Epsita Deb

Abstract Tragedy Others

3  

Epsita Deb

Abstract Tragedy Others

অগ্নিস্নাতা ৭ম

অগ্নিস্নাতা ৭ম

5 mins
29



অম্বা বলে মার্জনা করবেন " আর্যপুত্র দেবব্রত নারীদের স্বামী,রাজার মুকুট,ব্রাহ্মণের সদাচার, বিদ্বান ব‍্যক্তির জ্ঞান ,যোদ্ধার যুদ্ধ ক্ষেত্রে প্রাপ্ত আঘাত হল প্রকৃত ভূষণ।তাই যুদ্ধক্ষেত্রে প্রাপ্ত আঘাতের পর যুদ্ধ বিজয় যে কতটা আনন্দদায়ক এ কেবল একমাত্র বীরশ্রেষ্ঠ যোদ্ধাই জানে। আপনার মতো বীর শ্রেষ্ঠ যোদ্ধার নিকট এ যে কেবল ভূষণ !আমার করা প্রশ্ন ভুল ছিল।ধনুকের গুণ( ছিলা ) টানতে-টানতে আপনার হাতে যে দাগ পড়েছে,তাই প্রকৃত ভূষণ।আপনি ধন‍্য দেবব্রত ধনু্র্বানের সঙ্গে আপনার মিত্রতা অবিচ্ছেদ্য।কিন্তু সবার ভাগ্য এতো সুপ্রসন্ন নয়,কেউ কেউ চাইলেও ধনু্র্বানের সঙ্গে অটুট মিত্রতা বজায় রাখতে অপারগ।ভালবাসার মানুষ হোক আর পছন্দের জিনিসের সঙ্গে অটুট সম্পর্ক ছিন্ন হলেও সকল ক্ষেত্রেই বিচ্ছিন্নতা যন্ত্রণাদায়ক।"


  ভীষ্ম চিন্তা করলেন সাধারণত যার যেদিকে আকর্ষণ থাকে সেবিষয়ে সে সাবলীলভাবে কথা বলতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে।আজ সম্পূর্ণ রাস্তায় অম্বার কন্ঠস্বর ভীষ্ম শোনেন নি।অম্বিকা অম্বালিকা ধীর কন্ঠে বার্তালাপ করলেও অম্বা মৌন ছিলেন।সেই রাজকুমারী অম্বা এতোগুলো কথা বলল দেখে ভীষ্ম অবাক হলেন।আর ধনু্র্বানের সম্পর্কে কথা বলার সময় অদ্ভুত কষ্ট মিশ্রিত ব‍্যাথা অম্বার কথায় ফুটে উঠেছিল।দেবব্রত অম্বার বলা কথার শেষ লাইনটা পুনরায় স্মরণ করলেন।ওনার তখন একটা কথাই মনে হলো ধনু্র্বানের সঙ্গে এর নিশ্চিতরূপে কোন যোগসূত্র রয়েছে।তাই বললেন রাজকুমারী আপনি কি ধনু্র্বান চালতে জানেন?


  রাজকুমারী অম্বা উদাসীন কন্ঠে বলেন হ‍্যাঁ আর্যপুত্র অস্ত্রচালনা বিদ‍্যা আমি আয়ত্ত করেছি।তারপর হালকা হেসে বলে তবে আমি আপনার নখের যুগ‍্যি।ছেলেবেলা থেকেই অশ্বচালনা, অস্ত্রচালনায়,চিত্রাঙ্কন ও শাস্ত্রাদি অধ‍্যায়নের প্রতি আমার প্রবল আকর্ষণ দেখে পিতা মহারাজ আমার প্রশিক্ষণের ব‍্যাবস্হা করেন।গুরুর নিকটে আমি এই সকল বিষয়ে শিক্ষা আয়ত্ব করি।অম্বা নিজের ভালোলাগার ব‍্যাপারে আরো কথা বলে,কিন্তু লক্ষ্য করে ভীষ্ম চুপচাপ ওর বলা কথাই যেন শুনচ্ছন।অম্বা মৌন হয়ে যায় ।


