Sudeshna Mondal

Drama Tragedy Classics

3  

Sudeshna Mondal

Drama Tragedy Classics

মেরি বেহেনা

মেরি বেহেনা

3 mins
221


প্রতিটা বছরই মানুষের জন্য কিছু না কিছু নিয়ে আসে৷ কারোর কারোর জন্য আনন্দ-ভালবাসা আবার কারোর কারোর জন্য দুঃখ-কষ্ট৷ কোনো কোনো আনন্দ যেমন মানুষ সারা জীবন মনে রাখতে চায় তেমন কোনো কোনো দুঃখ থাকে যেটা মানুষ চাইলেও ভুলতে পারে না৷ তৃষানের জীবনের এরকমই একটা ঘটনা কোনোদিনই ওকে ২০২০ সালটা ভুলতে দেবে না৷ বলা ভালো ও ভুলতেও চায় না।

***


(দুই বছর আগে)


তৃষান... তৃষান চৌধুরী৷ যৌথ পরিবারের ছোট সদস্য হওয়ায় সকলের আদরের বেশীরভাগটাই বরাবরই ওর প্রাপ্য৷ এছাড়াও তৃষান যেমন ওর বাবা-মার চোখের মণি তেমনি আর একজনের হৃদয়ের টুকরো৷ ওর দিদির, তৃষার৷ তৃষা আর তৃষান দুই ভাইবোনের কারোরই একে অন্যকে ছাড়া চলে না৷ ওদের সম্পর্কটা ঠিক যেন টক-ঝাল-মিষ্টি। এই ঝগড়া করছে, মারপিট করছে আবার পরক্ষণেই দুজনে গলা মিলিয়ে তারস্বরে চিৎকার করে গান গাইছে।যতই তৃষা ওর থেকে সাত বছরের বড়ো হোক দুজনের মধ্যে বন্ধনটা ঠিক যেন সমবয়সি বন্ধুর মতো৷ প্রতি বছরের মতো এবছরও তৃষার জন্মদিনে সবার থেকে আলাদা কি উপহার দেওয়া যায় সেটাই ভাবছিল তৃষান৷ অনেক ভেবেচিন্তে ঠিক করে একটা ডায়রি উপহার দেবে। যেমন ভাবা তেমনই একটা খুব সুন্দর ডায়রি কিনে এনে ওটাকে দিদির হাতে দিয়ে কানে কানে বলে--দিদি, তুই এটায় গল্প লিখবি৷ তোর নিজের লেখা গল্প৷ আর আমি পড়ব সেই গল্পগুলো৷ তারপর তোকে বলব কেমন হয়েছে গল্পগুলো৷

***


(বর্তমানে)

হঠাৎ মায়ের ডাকে তৃষানের হুশ ফেরে৷ অনেকক্ষণ ধরে নীচে না যাওয়ায় মা ওকে ডাকতে চলে এসেছে। দিদির ডায়রিটা নিয়ে পড়তে পড়তে এতটা সময় পার হয়ে গেছে ও বুঝতেই পারেনি৷ আজ ওর জন্মদিন৷ কিন্তু ওর দিদি ছাড়া এই দিনটা যেন ওর কাছে অর্থহীন হয়ে পড়েছে৷ আগের বছরও এইদিনটায় ও কত মজা করেছে ওর দিদির সাথে৷ এসব ভাবলেই ওর চোখে জল চলে আসছে৷ এই ভয়ংকর মারণ রোগটা ওর মতোই আরও কতজনেরই আপনজনকে কেড়ে নিয়েছে। আরও হয়তো কত আপনজনকে কেড়ে নেবে। কতো ভালো হতো এইরকম কোনো রোগ যদি না আসত। তাহলে কেউই নিজেদের আপনজনদের এইভাবে হারাতো না। এসব ভাবতে ভাবতে কখন যে মা ওর পাশে এসে বসেছে খেয়াল করেনি৷ মা-কে দেখে চোখের জল আর আটকে রাখতে পারে না তৃষান৷ মাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ওঠে। বছরের শুরুতেও কি ও ভেবেছিল বছরের শেষটা এরকম হবে৷ ওকে এইভাবে কাঁদতে দেখে ওর মা বলে--বাবু, চল এবার কিছু খেয়ে নিবি৷

