দুয়ে দুয়ে চার
দুয়ে দুয়ে চার
(১)
আজ (৩০/১১/১৯
-খেলা জমে উঠেছে, বুঝলে রামবিলাস? এক আর একে দুই করে ফেলেছি। এখন শুধু দুই আর দুয়ে চার করা বাকি।
-উফ স্যার, আমি রামবিলাস নই।
-ও তাই বুঝি? তাহলে তুমি কি? রামহরি? রামগোপাল? রামসুন্দর? নাকি রামব্রীজ?
-এদের কোনোটাই আমি নই। আমি অনল, অনল বসু।
-আরে সে তুমি অনল হও কি অগ্নি, পবন আসুক কি বারি, নিভে যাবে তো তুমি এমনি। হা...হা...হা।
-স্যার, আপনি যে কী বলেন আমি মাথা-মুন্ড কিছুই বুঝি না।
-তুমি একটা মাথামোটা। তাই তুমি বোঝ না। ওসব ছাড়ো। কাল সকাল সকাল চলে আসবে একটা জায়গায় যাব।
-কোথায় স্যার?
-তোমার সঙ্গে লং ড্রাইভে যাব হতচ্ছাড়া। কোথায় যাব এর মধ্যে ভুলে গেলে?
-(মাথাটা চুলকে নিয়ে) ইয়ে মানে স্যার।
-মনে যদি না পড়ে তাহলে সারারাস্তা মনে করতে করতে যাও। এটাই তোমার শাস্তি। যতসব মাথামোটাগুলো আমার কপালেই জোটে। যাও এখন। কাল সাড়ে ন'টার মধ্যে চলে আসবে।
****
পরেরদিন সকালবেলা (০১/১২/১৯)...
-কী হে অনল এমন ক্যাবলাকান্তের মতো দাঁড়িয়ে আছো কেন?
-ওহ স্যার, আপনি এসে গেছেন। চলুন তাহলে।
-হ্যাঁ, আর বেশি দেরি করা ঠিক হবে না।
****
(২)
ওদের গাড়িটা রায়ভিলার সামনে এসে পৌঁছাল ঠিক সাড়ে দশটা। ঘড়িটাতে আরও একবার চোখ বুলিয়ে নিয়ে ওনারা ভেতরে ঢুকলেন।
-নমস্কার, অম্বরীশবাবু। আমি ইন্সপেক্টর বিক্রম চৌধুরি। আর ও হল আমার সহকারী অনল বসু।
-আসুন। আপনাদের অপেক্ষাতেই ছিলাম। আপনার কথা মতো আমি বাড়ির সবাইকেই আজ থাকতে বলেছি।
-অম্বরীশবাবু, আপনাদের সবার পরিচয়টা একটু বললে ভালো হতো।
-আচ্ছা বলছি। আমার স্ত্রী রোহিনী রায়। আমার মেয়ে নীলিমা। আমার ভাই, নীলাম্বর রায় আর ওর স্ত্রী অঙ্কিতা। ওদের ছেলে রক্তিম।
-আপনাদের পেশা?
-আমাদের গার্মেন্টসের ব্যবসা। আমরা দুই ভাই মিলে ব্যবসা সামলায়। আমার মেয়ে কলেজে পড়ে আর রক্তিম স্কুলে।
-আমাদের যে মালগুলো চুরি হয়েছে সেগুলোর একটা লিস্টটা আমাদের দিন। আর ওতগুলো মাল যে দোকানে আছে এই খবরটা বাইরের কেউ জানত?
-না স্যার। আমরা বাড়ির লোকরা ছাড়া এবিষয়ে আর কারোর জানার কথা নয়।
-আচ্ছা আপনাদের বাড়িতে চাকর-বাকর কজন? তারা কি বিশ্বস্ত?
-হ্যাঁ স্যার। সবাই বলতে গেলে বাবার আমল থেকেই আছে।
-আপনারা কাউকে সন্দেহ করেন?
-এমনিতে আমাদের কোনো শত্রু নেই। তবে...
-তবে? চুপ করে গেলেন কেন?
-আসলে একমাস আগে একজন এসেছিলেন আমাদের দোকান কিনবেন বলে। উনি নাকি এখানে প্রমোটিং করবেন তাই এই জায়গাটা ওনার চাই। কিন্তু আমরা রাজি হইনি। ভদ্রলোক বেশ কয়েকদিন আমাদের জোড়াজুড়িও করেছেন। শেষমেশ আমরা রাজি না হওয়ায় উনি আর কিছু বলেননি।
-কী নাম ভদ্রলোকের?
