Dola Bhattacharyya

Inspirational

4  

Dola Bhattacharyya

Inspirational

ধারাবাহিক চোখের আলোয় পর্ব 10

ধারাবাহিক চোখের আলোয় পর্ব 10

3 mins
14



দোলা ভট্টাচার্য্য 


অরুময়ের বৃদ্ধা পিসীমার কাছে ঠাঁই পেল আঁখি। সমস্ত কিছু শুনে প্রথমটায় স্তম্ভিত হয়ে গেলেন মানুষটা । বললেন, "লোভ বড় সর্বনেশে জিনিস। মানুষকে যে পশুরও অধম করে তোলে। ওরে মেয়ে, কোনো চিন্তা করিস না তুই। সব ঠিক হয়ে যাবে"। বৃদ্ধা তরুবালা সস্নেহে কাছে টেনে নিলেন আঁখিকে। 

   ওকে ছাড়া এবাড়িতে আর তিনটে মাত্র প্রাণী। পিসীমা, অরুময় নিজে, আর অরুময়ের চার বছরের মেয়ে। আজ পর্যন্ত কেউ কোনো নামকরণ করেনি বাচ্চাটার। পিসীমা আদর করে ওকে রাই কমলিনী বলে ডাকেন। অরুময়ের স্ত্রী রূপা মারা যায়, এই বাচ্চার জন্ম দিতে গিয়ে। রূপার মৃত্যুতে ভীষণ ভাবে ভেঙে পড়েছিলেন অরুময়। পরে আস্তে আস্তে সামলেও নিয়েছিলেন নিজেকে। কিন্তু মেয়েটার দিকে আর ফিরে তাকান নি। 

এখানে আসার পর থেকে আঁখির দিনগুলো আর যেন কাটতেই চাইছে না। পড়াশোনা, গানবাজনা সব বন্ধ। বাচ্চাটাকে নিয়ে খানিকটা সময় কাটে। কিন্তু তারপর! অনির্দিষ্ট ভবিষ্যতের চিন্তা প্রায় পাগল করে তোলে ওকে। অবশ্য এই বাড়িতে বইএর অভাব নেই। কিন্তু সে সব অরুময়ের ঘরে। প্রবলেমটা বুঝতে পেরে, অরুময় নিজেই একদিন বললেন, তোমার যদি কোনো বই পড়ার ইচ্ছে হয়, তাহলে আমার ঘর থেকে নিতে পার। খুব খুশি হল আঁখি। ইতিমধ্যে উকিলের সঙ্গে কথাও বলে এসেছেন অরুময় ও শান্তনু। মামলাটা যাতে খুব তাড়াতাড়ি শুরু করা যায়, সেই চেষ্টাই করছেন ওঁরা। 

    

   দুদিন হল 'সেনভিলা' য় চলে এসেছে আঁখি, ঠাম্মি স্বর্ণলতার কাছে। স্বর্ণলতা জানতেন, এরকম একটা ঘটনা একদিন ঘটবেই। অনেকদিন আগেই নাতনীকে তিনি বলেছিলেন, এবাড়িতে চলে আসতে। আঁখি আসতে চায়নি। সেটা অবশ্য ভালোই করেছে। কারণ, ওরা যদি এই বাড়ির অস্তিত্ব টের পেত, তাহলে সমস্যা বাড়ত বৈ কমত না। 

প্রতিদিনই সন্ধ্যাবেলায় শান্তনু আসেন 'সেনভিলা'য় । কেস সংক্রান্ত আলোচনা চলে আঁখির সঙ্গে । তা ছাড়াও নানা রকম গল্পগাছা হয়। উকিলের সঙ্গে দেখা করতে হলে শান্তনুই নিয়ে যান ওকে। কেসের ডেট পড়লে কোর্টে একা যেতে আঁখিকে বারণ করেছেন শান্তনু। ওঁর সঙ্গেই কোর্টে যাতায়াত করে আঁখি। 

ইদানিং শান্তনুকে দেখলে নাতনীর ডাগর চোখদুটিতে খুশির হাসি ঝিলিক দিয়ে উঠছে, ঘটনাটা চোখ এড়ায়নি স্বর্ণলতার। ওরা দুটিতে যখন গল্পে মেতে ওঠে, দেখে যেন চোখ জুড়িয়ে যায় ওনার। 

