Epsita Deb

Abstract Classics

4  

Epsita Deb

Abstract Classics

অগ্নিস্নাতা ষষ্ট ঈপ্সিতা দেব

অগ্নিস্নাতা ষষ্ট ঈপ্সিতা দেব

5 mins
28


      ❤ অগ্নিস্নাতা 🔥🔥

                 

              ✍ কলমে : ---- ঈপ্সিতা দেব


অকস্মাৎ রথের গতি স্তব্ধ হলো,পরিচিত কন্ঠস্বর শুনে অম্বা সহ অম্বালিকা অম্বিকা ও ভীষ্ম পিছনে ঘুরে তাকালো ,সবাই দেখল শাল্বরাজ সৈন্য সহ তাদের দিকেই আসছেন ।শাল্বরাজ গঙ্গাপুত্রকে ডেকে বলেন শান্তনু পুত্র রাজকুমারীদের মুক্ত ক‍রা হোক।আপনি সয়ম্বর সভায় যা করলেন তা কোন বীরের কাজ নয়।আপনি নারী হরণ করেছেন, এই কাজ আপনার উপযুক্ত নয়,আপনার মতো মানুষ আজ অনেক বড়ো অন‍্যায় করেছেন।আপনার ইচ্ছে আপনি এই রাজকুমারীদের উপর চাপিয়ে দিয়েছেন।এদের সসম্মানে মুক্তি দিলেই আপনি পাপ থেকে মুক্তি পাবেন।


ভীষ্ম বলেন আপনার সঙ্গে আমার কোন রকম শত্রুতা নেই।আপনি ফিরে যান আর যে জীবন আমি আপনাকে দিয়েছি শাল্বরাজ সেই জীবন আমি কিছুতেই নিতে পরি না।তাই অনুরোধ করছি আপনি ফিরে যান ।


গঙ্গাপুত্রর কথা শুনে শাল্বরাজ বলেন গঙ্গাপুত্র আমার বাণ সামলান।এরপর তীব্রগতিতে ছুটে আসা তীর এসে ভীষ্মের বাহু স্পর্শ করে যায়।ঐ স্থান হতে রক্ত ক্ষরিত হতে থাকে।ভীষ্ম বলে এই ক্ষতকে আমি গ্রহণ করলাম । শাল্বরাজ আপনিও শ্রেষ্ঠ ধনু্র্ধর,ফিরে যান___

কিন্তু শাল্বরাজকে কোন কথা শুনলেন না।পুনরায় ভীষ্মকে লক্ষ্য করে বাণ চালনা করেন ।ভীষ্ম তিন রাজকুমারীর সামনে বর্ম হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে।যাতে রাজকুমারীরা সুরক্ষিত থাকে।নিজের ও রাজকুমারীদের সুরক্ষায় প্রথমে বাণ প্রতিহত করার চেষ্টা করেন তারপর শাল্বরাজের যুদ্ধ স্পৃহা দেখে বাণ চালনা করেন।প্রচন্ড যুদ্ধ আড়ম্ভ হয়,ভীষ্মের শরাঘাতে নিজেকে রক্ষা করতে ব‍্যার্থ শাল্বরাজ ধরাতলে পতিত হয়।ভীষ্ম অবশেষে শাল্বকে শরের দ্বারা আবদ্ধ করে দেন। শরের সাহায্যে তার হাত পা এমন ভাবে আটকে দেয় যে শাল্বরাজের আর ওঠার ক্ষমতা থাকে না।শরাঘাতে শরীরের কিছু স্থান থেকে রক্তপাত হতে শুরু করেছে।