-হিমাদ্রি গুপ্ত। ওনার নাকি গড়িয়ায় অফিস আছে। আমাদের সেখানেও যেতে বলেছিলেন। আমরা আর যাইনি।
-আচ্ছা আজ চলি। দরকার হলে আবার আসব।
ওনারা গাড়িতে উঠে বেরিয়ে গেলেন।
***
-একটা ব্যাপার লক্ষ্য করেছেন স্যার?
-কী ব্যাপার বলো তো।
-আপনি যখন জিজ্ঞেস করলেন ওদের দোকানের মালের খবর আর কেউ জানে কিনা তখন ওই নীলিমা মেয়েটি কেমন চমকে উঠল।
-বাহ, রামবিলাস...তোমার তো দেখছি বুদ্ধি খুলছে আস্তে আস্তে। এটা আমিও লক্ষ্য করেছি কিন্তু তুমিও লক্ষ্য করেছ শুনে ভালো লাগল।
-স্যার?
-কি হল?
-আমি রামবিলাস নই।
-আচ্ছা ঠিক আছে। তুমি রামনিধি। এখন চুপ করে বসো। আমাকে একটু ভাবতে দাও। রাস্তায় খাবারের দোকান দেখলে গাড়ি দাঁড় করাবে। আমার খুব খিদে পেয়েছে।
-আচ্ছা স্যার।
****
(৩)
দুইদিন আগে (২৮/১১/১৯)...
-স্যার আসব?
-হ্যাঁ এসো বিক্রম। তোমার জন্যেই অপেক্ষা করছিলাম।
-হ্যাঁ স্যার বলুন।
-তুমি নিশ্চয় শুনেছ বেশ কয়েকদিন ধরে অনেকগুলো চুরির কেস এসেছে। যেগুলো এখনও পর্যন্ত সুরাহা হয়নি।
-হ্যাঁ স্যার শুনেছি। এর মধ্যে একটা হাইপ্রোফাইল কেসও আছে।
-হুম। সেটা নিয়েই তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে। এতোদিন যা হয়েছে সেগুলো সব ছোটখাটো দোকান। কিন্তু এবার চুরিটা হয়েছে "রায়ষ্টোর্স অ্যান্ড ব্রাদার্স"-এর একটা শোরুমে।
-ওনাদের তো অনেকগুলো শোরুম আছে। সিকিউরিটিও সেরকম মজবুত হবে। তা সত্ত্বেও...
-তোমাকে পুরো ব্যাপারটা দেখতে হবে। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এই কেসের আসল অপরাধীকে ধরতেই হবে।
-ওকে স্যার। আমি তাহলে কাল থেকেই শুরু করছি।
অফিস থেকে বেরিয়ে বিক্রম বাপিকে ফোন করল। বাপি হল ওর গুপ্তচর। একবার পকেটমারি করতে গিয়ে ধরা পড়েছিল। সেই থেকে বিক্রম ওকে নিজের কাজে লাগায়। বদলে কিছু বকশিশও দেয়, যা দিয়ে ওর সংসার চলে যায়। বাপিও সেই থেকে আর কোনো বাজে কাজ করে না।
-হ্যালো, বাপি?
-হ্যাঁ স্যার।
-তোকে একটা কাজ করতে হবে। রায়ভিলা চিনিস তো?
-হ্যাঁ স্যার। কী করতে হবে বলুন।
-কাল থেকে তোকে ওই বাড়ির ওপর নজর রাখতে হবে। কে কখন কোথায় যাচ্ছে, কার সাথে যাচ্ছে, ওই বাড়িতে কে কখন আসছে, সব কিছু।
-হয়ে যাবে স্যার। আপনি চিন্তা করবেন না।
-ঠিক আছে।
***
একদিন আগে ( ২৯/১১/১৯)...
