Epsita Deb

Abstract Tragedy Fantasy

3  

Epsita Deb

Abstract Tragedy Fantasy

অগ্নিস্নাতা ৯

অগ্নিস্নাতা ৯

4 mins
9



           

রাজমাতা সত‍্যবতী পূজা সম্পাদন করছিলেন ।

সত‍্যবতী 

পূজা ঘরের দরজা বন্ধ করার আদেশ দিলেন রাজ মাতা,তিনি কিছুক্ষণ একা থাকতে চান।রাজমাতার হৃদয় আজ রক্তাক্ত,তিনি ভীষ্মের দিকে তাকাতে পারেন না।নিজের কৃতকর্মের জন‍্য তিনি আত্মগ্লানিতে ভুগছেন। অতীতে একপ্রকার বাধ‍্য হয়ে করা একটি ভুল সিদ্ধান্তের ফল আজ সমগ্র হস্তিনাপুরকে ভোগ করতে হচ্ছে।রাজমাতা সত্যবতী সেই জন্যে প্রতি মুহূর্তে অনুতপ্ত।


আজ নিজের কৃতকর্মের জন্য অশ্রুপাত করতে লাগলেন।শুধুমাত্র তার কারনেই হস্তীনাপুর আজ বিপন্ন।তিনি শুধুমাত্র যুবরাজ দেবব্রতকে বঞ্চিত করেন নি।তার উচ্চিআ জন‍্য সমগ্র হস্তীনাপুর দেবব্রতের মতো যোগ‍্য রাজাকে পায় নি ।এমনকি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হওয়ার দরুন আজ যদি আবার কাশীরাজ‍্যে সহ ভারতবর্ষের অন‍্যান‍্য রাজন‍্যবর্গের সঙ্গে শত্রুতা তৈরী হয় সেটাও হস্তীনাপুরের জন‍্য সুখকর হবে না।


আজকের পরিস্থিতি চিন্তা করতে করতে তিনি আজ থেকে বেশ কয়েক বছর আগে ফিরে গেলেন।তিনি ভাবলেন যদি সেদিন যমুনার ঘাটে মহারাজের সঙ্গে সাক্ষাৎ না হতো তাহলে আজকের দিনটা উপস্থিত হতো না।


  এক রৌদ্রজ্বল দিনে মহারাজা শান্তনু সারথী সঙ্গে পরিভ্রমণের উদ্দেশ্যে বের হলেন যমুনা নদীর ঘাটে এসে হঠাৎ একটা অদ্ভুত গন্ধ মহারাজা শান্তনুকে আকৃষ্ট করতে লাগল। তিনি গন্ধের উৎসের সন্ধানে সারথিকে এগিয়ে যেতে বললেন। ঐ সুগন্ধ যেন একপ্রকার অমোঘ আকর্ষণে রাজা শান্তনুকে আকৃষ্ট করছে।

রাজা বলেন "এগিয়ে চলো সারথি ।"সারথী রাজার আদেশ পালন করলেন।

এরপর ঐ সুগন্ধের উৎস অনুসরণ করতে করতে রথ এসে থামল যমুনা ঘাটে।মহারাজ লক্ষ্য করলেন ঘাটে রয়েছে মাত্র একটা কারুকার্য করা নৌকা। আর তটে একটি প্রস্তর খন্ডের ওপর উপবিষ্টা অপূর্ব সুন্দরী যুবতী ।



এই নির্জন স্থানে উপবিষ্টা যুবতীকে দেখে মহারাজ অবাক হন তিনি রথ থেকে নেমে এলেন। আর তিনি ধীরে ধীরে এগিয়ে যান ঐ অজ্ঞাত নাম্না যুবতীর দিকে। নিকটে যেতেই রাজন লক্ষ্য করলেন যুবতী অত‍্যান্ত রূপসী ,আর তিনি উপলব্ধি করেন যুবতী তির নিকট থেকেই আগত সুন্দর সুগন্ধের আকর্ষণে রাজন এখানে উপস্থিত হয়েছেন। কিন্তু এইরকম নির্জন পরিবেশে যুবতীটি একা কেন এই প্রশ্নটি রাজনের মনে উদিত হয় । সেইজন্য তিনি যুবতীটিকে বললেন "দেবী আপনি কে ?আপনি কি কোন স্বর্গীয় অপ্সরী,না আপনি স্বর্গের কোনো দেবী?আপনি কি কোন যক্ষনী?কে আপনি? এই রূপ তো বসুধালোকে দৃশ‍্যমান হয় না। মনের কোণে উঠে হওয়ার প্রশ্নটিই অবশেষে রাজন করে ফেলে

আপনি এইভাবে এই নির্জন ঘাটেই কেন নৌকায় বসে আছেন?মাঝি কোথায় ?


