোনোরকমে ঢোক গিলে বলল-স‍্যার, আমি খুব দুঃখিত দেরী করে আসার জন্য।

-ওসব দুঃখ পেয়ে কোনো লাভ নেই। যেটা জিজ্ঞেস করলাম সেটার সরাসরি জবাব দাও। কারণ এটা অত্যন্ত জটিল আর জরুরী একটা কেস। এটা তাড়াতাড়ি আর সঠিক সমাধান করতে হবে তার জন্য সঠিক সময়ে অফিসেও আসতে হবে। তুমি যদি এইরকম দেরী করো তাহলে আমি এই কেসে তোমার জায়গায় অন্য কাউকে আমার সহকারী হিসেবে রাখব।

-না স‍্যার। এরকম আর হবে না।

-ঠিক আছে।

-স‍্যার বলছিলাম...ডি.আই.জি স‍্যার কেন ডেকেছিলেন?

-তার আগে তুমি বলো তো কী এমন মহান কাজ করছিলে যে সঠিক সময় এসে উপস্থিত হতে পারলে না।

-সে অনেক কথা স‍্যার। অনেকটা সময় লাগবে। পরে বলব।

-না এখনই বলো।

-আসলে স‍্যার আপনি ছুটি নিয়েছিলেন তাই আমারও কোনো কাজ ছিল না। এইজন্য বউকে বলেছিলাম আজকে আমি নিজের হাতে রান্না করে ওকে খাওয়াব। কিন্তু আপনার ফোন পেয়ে আমি আমার স্ত্রীকে বললাম আমাকে এখন অফিস যেতে হবে তাই আজকে শুধু চিলি চিকেন রান্না করেছি। ভেটকি পাতুরিটা অন্য দিন করে খাওয়াব। সব শুনে ও কিছু বলল না দেখে আমিও তাড়াতাড়ি স্কুটিটা নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম। কিন্তু রাস্তায় কিছুদূর গিয়েই ওটা বিগড়ে গেল। আর এমন জায়গায় বিগড়ালো যেখানে আশেপাশে কোনো দোকান নেই। যাওবা দোকান পেলাম সে মিস্ত্রি গাড়ি সাড়ায় কম বৌয়ের ফোন ধরে বেশি। ওই করতে করতে অনেকটা দেরী হয়ে গেল‌। তারপর আবার খুচরোর সমস্যা।

অনলের কথা শুনে বিক্রম (হা..হা..হা) করে হেসে জিজ্ঞেস করল-তুমি কি জন্ম থেকেই এমন রামবিলাস?


বিক্রমের প্রশ্নের মানে না বুঝতে পেরে অনল ফ‍্যালফ‍্যাল করে তাকিয়ে থাকলে বিক্রম ওকে আবার বলল-ওরকম করে তাকিয়ে না থেকে চেয়ারে বসো। আর আমাকে কোনো কৈফিয়ত দিতে হবে না। আমি বেশ বুঝতে পেরেছি যে, আজ সকাল থেকেই তুমি অনেকগুলো সমস্যার সম্মুখীন হয়েছো। ওই জন্য বলি কাউকে হঠাৎ করে কোনো কথা দেবে না। সে তোমার যতই কাছের মানুষ হোক। পরিস্থিতি সবসময় তোমার অনুকূলে নাও হতে পারে।

বিক্রমের কথা শুনে অনল ঘাড় নেড়ে বলল,

-এবার থেকে এই কথাগুলো মাথায় রাখব, স‍্যার। কিন্তু স‍্যার আপনার প্রশ্নের মানেটা ঠিক বুঝলাম না।

-ছাড়ো এখন ওসব। পরে কখনও সময় পেলে বোঝাব। এখন একটা নতুন কেস এসেছে সেটা মন দিয়ে শোনো।

-ঠিক আছে স‍্যার বলুন।

-তার আগে একটা ডায়েরি আর পেন নিয়ে বসো। যা যা লিখতে বলব সেগুলো পর পর ডায়েরিতে লিখে রাখবে।

-ঠিক আছে স‍্যার।

-বৌবাজারে যে "সেন এন্ড সন্স জুয়েলার্স" আছে, ওখানে কাল রাতে চুরি হয়েছে।

বিক্রম আরও কিছু বলার আগেই অনল ফোস করে বলে উঠল-স‍্যার, চুরির কেস লোকাল থানায় না গিয়ে সোজা ডি.আই.জি স‍্যারের কাছে চলে গেল?