-হ্যালো, অনল তুমি শেষ কয়েকদিনের যত চুরির কেস আছে সবগুলোর ফাইল নিয়ে আমার কেবিনে এসো।
-ওকে স্যার।
ফোনটা রেখে দিয়ে বিক্রম মনে মনে ভাবতে থাকে- চোরদের হঠাৎ করে এত সাহস বেড়ে গেল যে চুনোপুটি ছেড়ে একেবারে বোয়াল মাছ ধরল। এত সিকিউরিটি থাকা সত্ত্বেও ওরা ঢুকল কি করে। আর সবথেকে বড়ো প্রশ্ন হল ওরা জানল কি করে দোকানে ওত মাল আছে। যার জন্য ওরা বেছে বেছে ওইদিনই চুরি করল। অনেকগুলো খটকা আছে। আগে ফাইলগুলো ভালো করে দেখতে হবে তারপর...
-স্যার আসব?
-হ্যাঁ আসো।
-স্যার ফাইলগুলো।
-আগে রায়ষ্টোর্সের ফাইলটা দাও।
ফাইলটা ভালো করে দেখে নিয়ে বন্ধ করে রেখে দিল বিক্রম। এরপর গম্ভীরভাবে কিছুক্ষণ পায়চারি করে বলল- দুটো চা বলো তো।
-আচ্ছা স্যার, ওদের দোকানে কি সিসিটিভি নেই? ওত বড়ো দোকান যখন থাকার তো কথা।
-থেকে থেকে এরকম হাঁদারামের মতো কথা বলো।থাকবে না কেন?
-তাহলে ওটার ফুটেজ দেখলেই...
-ওটা খারাপ ছিল বলে লেখা আছে।
-তাহলে তো আর কিছু করার নেই।
-আচ্ছা, রামনিধি একটা কথা বলো তো।
-কি কথা স্যার?
-চোররা কি জ্যোতিষি হয় নাকি।
-হঠাৎ এরকম প্রশ্ন কেন স্যার?
-একটু ভেবে দেখ, যেদিন ওত মাল এল সেদিনই দোকানের সিসিটিভি খারাপ হল। আর ঠিক সেদিনই চুরি হলো।
-হ্যাঁ স্যার। ব্যাপারটা একটু গোলমেলে।
-একটু নয় একটু নয়। পুরোটাই গোলমেলে।
***
আজ (৩০/১১/১৯)...
-স্যার, সামনে একটা ধাবা আছে। ওখানেই গাড়ি দাঁড় করাচ্ছি।
-হ্যাঁ, ঠিক আছে।
এমন সময় বিক্রমের ফোনটা বেজে উঠল। ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখল বাপি ফোন করছে। তাই অনলকে বলল- সবজি ভাত অর্ডার দাও। আমি আসছি।
-আচ্ছা স্যার।
***
-হ্যাঁ বল।
-স্যার, ওই বাড়িতে সেরকম কেউ আসে না। কালকে শুধু একটা ছেলে এসেছিল। দেখে মনে হচ্ছিল বেশ বড়োলোক বাপের ছেলে। আমি আপনাকে ওর ছবি পাঠাচ্ছি।
-আর কোনো খবর?
-আর নীলাম্বর রায়ের জুয়ার নেশা আছে।
-তুই এটা কি করে জানলি?
-ওনাকে আমি আগেও দেখেছি অনেকবার জুয়ার আড্ডায়। তখন জানতাম না উনি কে। এখানে ওনাকে দেখে চিনতে পারলাম।
-হুম, ঠিক আছে। আর দু-একটা দিন নজর রাখ।
-স্যার, আমার বকশিশ?
-কাজ শেষ হলে একবারে দেব। এখন মন দিয়ে কাজটা কর।
-ওকে স্যার।
ফোনটা কেটে বিক্রম মনে মনে ভাবতে থাকে- দেনার টাকা শোধ করার জন্য কি নীলাম্বরবাবু চুরিটা করালেন? যাতে ইনসুরেন্সের টাকা দিয়ে ধার শোধ করতে পারেন। আর ওই ছেলেটা কে? নীলিমার প্রেমিক?
-স্যার, আসুন।
খাওয়া-দাওয়া হয়ে গেলে ওরা ওখান থেকে বেরিয়ে গেল। গাড়িতে যেতে যেতে বিক্রম অনলকে বলল- তোমাকে একটা ছবি পাঠাচ্ছি। ছেলেটার ব্যাপারে খোঁজখবর নাও। সন্ধ্যায় আমার বাড়ি আসবে তখন সব রিপোর্ট করবে।
-ওকে স্যার।
-আমাকে এখানে নামিয়ে দাও।
***
(৪)
-আসতে পারি হিমাদ্রিবাবু?