বৈমাতেয় ভাতৃবধু হওয়ার দরুন ভীষ্ম অম্বা, অম্বিকা,অম্বালিকার মুখ অস্পর্শ তুল‍্য রত্নকে যেরূপ ত্রয়গুন রহিত হয়ে প্রত‍্যক্ষ করতে হয় সেই ভাবেই প্রত‍্যক্ষ করেছেন।অগ্রজ ভ্রাতার ন‍্যায় রাজকুমারীদের সামনে বর্মের ন‍্যায় দাঁড়িয়ে থেকেছেন ।কিন্তু অম্বা জীবনশৈলীর বিষয়ে জানা মাত্র কোনো কারন ছাড়াই ভীষ্ম এবার অদ্ভুত আকর্ষণে অম্বার দিকে তাকায়, মনে মনে ভাবে এমন চিন্তাধারা তো তৎকালীন ভূভারতে নারীদের মধ্যে প্রত‍্যক্ষ করা যায় না।ভীষ্ম অন্তপুরবাসী নারীদের সম্পর্কে যতটুকু জানে তারা সাজসজ্জা বিষয়ে অধিক আগ্রহী।রাজমাতা রাজ‍্যচালনার ব‍্যাপারে মতামত দেওয়া পরামর্শ দান করলেও উনিও ঐ নারীসুলভ কাজকর্ম সাজসজ্জায় অধিক সময় ব‍্যায় করে।সেখানে এই রাজকুমারী নারীদের কার্য ব‍্যাতীত অন‍্যান‍্য গুনের অধিকারিণী হওয়ার দরুণ বীরাঙ্গনা সম্রাজ্ঞী হওয়ার যোগ্যা।বিচিত্রবির্য কোন ভাবেই এর যোগ্য নয়।এই কন‍্যাকে স্ত্রীরূপে লাভ করার কোন যোগ্যতাই বিচিত্রবির্যের নেই।প্রসাধনীর প্রয়োগ না করেই এর রূপের ছটা যেন অতুলনীয়।মাতা গঙ্গার রূপ অসামান্য,মাতা গঙ্গার পর আজকেই দেবব্রত মাতা ভিন্ন অন্য নারীকে দেখলেন।একদৃষ্টে দেখলে এই রাজকুমারী প্রকৃত সুন্দরী বটে।ইতিমধ্যে ভীষ্মের সহিত অম্বার রাজকার্য পরিচালনা সহ যুদ্ধাদি বিষয়ে নানা কথা হয় তার থেকে অভিজ্ঞ ভীষ্ম এতটুকু বুঝতে পেরেছেন যে রাজকুমারী অম্বা যুদ্ধ ক্ষেত্রেও পুরুষের সঙ্গে কাধে কাধ মিলিয়ে যুদ্ধ করার যোগ‍্য।


বিচিত্রবির্যের কোন দিক থেকেই একে গ্রহণ করার যোগ্যতা নেই।এই অগ্নিকন্যা বিচিত্রবির্যের স্পর্শযোগ্য রত্ন নয়।বলাবাহুল্য বর্তমান ভারতে কোন রাজা,রাজপুত্রই এই রাজকুমারীর যোগ‍্য নয়।কিন্তু একে আজ সয়ম্বর থেকে না নিয়ে আসলে ওখানে উপস্থিত কোন‌ রাজার অর্ধাঙ্গিনী এই রাজকুমারী হতে পারত,যদিও সেই রাজন অম্বার যোগ‍্য নয় তবুও তাকে বিচিত্রবির্যের থেকে শ্রেষ্ঠ হিসেবে গন‍্য করা যায়।সয়ম্বর সভায় সবাই বিদ্রুপ করে বললেও একথা তো সত‍্যি যে বিচিত্রবির্যকে এখানে আনলে ও অন‍্যান‍্য রাজাদের সঙ্গে যুদ্ধে কয়েক মিনিট ও দাঁড়াতে পারতো না।আর সেই কারনেই ভীষ্ম প্রতিনিধিত্ব করতে এসেছেন।



ভীষ্ম মনে মনে ভাবেন আজ যদি সে ব্রহ্মচর্য ব্রত পালন না করত তবে এই নারী তার সঙ্গে কাধে কাধ মিলিয়ে রণক্ষেত্রে কিংবা রাজকার্যে অংশ গ্রহণ করতে পারত ।এই ভাবেই সমগ্ৰ ভারতবর্ষে কেবলমাত্র হস্তিনাপুরের একছত্র রাজত্ব হতো।কিন্তু বিবাহের ভাবনা হৃদয়গহ্বরে উদিত হওয়া মাত্রই মনরূপী অশ্বকে সংযত করে নিলেন।মনে মনে নিজেকে ধিক্কার জানালেন তিনি ক্ষনিকের জন‍্যে কিভাবে প্রতিজ্ঞার কথা বিস্মৃত হতে পারে?হস্তিনাপুরের দায়িত্ব তার কাধে,,,,,,,,,,