অসহায় দৃষ্টিতে শাল্বরাজ অম্বার দিকে তাকিয়ে থাকে।অম্বার মনোভাব পড়ার চেষ্টা করতে থাকে।নিজের প্রণয়ীকে চলে যেতে দেখে শাল্বরাজের হৃদয় ক্রমশই রক্তাক্ত হয়ে উঠতে থাকে।শরীরের ক্ষত ঔষধ লেপনের দ্বারা সেরে যাবে কিন্তু আজ হৃদয় যেভাবে রক্তাক্ত হয়েছে আর যে ক্ষতের সৃষ্টি হয়েছে সেই ক্ষতের কোনো ওষুধ ভূভারতে নেই।অত‍্যান্ত নিরাশ হয়ে ,অসহায় ভাবে অম্বাকে শেষবারের মতো আহত দৃষ্টিতে দেখতে থাকল।এখন শাল্বরাজের মনে হচ্ছে আজকে যেভাবে ভীষ্মের কাছে পরাজিত হয়ে,নিজের বাগদত্তাকে

এভাবে চিরকালের জন্যে বিদায় দিয়ে নিজের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার যে মিথ্যাচার চলছে এ যেন বিষধরের দংশনের সমান যন্ত্রনাদায়ক। নিজের এই রক্ত মাংসের দেহে ভীষ্মের দানের ফলস্বরূপ এই নিয়ে দ্বিতীয়বার যে প্রানের অস্তিত্ব থাকল সেই প্রানবায়ু যদি সেদিন হস্তিনাপুরের মহারাজা শান্তনুর আদেশেই বিলুপ্ত হতো তবে আজকের দিনটা শাল্বরাজের জীবনে আসত না।


এরপর ভীষ্মের আদেশে সারথী রথ এগিয়ে নিয়ে যায় ,ধীরে ধীরে রথের গতি দ্রুত হয়।কিছু সময়ের মধ্যেই কাশীরাজ‍্যের সীমানা দিকে অগ্রসর হয়।অশ্বের ক্ষুরাঘাতে ওঠা ধূলিকণার সঙ্গে তাল মিলিয়ে রথের চাকা একসময় শাল্বরাজের দৃষ্টির বাইরে চলে যায়।


***********************************


সূর্য এখন অস্তাচলে ,রাজকুমারীরা এখন বেশ ক্লান্ত।নাম না জানা নদীর তীরে এসে থামল ভীষ্মের রথ।সামনে জঙ্গল,ভীষ্ম একা থাকলে এই জঙ্গল অনায়াসে পেরিয়ে যেতো।কিন্তু এখন সে একা নয়।এখন সঙ্গে রাজকুমারীরা আছে তাই এই ঘন অন্ধকারে অস্থায়ী তাবু টাঙিয়ে বিশ্রামে ব‍্যাবস্হা করা হলো।


এখন গভীর রাত্রি,রাজকুমারী অম্বার সহোদরারা পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিয়েছে।ওরা নিজেদের হস্তিনাপুরের রানী ভাবতে আড়ম্ভ করে দিয়েছে।এখন তারা নিদ্রামগ্ন কিন্তু অম্বা এতো সহজে এসব কিছু মেনে নিতে পারছে না।তাই অম্বার চোখে ঘুমের লেশ মাত্র নেই।অনেকগুলো প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে।ভীষন রাগ হচ্ছে ।এই রাগের কারন কি?নিজের সঙ্গে ঘটে যাওয়া ঘটনার আকস্মিকতায় এখনো রাজকুমারী নিজের আবেগকে ও ক্রোধকে নিয়ন্ত্রিত করতে পারে নি।কার উপর রাজকুমারী রেগে আছেন?নিজের উপর ,পিতা মহারাজের , শাল্বরাজ , নাকি ভীষ্মের উপর তা স্থির করে উঠতে পারলো না রাজকুমারী অম্বা।


অম্বা আর তাঁবুর মধ্যে থাকল না।বেড়িয়ে এলো , নাম না জানা নদীর তীরে এসে দাঁড়াল।কিন্তু তখনই রাজকুমারী অম্বা সেই নদীর পাড়ে আরো একজনের উপস্থিতি উপলব্ধি করল।শ্বেতশুভ্র বস্ত্রপরিহিত শ্বেত উত্তরীয় দ্বারা আবৃত গাত্র চন্দ্রালোকে যেন স্বমহিমায় নিজের অবস্থান সুনিশ্চিত করছে। চন্দ্রতুল‍্য এই চন্দ্রবংশীয় রাজকুমার হস্তিনাপুরের একমাত্র রক্ষক,অম্বা তাকে দেখতে পেলো।


