STORYMIRROR

Sayantani Palmal

Abstract Tragedy

3  

Sayantani Palmal

Abstract Tragedy

অতীত

অতীত

3 mins
584


কলকাতা শহরের বুকে দুটো বাড়ি আর তিনটে ফ্ল্যাটের মালিক রণিত সেন আজ আশ্রয় খুঁজে নিয়েছেন বৃদ্ধাশ্রমের এক চিলতে কামরায়। নিঃশব্দে ঘুমিয়ে আছে ফোনটা। বন্ধ জানালার দুটো পাল্লার ফাঁক দিয়ে অনেক সময় যেমন সরু একফালি রোদ না চাইতেই ঘরে ঢুকে পড়ে তেমনি রনিতের মনের মধ্যেও ক্ষীণ একটা আশা অকারনেই উঁকি দিচ্ছে। ছেলে রাজ নাই হোক স্ত্রী মেঘা অন্তত একবার ফোন করে ঘরে ফেরার ডাক দেবে। কিন্তু এখনও সেরকম কোনও আহ্বান আসেনি। সংসার থেকে বোধহয় চিরতরে রণিতের বিসর্জন ঘটে গেছে অবশ্য সংসার বলে যদি রণিতের কিছু থেকে থাকে। তিনটে মানুষ এক ছাদের তলায় বাস করলেই সংসার গড়ে ওঠে না। পৃথিবীর আলাদা প্রান্তে থেকেও দুটো মানুষের মধ্যে অবিচ্ছেদ্য বন্ধন থাকতে পারে আবার পাশাপাশি থেকেও আলোকবর্ষের দূরত্ব রচনা হয়। অর্থের প্রাচুর্য থাকলেও জীবনের একটা পর্যায়ে এসে রণিত বুঝেছেন অনেক কিছুই বাড়ন্ত জীবনে। মেঘা মিস্টার বসাকের সাথে একটা সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ছে সেটা বুঝতেও পারেন নি। যখন অনুভব করলেন তখন একটা ব্যর্থ প্রচেষ্টা করেছিলেন কিন্তু মেঘা পরিস্কার জানিয়ে দেয় ধনী বাবার একমাত্র সন্তান হয়ে জন্মেছে সে। কোনও কিছুতেই বাধা পেতে অভ্যস্ত নয়। আর সে তো মিস্টার বসাককে বিয়ে করতে যাচ্ছে না। শুধুমাত্র ওরা পরস্পরের সান্নিধ্য উপভোগ করতে চান। যদিও রণিত জানতেন এই সান্নিধ্য যত না মানসিক তার চেয়ে অনেক বেশি শারীরিক তাও তাঁর পক্ষে সরে যাওয়া সম্ভব ছিল না কারণ তার এই অর্থ, যশ, প্রতিপত্তি সব কিছুর উৎস মেঘার বাবার ব্যবসা আর সম্পত্তি। একটা বাড়ির মধ্যে তিনটে বিচ্ছিন্ন দ্বীপের মত জীবন ছিল তাঁদের। যে যার মত জীবন কাটাতেন তাও একটা টান তো ছিলই। কিন্তু সম্প্রতি তুমুল অশান্তি ঘনিয়ে ওঠে রণিতের সাথে তাঁর স্ত্রী-পুত্রের। যার ফলস্বরূপ অভিমানে রণিতের গৃহত্যাগের সিদ্ধান্ত। বসাকের সাথে মেঘার সম্পর্কটা বাধ্য হয়েই রণিত মেনে নিয়েছিলেন কিন্তু বসাকের উচ্ছন্নে যাওয়া মেয়েটার সাথে রাজের লিভটুগেদার করার সিদ্ধান্তটা রণিত আর সহ্য করতে পারেন নি। সবচেয়ে অবাক হয়েছিলেন রাজের এই কাজে মেঘার নিঃশর্ত সমর্থন দেখে। রণিত তাঁর তুণীরের অব্যর্থ তীর হিসেবে গৃহত্যাগের কথাটা বলেন কিন্তু যেটাকে নিজের মোক্ষম অস্ত্র ভেবেছিলেন কার্যক্ষেত্রে দেখলেন সেটা বুমেরাং হয়ে তাঁর দিকেই ধাবিত হলো। মা-ছেলে দুজনেই যেন রণিতের সিদ্ধান্তে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেল

