অগ্নিস্নাতা ৮মপর্বঈপ্সিতা দেব
অগ্নিস্নাতা ৮মপর্বঈপ্সিতা দেব
🔥অগ্নিস্নাতা🔥 অষ্টম পর্ব
✍ঈপ্সিতা দেব
অন্ধকার দূরীভূত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সূর্যের প্রথম কিরণ বসুন্ধরায় পতনের সঙ্গে সঙ্গে এক নতুন দিনের সূচনা হলো।অন্ধকারের চাদর সরিয়ে সূর্যের প্রথম কিরণের সঙ্গে বৃক্ষরাজিতে পাখির কাকলিতে চারিদিক মুখোরিত হচ্ছে।অনতিদূরে ঝোপের অনাদরে বেড়ে ওঠা গুল্ম।গাছে নানা ফুল প্রস্ফুটিত হয়েছে, কর্পূরের ন্যায় নির্মল বাতাসের স্পর্শে শরীর মন জুরিয়ে যাচ্ছে।না গতকাল রাতে গঙ্গাপুত্র ভীষ্ম দুইচোখের পাতা এক করতে পারে নি ।অম্বাকে জানার পর একটা প্রশ্ন বারবার মন মস্তিষ্কে করাঘাত করছে সেটা হল অম্বার চেয়ে বিচিত্রবির্যের আয়ু কম ,তাছাড়া সবচেয়ে বড় কথা বিচিত্রবির্যের যোগ্যতা।অম্বা স্বীকার করতে পারবে বিচিত্রবির্যকে,যদি অম্বা না মেনে নেয় তখন কি হবে?অনেক বড়ো ভুলে যে হয়েছে তা তা ভীষ্মের বুঝতে বাকি থাকে না।
প্রভাত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ভীষ্মের বার্তা এলো রাজকুমারীদের অস্থায়ী কক্ষের সমুখে।শীঘ্রই তাদের তৈরী হওয়ার নির্দেশ দিয়েছে ,দ্রুত হস্তিনাপুর পৌঁছাতে হবে।রাজকুমারীরা কিছু সময়ের মধ্যে তৈরী হয়ে গেলে রথ ঐ স্থান পেরিয়ে দ্রুত হস্তিনাপুরের দিকে অগ্রসর হলো।ভীষ্ম জ্যেষ্ঠ ন্যায় অম্বিকা,অম্বালিকা সঙ্গে ব্যাবহার করলেও অম্বা ক্ষেত্রে ভীষ্মের ব্যাবহার ছিল কিছুটা ভিন্ন।
ভীষ্মের কথায় অম্বা আজ অনুরুক্তির স্পর্শ অনুভব করল।অজানা আশঙ্কায় অম্বার বুক কেঁপে উঠল।ভাবল অম্বা আর ভীষ্মের মাঝে দুর্ভেদ্য প্রাচীরের ন্যয় দাঁড়িয়ে আছে ভীষ্মের ব্রহ্মচর্য ব্রত।যা কুটিল দৈত্যের ন্যায় দন্তবিকশিত করে ওদের দেখছে আর প্রতি মুহূর্তে ওদের হৃদয়ানুভূতিকে ধারলো অস্ত্রের দ্বারা টুকরো টুকরো করে রক্তাত্ব করছে।যদি এমনটা না হতো তবে ওদের জীবনটা আজ অন্যরকম হতো।