-উফ্, এই তোমার এক দোষ। পুরো কথা না শুনে আগেই সিদ্ধান্তে চলে যাও।

-সরি স‍্যার।

-শুধু চুরির কেস হলে ওটা লোকাল থানাই সামলে নিতে পারত এটা তো এতদিনে বুঝেছো। ডি.আই.জি স‍্যারের কাছে এসেছে তার মানে আরও কোনো ব‍্যাপার আছে। এবার সেটা মন দিয়ে শোনো। আমার বলা যতক্ষণ না শেষ হবে ততক্ষণ মাঝপথে আমাকে থামিয়ে আর কোনো উদ্ভট প্রশ্ন করবে না।

অনল আর মুখে কিছু বলল না। শুধু ঘাড় হেলিয়ে সায় দিলো।

বিক্রম আবার শুরু করল-ওখানে শুধু চুরি হয়নি তার সাথে ওখানে একটা খুনও হয়েছে। আর যে মেয়েটি খুন হয়েছে সে কোনো সাধারণ মেয়ে নয়। একজন খুব বিখ্যাত মডেল। তাঁর নাম স্নেহা সেন। ম‍্যাগাজিনে ওর ছবি দেখে থাকবে হয়তো। আর সব থেকে আশ্চর্যের ব‍্যাপার হলো যে এই চুরির ঘটনার ঠিক দু-ঘন্টা আগে একটা ফ‍্যাশন শো থেকে হঠাৎ ও নিখোঁজ হয়ে গিয়েছিল। আর যখন পাওয়া গেল তখন ও মৃত। তাহলে বুঝতে পারছ কেসটা অতটাও সাধারণ নয়, যতটা তুমি ভাবছিলে।

-হুম, ঠিক বলেছেন স‍্যার।

-তুমি এক কাজ করো ওই এলাকাটা যে লোকাল থানার অধীনে সেখানে এখনি একবার গিয়ে কেসটা কতদূর কি হয়েছে খোঁজখবর নাও। আর স্নেহার ব‍্যাপারে আরও তথ্য জোগাড় করার জন্য তোমার কোনো বিশ্বস্ত লোক লাগিয়ে দাও। ছোট থেকে ছোট তথ‍্যও আমার চাই। তাড়াতাড়ি আসবে অনেক কাজ, কিন্তু সময় খুব অল্প। ডি.আই.জি স‍্যারের কড়া নির্দেশ যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এই কেসটার সমাধান করতে হবে। নাহলে কেসটা সি.বি.আইয়ের কাছে চলে যাবে।

-আচ্ছা ঠিক আছে স‍্যার। আমি এক্ষুনি বেরিয়ে সব খোঁজখবর নিচ্ছি।

অনল চলে গেলে বিক্রম ডি.আই.জি স‍্যারের দেওয়া ফাইলগুলো আবার ভালো করে দেখতে লাগল।

**********


(৪)

ক্রিং...ক্রিং...ক্রিং...

শ‍্যামলীর ফোনটা ওদের শোবার ঘরে অনেকক্ষণ ধরে বেজে যাচ্ছিল। প্রথমে ভেবেছিল কোম্পানি হয়তো ফোন করছে কোনো বিশেষ অফারের জন্য। তাই ও আর উঠে গিয়ে ফোনটা ধরেনি। কিন্তু পর পর তিনবার বাজায় ও বাধ‍্য হয়ে উঠে গেল ফোনটা ধরার জন্য। ফোনটা ধরেই ওপ্রান্ত থেকে ওর মায়ের গলা ভেসে এল।

-কীরে শ‍্যালু, তুই এতক্ষণ পরে ফোন ধরলি। কিছু করছিলিস নাকি?

-এই সবে খেতে বসেছিলাম। আর ফোনটা শোবার ঘরে রাখা ছিল তাই উঠে এসে ধরতে দেরী হলো।

-ওহ, তুই তাহলে খেয়ে নে। আমি পরে ফোন করছি।

-না মা, আমি খেতে খেতেই কথা বলছি। এমনিতেও তো একা একা খাচ্ছিলাম। তোমার সাথে কথা বললে ভালো লাগবে‌।

-কেন রে? সকালেই তো আজকে জামাই তোকে রান্না করে খাওয়াবে। ওর এখন ছুটি আছে তাই এসব আয়োজন করেছে। তাহলে তুই একা একা খাচ্ছিস কেন?

