বাজলো তোমার আলোর বেণু
বাজলো তোমার আলোর বেণু
একটা দোয়েল পাখি থেকে থেকে কি সুন্দর শিষ দিচ্ছে। সকাল সকাল ভেঙে গেল ঘুমটা। আজ একটু তাড়াতাড়িই উঠে পড়েছি। দরজা খুলে পায়ে পায়ে বাইরে এসে দাঁড়ালাম। সদ্য ফুটে ওঠা কমলা রঙা ভোর, বাতাসে হিমের স্পর্শ ।কত পাখি ডাকছে আজ। ওমা! বাগানের শিউলি গাছটায় আজ ঝেঁপে ফুল এসেছে। একটা দুটো করে রোজই মাটিতে পড়ে থাকতে দেখছিলাম। আজ একেবারে গাছ ভর্তি ফুল। এ তল্লাটে এই একটাই শিউলি গাছ রয়েছে। মনে পড়ল, আজ তো ষষ্ঠী, দেবী মায়ের বোধন। আরে! ওটা কে! এতক্ষণ খেয়াল করিনি তো! বাগানে ঝোপের আড়ালে রাঙা টুকটুকে দুটো ছোট্ট ছোট্ট পা ইতস্তত বিচরন করছে। ডাক দিলাম, এ্যাই। এদিকে আয়।
নির্ভয়ে আমার সামনে এসে দাঁড়াল, পাঁচ কি ছয় বছর বয়সী মেয়েটি। অপূর্ব মুখশ্রী। পরনে লাল ডুরে শাড়ি। হাতে সাজি ভর্তি শিউলি ফুল।
হুম। ফুল চুরি করতে এসেছিলি? গম্ভীর মুখে বললাম।
ওমা। গাছ ভর্তি ফুল তোমার। এ তো দূগ্গা মায়ের পুজোয় লাগবে। একে চুরি বলছ কেন? জান, ওরা একটাও শিউলি ফুল পায়নি।
কারা রে?
আঙুল দিয়ে দেখাল, ওই যে। ওইখানে।
বুঝলাম আমাদের পাড়ার পুজোর কথা বলছে ও। বললাম, আচ্ছা। নিয়ে যা ফুল, তোর যতটা ইচ্ছে। কিন্তু কোথায় থাকিস তুই? তোর নামটা তো বল।
খিলখিল করে হেসে উঠে একরাশ মুক্ত ঝরিয়ে দিল যেন, ওমা! আমাকে চেন না তুমি! আমার নাম তো দূগ্গা।
ও। আচ্ছা। কিন্তু থাকিস কোথায়? কাদের বাড়ির মেয়ে তুই? আগে তো দেখিনি তোকে!
আমি অত ঠিকুজ্জি কুলুজি দিতে পারব না বাপু। সক্কলেই চেনে আমাকে। যাকে জিজ্ঞেস করবে, সেই বলে দেবে আমার কথা। এখন আমি চললাম। অনেক কাজ পড়ে রয়েছে আমার। এদিকে খিদেও লেগেছে খুব। ধুপ ধুনোর গন্ধে আবার বেশি করে খিদে পায়। পুজো না হলে তো কিচ্ছুটি খেতে পারব না। যাই দেখি। ওদিকে আবার কি হচ্ছে। ডুরে শাড়ির আঁচল উড়িয়ে প্রজাপতির মতই যেন উড়তে উড়তে চলে গেল ও। আমার উঠোনে রেখে গেল ওর আলতা পরা দুটি পায়ের ছাপ।
স্নান করে যখন মন্ডপে এলাম, তখনও পুজো শুরু হয় নি। ঠাকুরের হাতে অস্ত্র তুলে দিচ্ছেন পুরোহিত মশাই। কাজটা করতে করতেই বলে উঠলেন, শিউলি ফুল কি পাওয়া গেছে? কেউ একজন বলে উঠল, এইতো। সাজি ভর্তি শিউলি ফুল রয়েছে এখানে। আর কত চাই!
মৃদু হাসলাম আমি। ও ফুল তো আমার বাগানেরই, দূর্গা তাহলে এখানেই রেখে গিয়েছে ফুল গুলো।
পুজো শুরু হয়েছে। মন্ত্রচ্চারণ করছেন পুরোহিত। দুচোখ ভরে দেখছি মায়ের রূপ। কি সুন্দর হয়েছে আমাদের পাড়ার ঠাকুর। কিন্তু একি দেখছি! কাকে দেখছি আমি! সেই লাল ডুরে শাড়ি, সেই চোখ, সেই মুখ, সেই হাসি! দূর্গা! সকালে কে এসেছিল আমার বাড়িতে? তার পায়ের ছাপ যে এখনো রয়েছে আমার উঠোন জুড়ে।
এই ঘটনার পর থেকেই দূর্গা পুজো শুরু হয় আমাদের বাড়িতে। সেই ছোট্ট মেয়েটির রূপেই মা আসেন প্রতি বছর।