Sudeshna Mondal

Drama Classics Inspirational

4  

Sudeshna Mondal

Drama Classics Inspirational

আমরা করব জয়

আমরা করব জয়

3 mins
333


আজ ঘুম থেকে উঠতে অন‍্য দিনের তুলনায় একটু দেরী হয়ে গেছে পল্লবীর। তাড়াতাড়ি বিছানা থেকে উঠে চোখেমুখে জল দিয়ে চায়ের জল চাপায় গ‍্যাসে। এটা ওর প্রতিদিনের অভ‍্যেস। সকালবেলা চা না খেলে ওর ঠিক ভালো লাগে না। নিজে চা খেয়ে তারপর সব কাজ সেরে ওর স্বামী শিবুকে ডাকে। শিবু উঠে মুখ-হাত-পা ধুয়ে চা খেয়ে স্নান করে বাজারে যাওয়ার জন্য তৈরি হয়। পল্লবী কোনোরকমে রুটি তরকারি করে দেয়। শিবু যদিও ওকে বারণ করে সকালবেলা এত তাড়াহুড়ো করে ওর জন্য খাবার বানাতে। তাও পল্লবী এটা করে। শিবুকে খেতে দিয়ে পল্লবী ঠাকুরকে ধূপ দেয়। এরপ‍র শিবু সাইকেল নিয়ে বেরিয়ে যায়। বাজারে একটা মাছের দোকান আছে ওর। আগে খুব ভালোই বেচাকেনা হতো। ওদের সংসার তাতে ভালোভাবে চলে যেত। কিন্তু এই লকডাউন আর করোনার জন্য বিক্রি আগের থেকে অনেক কমে গেছে। তাই এখন কোনোরকমে সংসার চলে যাচ্ছে ওদের। দুপুরের দিকে শিবু বাড়ি চলে আসে তখনই ওরা একসাথে খায়। তার আগে পল্লবী ওদের পাশের বাড়ির বউদির সাথে গল্প করে আর ওনার বড়ি দেওয়া দেখে। পল্লবী অনেকবার ভেবেছে ওই বউদিদের সাথে মিলে ও বড়ি দেওয়ার কাজ করবে কিন্তু শিবু কিছুতেই রাজি হয়নি। অন‍্যদিনের মতো আজকেও পল্লবী গল্প করছিল এমন সয়য় শিবুর সাইকেলের আওয়াজ পেয়ে দরজা খুলতে গেল।

(পল্লবী)-কী গো আজ এতো তাড়াতাড়ি চলে এলে?

(শিবু)-আর বলো না, তাড়াহুড়ো করে মাছ কাটতে গিয়ে হাতটাই কেটে ফেলেছি।

(পল্লবী)-কই? দেখি।

শিবুর হাতটা দেখে পল্লবীর চোখ দিয়ে জল বেরিয়ে এলো। হাতটা অনেকটাই কেটে গেছে। ওকে শান্ত করার জন্য শিবু বলল-আরে সেরকম কিছু হয়নি। কালকেই দেখবে সব ঠিক হয়ে গেছে।

কিন্তু পরেরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে পল্লবী দেখল শিবুর গা জ্বরে পুড়ে যাচ্ছে। আর ওর হাতটাও খুব ব‍্যথা। ও তাড়াতাড়ি পাড়ার ছেলেদের বলে ডাক্তার ডেকে এনে শিবুকে দেখাল। ডাক্তার কিছু ওষুধ লিখে দিয়ে চলে গেলেন। দুপুরের দিকে শিবুর জ্বর অনেকটাই কমেছে। পল্লবী ওকে ভাত খাইয়ে দিচ্ছিল তখন ও পল্লবীকে বলল-আজকে না বেরিয়ে কত ক্ষতি হলো। কালকে বাজারে যেতেই হবে।

(পল্লবী)-তোমার মাথা খারাপ হলো নাকি? এখনও ভালো করে মাথা তুলতে পারছ না আর কালকে বাজারে যাবে কী করে?

(শিবু)-কিন্তু যেতে তো হবে। না হলে চলবে কী করে?