      ভীষ্মর মন আজ বড়োই অশান্ত।আজ সে হস্তিনাপুরের বৈমাতেয় পুত্রের জন্যে নারী হরনের মতো কার্য করেছে।

   ভীষ্মের এটা অনেকদিনের অভ‍্যাস।হস্তিনাপুরের তার মনের কথা শোনার কেউ নেই।তাই মা গঙ্গার কাছে গিয়ে ভীষ্ম তার মনের কথা বলে।কিন্তু এখানে মা গঙ্গা নেই। গঙ্গাপুত্র তীরে দাঁড়িয়ে বহমান নদীর জলকে প্রণাম করে বলেন মাতা আপনি নদীমাতৃকা ,আপনাকে আমার মাতা জ্ঞান করেই আজ আমার করা অপরাধে স্বীকারোক্তি করে মনের ভার লাঘব করতে চাই।আসলে আজ সয়ম্বর সভায় ঘটা ঘটনা ভীষ্মের মনে তীব্র ভাবে রেখাপাত করেছে।সে বলে নদীমাতা আমি গঙ্গাপুত্র ভীষ্ম, আমি হস্তিনাপুরকে রক্ষা করার জন্য বদ্ধপরিকর। হস্তিনাপুর যাতে সর্বদা ভারতে একছত্র আধিপত্য বজায় রাখতে পারে সেটাই আমার উদ্দেশ্য।কাশীরাজের হস্তিনাপুরকে আমন্ত্রণ না করার কারনে হস্তিনাপুরের প্রজারা এই ব‍্যপারটাকে মেনে নিতে পারে নি ,সঙ্গে অন্যান্য রাজারা এই কারনে হস্তিনাপুরকে দূর্বল মনে করলে রাজ‍্যের সুরক্ষা নিয়ে প্রশ্ন চিহ্ন দেখা দিতো তাই আমাকে বিনা নিয়ন্ত্রণেই সয়ম্বর সভায় বিচিত্রবির্যের প্রতিনিধি হিসেবে যেতে হয়।আর হস্তিনাপুরের সম্মার্থেই রাজকুমারীদের আমার সঙ্গে আসতে বাধ্য করেছি।।যা ভীষণ অন‍্যায় কাজ।আমার রাজকুমারীদের ইচ্ছেকে প্রাধান্য দেওয়া নৈতিক ভাবে উচিৎ ছিল,কিন্তু ওরা আমার সঙ্গে যেতে আপত্তি করলে_________

ওদেরকে ওদের অনুমতি না নিয়েই আমি হস্তিনাপুরে নিয়ে যাচ্ছি ,পিতার কারণে এবং হস্তিনাপুরের রক্ষার্থে আমি বদ্ধপরিকর।তাই আমি নিজের জীবনের ব্রহ্মচর্য ব্রতের সিদ্ধান্ত নিয়েছি,নিজের জীবনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ কোনো অনৈতিক কাজ না।কিন্তু সেই হস্তিনাপুরের প্রতিষ্ঠা রক্ষার্থে আমার আজকের নেওয়া সিদ্ধান্ত অনৈতিক।আমার কোন অধিকার নেই অন‍্যের জীবনের সিদ্ধান্তে হস্তক্ষেপ করার ।কিন্তু এই জঘন্য কাজ আমি করেছি মাতা।সয়ম্বরা হওয়ার অধীকার থেকে আমি রাজকুমারীদের বঞ্চিত করেছি।ভীষ্ম এই কথা গুলো খুবই ক্ষীন কন্ঠে নিয়ে বলছিল।আমি কাশী রাজকুমারীদের জীবনের সিদ্ধান্ত নিয়ে ঠিক কাজ করিনি।