-আর বলো না মা, তোমার জামাইয়ের কাজটাই তো ওরকম। হঠাৎ করে কখন কাজ চলে আসবে আগে থেকে বোঝা যায় না। ওর বস ফোন করে ডাকল। উনিও হন্তদন্ত হয়ে ছুটলেন।

-এ বাবা, আমি ভাবলাম তোদেরকে নিমন্ত্রণ করে একদিন খাওয়াব।

-ওসব এখন ভুলে যাও।

-ঠিক বলেছিস। পরে নাহয় একদিন খাওয়াব। এই শোন, ওর জামাইষষ্ঠীতে ছুটি আছে তো?

-কী যে বলো না তুমি। ওদের আবার এসব কিছু আছে নাকি। যতদিন কোনো কেসের সমাধান হবে না ততদিন কোনো ছুটিও নেই, শান্তিও নেই।

-সে যদি ছুটি না থাকে তাহলে আমরাই তোদের ওখানে চলে যাব।

-ওসবের এখনও একসপ্তাহ বাকী আছে। এখন আমি যেটা বলছি সেটা শোনো।

-হ‍্যাঁ, বল।

-আমি ভাবছিলাম, যদি এই দু-তিনদিনের জন্য আমি তোমাদের ওখানে গিয়ে থাকব।

-কিন্তু তুই এখানে চলে এলে জামাইয়ের খাওয়া-দাওয়ার তাহলে কী হবে?

-তাও ঠিক। তাহলে?

-তাহলে বরং আমরাই চলে যাই তোদের ওখানে। একেবারে জামাইষষ্ঠী কাটিয়ে আমরা ফিরে আসব।

-আচ্ছা, তাই করো।

ফোনটা রেখে দিয়ে শ‍্যামলী খাওয়ার প্লেটগুলো রান্নাঘরের বেসিনে রেখে দিলো। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখল তিনটে বাজে। তাই ও ঠিক করল এখন আর ঘুমাবে না। সময় কাটানোর জন্য ফোনে ফেসবুক খুলে দেখতে লাগল। ফেসবুক দেখতে দেখতে হঠাৎ একটা পোস্টে এসে ও থমকে গেল। খুব মন দিয়ে লেখাটা পড়ল,

"বিখ্যাত মডেল স্নেহা সেনের রহস্যজনক মৃত্যু"

পুরো খবরটা পড়ার জন্য ও পোস্টটায় ক্লিক করল। তারপর লেখাটা পড়তে শুরু করল,

" কাল রাতে একটা ফ‍্যাশন শো থেকে হঠাৎ করে স্নেহা উধাও হয়ে গিয়েছিল। প্রথমে সবাই ভেবেছিল স্নেহা হয়তো কোনো কারণে কোথাও গেছে। কিন্তু ফোনে না পাওয়ায় ফ‍্যাশন শো কর্তৃপক্ষ পুলিশে একটা রিপোর্ট লেখানোর কথা ভাবে। কিন্তু চব্বিশ ঘন্টা না গেলে রিপোর্ট লেখানো যাবে না বলে তারা আর কাল রাতে কিছু করেননি। আজ সকালে একটা গয়নার দোকানে ওর মৃতদেহ পাওয়া যায়।"

খবরটা এতটা পড়েই শ‍্যামলী পুরো অবাক হয়ে গেছে। শ‍্যামলীর খুব পছন্দের মডেল ছিল। ও স্নেহার সব সাক্ষাৎকার খুব খুটিয়ে পড়ত। এইতো কয়েকদিন আগেও স্নেহার একটা সাক্ষাৎকার বেরিয়ে ছিল। ও নাকি এবার সিনেমা করবে। তার এরকম হঠাৎ মৃত্যুতে হতবাক হওয়াটা স্বাভাবিক। ও একবার অনলকে ফোন করল। কিন্তু রিং বেজে বেজে ফোনটা কেটে গেল।

(ক্রমশ)




Rate this content
Log in

Similar bengali story from Drama