Dola Bhattacharyya

Inspirational

4  

Dola Bhattacharyya

Inspirational

ধারাবাহিক চোখের আলোয় পর্ব 7

ধারাবাহিক চোখের আলোয় পর্ব 7

4 mins
22



এরপর কিছুদিন পরেশ আর কোনো উৎপাত করল না। আঁখি ভেবেছিল, আর হয়তো কিছু করবে না ও। সামনেই দুর্গাপূজা । দশমীর দিন রবীন্দ্রসদনে ওর অনুষ্ঠান। মেঘাও গাইবে সেদিন । দেখতে দেখতে বড় আকাঙ্খিত সেই দিনটা এসে গেল। 

  রবীন্দ্রসদন চত্বর আজ লোকে লোকারণ্য। প্রচুর টিকিট বিক্রি হয়েছে। ধীমান গোস্বামী খুব খুশি। মুম্বই থেকে মল্লার চ্যাটার্জি এসেছেন , আজকের প্রধান শিল্পী। ধীমান গোস্বামীর পুরোনো ছাত্র মল্লার, আজ নামকরা সংগীত শিল্পী। এত লোকজন দেখে একটু নার্ভাস ফিল করছিল আঁখি। মেঘা আজ ভীষণ উজ্জ্বল। উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়ছে। সে তুলনায় আঁখি আজ অনেক ম্রিয়মান। সব সময়েই যেন কি চিন্তা করে যাচ্ছে। কোনো ভয় ডর নেই মেঘার মনে । আঁখির মধ্যে সাহস সঞ্চার করতে চেষ্টা করছিল ও । 

নির্দিষ্ট সময়ে সরে গেল মঞ্চের পর্দা। শুরু হল মেঘা আর আঁখির যুগল বন্দি । 

অসাধারণ গাইল ওরা দুজনেই । গান শেষ হল একসময়ে।দর্শক মুগ্ধ। প্রশংসার বন্যায় অভিডূত দুজনেই। স্টেজ থেকে নেমে গুরুজীকে আগে প্রণাম করল ওরা। এরপর মল্লার চ্যাটার্জি স্টেজে উঠলেন । কিছুক্ষণ গান শোনার পর আঁখি বলল, "মেঘা, আর তো আমি থাকতে পারব না। রাত হয়ে যাচ্ছে। এবার উঠতে হবে আমাকে।" 

"ওঃ ।নটা বেজে গেছে তাই না! তোর বাড়ি থেকে কেউ এসেছে?" 

হাসল আঁখি, "কে আসবে বল তো! কে আছে আমার!" 

অবাক হয়ে আঁখির দিকে তাকাল মেঘা, এমন দিনেও কেউ আসতে পারল না! কেমন লোক এরা! মনে মনে এই কথাগুলোই ভাবছিল মেঘা। মুখে বলল," চল, আমিও উঠব এবার। টায়ার্ড লাগছে খুব।" আঁখিকে নিয়ে বাইরে এল মেঘা। ওর বাবা মা দুজনেই এসেছেন। আঁখিকে অনেক শুভেচ্ছা জানালেন ওঁরা। আঁখি প্রণাম করল ওঁদের। মেঘাদের বাড়িতে অনেকবার গেছে আঁখি। ওর মা বাবা দুজনেই খুব ভালো। আঁখিকে ওঁরা ভালোও বাসেন। 

        মেঘাদের গাড়ি থেকে বাড়ির গলির সামনে নামল আঁখি।ড্রাইভার নেমে গাড়ির ডিকি থেকে ওর তানপুরা টা বার করে দিল। এটা নিয়ে হাঁটা একটু মুশকিল। অবশ্য, এইটুকু তো রাস্তা। অসুবিধা হবে না। মেঘার বাবা জিজ্ঞেস করলেন, আর একটু এগিয়ে দেবেন কিনা। আঁখি বারণ করল। কারণ, আঁখির সাথে মেঘার বাবাকে বাড়ির কেউ যদি দেখে ফেলে, তাহলে ওনাকে নিয়েও নোংরা কথা বলতে কেউ ছাড়বে না। ভীষণ কুৎসিত মানসিকতা মাসিমণি ও তার ছেলেমেয়েদের। আসলে ওঁরা ভীষণ ইনসিকিওরড ফিল করেন, যদি আঁখি বাইরের কারো সাহায্য নিয়ে নিজের সম্পত্তি উদ্ধার করতে চায়। তাই এত চাপে রাখা, আর যার তার সাথে বিয়ে দিয়ে ভাগিয়ে দেবার চেষ্টা। সবই বুঝতে পারে আঁখি। 

পাকা রাস্তা থেকে নেমেই একটা বিশাল মাঠ। মাঠের শেষ প্রান্তে বহু প্রাচীন একটা ঠাকুর দালান। কাদের কে জানে! লোকে বলে ঠাকুরমার দালান। এখন প্রায় ভগ্নদশা। এখানে কোনোদিন পুজো হতে দেখেনি আঁখি। তবে কোনো কোনো বিশেষ তিথিতে পাড়ার মহিলারা সন্ধ্যাবেলায় এখানে প্রদীপ জ্বেলে দিয়ে যায়। আজ এত রাতেও ভাঙা ঠাকুর দালানের বন্ধ দরজার বাইরে প্রদীপ জ্বালিয়ে গেছে কেউ। সারা রাত জ্বলবে এই প্রদীপ। আজ যে বিজয়া দশমী। 

