Dola Bhattacharyya

Inspirational

2.9  

Dola Bhattacharyya

Inspirational

ধারাবাহিক চোখের আলোয় পর্ব 5

ধারাবাহিক চোখের আলোয় পর্ব 5

3 mins
18



কিছুদিন ধরেই আঁখিকে বিয়ের জন্য উত্যক্ত করছিলেন মীনা। পরিস্কার বলে দিল আঁখি, "পড়াই শেষ হলো না আমার। এর মধ্যে তুমি বিয়ের কথা বলছো কি করে!" মীনা বলেন, "আর পড়ে কি হবে মা! তুই তো আর চাকরি করবি না। তাও যদি খুব ভালো রেজাল্ট হতো, তখন না হয় বলতাম, না রে মেয়ে, তুই পড়।এই দুটো বছর তো বাপের জন্যে শোক করতে করতেই কেটে গেল"। চুপ করে দাঁতে দাঁত চেপে মাসিমণির বাক্যবাণ সহ্য করে আঁখি। ও এই রকমই। খুবই শান্ত। তবে যখন দেখে দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যাচ্ছে, তখনই একমাত্র প্রতিবাদে মুখর হয়ে ওঠে। 

হায়ার সেকেন্ডারি পরীক্ষায় রেজাল্ট বেরোতে দেখা গেল, প্রতিটি সাবজেক্টে প্রায় নব্বই শতাংশ নম্বর পেয়েছে আঁখি। যথারীতি খুশি হলেন না মীনা। আসলে মেধা কি জিনিস, সেটা উনি জানেনই না। প্রায় প্রতি ক্লাসে ফেল করা নিজের ছেলেমেয়েদের সঙ্গে আঁখি কে মাপতে চেয়েছিলেন তিনি। নিজের মৃতা বোনের মেয়েটা যে ছোট থেকেই খুব মেধাবী, সেকথা জানতেন না মীনা। 

   এবার কলেজে ভর্তি হবার পালা। ইতিহাসে অনার্স নিয়ে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হল আঁখি। অনেক বাধা দিতে চেষ্টা করেছিলেন মীনা। সফল হন নি। আসলে, মেয়েটাকে এখন ভয় পান মীনা। যদি বাইরের থেকে সাহায্য পেয়ে নিজের সম্পত্তি পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করে। তাহলে তো পুরো পরিবার নিয়ে পথে বসতে হবে। তাই যেভাবেই হোক মেয়েটার একটা গতি করে অনেক দূরে কোথাও পাঠিয়ে দিতে পারলে নিশ্চিন্ত। তারপর মরুক বাঁচুক ওনার দেখার দরকার নেই। কিন্তু কিছুতেই সেটা হচ্ছে না। মনে মনে শুধু আক্রোশ পুষছেন। 


   বাবা মারা যাবার পর থেকে গানের সঙ্গে কোনো সম্পর্কই ছিল না আঁখির। আজ হঠাৎ তানপুরাটা নিয়ে বসল। ভোরের আলো ফুটছে সবে। তানপুরার তার তার গুলোকে মৃদু অঙ্গুলি সঞ্চালনে জাগিয়ে তুলে ভৈরবী রাগে ধরল আলাপ। দীর্ঘদিন পরে সুরমাধুর্য্যে ভরে উঠল মন। মিনিট পনেরো ধরে চলল আলাপ। নাঃ। গলাটা ঠিকই আছে। এবার থেকে আবার রেওয়াজে বসতে হবে। তানপুরা রেখে উঠে পড়ল আঁখি। 

বাড়িতেই কিছুদিন প্র্যাকটিস করার পর একদিন ওস্তাদ ধীমান গোস্বামীর কাছে ভর্তি হয়ে এল আঁখি। অসন্তুষ্ট মীনা, বললেন, "কি হবে ওইসব ছাইপাঁশ গান শিখে! তাও যদি দুটো হিন্দি গান গাইতে পারতো, তো বুঝতাম" । রাণী হাসতে হাসতে বলে উঠল, "দাঁড়াও না, হিন্দি, ভোজপুরী, তামিল, তেলেগু সব ভাষার গান গাইবে ও। উঃ! ভোর বেলায় যখন চেঁচায় না, তখন মনে হয়, দিই একেবারে গলাটা টিপে। আমার সকালের ঘুমটা বরবাদ করে দেয় ওই মেয়েটা"। মণিও বলে ওঠে," ঠিক বলেছিস দিদি "। মীনা বলেন," ওর পেছনে আবার লাগতে যাস না তোরা। মনে রাখিস, ওই সাপের ছোবলে কিন্তু বিষ আছে "। আঁখিকে শুনিয়েই এসব কথার চাষ হয়। এসব শুনেও চুপ করেই থাকে আঁখি । মাসিমণি ও তার ছেলেমেয়েদের একপ্রকার এড়িয়েই চলে ও। 

আঁখির গান গাওয়া কোনোভাবেই বন্ধ করতে পারলেন না মীনা। রুখে দাঁড়ালেন প্রভাস।" ও পড়াশোনা করবে, গান গাইবে, এগুলো ওর নিজস্ব ব্যাপার। তুমি এর মধ্যে একদম নাক গলাতে আসবে না। ওর বাবাকে আমি কথা দিয়েছিলাম, ভুলে যেও না সে কথা"। 

পড়াশোনার সঙ্গে গানও চলতে লাগল সমান তালে। এসবের মধ্যেই ডুবে থাকত আঁখি। এই ছাত্রীকে পেয়ে ধীমান গোস্বামী খুব খুশি। মনের মতো করে তৈরি করতে লাগলেন আঁখিকে। ওস্তাদ শিল্পী। রত্ন চিনতে ভুল হয়না ওনার। 

   দেখতে দেখতে আরও তিনটে বছর কেটে গেল। বি এ পাস করল আঁখি। ইচ্ছে, এম এ তে ভর্তি হবে। কিন্তু মীনা একেবারেই চাইছেন না। "কি হবে এত লেখাপড়া করে! সাধারণ ছা - পোষা একটা ছেলে দেখে বিয়ে দিয়ে দেব। তার জন্য এত লেখা পড়ার দরকার নেই"। কথাটা শুনে মনে মনে হাসল আঁখি। "তুমি ভাবলে, আর আমি একটা সাধারণ ছেলেকে বিয়ে করে অতি সাধারণ একটা মেয়ে হয়ে চলে গেলাম। আমি অতটা সাধারণ হতে চাই না মাসিমণি"। নিরুচ্চারে বলা কথাগুলো ওর নিজের বুকের ভেতরেই রয়ে গেল। তাই সেগুলো শুনতে পেলেন না মীনা। শুনতে পেলে আজ একটা তুলকালাম কান্ড বাধত। 

   এম এ ক্লাসে ভর্তি হয়ে গেল আঁখি। একটা ব্যাপারে মেসোমশাই এর কাছে খুবই কৃতজ্ঞ ও। কারণ আঁখির পড়াশোনা আর গানের জন্যে যে টাকা রেখেছিলেন জ্ঞানদারঞ্জন, সে টাকায় মীনাকে হাত দিতে দেননি প্রভাস। সেই জন্যেই ও এতটা এগোতে পেরেছে। 

                  ক্রমশ :—


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Inspirational