-হ্যাঁ, আসুন।
-নমস্কার বলে ওর কার্ডটা এগিয়ে দিল।
-আপনি হঠাৎ আমার কাছে?
-আপনি তো অম্বরীশবাবুর কাছে গিয়েছিলেন ওনাদের দোকান কেনার ব্যাপারে?
-হ্যাঁ, গিয়েছিলাম। কিন্তু ওনারা বিক্রি করতে চান নি। দাঁড়ান দাঁড়ান অফিসার, আপনি কি কোনোভাবে ওদের দোকানের চুরির জন্য আমাকে সন্দেহ করছেন?
-দেখুন আমরা সব সম্ভাবনাই খতিয়ে দেখছি।
-কিন্তু এসব করে আমার কি লাভ হবে? আমি কেন এরকম কিছু করব?
-আপনার নিজের জন্য না হলেও ছেলের জন্য তো করতেই পারেন।
-মানে?
-মানেটা খুব পরিস্কার মি. গুপ্ত। আপনার ছেলে একটা ব্যবসা শুরু করেছে।
-তো?
-আপনার ছেলের ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী হল রায়ষ্টোর্স কারণ আপনার ছেলের ব্যবসাটাও যে গার্মেন্টসের। তাই না?
-কি যা তা বলছেন। এর কি কোনো প্রমাণ আছে? না থাকলে আপনি এবার আসতে পারেন।
-আজ চলে যাচ্ছি কিন্তু আবার আসব।
চেয়ার থেকে ওঠার সময় ওর চোখ চলে যায় টেবিলে রাখা একটা ফোটোফ্রেমের দিকে। তাই ও জিজ্ঞেস করে-এটা...?
-আমার ছেলে নীলেশ।
-ওহ, ঠিক আছে। আমি চললাম।
***
সন্ধ্যেবেলায়...
-স্যার, কাজ হয়ে গেছে।
-হুম, জানি।
-ওই ছেলেটা...
-নীলেশ গুপ্ত, হিমাদ্রি গুপ্তের ছেলে।
-আপনি কি করে জানলেন?
-হিমাদ্রিবাবুর অফিসে ওর একটা ছবি আছে। তখনি জানলাম।
-স্যার, এছাড়াও আর একটা খবর পেয়েছি।
-কি?
-নীলেশ হল অম্বরীশবাবুর মেয়ে নীলামার প্রেমিক। মাসতিনেক আগে এক বন্ধু জন্মদিনে ওদের পরিচয় হয়। সেখান থেকেই বন্ধুত্ব, তারপর প্রেম।
-আচ্ছা বলো তো তাহলে এখনো পর্যন্ত আমরা কি কি জানলাম।
-প্রথমত, ওনাদের দোকানটা হিমাদ্রি গুপ্ত নামে একজন প্রমোটার কিনতে চেয়েছিল। ওনারা বিক্রি করতে চান নি। দ্বিতীয়ত, হিমাদ্রি গুপ্তের ছেলে আর অম্বরীশ রায়ের মেয়ের মধ্যে একটা প্রেমের সম্পর্ক আছে।
-তৃতীয়ত, নীলাম্বর রায়ের জুয়ার নেশা আছে। এক কাজ করো তুমি নীলাম্বরবাবুর সাথে আলাদা করে কথা বলো। ওনার বর্তমান আর্থিক অবস্থার ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করো। তারপর আমাকে রিপোর্ট করবে।
-ওকে স্যার। আজ আমি আসছি।
***
পরের দিন সকালবেলা (০১/১২/১৯)...
-গুড মর্নিং স্যার।
-বলো কী খবর এনেছ।
-ওনার কথা শুনে এটুকু বুঝলাম যে নীলাম্বরবাবুর দেনা যতই থাকুক দোকানের কোনো ক্ষতি উনি চাইবেন না।
-আচ্ছা, তুমি একবার রায়ভিলায় যাও। ওদের বাড়ির কাজের লোকদের সাথে একবার কথা বলে জানো যে চুরির আগের দিন নীলেশ ওই বাড়িতে এসে ছিল নাকি।
-আপনি কি ওদেরকে সন্দেহ করছেন?
