Dola Bhattacharyya

Inspirational

4  

Dola Bhattacharyya

Inspirational

ধারাবাহিক চোখের আলোয়

ধারাবাহিক চোখের আলোয়

4 mins
15


 (পর্ব - 12)

দোলা ভট্টাচার্য্য 


নিজেই সিদ্ধান্ত নিয়ে বিয়ের দিন ঠিক করলেন তরুবালা। হাজার চেষ্টা করেও অরুময়ের সাথে দেখা করতে পারলেন না স্বর্ণলতা। ফোনেও পাওয়া গেল না তাকে। অবশেষে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়া স্থির করলেন। সেখানে গিয়ে জানা গেল, অরুময় বসু এখন ছুটিতে আছেন। মাস খানেক পরে আবার জয়েন করবেন উনি। ভগ্নমনোরথ হয়ে ফিরে এলেন স্বর্ণলতা। এদিকে শান্তনুও আসা বন্ধ করে দিয়েছে। আঁখির ফোনও রিসিভ করছেন না শান্তনু। স্বর্ণলতা নিজের ফোন থেকেও শান্তনু কে ধরার চেষ্টা করলেন। ফোনটা বেজে গেল। কেউ ধরল না। 

পিসীমার চাপেই বিয়েতে মত দিতে বাধ্য হয়েছিলেন অরুময়। মনের মধ্যে অদৃশ্য একটা কাঁটা খচখচ করছিল তাও । সেই কাঁটাটাকে উপড়ে ফেলতে কিছুতেই পারছিলেন না। অদ্ভুত একটা কষ্ট বুকের মধ্যে। কারোকে যেন জোর করে সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে তার জায়গা থেকে। এটা অনুভব করেই প্রচন্ড যন্ত্রণা অনুভব করছিলেন। কিন্তু পিসীমাকে বলে লাভ নেই। উনি বুঝবেন না। ঠিক আছে! রাই এর জন্যে একজন গভর্নেস আনতে চাইছেন পিসীমা। তাই আসুক। মাসখানেক ছুটি নিয়ে বাড়িতেই বসে রইলেন অরুময়। নিজের ঘরের বাইরে পা রাখতেন না। মনের আনন্দে শান্তনু কে নিয়ে বিয়ের কেনাকাটা শুরু করলেন পিসীমা। 


রেজিষ্ট্রি করেই বিয়েটা হল ওদের। আঁখি সেন হয়ে গেল আঁখি বসু। বাড়িতেই ছোটখাটো একটা পার্টিও দিলেন অরুময়। তরুবালা সেদিন অরুময়ের শোবার ঘরটাকে নিজে হাতে ফুল দিয়ে খুব সুন্দর করে সাজালেন। রাতে লোকজন চলে যাবার পর ফুল শয্যার ঘরে আঁখিকে পৌঁছে দিতে এলেন তরুবালা।চওড়া জরীপাড় লাল শাড়ি, আর আলগা করে বাঁধা হাত খোঁপায় জুঁই ফুলের মালা, কপালে লাল টিপের সঙ্গে হালকা চন্দনের কারুকাজ। গলায় শোভা পাচ্ছে রজনীগন্ধার গোড়ের মালা। নিজেকে আজ ভারি সুন্দর করে সাজিয়েছে আঁখি। 

এই বিয়েটা ও মন থেকে মেনেই নিতে পারে নি। কিন্তু ওকে অসুখী দেখলে ঠাম্মি যে ভীষণ কষ্ট পাবে। মরে গেলেও ঠাম্মি কে কষ্ট দিতে পারবে না ও। ঠাম্মি জানুক, নিজের ভালবাসা কে ভুলে কত সুখী হয়েছে আঁখি। 

ঘরের দরজা বন্ধ দেখে ভুরু কুঁচকে গেল তরুবালার। "একী! অরু কি আগে থাকতেই ঘরে ঢুকে বসে আছে! তিন চার বার ডাকার পর দরজা খুলে বেরিয়ে এলেন অরুময়। কিন্তু এ কোন অরুময়! মাথার চুল উস্কোখুস্কো, চোখ দুটো জবা ফুলের মতো লাল টকটক করছে। পা দুটোও ঠিক বশে নেই ওঁর। সভয়ে চেঁচিয়ে উঠলেন তরুবালা," এই অরু! কি হয়েছে তোর! নেশা করেছিস তুই! আজকের দিনে তুই নেশা করেছিস!" তরুবালার সামনেই হুয়িস্কির ক্যান গলায় উপুর করে দিলেন অরুময়, "আজকের দিন মানে! কি বলতে চাও তুমি!" কথা জড়িয়ে যাচ্ছে অরুময়ের।

"ওরে, আজ যে তোর ফুল শয্যা!" 

