Unmask a web of secrets & mystery with our new release, "The Heel" which stands at 7th place on Amazon's Hot new Releases! Grab your copy NOW!
Unmask a web of secrets & mystery with our new release, "The Heel" which stands at 7th place on Amazon's Hot new Releases! Grab your copy NOW!

Gopa Ghosh

Comedy

5.0  

Gopa Ghosh

Comedy

বড়ো মামা

বড়ো মামা

4 mins
1.3K


সারা বছর আমরা সব ভাইবোনেরা মিলে আশা করে থাকতাম পৌষ মাসের জন্য। কেননা ওই পিঠে পার্বণের সময়েই মা আমাদের নিয়ে মামার বাড়ি যেতেন। আমরা তিন বোন আর মাসীর দুই ছেলে, একসাথে বেশ বড়োসড়ো একটা দল হত। মেদিনীপুরের হিজলি গ্রামে ছিল আমার মামাবাড়ী। মা কৃষক পরিবারের মেয়ে। প্রচুর জমিজমা। বেশ বড়ো করেই পার্বণ পালন করা হতো। আর সবচেয়ে আনন্দ হত আমার বড় মামাকে কাছে পেয়ে। খুব মজার মানুষ মানুষ ছিলেন উনি। চাষের কাজ দেখাশোনা করেও বাকি সময় নানা বিষয়ের বই পড়তেন। তাই তার জ্ঞানও ছিল অপরিসীম। তিন মামার মধ্যে বড়ো মামাই ছিলেন ভাগনা ভাগ্নি দের খুউব প্রিয়। লম্বা চওড়া চেহারা হলেও মামার মনটা ছিল একদম শিশুর মতো। আমাদের সাথে বন্ধুর মতো মিশে যেতেন।

বড়ো মামার পোষা বিড়ালের সংখ্যা ছিল প্রায় পঁচিশ। কুকুরও কম ছিল না। মানে রাস্তা থেকে এনে পোষ মানানো। সবচেয়ে মজার কথা এই বিড়ালদের আবার প্রত্যেকের একটা করে নাম ছিল। আমরা মামা বাড়ি যাওয়ার পরদিন থেকে প্রত্যেকের চারটি করে বিড়াল ভাগ করে দেওয়া হতো। মানে তাদেরকে দেখাশুনার দায়িত্ব নিতে হতো। চার বেলা খেতে দেওয়া, চান করানো সব। মামিরা বারণ করলে শুনতেন না। বড় মামা বলতেন," এতে ওদের জীবের প্রতি ভালোবাসা বাড়বে, কোনো ক্ষতি হবে না,"।

যাই হোক আমাদের কিন্তু বেশ মজাই হত। মাঝে মাঝে নিজের ভাগের বিড়াল হারিয়ে অন্যেরটা ধরে আনতাম। মামার কিন্তু সব বিড়াল চেনা। উনি ঠিক ধরে ফেলতেন।সেই নিয়ে খুব হৈ হৈ হতো ভাই বোনদের মধ্যে। ঝগড়া হতো বেশি আমার মাসীর বড়ো ছেলে জগু আর ছোটো ছেলে বিশু র মধ্যে। ওরা বছর দু এর ছোট বড়ো ছিল।

সেই শেষ বারের পৌষ পার্বণের কথা খুব মনে পড়ে। এর মাত্র তিন মাস পরেই বড়ো মামা এক দুর্ঘটনায় মারা যান। একটি বাচ্চাকে জল থেকে বাঁচাতে গিয়ে নিজে তলিয়ে যান। এমন মামার জন্য সত্যিই গর্বে ভরে ওঠে আমার বুক।

সেবার আমার দিদি অনু মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছিল। আমরা হৈ হৈ করে পৌঁছে গেলাম মামা বাড়ি। প্রতি বারেই বড়ো মামা আমাদের নতুন নতুন পরিকল্পনা উপহার দিতেন। এবারেও বাদ গেলনা। বললেন "রোজই তো তোরা খাস, আর মায়েরা রান্না করে, আজ তোরা রাঁধবি, আর মায়েরা খাবে,"। মামীরা তো শুনে রেগে গেলো কিন্তু বড়ো মামী ছাড়া কারো প্রতিবাদ করার সাহস নেই। তবে বড়ো মামীর কথাতেও সেবার কাজ হলো না। আসলে আমরা সবাই মামাকেই সমর্থন করেছি। শেষে আর কি করা যাবে, বাড়ির বউ-ঝিরা ছুটি পেতে মাইল তিন দূরে এক মন্দির দেখতে বেরিয়ে পরলো। মেজো মামা গেলেন ওদের রক্ষী হয়ে। ছোটো মামা কলকাতায় থেকে পড়াশুনা করেন, তাই তিনি অনুপস্থিত।