কেসটা মিটতে যতটা সময় লাগবে ভেবেছিল আঁখি, তার থেকে বেশ তাড়াতাড়িই মিটে গেল। আটঘাট বেঁধে কাজে নামলেও, কতগুলো জায়গায় বড়রকমের ভুল করে বসেছিলেন মীনা। যে সময় আঁখি কে দিয়ে কাগজপত্রগুলোয় সই করানো হয়েছিল, সেই সময়ে আসল বার্থ সার্টিফিকেটে ওর বয়স ছিল সতেরো বছর দশমাস।তার মানে, খাতায় কলমে আঁখি তখন ছিল নাবালিকা। এর কারণ, ওর আসল জন্মদিনের দিনটা হয়ে গিয়েছিল ওর মায়ের মৃত্যুদিন। জ্ঞানদারঞ্জন তাই সেই দিনের ঠিক দুমাস আগে একটা দিন ওর জন্মদিনের জন্যে নির্দিষ্ট করেছিলেন। এই দিনটার কথাই জানতেন মীনা। ফলে নাবালিকার সম্পত্তি হরণ কেসে ফেঁসে গেল মল্লিক পরিবার। এছাড়াও রয়েছে বাড়ি থেকে সরানোর জন্যে জোর করে বিয়ে দিয়ে দেবার চেষ্টা। শেষে বাড়ি থেকে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে তাড়িয়ে দেওয়া। পরেশকে লেলিয়ে দিয়ে আরও মারাত্মক ভুল করেছিলেন মীনা। নিরুদ্দিষ্ট পরেশ হঠাৎ ফিরে আসায়, হাতে আকাশের চাঁদ পেয়েছিলেন উনি। এই কাজে ওনাকে সহযোগিতা করেছিল ওনার বড়ছেলে রণ। মীনা আর রণের হল সাত বছরের সশ্রম কারাদণ্ড। পরেশও ছাড়া পেল না। ইভটিজিংএর অপরাধে দুবছর সশ্রম কারাবাস। 

হাতকড়া পরিয়ে ওদের নিয়ে যাচ্ছিল পুলিশ। আঁখি কে দেখে থমকে দাঁড়ালেন মীনা। মেয়েটা খুব জেদী, সেটা জানতেন। কিন্তু এই কান্ড করে বসবে ভুলেও ভাবেন নি। কর্কশ গলায় বলে উঠলেন, "একটু খেয়ে পরে বেঁচে ছিলাম। সেটা সহ্য হল না তোর। আমার ঘরটা ভেঙে দিলি তো। দেখিস, তোরও ঘর থাকবেনা। কোনোদিন সুখী হতে পারবি না তুই।" কথাগুলো আর সহ্য করতে পারল না আঁখি। ভেঙে পড়ল কান্নায়। 

  অরুময়ের পিসীমার সাথে আজ দেখা করতে এসেছে আঁখি। তরুবালা ভীষণ খুশি ।ওকে জড়িয়ে ধরে বললেন," দেখলি তো মা, আমি বলেছিলাম তোকে, এতবড় অন্যায় ভগবান কখনো সহ্য করেন না। ঠিক কিনা বল"। খুশিতে দুই চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ল বৃদ্ধার, "যাক, তুই তোর সবকিছু ফিরে পেলি। কি যে আনন্দ হচ্ছে আমার"। ছলছল করে উঠল আঁখির চোখদুটো, "কিন্তু মাসিমণি যে অভিশাপ দিয়ে গেল আমায়!" 

"রাখ তো তুই। অভিশাপ। ও অভিশাপ গায়ে লাগবেনা তোর। আমি বলছি, খুব সুখী হবি তুই"। কিসের জোরে এই কথা বললেন তরুবালা, ভেবে পেল না আঁখি। অরুময় জিজ্ঞেস করলেন, এবার তাহলে কি করবেন! পড়াশোনা না গান? 

ঘন পল্লব ঘেরা ডাগর দুটো চোখ তুলে অরুময়ের দিকে তাকাল আঁখি," আগে তো এম এ টা দিই । তারপর দেখি ।"


                ক্রমশ :—


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Inspirational