মাঠের পাশ দিয়ে খুব সরু একটা গলি রাস্তা । গলির ভেতর দিয়ে খানিকটা এগোলেই ওদের বাড়ি। রাত প্রায় দশটা বাজে। আশেপাশে কেউ নেই। একদম ফাঁকা রাস্তা। গলির মধ্যেটা বেশ অন্ধকার। রাস্তার আলোটা এই অবধি এসে পৌঁছয় না। একটু ভয়ই করছিল আঁখির ।গলির মধ্যে ঢুকতেই মাটি ফুঁড়ে যেন দুই মূর্তির উদয় হল, "এ কী! পরেশ কে ভুলে গেলে ডার্লিং!" ভয়ে কাঠ হয়ে গেল আঁখি। "খুব তো পরের গাড়ি চেপে ঘোরা হচ্ছে। এবার তোমায় কে বাঁচাবে"? খ্যাঁক খ্যাঁক করে হেসে উঠল পরেশ। ভয়ে গলা দিয়ে আওয়াজ বেরোচ্ছে না আঁখির। কোনোরকমে বলল, "চেঁচাবো কিন্তু। রাস্তা ছাড়ো।" 

"চেঁচাবে! তো চেঁচাও ।দেখি গলায় কত জোর আছে। "

" কি হচ্ছে এসব! এমন করছো কেন তোমরা! কি করেছি আমি! "ভয় কে ঝেড়ে ফেলে নিজের মধ্যে শক্তি সঞ্চয় করতে চেষ্টা করছে আঁখি। ছোট থেকেই তো লড়াই করে বড় হয়েছে। আজও এই লড়াইতে ওকে জিততেই হবে। না হলে মৃত্যু অবধারিত। বাড়ির পথ আগলে দাঁড়িয়ে রয়েছে দুই দুশমন। আঁখি আবার বলল, 

" রাস্তা ছাড়, যেতে দাও আমাকে "। 

পরেশ এগিয়ে এল এবার, হ্যা হ্যা করে হাসতে হাসতে বলল, "এত তাড়া কিসের ডার্লিং!এখন তুমি আমার সঙ্গে যাবে। আজ যে আমাদের বিয়ে। আমি আজই বিয়ে করব তোমায়। কথা বলতে বলতে ওর দিকে আরও এগোচ্ছে পরেশ। আঁখিও পিছিয়ে যাচ্ছে। একসময়ে হাত বাড়িয়ে আঁখির বুকের ওপর থেকে ওড়না টা টেনে নিল পরেশ। আহত সর্পিনীর মতো ফুঁসে উঠল আঁখি," আর এক পা ও এগোবে না বলে দিচ্ছি।" 

"এগোলে কি করবে সুন্দরী"? বলতে বলতেই আরো খানিকটা এগিয়ে এল পরেশ। আঁখি কিন্তু আর পিছোলো না। পরেশ ভাবছিল, আঁখির দুটো হাত জোড়া। কি আর করবে। ঠিক সেই মুহূর্তে তানপুরার বাড়ি পড়ল পরেশের কাঁধে। থমকে গেল পরেশ। পরেশের সাগরেদ এগিয়ে এল এবার। তানপুরার বাড়ি পড়ল তারও কোমরে। দুজনেই শুয়ে পড়েছে তখন। পেছন থেকে এবার আঁখির হাতটা চেপে ধরল কেউ। হাতটার দিকে চোখ পড়তেই থমকে গেল আঁখি। এ কী! ওই নোংরা, কুৎসিত হাতটায় শোভা পাচ্ছে ওর বাবার হাতঘড়ি। তার মানে রণ! উঃ! মা গো! এদের কীর্তি এটা। রণের শক্ত হাত তখন চেপে বসেছে আঁখির হাতের ওপর। রণ রয়েছে আঁখির পেছনে, আঁখি যাতে দেখতে না পায় সেই চেষ্টা। আসলে ওকেও যে নামতে হবে যুদ্ধে, রণ ভাবতে পারে নি। আচমকা ঘুরে দাঁড়িয়ে রণের হাতটা কামড়ে ধরল আঁখি। ছটফট করে উঠল রণ, "ছাড়, ছাড় বলছি শয়তানি" বলতে বলতেই আঁখির হাত ছেড়ে ওর লম্বা চুলের বিনুনি টা চেপে ধরল। চুল ধরতেই এবার তানপুরার বাড়ি পড়ল রণের পিঠে। পরেশ আর ওর সাগরেদ এবার উঠে পড়েছে। ওরা আবার এগিয়ে আসছে দেখে তানপুরাটা

ঝোপের মধ্যে ফেলে দিয়ে ছুট লাগাল আঁখি। দিগ্বিদিক জ্ঞানশূন্য হয়ে ছুটতে ছুটতে পাকা রাস্তায় এসে পড়ল এবার । পেছনে পরেশরাও ছুটছে। পায়ের শব্দ পাওয়া যাচ্ছে। আজ ভারি সুন্দর করে সেজেছিল ও চিকনের কাজ করা পিঙ্ক কালারের চুড়িদার পরেছিল ।তার ওড়নাটা এখন পরেশের কাছে। হঠাৎ তীব্র একটা আলোর ঝলক। চোখ ধাঁধিয়ে গেল আঁখির। কিছু বুঝে ওঠার আগেই বিষম এক ধাক্কায় রাস্তার ওপরে গড়িয়ে পড়ল ও। তারপর সব অন্ধকার। 

                    ক্রমশ :—


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Inspirational