  রাজকুমারী অম্বা ভীষ্মের কাছাকাছি আসায় শেষের কথাগুলো শুনতে পায়।হঠাৎ করেই অম্বার মনোস্থিতি পাল্টে যায়।ক্রোধাগ্নি শান্ত হয়।গুরুর কাছে ও পিতা মহারাজের কাছে অম্বা এই আর্যপুত্রে কত বীরগাথা শুনেছে।আর অবচেতন মনে কবে ইনি বিশেষ স্থান করে নিয়েছেন তা বোধহয় রাজকুমারীর হৃদয় ও তাকে জানায় নি।শাল্ব রাজের আগমনে তাকেই অম্বা নিজের হৃদগগনে স্থান দিয়েছিল।তাই আজও অম্বার হৃদয় অদ্ভুত দোলাচলে দোদুল‍্যমান।অম্বা ধীর কন্ঠে বলে আর্যপুত্র দেবব্রত আপনার ক্ষতস্থানে কি অধিক বেদনা অনুভূত হচ্ছে?বেদনার কারণে কি আপনি বিনিদ্রত রাত্রি যাপন করছেন ?


  ভীষ্ম অবাক হয়ে এই সুকন্ঠের অধিকারিনীর দিকে তাকিয়ে ভাবে " দেবব্রত এই নামে কেবল তার মাতা গঙ্গাই তাকে ডাকেন।আর কেউ ঐ নামে ডাকে না।তবে রাজকুমারী তাকে কি প্রশ্ন করলেন ___"আর্যপুত্র দেবব্রত আপনার ক্ষতস্থানে কি অধিক বেদনা অনুভূত হচ্ছে?বেদনার কারণে কি আপনি বিনিদ্রত রাত্রি যাপন করছেন ? " আমার ক্ষতস্থানের প্রসঙ্গে জিজ্ঞাসা করছেন মাতা গঙ্গার পর এই প্রথম কেউ তাকে এই কথা জিজ্ঞাসা করল।দেবব্রত বলেন " দেবী আমি যোদ্ধা,যুদ্ধ ক্ষেত্রে প্রাপ্ত আঘাতকে বেদনা নয় ভূষণ মনে করি।এই আঘাতের বেদনা ওষুধের প্রয়োগে প্রশোমিত হয়ে যাবে কিন্তু হৃদয়ে প্রাপ্ত আঘাত,তার থেকে ক্ষরিত রক্ত যেহেতু দৃষ্ট নয় ,সেই বেদনাই আজ অধিক অনুভূত হচ্ছে।আসলে মাতা গঙ্গার থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার পর থেকেই আমি রাত্রি জাগরনের অভ‍্যস্ত হয়ে পড়েছি।"


অম্বা বলে মার্জনা করবেন " আর্যপুত্র দেবব্রত নারীদের স্বামী,রাজার মুকুট,ব্রাহ্মণের সদাচার, বিদ্বান ব‍্যক্তির জ্ঞান ,যোদ্ধার যুদ্ধ ক্ষেত্রে প্রাপ্ত আঘাত হল প্রকৃত ভূষণ।তাই যুদ্ধক্ষেত্রে প্রাপ্ত আঘাতের পর যুদ্ধ বিজয় যে কতটা আনন্দদায়ক এ কেবল একমাত্র বীরশ্রেষ্ঠ যোদ্ধাই জানে। আপনার মতো বীর শ্রেষ্ঠ যোদ্ধার নিকট এ যে কেবল ভূষণ !আমার করা প্রশ্ন ভুল ছিল।ধনুকের গুণ( ছিলা ) টানতে-টানতে আপনার হাতে যে দাগ পড়েছে,তাই প্রকৃত ভূষণ।আপনি ধন‍্য দেবব্রত ধনু্র্বানের সঙ্গে আপনার মিত্রতা অবিচ্ছেদ্য।কিন্তু সবার ভাগ্য এতো সুপ্রসন্ন নয়,কেউ কেউ চাইলেও ধনু্র্বানের সঙ্গে অটুট মিত্রতা বজায় রাখতে অপারগ।ভালবাসার মানুষ হোক আর পছন্দের জিনিসের সঙ্গে অটুট সম্পর্ক ছিন্ন হলেও সকল ক্ষেত্রেই বিচ্ছিন্নতা যন্ত্রণাদায়ক।"


  🍁চলবে🌿

সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © ঈপ্সিতা দেব



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Abstract