--অপর দিক থেকে উত্তর আসে,প্রণাম আমি ধীবররাজের কন‍্যা,যোজনগন্ধা।।আমি এই ঘাটে যাত্রীর অপেক্ষায় রয়েছি।"


রাজ বেশধারণকারী আর্য পুরুষ বলেন -" বেশ আমি যমুনা নদীর ওপারে যেতে চাই হে দেবী আপনি কি আমাকে পার করে দেবেন ?


সত‍্যবতী বলে "নিশ্চয়ই মহারাজ ,আপনি নৌকায় উঠে আসুন‍"


নৌকায় ওঠার পর রাজ বেশধারণকারী আর্য পুরুষ বলেন - আমি হস্তিনাপুরের রাজা শান্তনু।রাজন এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে সত‍্যবতীর দিকে।পারাপার কালে উভয়ের দৃষ্টি বিনিময় হয়। সত্যবতী পৌঁছে দেয় রাজনকে যমুনার অপর পাড়ে। কিন্তু ওখানে পৌঁছতেই রাজন বলে দেবী আমি যেখান থেকে যাত্রা শুরু করেছিলাম সেখানেই আবার যেতে চাই আমাকে ওই পাড়ে নিয়ে চলো।


সত্যবতী অবাক হয় ,কিন্তু সে তবুও নিয়ে যায় এইবার যাত্রা কালেও রাজনের সাথে দৃষ্টি বিনিময় ঘটে বেশ অস্বস্তি হয়। সত্যবতী অবাক হয় কিন্তু অপর প্রান্তের মানুষ রাজন হওয়ায় সে কিছু বলতে পারেনা ।এইবারের ও ঘাটে পৌঁছানোর পর ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটে।


তখন সত‍্যবতী বলে "আপনি আর্য কি চান ?আপনি কোথায় যাবেন?"


মহারাজের শান্তনু বলেন "আমার গন্তব্য জানা নেই আমি আপনাকে কিছু বলতে চাই দেবী কিন্তু উপযুক্ত শব্দ খুঁজে পাচ্ছি না তাই আপাতত আমাকে ওই পাড়েই নিয়ে চলুন।"


এরপরই মহারাজের সঙ্গে হৃদয়ের ঘনিষ্ঠতা বারে আর দাশরাজের পরিকল্পনার স্বীকার হয়ে দেবব্রত হয়ে ওঠে ভীষ্ম।

আর সব পেয়েও সত‍্যবতী আজ নিয়তির কাছে হেরে গেছে।হস্তিনাপুরের বর্তমান অবস্থা,কাশী রাজকুমারদের পরিস্থিতির জন্যে রাজমাতা সত‍্যবতী নিজেকে দায়ী করেন,নিজের কৃতকর্মের জন্যে তার আজ আফসোস হচ্ছে।সত‍্যবতী প্রতি মুহূর্তে অনুভব করে ভীষ্ম দেব সিংহাসনে বসলে হস্তিনাপুর সুরক্ষিত।ওনারর নেত্রযুগল অশ্রুসিক্ত হয়ে উঠল।



এদিকে রাজকুমারী অম্বা তার দর্শন অভিলাষী।অম্বার হস্তিনাপুরে প্রত‍্যাবর্তন নিয়ে রাজ অন্তপুরে চাপা গুঞ্জন শুরু হয়েছে ________ তা অম্বার কর্ণেও প্রবেশ করেছে।সবচেয়ে যেটা বেদনদায়ক হয়েছে সেটা এখানে আসার পর থেকে রাজকুমারী অম্বার ভগিনীদ্বয় অম্বিকা অম্বালিকার সঙ্গে অম্বার সাক্ষাৎ হয় নি ।এদিকে যত সময় অগ্রসর হচ্ছে অম্বার ধৈর্য্য চ‍্যুতি ঘটছে।এই মুহুর্তে রাজমাতার সঙ্গে বার্তালাপ করা অধিক আবশ্যক।এই ধরা তলে নিজের অবস্থান নিয়ে অম্বা এই প্রথম চিন্তিত।নানা বিধ চিন্তা এসে জড়ো হচ্ছে মন মস্তিষ্কে।অজানা আশঙ্কায় হৃদয়কম্পিত হচ্ছে।অবশেষে অম্বার সকল উৎকণ্ঠার অবসান ঘটিয়ে রাজ মাতা এসে উপস্থিত হলেন।