"ফুল শয্যা। মাই ফুট। তুমি তো একটা গভর্নেস চেয়েছিলে। পেয়েছো তো। আর এসব নাটক কেন? যা বলেছো, শুনেছি তো। তোমার এই একটা হুকুম, প্রলয় ডেকে এনেছে আমার জীবনে। আর না। আর কিছু শুনতে বোলো না আমায়।রুপাকে আমি এই ঘর থেকে নির্বাসিত করতে কিছুতেই পারব না।"

" শোন, শোন অরু, এভাবে বলিস না। এভাবে বলতে নেই। এই মেয়েটা কি ভাবছে বল তো! "

পায়ের তলায় মাটিটা কি দুলছে, নাকি ভুমিকম্প হচ্ছে, ঠিক বুঝতে পারল না আঁখি। এটা কি শুনল ও! অরুময় বাবু রাজি ছিলেন না এ বিয়েতে। তাহলে বিয়েটা হল কেন। দরজার পাশে দেওয়ালে পিঠ রেখে দাঁড়াল আ়খি। ব্যর্থ আক্রোশে গলার মালাটাকে দুহাত দিয়ে টেনে ছিঁড়ে ফেলে দিল। অরুময় এবার আঁখির সামনে এসে দাঁড়ালেন, "পিসীমা! তোমার পছন্দ আছে বলতে হয়। তবে কি জানো তো, কোন কাজে কি রকম লোক দরকার, সেটা বুঝতে পারো না। এইরকম রূপসী, উচ্চশিক্ষিতা, আবার সঙ্গীতজ্ঞা গভর্নেস! ভালো ।" 

"অরু, ও অরু, ও তোর বৌ ।" "যাও তো তোমরা, চলে যাও এখান থেকে। আমার এখন খুব ঘুম পেয়েছে।" তরুবালার মুখের ওপরেই দরজাটা বন্ধ করে দিলেন অরুময়। 

ক্লান্ত শরীরটাকে কোনোরকমে টানতে টানতে নিয়ে এসে তরুবালার বিছানার ওপর লুটিয়ে পড়ল আঁখি। আরোও কিছুক্ষণ অরুময়ের ঘরের সামনে দাঁড়িয়ে রইলেন তরুবালা।" আর একটি বার দরজাটা খোল অরু ।"দরজা আর খুলল না। নিজের ঘরে ফিরে এলেন তরুবালা। আঁখি কে ওই ভাবে পড়ে থাকতে দেখে জ্বলে উঠলেন হঠাৎ, "হতভাগী! নিজের সোয়ামীর পা দুটো একবার জড়িয়ে ধরতে পারলি না! এত অহংকার তোর! ওরে, সোয়ামীই যে আসল ।সে যদি ঘরে না ডাকে, তাহলে ওইসব রূপ গুনের কোনো দাম নেই রে।" চোখ মুছে উঠে বসল আঁখি ।

তরুবালার দিকে তাকিয়ে বলল, "পিসীমা, উনি যদি আমাকে কোনোদিন নাও ডাকেন, আমার কোনো ক্ষতি হবে না। আমি যা বুঝতে পারলাম, ওনার আর আমার দুজনেরই ক্ষতি তুমি করেছো। উনি তো এ বিয়েতে রাজি ছিলেন না। আমিও ছিলাম না। তুমি জোর করে বিয়েটা দিইয়েছো। কি লাভ হলো তোমার! শুধু তোমার নাতনী কে দেখার জন্য একটা মেয়ের জীবন নষ্ট করে দিলে! "

ভেঙে পড়লেন তরুবালা ।ওরে, না রে, না। অরুর জীবনটাকেও বেঁধে দিতে চেয়েছিলাম। আমায় ভুল বুঝলি তোরা। হ্যাঁ ।এই বিয়েটা দেবার জন্য আমি কিছু কৌশল অবলম্বন করেছিলাম। শান্তনু তোকে ভালোবাসে জেনেও ওকে তোর পথ থেকে সরিয়ে দিয়েছি। শান্তনু কে বলেছিলাম, অরু তোকে ভালোবাসে। বিয়ে করতে চায়। তুই বা তোর ঠাম্মি বা শান্তনু যাতে অরুর সাথে যোগাযোগ করতে না পারে, সেজন্য অরুর ফোনটাকে সুইচড অফ করে আমার আলমারীর লকারে রেখে দিয়েছি। আর এবাড়িতে তো ল্যান্ড ফোন নেই। অরুর আর আমার দুটো মোবাইল আছে শুধু। তাই কোনো ভাবেই কেউ যোগাযোগ করতে পারেনি। শান্তনু কে আমি এ বাড়িতেও আসতে নিষেধ করেছিলাম। সবই তো করেছিলাম। তবু, কেন যে কিছু ঠিক হল না কে জানে।"

কাঁদতে কাঁদতে কখন ঘুমিয়ে পড়েছেন তরুবালা। অন্ধকারে একা জেগে বসেছিল আঁখি। দেখতে দেখতে পুবের আকাশ ফরসা হয়ে এল। আর একটা নতুন দিনের শুরু।

ক্রমশ :—

 ( এই উপন্যাসের সমস্ত পর্ব রয়েছে চোখের আলোয় পর্ব —1 এ) 


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Inspirational