জগু কিন্তু ঘরে রান্না করার পরিকল্পনাতে আর একটু নতুন রঙ দিলো। বললো "বড়ো মামা, আমরা নদীর ধারে উনুন করে রান্না করবো, তাতে আরো আনন্দ হবে, যেন পিকনিক করছি মনে হবে"। বড়ো মামার কিছুতেই আপত্তি নেই। আমার মামার বাড়িটা ছিলো শিলাবতি নদীর ধারে। অতএব নদীর ধারের মাঠেই রান্নার আয়োজন হলো। মেনু বেশ সাধারণ, খিচুড়ি, আলুভাজা, মাংস আর চাটনি। কাজও ভাগ করে দেওয়া হলো সবাইকে, শুধু আমার ছোট বোন রিনিকে ছাড়া। ও তখন তিন বছরের। সবার বড়ো অনুদি রান্নার ভা টা পেয়েছিল। আমরা সবাই ওকে সাহায্য করতে লাগলাম। জগু আর বিশুর মধ্যে ঝগড়া থামাতে বার তিনেক বড়ো মামাকে বাড়ি থেকে আসতে হলো। আসলে ওদের ঝগড়া একটা কারণেই বেশি ঘটতো, সেটা হলো খাওয়া। দুজনেই খেতে খুব ভালোবাসে। কার ভাগেরটা বড়ো, আর কারটা ছোটো, এই নিয়ে চলত ঝগড়া।

মুখে বলা সোজা, কিন্তু কাজ করা বেশ শক্ত বুঝেছিলাম সেদিন। রিনিকে দেখে খুব হিংসা হচ্ছিল। কি সুন্দর তিন-চারটে আধ খাওয়া পুতুল বগলে করে ঘুরে বেড়াচ্ছে। একবার তো মাংসে র ডেকচি তুলে সব নষ্ট করেই দিত যদি না বড়ো মামা দেখতেন। যাই হোক রান্না শেষ হওয়ার আগেই মামীরা ফিরে এলো। কিন্তু মামা পরিবেশনের ভার ওদের না দিয়ে নিজেই নিলেন। অনুদি আর বড়ো মামা ছাড়া প্রায় সবাই খেতে বসে গেলো। জগু আর বিশুর মধ্যে ঝগড়া শুরু হলো, যেই না অনুদি মাংসে র ডেকচি র ঢাকনা খুলেছে। বেশ বড়োসড়ো একটা মাংস দেখে জগু ওটা দিতে বলে, বিশু পাশ থেকে উঁকি মেরে তড়াক করে লাফিয়ে ওঠে। ওটা ওকেই দিতে হবে। শেষে বড়ো মামাই মীমাংসা করে দিলেন। যেহেতু জগু প্রথমে বসেছে, ওকেই প্রথম মাংস পরিবেশন করার কথা, তাই ও যেটা চেয়েছে সেটাই দিতে হবে। বিশু আর কি করে, মামার কথা অমান্য করার সাধ্য কারও নেই। জগুর মুখ খুশিতে উজ্জ্বল। কিন্তু পরেরবার মাংস দিতে আসতেই জগু বলে ওঠে "কি রে অনুদি, মাংস ভালো করে সেদ্ধ করিস নি?" অনুদি তো অবাক, "তাহলে সবাই খাচ্ছে কি করে, তোর বোধহয় দাঁত পড়ে গেছে" সবাই হো হো করে হাসতে থাকে। হঠাৎ বড়ো মামা ছুটে এসে জগুর হাত থেকে মাংস টা কেড়ে নেয়। সবাই অবাক। কি হলো ব্যাপারটা? একটু দূরে জলের মগ নিয়ে মাংসটা ধুয়ে বললেন, "হতচ্ছাড়া, এটাকে এতক্ষণ ধরে চিবিয়েও বুঝতে পারলি না, এটা রিনির নেড়া পুতুলটা।" জগুর বড় বড় চোখ আরো বড় হয়। হাসতে হাসতে সবার পেট ফাটার উপক্রম হয়েছিল সবার।


Rate this content
Log in

More bengali story from Gopa Ghosh

Similar bengali story from Comedy