--হ্যাঁ, মা যাচ্ছি৷ ডায়রিটা টেবিলের ওপর রেখে নীচে চলে যেতে গিয়ে হঠাৎ ওর চোখে পড়ে ডায়রির ওপরে সুন্দর করে লেখা আছে--


"যখন পড়বে না মোর পায়ের চিহ্ন এই বাটে,

তখন আমায় নাইবা মনে রাখলে৷"


"না রে দিদি, তোকে সবাই মনে রাখবে, তোর গল্পের মাধ্যমে তোকে মনে রাখবে"-- লেখাটা পড়ে মনে মনে প্রতিজ্ঞা করে তৃষান৷ কিন্তু কীভাবে সেটা সম্ভব এটা ভাবতে ভাবতে ও ফোন ঘাটছিল৷ হঠাৎ করে ওর চোখ পড়ে কিছু গল্পের পেজ-এ৷ যেখানে গল্প পড়াও যায় আবার গল্প লিখে পাঠানোও যায়৷


গল্প পাঠানোর নিয়মাবলী পড়ে নিয়ে ও ঠিক করে ওর দিদির লেখা গল্পগুলো পাঠাবে৷ সেইমতো ওর দিদির লেখা গল্পগুলো দিদির নাম দিয়ে মেল করে দেয় ওই পেজ--এ৷ দুদিন পর তৃষানের ফোনে ম্যাসেজ আসে যে গল্পগুলো মনোনীত হয়েছে আর দুদিন পর মানে ১লা জুন পোস্ট হবে৷ ওর যেন আর তর সইছে না৷ এই দুদিনের অপেক্ষা যেন ওর কাছে অনেকদিনের সমান লাগছিল৷ দেখতে দেখতে দুদিন কেটে গেছে৷ আজকেই ওর দিদির লেখা গল্প পোস্ট হবে৷ এসব ভাবলেই খুশিতে ওর চোখে জল চলে আসছে বারবার৷ সারাদিন ফোন হাতে নিয়ে বসে আছে কটা লাইক, কটা কমেন্ট পড়ল দেখবে বলে৷ কিন্তু সেরকম কিছু না হওয়ায় তৃষাণ হতাশ হয়ে ফোনটা রেখে দিল৷ এসব ভাবতে ভাবতে কখন ওর চোখ লেগে গিয়েছিল। ঘুম থেকে তাড়াতাড়ি উঠেই ফোনটা খুলে আবার দেখতে লাগল৷ ফোনটা দেখেই ওর মুখে একটা হাসি ফুটে উঠল। ও আজ ভীষণ খুশি৷ ওর দিদির গল্পে অনেক লাইক, কমেন্ট পড়েছে দেখে৷ সবার বেশ পছন্দ হয়েছে লেখাগুলো। অনেকে নানা মতামত জানিয়েছে। এসব দেখে তৃষাণের খুব ভালো লাগে। মনে মনে বলল--আমি পেরেছি দিদি, আমি পেরেছি৷ আজ আর তোর লেখা এই ডায়রির মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই৷ অনেক মানুষ তোর লেখা পড়ছে আর তাদের মতামত জানাচ্ছে৷ শুধু আমার একটাই দুঃখ এই খুশির দিনে তুই আমার সাথে নেই৷ আমার বিশ্বাস তুই যেখানেই থাকিস নিশ্চয়ই দেখতে পাচ্ছিস। আর তুইও আমার মতো খুশি হচ্ছিস। পরজন্ম বলে যদি কিছু হয় তাহলে তখনও আমি আমার দিদি হিসেবে তোকেই চায়।

দূরে কোনো বাড়ি থেকে রেডিয়োয় গান ভেসে আসছে--


"ফুলো কা তারো কা সবকা ক্যাহেনা হে

এক হাজারো মে মেরি বেহেনা হে"৷



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Drama