Dola Bhattacharyya

Inspirational

4  

Dola Bhattacharyya

Inspirational

ধারাবাহিক চোখের আলোয় পর্ব 6

ধারাবাহিক চোখের আলোয় পর্ব 6

3 mins
19



ধীমান গোস্বামী ঠিক করেছেন, আঁখিকে এবার বড় কোনও প্রোগ্রামে গান গাওয়াবেন। সেই মতো ব্যবস্থাও করেছেন। পুজোর পরে রবীন্দ্রসদনে একটা অনুষ্ঠান হবে। সেখানেই গান গাইবে আঁখি। এই প্রথমবার রবীন্দ্রসদনে অনুষ্ঠান ওর । 


কিছুদিন ধরেই একটা ছেলে আঁখিকে বিরক্ত করছে খুব। এসব ক্ষেত্রে ও বড় অসহায়। বাড়িতে বললে কুরুক্ষেত্র করবে মাসিমণি। প্রবলেম সলভ তো হবেই না। উল্টে বাইরে বেরোনোই বন্ধ করে দেবে। তাই নিজে যেমন করে পারে, কাটিয়ে যাচ্ছিল ছেলেটাকে। ছেলেটার নাম পরেশ। এই পাড়াতেই বাড়ি ওদের। দীর্ঘদিন নিরুদ্দেশ ছিল ছেলেটা । হঠাৎ কোথা থেকে উদয় হয়েছে। ছোটবেলায় জ্ঞানদারঞ্জনের স্কুলেই পড়ত। ক্লাস এইটের পরীক্ষার সময়ে টুকলি করতে গিয়ে ধরা পড়েছিল জ্ঞানদারঞ্জনের হাতেই। খাতা কেড়ে নিয়েছিলেন জ্ঞানদারঞ্জন। হাজার কাকুতি মিনতিতেও কান দেননি। কারণ পরেশের সেটা প্রথম অপরাধ ছিল না। তারপরই পরেশ নিরুদ্দেশ হয়ে যায়। এই ঘটনার জন্য জ্ঞানদারঞ্জনকেই কেউ কেউ পরোক্ষভাবে দোষী সাব্যস্ত করেছিল। 

শোনা যাচ্ছে, পরেশ নাকি এতদিন সিঙ্গাপুরে ছিল। সেখানে নাকি কি একটা ব্যবসাও করে। একদিন ধীমান গোস্বামীর বাড়ি থেকে ফেরার সময়ে রাস্তায় যেচে আঁখির সঙ্গে আলাপ করল পরেশ। ওর বাড়ি থেকে নিরুদ্দেশের কারণটাও ফলাও করে শোনাল। প্রথম আলাপেই ছেলেটাকে একদম ভালো লাগেনি ওর। 

এড়িয়েই যেতে চেয়েছিল। আর একদিন য়্যুনিভার্সিটি থেকে ফেরার সময় পরেশের সঙ্গে দেখা। ওকে দেখে মুখ ঘুরিয়ে নিয়েছিল আঁখি। পরেশ তবু ওর সঙ্গ ছাড়ল না। বিষম অস্বস্তিতে মনটা ছেয়ে গেল আঁখির। কত কথা বলে যাচ্ছে পরেশ। আঁখি একেবারেই চুপ। শেষ পর্যন্ত পরেশ বলল, "তুমি তো আমার একটা কথারও জবাব দিলে না। আমাকে ভয় পাচ্ছো নাকি? আ্যঁ! আমি বাঘ না ভাল্লুক" ! 

"আপনি বাঘ না ভাল্লুক, তা আমি জানি না। কিন্তু এখন দয়া করে রাস্তা টা ছাড়ুন। আমি বাড়ি যাব"। 

"এই তো বোল ফুটেছে দেখছি। দেখলে তো, আমি বোবার মুখেও কেমন ভাষা যোগাতে পারি", গা জ্বালানো হাসি হাসল পরেশ। 

আগুন ঝরা চোখে ওর দিকে তাকাল আঁখি। ভ্রুক্ষেপ করল না পরেশ। কাঁধ ঝাঁকিয়ে বিশ্রী অঙ্গভঙ্গি করে বলল," আমি তোমায় বিয়ে করব আঁখি। তারপর তোমাকে নিয়ে সোওজা চলে যাব সিঙ্গাপুর।" ওর দিকে একটা ফ্লাইং কিস্ ছুঁড়ে দিয়ে হাসতে হাসতে চলে গেল পরেশ। রাগে অপমানে মাটির সঙ্গে মিশে যেতে ইচ্ছে করছিল আঁখির। 


   মেঘা আর আঁখি, অনেক দিনের বন্ধুত্ব ওদের। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবার সময়েই আলাপ হয়েছিল ওদের। সেই আলাপ এখন গাঢ় বন্ধুত্বে পরিণত হয়েছে। পরেশের কথা শুনে মেঘা বলল, "তুই বাড়িতে জানাচ্ছিস না কেন"? 

"দ্যাখ, বাড়িতে জানালে ঘটনাটা অন্য দিকে মোড় নেবে। আমাকে কেউ সাপোর্ট তো করবেই না, উল্টে আমার বাড়ি থেকে বেরোনোই বন্ধ হয়ে যাবে।" 

"তাহলে এক কাজ করতে পারিস"। 

"কি"? 

মেঘা চুপ করে আছে। ওর দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসছে শুধু। অধৈর্য্য হয়ে ওঠে আঁখি,"কি রে! হেসেই যাচ্ছিস শুধু। বলবি তো কিছু"। 

" না। মানে, বলছিলাম, তুই তো পরেশের সাথে বন্ধুত্ব করেই নিতে পারিস। দ্যাখ না, কি বলতে চায় ছেলেটা"! কথাগুলো বলে হো হো করে হেসে উঠল মেঘা। 

"শেষে এই সলিউশন দিলি তুই!" অভিমানে দুচোখ দিয়ে জল ঝরে পড়ল আঁখির। "আরে! আমি তো যাস্ট মজা করার জন্য বললাম কথাগুলো। সেটাও বুঝলি না! বোকা মেয়ে! 

ফোঁস করে উঠল আঁখি, "এটা মজার ব্যাপার! যে ছেলেটা আমাকে প্রথম দিন থেকেই হুমকি দিচ্ছে, আমার বাবার জন্যে নাকি সে নিরুদ্দেশ হয়েছিল, সেই ছেলের সঙ্গে বন্ধুত্ব! ভাবলি কি করে"! 

মুখ থেকে হাসি মিলিয়ে গেছে মেঘার। গম্ভীর মুখে বলে, "ভাবিনি তো। এবার ভাবছি"। 

"কি" 

"তোর প্রোটেকশনের জন্যে কি করা যায়! ঠিক আছে। তোর বাড়ি আর আমার বাড়ি তো একই রাস্তায় পড়ে। এবার থেকে তুই আমার গাড়িতেই যাতায়াত করবি। আর গুরুজীর কাছেও আমরা একই সাথে যাব।" ধীমান গোস্বামীর কাছে মেঘাও গান শেখে। দুজনেই ওনার প্রিয় ছাত্রী ।


                             ক্রমশ :—


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Inspirational