-পুরোটা এখনো নিশ্চিত নই।
***
-হ্যালো, অম্বরীশবাবু।
-হ্যাঁ স্যার বলুন।
-আপনাদের মাল চুরি করতে যে গাড়িটা ব্যবহার হয়েছে সেটা আমরা ধরতে পেরেছি। একটা লোকও ধরা পড়েছে। আচ্ছা, আপনাদের যে একটা প্রতিদ্বন্দ্বী আছে সেটা বলেননি তো।
-আসলে মাথা থেকে একদম বেরিয়ে গিয়েছিল। এতবড় একটা অর্ডার এইভাবে ক্ষতি হয়ে গেল। সব মিলিয়ে মাথার ঠিক নেই। তাই হয়তো আপনাকে বলা হয়নি। আচ্ছা, ওরা কি কোনো ভাবে এই কাজে জড়িত?
-এখনোও আমরা সঠিক করে কিছুই বলতে পারছি না। চোর যখন ধরা পড়েছে তখন...। আচ্ছা, আমি রাখছি।
***
-স্যার, নীলেশ প্রায়ই আসে ওই বাড়িতে কিন্তু চুরির পর আসা-যাওয়াটা একটু কমে গেছে।
এমন সময় একটা ফোন আসায় বিক্রম উঠে যায়। বেশ কিছুক্ষণ কথা বলার পর ফিরে এসে অনলকে বলে- কাল সকালেই আমরা রায়ভিলায় যাব। তুমি তাড়াতাড়ি চলে আসবে।
-ওকে স্যার।
***
পরের দিন সকাল (০২/১২/১৯)...
-অনল, তুমি থানা থেকে রঘুকে নিয়ে রায়ভিলায় যাবে। আমি ওখানেই তোমার অপেক্ষা করব।
-ওকে স্যার।
-অম্বরীশবাবুকে ফোন করে বলেছ যা বলতে বলেছিলাম?
-হ্যাঁ স্যার।
-চলো তাহলে শেষ অঙ্কটা মিলিয়েই আসি।
***
-বিক্রমবাবু, আপনার কথামতো সবাইকে আজ আমি থাকতে বলেছি।
-হুম। আর একটু অপেক্ষা করুন আপনাদের পরিচিত দুজন মানুষ আসবে। তারপর আমি সবটা বলছি।
এমন সময় হিমাদ্রি গুপ্ত আর ওনার ছেলে নীলেশ গুপ্ত এসে পড়ে। ওদের বসার জায়গা দেখিয়ে দিয়ে বিক্রম শুরু করে।
-অম্বরীশবাবু, প্রথমেই বলি আপনাদের চুরি যাওয়া মালগুলো চোরেরা পুড়িয়ে ফেলেছে। এর থেকেই বোঝা যায় আপনাদের কেসটা আর পাঁচটা কেসের মতো শুধু চুরির নয় বরং কেউ আপনাদের ক্ষতি করতে চায় বলেই চুরি করেছে। সে আপনাদের হয় চরম শত্রু নয়তো কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী।
-কে করেছে এসব? তার নামটা বলুন প্লিজ অফিসার।
-আমাদের সন্দেহ যায় আপনার ছোট ভাই নীলাম্বরবাবুর ওপর। কারণ, এখানে আমাদের অনেকগুলো খটকা লাগে। যেমন আপনাদের এত সিকিউরিটি থাকা সত্ত্বেও চোর কি করে দোকানে ঢুকল। যেদিন অতগুলো মাল এল সেদিনই সিসিটিভি খারাপ আর সেদিনই চুরি হল। বাড়ির কেউ জড়িত না থাকলে এমনটা সম্ভব নয়।
-কি, নীলঙ তুই শেষ পর্যন্ত...?
না, উনি কিছু করেননি। পরে আমরা খোঁজখবর নিয়ে জানি উনি এরকম কাজ করার কথা স্বপ্নেও ভাবেন না। এরপর সরাসরি আমাদের সন্দেহটা যায় হিমাদ্রি গুপ্তের ওপর। উনি আবার আপনাদের দোকানটা কিনতেও চেয়েছিলেন। কিন্তু ওনার সাথে কথা বলতে গিয়ে এই কেসের অন্য একটা দিক সামনে এল।
-কি সেই দিক?
-কি নীলেশ আমি বলব নাকি আপনি?
-আমি? আমি কী বলব? আপনার আজগুবি গল্প আপনিই বলুন।
-আজগুবি? ঠিক আছে আমিই বলছি। একটা কথা বলুন, আপনারা সবাই নীলেশকে কতটা চেনেন অম্বরীশবাবু?