(পল্লবী)-আমি বলছিলাম, ওই রমাবউদিদের ওখানে যদি আমিও কাজ করি।

পল্লবীর কথা শুনে শিবু বলে উঠে-না না, তুমি কেন কাজ করবে?

(পল্লবী)-দেখো, এখন কিছুদিন করি। যখন আবার সব ঠিক হয়ে যাবে তখন আর করবো না। এমনিতেই তো সারাদিন বসেই থাকি। একটু কিছু করলে আমারও সময় কাটবে, দুটো পয়সাও আসবে।

(শিবু)-কিন্তু?

(পল্লবী)-কোনো কিন্তু নয়। আমি রমাবউদির কাছে শুনেছি ওই কোম্পানি পাঁপড় বানাবোর জন্য নতুন লোক নেবে। আমি আজকেই বলে রাখব যাতে কাল থেকেই কাজ শুরু করে দেওয়া যায়।


শিবুও অগত্যা রাজি হলো। পরেরদিন থেকে পল্লবীও পাঁপড় বানানোর কাজে লেগে পড়ল। শিবুর শরীরটা এখনও একটু দুর্বল আছে। তাই পল্লবী কয়েকটাদিন ওকে বিশ্রাম নিতে বলল। শিবুও বাড়ি বসে বসে পল্লবীর পাঁপড় তৈরি করা দেখে। দেখতে দেখতে সাতদিন পার হয়ে গেছে। শিবু এখন অনেকটা সুস্থ। দুদিন বাজারেও গিয়ে বসেছে। বিক্রি সেরকম না বাড়লেও এখন ওদের অভাবটা সেইভাবে বোঝা যায় না। পল্লবীও যা রোজগার করে তার অর্ধেকটা সঞ্চয় করে রাখে ভবিষ্যতের কথা ভেবে। আজ অনেকদিন পর শিবু বাজার থেকে মাংস কিনে এনেছে। রাতেরবেলা পল্লবীর হাতের কষা মাংস আর রুটি খাবে বলে। দুজনে মিলে রান্নাবান্না করে জমিয়ে খেতে বসে। শিবুকে খুশি দেখে পল্লবী মনে মনে ভাবে-কতদিন পর এরকম ওকে হাসি-খুশি দেখছি। ঠিক যেমন আগে ছিল। ও যেন সবসময় এরকমই থাকে। আমি যেন সবসময় ওর পাশে এভাবেই থাকতে পারি।

ওকে একভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে শিবু বলে-এরকম হা করে তাকিয়েই থাকবে নাকি খাবারটা খাবে? এরপর তো ঠান্ডা হয়ে যাবে।

পল্লবী কিছু বলার আগেই শিবু ওকে এক টুকরো রুটি খাইয়ে দেয়। পল্লবীও ওকে খাইয়ে দেয়। ওদের দুজনের ভালোবাসা ওদের চোখে-মুখে ফুটে ওঠে।

আজ বহুদিন পর ওরা দুজনে শান্তিতে ঘুমাতে পারবে। ওদের দুজনেরই বিশ্বাস একদিন সব আবার আগের মতো হয়ে যাবে। সবার মুখে হাসি ফুটে উঠবে। পৃথিবী আবার তার পুরোনো ছন্দে নতুন করে গান বাঁধবে। আর সেই গানের তালে সমস্ত বিশ্ববাসী নিজেদের দুঃখ ভুলে মেতে উঠবে। এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা। প্রকৃতির এই কঠিন পরীক্ষায় আমরা সবাই সফলভাবে উত্তীর্ণ হবো। আমাদের হতেই হবে।

দূরে কোনো ক্লাবঘর থেকে গানের আওয়াজ ভেসে আসছিল,


" আমরা করব জয়, আমরা করব জয়,

আমরা করব জয় নিশ্চয়।

আহা বুকের গভীর, আছে প্রত‍্যয়

আমরা করব জয় নিশ্চয়।

আমরা করব জয়, আমরা করব জয়,

আমরা করব জয় নিশ্চয়।। "

(সমাপ্ত)



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Drama