ল। প্রচণ্ড অভিমানে এই বৃদ্ধাশ্রমে আসার সিদ্ধান্তটা নিলেন রণিত। চাইলেই অন্য কোথাও  জীবনটা কাটাতে পারতেন কিন্তু অপমানিত রণিত তীব্র অভিমান থেকেই বৃদ্ধাশ্রমে আসার সিদ্ধান্ত নেন।


     “ ভালো আছো?” অতীতের কোলে ফেলে আসা কণ্ঠের ডাকে মুখ তুলে তাকালেন রণিত। চুলে রুপোলির উঁকিঝুঁকি ছাড়া স্বাতী আজও একইরকম আছে। উল্টো দিক থেকে একজনকে হেঁটে আসতে দেখেছিলেন রণিত কিন্তু সে যে তাঁর প্রাক্তন সেটা খেয়াল করেন নি। স্বাতী খুব সহজ ভাবে প্রশ্নটা করেছে কিন্তু রণিতকে যেন স্থবিরতা গ্রাস করেছে। মাঝখানে তিরিশটা বছর কেটে গেছে। স্বাতী তলিয়ে গিয়েছিল বিস্মৃতির পারাবারে। এতদিন পরে এই জায়গায় আবার সে সামনে এসে দাঁড়াবে কখনও ভাবেন নি রণিত। নিশ্চুপ হয়ে একদৃষ্টিতে স্বাতীর দিকে তাকিয়ে ছিলেন রণিত।  

“ ভালো আছো?” স্বাতী তার প্রশ্নের পুনরাবৃত্তি করলো। স্বাতীর খুব সাধারণ একটা প্রশ্নটার মধ্যে যেন রণিতের সারাজীবনের অনুসন্ধান লুকিয়ে আছে। ভালো থাকার জন্যই তো একদিন মানসিকতা আর আর্থিক সঙ্গতি দুই দিক থেকেই মধ্যবিত্ত স্বতীর হাত ছেড়ে মেঘার হাত ধরেছিলেন। রণিতের চোখে ভেসে উঠলো স্বাতীর সাথে তাঁর উদ্দাম প্রেম যা মনের গন্ডি পেরিয়ে শরীরকেও ছুঁয়ে গিয়েছিল। তারপরেই রঙ্গমঞ্চে মেঘার অনুপ্রবেশ ঘটে। স্বাতীর শরীর, মন,অনুভূতি, ভালোবাসা, অভিমান সব কিছুকে একটানে ছুঁড়ে ফেলে ধনী নন্দিনী মেঘার পাখনায় ভর করে রণিত উন্নতির সোপানে পা রাখেন। 


  " কিগো তুমি রেডি? বাবুরা এসে যাবে এক্ষুনি।" স্বাতীর পেছনে এসে যে দাঁড়ালো সেও রনিতের ফেলে আসা অতীতের এক চরিত্র।

  আজ স্বাতীর স্বামীরূপে দেখলেন অন্বয়কে। স্বাতীর প্রতি অন্বয়ের যে এক নিরুচ্চারিত , শর্তহীন ভালোবাসা ছিল তা জানতেন তিনি। জীবন আবার একজায়গায় দাঁড় করিয়েছে তাঁদের। পার্থক্য একটাই

তাঁর মত সন্তানের কাছে অবহেলিত নয় ওরা। স্বাতীর ছেলে-বৌমা কর্মসূত্রে বিদেশে গিয়েছিল। মেয়েও বিদেশে। অন্বয় অসুস্থ থাকায় পরিচারকের ভরসায় বাবা-মাকে না রেখে পরিচিত এই বৃদ্ধাশ্রমে রেখে গিয়েছিল। আজ আবার ওরা বাড়ী ফিরে যাবে।

রণিত ঝাপসা চোখে দেখলেন “বাবা” বলে অন্বয়কে জড়িয়ে ধরল যে ছেলেটি সে দেখতে অবিকল ত্রিশ বছর আগের রণিত।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Abstract