-ও আমার মেয়ের বন্ধু হিসেবেই আমরা ওকে চিনি। আমার মেয়ের মতো নীলেশও এম.বি.এ করছে। আর কিছু জানি না।
-ও আর একটা পরিচয় হল হিমাদ্রি গুপ্তের ছেলে। আর...
নীলেশ ঝাঁঝিয়ে উঠে বলে- আপনার আজগুবি গল্প শোনার আমার একটুও ইচ্ছা নেই। আমি এবার যাব।
-দাঁড়াও, আমার কথা যতক্ষণ না শেষ হবে এখান থেকে কেউ কোথাও যাবে না।
-আর কি পরিচয় আছে ওর, অফিসার?
-আপনাদের যে প্রতিদ্বন্দ্বীর কথা বলেছিলাম মানে গুপ্তষ্টোর্সের বর্তমান মালিক হল নীলেশ। আপনাদের ব্যবসা থাকলে ওদের ব্যবসা কোনোদিনই দাঁড়াবে না এটা ওনারা ভালোভাবে জানত। তাই হিমাদ্রিবাবু প্রথমে কিনতে চান আপনাদের দোকান। আপনারা না বিক্রি করায় ওনারা অন্য প্ল্যান করেন। খোঁজখবর নিয়ে নীলেশ এই বাড়ির মেয়ে, নীলিমার সাথে বন্ধুত্ব করে। সেই সূত্রে এই বাড়িতে যাওয়া-আসাও করতে থাকে। একদিন ও হঠাৎ আপনাদের কথাবার্তা শুনে নেয়। তারপরই প্ল্যান করে কিভাবে চুরি করা যায়। যাতে মার্কেটে আপনাদের বদনাম হয় আর ও এই সুযোগটা কাজে লাগাতে পারে।
-এসব আপনি কি বলছেন অফিসার। আমার তো বিশ্বাসই হচ্ছে না।
-নীলেশ এবার রীতিমতো রেগে গিয়ে কিছু একটা বলতে যাচ্ছিল, হঠাৎ ওর চোখ যায় দরজার দিকে।
-অনল, একদম ঠিক সময় এসেছ। চোর ব্যাটাকে নিয়ে এসো।
-এই যে স্যার।
-এই নিন আপনাদের চোর আর নীলেশের পার্টনার। কি আজগুবি গল্পটা সত্যি বলে মনে হচ্ছে। নাকি তোমাকেও রঘুর মতো থানায় নিয়ে গিয়ে আদর-যত্ন করতে হবে।
নীলেশ এবার ভয় পেয়ে যায়। ও বলে ওঠে- না, আমি সব স্বীকার করছি। এতক্ষণ উনি যা বললেন সব সত্যি। আমার ভুল হয়ে গেছে আমাকে ক্ষমা করে দিন।
-হাবিলদার, ওদের নিয়ে যান। আমার কাজ শেষ অম্বরীশবাবু। আমি আসি।
***
ওরা রায়ভিলা থেকে বেরিয়ে পড়ে।
-কি হল ওরকম ক্যাবলাকান্তের মতো মুখ করে আছো কেন?
-না স্যার কিছু না। তবে দুইয়ে দুইয়ে চার যে এরকম হবে আমি আশা করিনি স্যার।
-হুম। অনেক সময় আমরা যা ভাবি না সেটাই হয়।
-যাক, কেসটা সমাধান হলো এতেই আমি খুশি। আজ তাহলে জমিয়ে একটু খাওয়া-দাওয়া হয়ে যাক স্যার। তখন না হয় এক আর একে দুই, দুই আর দুইয়ে চার কি করে হলো পুরোটা আর একবার শুনব।
-কি? আবার?
-আমার স্ত্রীর আবদার। স্যার, প্লিজ না করবেন না।
-ঠিক আছে।
-তাহলে আজ দুপুরের খাওয়ারটা আমার বাড়িতে। আমি এক্ষুনি সব ব্যবস্থা করতে বলে দিচ্ছি।
-রাজি না হলে তুমি তো আর আমাকে ছাড়বে না। অগত্যা চলো। বুঝলে রামবিলাস, অনেক ধকল গেল এই কদিন। এবার কটাদিন একটু ছুটি নেব ভাবছি।
-উফ্ স্যার...
-আচ্ছা আচ্ছা, তুমি রামবিলাস নও। আমার জন্য না হয় একটু রামবিলাস হলে। হা...হা...হা।
(সমাপ্ত)