ভাইরাসের কড়চা #৩; করো নারী
ভাইরাসের কড়চা #৩; করো নারী
বিশ্বজুড়ে লোকমুখে আমাকে নিয়ে ব্যাপক আলোচনা চলছে। কানাকানি হচ্ছে। লোকে বলাবলি করছে - চীন নাকি আমাকে জন্ম দিয়েছে! জৈবিক যুদ্ধের এই নাকি শুরু। ওরা আমাকে তৈরি করে বাজারে ছেড়েছে মূল দুটো উদ্দেশ্যে - এক, ওদের দেশের বুড়ো বুড়িদের নটেগাছ যতটা পারা যায় মুড়িয়ে দিতে। আর দুই, অন্য দেশগুলোকে হঠাৎ বিনা নোটিসে পুরোপুরি নাস্তানাবুদ করতে। প্রথমে ধসবে স্বাস্থ্য, তারপর অর্থনীতি, তারপর মনোবল।
সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচারের ঝড় উঠেছে।অনেকেই বলছে চীনারা নাকি নিজেদের দেশের বিশাল বিশাল অত্যাধুনিক হাসপাতাল, টেস্টিং সেন্টার ইত্যাদি গড়ে তুলেছে আমাকে বাজারে ছাড়ার অনেক আগে থেকেই। রাস্তায় সেদিন কেউ একজন বলল - গরমে করোনা মরে যায়, তাই সব মহাদেশের মধ্যে একমাত্র আফ্রিকায় সবথেকে কম আক্রান্ত। উত্তর এল - ওসব গরম-টরম বাজে কথা... চীন এখন প্রচুর টাকা ঢালছে আফ্রিকায়, কটা দেশ দেখবি পুরো খেয়ে নেবে আগামী দিনে। তাই ওখানে বেশি ছড়ায়নি। অন্য আর একজন, মনে হয় বিহারের এক নাপিত, যেই না বলেছে - চীন নহি, আম্রিকা ইসকে পিছে হ্যায়, সাথে সাথে লোকজন প্রায় ঝাঁপিয়ে পড়লো ওর ওপর। কে বলবে এককালে এরাই মনের আনন্দে হিন্দি-চিনি ভাই ভাই করেছে! একটা বন্ধ মোবাইল ফোনের দোকানের দরজায় কে যেন চিপকে দিয়েছে পোস্টার - স্টপ করোনা, ব্যান চায়না! অনেক দেশ মিলে নাকি চীনের বিরুদ্ধে আর্থিক ক্ষতিপূরণের মামলাও করবে...
গত পরশু লকডাউনের প্রথমদিনে দেখ
েছিলাম বাড়ি ছেড়ে লোকেরা হুড়মুড় করে নেমে এসেছে বাজারে। প্রয়োজনের চেয়ে বেশি এত পরিমাণে বাজার করছে যে একবারে বয়ে নিয়ে যেতে পারলো না একজন! সব্জিওয়ালার জিম্মায় রেখে গেল। আরেকজন তার দেখাদেখি একই রকম আচরণ করল। একটু পরেই ফিরে এলো দুজনে, একই সময়ে - প্লাস্টিকের ব্যাগের সাইজেও এক, সব্জিও প্রায় একই; কোনটা কার এই নিয়ে প্রায় হাতাহাতি!
আজ অবশ্য অনেকটা ভাল অবস্থা দেখছি। এখানকার চিফ মিনিস্টার এক নারী। তিনি নিজেই রাস্তায় নেমে সব ঘুরে দেখছেন, ব্যবস্থাপনা করছেন। নিজে হাতে ইঁট তুলে রাস্তায় গোল গোল চিহ্ন দিচ্ছেন যাতে লোক সেই গণ্ডীর মধ্যে দূরে দূরে থেকে জিনিস কেনে। ভালো লাগলো দেখে। কেননা আমাদের ভাইরাসদের মধ্যে কোন উঁচুনিচু ভেদাভেদ নেই, সবাই সবার জন্য ভাবে বলেই আমাদের বাড়-বাড়ন্ত!
বন্দি অবস্থায় দেখছি বাড়ির হোম মিনিস্টাররাই, মানে গৃহলক্ষ্মীরাই ঠান্ডা মাথায় সব কিছু সামলাচ্ছেন। কোনদিন কি কি পাতে পড়বে, তার জন্যে কি কি রান্না করতে হবে, কি কি মালমশলা কিনে আনতে হবে, সব। বাড়িতে আটক থেকে ও বেরোতে না পেরে বেশিরভাগ পুরুষেরই মাথাগরম। করো নারী করো, এমন পরিস্থিতিতে তুমিই হাল ধরো...
চুপিচুপি আর একটা কথা বলে রাখি। কড়চা পড়ছেন তো! এখন তো গৃহবন্দি - অন্য কোনো কাজ নেই। লাগছে কেমন?
কৃতজ্ঞতা স্বীকার - শ্রী অমরনাথ মুখোপাধ্যায়