ভোলা
ভোলা


রায়পাড়ার নামকরা ক্লাব তরুণ সংঘ। তারা মাঝে মাঝেই বেশকিছু সমাজসেবামুলক কাজের সাথে যুক্ত থাকে। তাছাড়া সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের সম্বর্ধনা, বসে আঁকো প্রতিযোগিতা, শীতকালে খেলাধুলা এসব তো লেগেই আছে। এই পাড়ার কাউন্সিলার সুবিমল দাস হলেন এই ক্লাবের সভাপতি, তাই যেকোন অনুষ্ঠানের সূচনা হয় তাঁরই ভাষণ দিয়ে। আজকেও এর অন্যথা হলনা।
আজকে ৫ই সেপ্টেম্বর তাই তিনি শিক্ষক দিবস উপলক্ষে ক্লাবের একটি অনুষ্ঠানে ভাষণ দিতে স্টেজে উঠলেন। তার ভাষণে তিনি বললেন ‘শিক্ষা সকলের অধিকার। আমাদের লক্ষ্য রাখতে হবে পরবর্তী প্রজন্মের প্রতিটি শিশু যেন শিক্ষার সমান সুযোগ পায়। আমাদের সমাজের শিশু শ্রমিক সমস্যার সমাধান করতে আমাদেরই তো এগিয়ে আসতে হবে ’ ইত্যাদি আরো বেশকিছু কথা বলার পর তিনি তাঁর ভাষণ শেষ করলেন।
অনুষ্ঠান শেষে তিনি ক্লাবের কিছু সদস্য ও তাঁর দলের কিছু লোকজনকে সঙ্গে নিয়ে ক্লাবের লাগোয়া বাপির চায়ের দোকানে চা খেতে গেলেন। এই দোকানেই কাজ করে দশ বছরের ছোট্ট ছেলে ভোলা। তার বাপ মা নেই, দূর সম্পর্কের এক মামা তাকে এই দোকানে কাজের জন্য দিয়ে গেছে। ভোলা দিনরাত ফাইফরমাস খাটার বদলে দুবেলা দুমুঠো খেতে পায়।
দোকানে এসেই সুবিমল বাবু বললেন ‘ওরে ভোলা দশ কাপ চা দে।’ ভোলা চা দিতে এসে শুনল সুবিমল বাবু তার দলের ছেলে বাঘাকে বলছেন ‘আমার সেক্রেটারি ভাষণটা কি দারুন লিখেছে বল বাঘা?’ বাঘাও সম্মতি জানাল। ভোলা হঠাৎ বলল ‘বাবু আপনে তো ইস্কুল গেছেন, লিখাপড়াও করছেন তবে আপনের জইন্য অন্য লোকে লিইখ্যা দেয় ক্যান?’ এইকথা শুনে সুবিমলবাবু প্রচন্ড রেগে গিয়ে বললেন ‘ছোটলোক কোথাকার যা বুঝিসনা তাই নিয়ে কথা বলিস কেন? তাড়াতাড়ি চা দিয়ে দূর হ এখান থেকে।’ ভোলা কি ভুল বলেছে বুঝতে না পেরে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে সবার দিকে।