গতকাল রাত্রে দেবব্রতের সান্নিধ্য থাকা সময়টাকে স্মরণ করে অম্বার হৃদয়ে অনাবিল আনন্দে ভরে উঠল।এই সময়টাকে যদি বেধে রাখতে পারতো তবে তার থেকে আর বড়ো প্রাপ্তি কিছু নেই।কিন্তু তা যে সম্ভব না !আর কোনো দিন এই সাহচর্য লাভের সুযোগ হবে কিনা তা জানা নেই,যদিও অম্বা এর প্রতীক্ষায় থাকবে।অম্বা জানে দেবব্রতের ব্রহ্মচর্য ব্রতের কথা আর ভীষ্মের অটল প্রতিজ্ঞার কথা।এই একটা প্রতীজ্ঞা এমন দেবতুল্য মানুষকে সর্ব সুখ থেকে বঞ্চিত করেছে।অম্বা ভাবে এই মানুষটা মনুষ্যরূপী দেবতাই,এর পরিবারের প্রতি ভালোবাসা, নিষ্ঠা,রাজ কর্তব্য ,অবিচলতা এই মানুষটাকে শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে একে স্মরণ করে যাবে।নিয়তি যদি এই মানুষটার সান্নিধ্য পাওয়ার সুযোগ দিত তবে অম্বার এই নারী জীবন ধন্য হয়ে যেত।কিন্তু এই দেবব্রতের তো অম্বার প্রতি তেমন কোন মনোভাব নেই।
আজ হস্তিনাপুরের রাজপ্রাসাদ পুষ্পরাজি ও আলোকমালা দ্বারা সজ্জিত হয়েছে।মধ্যাহ্নকালে রাজকুমারীদের নিয়ে রথ এসে পৌঁছালো।ভীষ্ম রাজকুমারীদের নিয়ে অন্তঃপুরে রাজমাতা সত্যবতীর সঙ্গে সাক্ষাৎ-এর উদ্দেশ্যে গেলেন ।এই যাত্রা পথেই হঠাৎ করেন একটি কক্ষের দিকে অম্বার দৃষ্টি চলে যায় আর তখনই সেই কক্ষে বিচিত্রবির্যকে দেখতে পায়।
ভীষ্ম তিন রাজকুমারীর সঙ্গে মাতা সত্যবতীর পরিচয় করিয়ে নিজ কক্ষে ফিরে আসেন।এরপর তিন রাজকুমারীর জন্যে ভিন্ন ভিন্ন যে শয়নকক্ষ সজ্জিত হয়েছিল রাজকুমারীদের সেখানে পাঠানো হয়।নিজ কক্ষে প্রবেশের পর অম্বা স্থির করেন গঙ্গাপুত্রের নিকট গিয়ে শাল্বরাজের ব্যাপারে জানাবেন ।এরপর রাজমাতার কাছে অনুমতি নিয়ে শাল্বরাজের কাছে ফিরে যাওয়ার আর্জি জানাবেন।
ভীষ্মের নিকট অম্বা বেশ কিছুক্ষণ হলো হাজির হয়েছে।দুজনেই নীরব ,অবশেষে অম্বা নীরবতা ভঙ্গ করে বলে " আর্যপুত্র দেবব্রত আমি শাল্বরাজের বাগদত্তা,আমাদের প্রণয়ের কথা পিতামহারাজ ও জানতেন।আমি মনে মনে শাল্বকে পতি রূপে গ্রহণ করেছি।আজ আপনি আমাকে হরণ করে নিয়ে না এলে শাল্বরাজের গলায় বরমালা দিতাম।তাই আমার পক্ষে বিচিত্রবির্যকে পতি রূপে স্বীকার করা সম্ভব না।আর তাছাড়া শাল্বরাজ আমার পথ চেয়ে আছে।আপনি ন্যায় পরায়ণ কাজেই আপনার দ্বারা অন্যায় সম্পাদিত হতে পারে না।তাই আপনি স্থির করুন আমার এখন কি করা উচিৎ?