অম্বা বিনিত ভাবে ," রাজ মাতাকে শাল্বরাজের করা অপমান সূচক সকল বক্তব্য জানায়।সঙ্গে এ বলে একমাত্র যুবরাজ দেবব্রত কারনেই আজ সে অপমানিতা।তার যাওয়ার কোনো স্থান নেই এদিকে এমতাবস্থায় যুবরাজ দেবব্রত তার পাণিগ্রহণ করতে চান না।তাই রাজমাতাকেই যুবরাজের মত পরিবর্তন করানোর দায়িত্ব নিতে হবে"।


রাজমাতা সত‍্যবতী অম্বার পরিস্থিতি উপলব্ধি করে ভীষ্মদেবকে আহ্বান করলেন।কালবিলম্ব না করে ভীষ্ম এসে উপস্থিত হলেন ।রাজমাতা অম্বার বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে ভীষ্মকে অবগত করে বলেন "পুত্র রাজকুমারী দাবী অনৈতিক নয় তুমি আমার কারনে প্রতিজ্ঞা বদ্ধ হয়েছ আমি তোমাকে প্রতিজ্ঞা থেকে মুক্ত করছি।তুমি আর রাজকুমারী অম্বা বিবাহসূত্রে আবদ্ধ হও।"


ভীষ্ম বিনম্র কন্ঠে বলে " মাতা আমি রাজকুমারী ও আপনার কাছে ক্ষমাপ্রার্থী ।আপনার এই আদেশ পূরণ করতে আমি অসমর্থ।কারন আমি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।"

তোমরা এই বিবাহ ছাড়া আমাকে যা করতে বলবেন তাই করবো।এমনকি রাজকুমারী যদি শাস্তি স্বরূপ আমার মস্তকছেদন করে এই নশ্বর দেহের বিনাশ কামনা করে আমি তাও আমার আপত্তি নেই।এরপর ভীষ্ম রাজমাতার কাছে অনুমতি নিয়ে কক্ষ রিক্ত করে বেড়িয়ে যায়।



এই সময় ভীষ্মের কথা শুনে অম্বার ধৈর্য্যর চ‍্যুতি ঘটল রাজমাতার কাছে এসে রাজ দরবারে যাওয়ার অনুমতি চাই।মহারাজ বিচিত্রবির্যের কাছে গিয়ে আমার সঙ্গে হওয়া অন‍্যায়ের বিচার চাই।


রাজমাতা বললেন" বেশ রাজকুমারী তুমি বিচারের জন্যে যেও ,তুমি আগে একটু খেয়ে নাও।কিন্তু অম্বা রাজী হয় না,তবে রাজমাতার আন্তরিকতা দেখে অম্বা এরপর রাজমাতার আদেশ রক্ষায় সামান‍্য আহার করে।



*****************************************



    হস্তিনাপুরের রাজসভায় অম্বা এসে উপস্থিত হয় ।নিজের দশা সে জানায় রাজা বিচিত্রবির্যকে। ভীষ্মের কারনে আজ তার এই অবস্থা কাজেই ভীষ্মকে তার পাণিগ্রহণের আদেশ দেওয়া হোক এই আবেদন করে।



বিচারের আশায় এক রাজকুমারীকে এইভাবে দণ্ডায়মান দেখে বিচিত্রবির্য ভীষ্মকে নিজের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করার অনুরোধ করে।


এদিকে ভীষ্ম কোন ভাবেই রাজি হয় না অম্বার প্রস্তাবে।ভীষ্ম প্রতিবদ্ধ হওয়ার কথা মহারাজা জানায়।সঙ্গে বিচিত্রবির্যের উদ্দেশ্যে বলে " মহারাজ

তাই আমি ইতিমধ্যে রাজকুমারীকে বলেছিলাম ," আমি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ ,আমি কিছুতেই প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ করতে পারবো না। এই বিবাহ ভিন্ন আমাকে যা করতে বলবেন তাই করবো।"

   

  



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Abstract