কিন্তু অম্বার প্রতি করা অবিচারের কারনে ভীষ্ম আজ আত্মগ্লানিতে ভুগছেন।তখনই তিনি পরমেশ্বরের কাছে নিজের ভুল সংশোধন করার জন‍্য একটা সুযোগ চাইলেন।তিনি যাতে অম্বাকে সুখী করতে পারেন।আর এই জন্মে না হোক পৃথিবীলোক ত‍্যাগের পর স্বর্গালোকে যেন তাদের মিলন হয়।দুটো আত্মা পরমাত্মার কাছে গিয়ে যাতে নির্দিধায় একে অপরকে ভালোবাসতে পারে।তাদের অপার্থিব ভালোবাসা যেন হরপার্বতীর ন‍্যায় অটুট থাকে। জাগতিক প্রতিশ্রুতি,প্রতিজ্ঞা,প্রত‍্যাখানে উর্ধ্বে উঠে দেবব্রত যেন অম্বাকে নিজের করে পায়।দেবব্রত সেই শুভলগ্নের প্রতিক্ষায় থাকবে।কিন্তু আজকে দেবব্রত দ্বিতীয়বার যে ভুলটা এই মুহূর্তে করল তার পুনরাবৃত্তি যাতে আর না হয় তার জন‍্যে দেবব্রতকে সজাগ থাকতে হবে।অম্বার জন‍্য যেভাবনা হৃদয়ে অঙ্কুরিত হয়েছে তা পল্লবীত হওয়ার পূর্বেই এই ভাবনারূপ অঙ্কুরটিকে উৎপাটিত করা অত‍্যাবশ‍্যক,না হলে আজ যা অঙ্কুর তাই আগামীদিনে বৃক্ষরূপী মায়া,মমতা,কামনা , বাসনা, ভোগ ,বিলাস নাম্নী শাখা প্রশাখার আকার ধারন করবে।যা বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের নিকটেও হাস‍্যপদ হবে।পরের জন্মের প্রতিক্ষার পর মিলন ই পরমপ্রাপ্তি হবে।দেবব্রত সেই সময় নক্ষত্রখচিত আকাশের দিকে তাকাল দেখল একটা তারা খসল__________


  ভীষ্মকে নীরব থাকতে দেখে অম্বা বলেন জানেন আজ যদি সয়ম্বর সভায় আমি বরমালা কারো গলায় পড়াতাম তবে তা যে ভুল সিদ্ধান্ত হতো একথা এই মুহূর্তে আমার হৃদয় বারবার আমাকে বলছে।


  অম্বার এমন কথায় দেবব্রত বিচলিত হয়ে পড়লেন এবং নিজের আবেগকে গলা টিপে হত‍্যা করে কন্ঠস্বর কঠিন করে অম্বার উদ্দেশ্যে বলেন" রাজকুমারী আমি আপনার কথার অর্থ বোধগম‍্য করতে অক্ষম।যদি পরিষ্কার করে বলেন তবে সুবিধা হয়।"


  অম্বা হেসে বলে " আর্য পুত্র দেবব্রত আপনি এতো জ্ঞানী আপনার মত পরাক্রমশালী বীর যোদ্ধা এই ভূভারতে আর দ্বিতীয় নেই আজ আমি আপনার সান্নিধ্য পেয়ে নিজেকে কৃতার্থ মনে করছি।এই মুহুর্তে আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ উপহার যা কেউ কোনদিন আমার থেকে কেড়ে নিতে পারবে না।আপনার মতো মানুষের সান্নিধ্য লাভের জন‍্য জন্মজন্মাতর ধরে প্রতিক্ষা করা যায়।মনে মনে বলল আমিও তোমার জন‍্য এই পার্থিব দেহ ত‍্যাগের পর স্বর্গোদ্যানে প্রতীক্ষা করবো।সেই সময় অমবা নক্ষত্রখচিত আকাশের দিকে তাকাল দেখল একটা তারা খসল__________________



  ভীষ্ম রাজকুমারীর কথায় চমকে উঠলেন ভাবলেন একটু আগে তার হৃদয়ে অঙ্কুরিত ভাবনাই কি অম্বার হৃদয়ে অঙ্কুরিত হয়েছে তবে যে সর্বনাশ হয়েছে।ভীষ্ম গাত্রোত্থান করে উঠে পড়লেন বললেন রাজকুমারী এবার নিজের তাবুতে ফিরে যান আমিও এবার বিশ্রাম নেবো ,আগামীকাল প্রাতকালেই আমাদের রওনা দিতে হবে, বড়ো ক্লান্ত লাগছে।


ওরা দুজনে প্রস্থান করলো দুটো ভিন্ন দিকে,ওদের মার্গ যে ভিন্ন।ঠিক বিধাতা যেমনটা ওদের জন‍্যে লিখে রেখেছে।যে পথ কখনো এক হওয়ার নয়।

ঘন তমসা দুই হৃদয়ের অব‍্যাক্ত কথার সাক্ষী থাকল।আগামীকাল সূর্যোদয় ওদের ভবিষ্যত জীবনের এক নতুন অধ‍্যায়ের সূচনা করবে।


🍁🌹  চলবে🌹




Rate this content
Log in

Similar bengali story from Abstract