ভীষ্ম বলেন তুমি এই কথা তখন কেন বলোনি? তুমি যদি এই কথা তখন বলতে আমি তোমাকে নিয়ে আসতাম না।এরপর ভীষ্ম মৌন থেকে চিন্তা করলেন ঈশ্বর যখন আমাকে প্রায়শ্চিত্ত করার এই সুযোগটা দিয়েছেন আমি তার সদ্ব্যবহার করবো।অম্বাকে শাল্বরাজের কাছে পাঠিয়ে পাপের প্রায়শ্চিত্ত করবো।তাছাড়া একথাও সত্য শাল্বরাজ বিচিত্রবির্যের চেয়ে সর্বদিক থেকেই শ্রেষ্ঠ।আমাকে যেভাবেই হোক রাজমাতাকে রাজি করিয়েই অম্বাকে সসম্মানে সৌভাধিপতি শাল্বরাজের কাছে পাঠাতে হবে।
ভীষ্ম অম্বাকে নিয়ে রাজমাতা সত্যবতীর কাছে গেল।সত্যবতীকে ভীষ্ম অম্বার ব্যাপারে সব কিছু জানায়।এরপর রাজমাতাও ভীষ্মের কথায় সম্মত হয়ে অম্বাকে শাল্বরাজের কাছে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়।পরের দিন হস্তিনাপুরকে বিদায় জানিয়ে অম্বা রথে চড়ে রওনা দেয়।ভীষ্ম অম্বার সঙ্গে পুরোহিত, দাসী , এবং সৈনিক দিয়ে দেন যাতে অম্বার কোন বিপদ না হয়।
******************************************
শাল্বরাজের কাছে এসে যখন অম্বা পৌঁছালেন রাজপ্রাসাদে প্রবেশের পূর্বেই শাল্বরাজ অম্বাকে অবাক করে দেয় বলেন রাজকুমারীর আগমনের হেতু কি?
শাল্বরাজের এমন সম্ভাষণ শুনে অম্বা যারপরনাই অবাক হয়।তবুও অম্বা বলে শাল্বরাজ গঙ্গাপুত্র আমাদের প্রণয়ের কথা শুনে আমাকে আপনার কাছ পাঠিয়েছেন।
শাল্বরাজ গুরুগম্ভীর কন্ঠে বলেন কিন্তু দেবী আমি কারোর দান গ্রহণ করি না।আপনি ভীষ্মের কাছে ফিরে যান ।আমি ধন্য যে আপনি আমার কথা বলেছেন কিন্তু ভীষ্ম আমাদের পরাস্ত করে যাকে জিতে নিয়েছে তাকে আমি কিভাবে গ্রহন করবো? আমি আপনার যোগ্য না ।আপনি ভীষ্মের কাছে ফিরে যান।
অম্বা বলে শাম্বরাজ আপনি এ কি বলছেন ভীষ্ম আমাকে স্পর্শ পর্যন্ত করেনি।আমি আপনার কথা বলা মাত্রই আমাকে এখানে প্রেরণ করেছেন।
শাল্বরাজ বলে আপনি যখন তখন কোন প্রতিবাদ করেন নি এখন অনেক দেরী হয়ে গেছে।ভীষ্মের পূর্বাকে আমি কখনোই গ্রহণ করবো না।
অম্বা শাল্বরাজের তীর্যক বক্তব্যে অবাক হয়ে যায়।ঘটনার আকষ্মিকতায় অম্বা নিশ্চুপ থাকতে বাধ্য হয়েছিল।সুযোগ পেতেই শাল্বরাজের কথা বলে।এই ভাবে অম্বা শাল্বরাজকে নানারকম ভাবে অনুনয় বিনয় করে ।কিন্তু শাল্বরাজ শেষে কঠোরভাবে অম্বাকে গ্রহণে অস্বীকার করে আর হস্তিনাপুরে
ফিরে যেতে বলে।সঙ্গে এও বলে " অম্বা তোমার আজকের পরিনতির জন্যে কেবলমাত্র ভীষ্ম দায়ী।
ভীষ্ম তোমাকে গ্রহন করুক।"অম্ব সঙ্গে আর কথা না ঐস্থান পরিত্যিগ করে।
এতো অপমানের পর অম্বা রাগে ,ক্ষোভে আর শাল্বরাজকে ডাকে না।রথে চড়ে হস্তিনাপুরের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়।
🌼 চলবে 🌸
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © ঈপ্সিতা দেব
( বাস্তবের সঙ্গে কোন মিল নেই সম্পূর্ণ আমার কল্পনা☺)
(রেটিং ও রিভিউ দিয়ে মতামত জানান।