STORYMIRROR

Epsita Deb

Abstract Inspirational Others

3  

Epsita Deb

Abstract Inspirational Others

অন্তকাহিনী

অন্তকাহিনী

7 mins
12


            🌿 ১ 🌿


দুপুরে খবর টা পাওয়ার পর থেকেই আজ দিয়ার মনটা বেশ খুশী ,ওর অনেক দিনের একটা স্বপ্ন যেন পূরণ হল ।কয়েক বছর আগে হঠাৎ ট্রেন সফরে সময় দেখা হওয়া স্কুলের প্রিয় বন্ধু অনন্যা ওকে যদি আবার লেখার জন‍্য অনুপ্রাণিত না করতো তবে হয়তোবা আজকের দিনটা ওর জীবনে কখনো আসতো না । গাছে ঘেরা ওদের উঠানের এক ধারে গোলাপী, হলুদ রঙা সন্ধ্যা মালতি ফুল ফুটে রয়েছে।ফুলগুলো দিকে মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে দিয়া ওদের ছোট বারান্দায় এক কাপ ধোঁয়া ওঠা চা নিয়ে বসল।জুইঁ গাছের নীচে বেড়ে ওঠা বেলিফুলের ঝোপটা শ্বেতা বর্ণ ধারণ করেছে।বেলিফুলের গন্ধ ওদের ঘরের চারপাশে ছড়িয়ে পড়েছে।দিয়া ওর মোবাইল ফোনটা আনলক করতেই একটি বহুল পরিচিত নতুন নতুন সাহিত্য পড়ার অ্যাপ থেকে নোটিফিকেশন এল যা দেখে ওর ঠোঁটের কোন একটা হাসি দেখা গেল।সবাই ওকে অভিনন্দন জানিয়েছে।এই অ্যাপটি ওর নব পরিচয়ের অন‍্যতম কান্ডারী। 




   এই বছরের বই মেলায় একজন প্রকাশকের সঙ্গে আলাপ হয়েছিল।তিনি তার সাপ্তাহিক ম‍্যাগাজিনে প্রথম ওর লেখা ছোট গল্প প্রকাশ করেন।আজ একটি স্থানীয় পত্রিকায় ওর লেখা উপন্যাসের একটা পর্ব ছাপা হয়েছে।ম‍্যাগাজিনটা হাতে নিয়ে ওর মনটা অদ্ভুত খুশিতে ভরে যায়‌।সঙ্গে আরো একটি খুশীর খবর আছে যেটা বাড়িতে এলে আকাশকে দেবে।কিন্তু ম‍্যাগাজিনে লেখা বেড় হওয়ার এই খবরটা দিতে চায় সে আকাশকে দিতে চায়।কিন্তু তার জন্য ওর ঘরে ফেরার অপেক্ষা করা ছাড়া অন্য বিকল্প পথ নেই।কিন্তু দিয়ার মন আজ যেন অপেক্ষা করতে রাজি নয়।তাই এই খবরটা আকাশ কে দেওয়ার জন্যে ও আজ আকাশের বাড়িতে ফেরার অপেক্ষা করতে পারল না ,ফোনটা করেই ফেলল।



সবটা শুনে আকাশ খুব খুশি হল ওকে অভিনন্দন জানাল।আকাশ ওকে সবসময় এই লেখালেখির ব‍্যাপারে উৎসাহ দিয়ে এসেছে।এই সময় সত্যিই ওর আকাশের সাথেই কিছুটা সময় কাটাতে ইচ্ছে করছিল, কিন্তু তা তো সম্ভব না।আকাশ এখন ডিউটিতে ।দিয়া বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া ডিউটি তে থাকা কালীন ওকে ফোন করে না।এখন তাই একটু কথা বলেই দিয়া দুধের স্বাদ ঘোলে মেটালো।

   



কিছুক্ষণ আগে হয়ে যাওয়া বৃষ্টি যেমন তীব্র গরমে খানিকটা স্বস্তি দিল তেমনি আকাশের সঙ্গে কথা বলে দিয়া শান্তি পেল। ওর ছোটবেলার অন‍্যতম শখ যে ওর একটা নতুন পরিচয় এনে দেবে সেটা ও কখন কল্পনা ও করেননি।ওর নতুন পরিচয়টা যেন ওর একান্তই আপন,নিছকই সময় কাটানোর অছিলায় ও যে লেখাটা শুরু করেছিল,না কোন নাম যশের আশায় দিয়া সেদিন লেখেনি। ওর অবসর সময় কাটানোর জন্য ও সঙ্গে কিছু মানুষের ওর প্রতি করা রূঢ় ব‍্যাবহার সঙ্গে কটাক্ষ যা সদ‍্য বিবাহিতা মেয়েটির হৃদয়কে নাড়িয়ে দিয়েছিল।সেই সব ভোলার জন‍্য কলম তুলে নেয়।বাড়ির কাউকে জানায় না,ভাবে আগে দেখা যাক ওর এই লেখা কতটা পাঠক মনকে নাড়া দেয়।তারপর এই সফলতার কথা পরিবারের সদস্যদের জানাবেবলে স্থির করেছে। মেঘের দিকে অপলক চেয়ে থাকতে থাকতে কিছু পুরোনো ঘটনা দিয়ার মনে পড়ে‌।স্কুলে পড়ার সময় থেকেই ও লেখালেখি করতো। স্কুলে ও কলেজের ম‍্যাগাজিনে ওর লেখা কয়েকবার প্রকাশিত হয়েছে ব‍্যস ওই পর্যন্ত............


তবে কলেজে পড়ার সময় থেকেই ওর মনের মধ্যে একটা সুপ্ত বাসনা ছিল ওর একটা নিজের পরিচয় থাকবে। ওর পরিচয় ও শুধুমাত্র কারো মেয়ে ,স্ত্রী, বৌমা,মা এই সম্পর্কের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না। এই সুন্দর সুন্দর সম্পর্ক ছাড়াও ওর নিজস্ব একটা পরিচয় থাকবে।ও সমাজের পাঁচজনের একজন হতে চেয়েছিল। "দিয়াশা সেন" এই নাম টার আলাদা অস্তিত্ব ও তৈরি করতে চেয়েছিল।আসলে স্কুলের ভালো রেজাল্ট করা মেয়েটার একটা ভালো চাকরি পেয়ে সাবলম্বী হওয়ার ইচ্ছা ছিল। গল্প,উপন্যাস পড়ার অভ্যাসটা যেন ওর নেশা ছিল।তাই ও ছিল কল্পনা বিলাসী ,তাই কল্পনা আর বাস্তবের মধ্যে ফারাক দিয়া করে উঠতে পারেনি।সাধারণ মধ‍্যবিত্ত পরিবারের এখনো একুশ বাইশ বছরের মধ্যে বিয়ে দেওয়ার প্রবনতা বেশি।কলেজ পড়ার সময় থেকেই ওর পিসিরা ওর বিয়ের জন‍্য পাত্র খোঁজা শুরু করেদিয়েছিল।ওর এম.এ পরীক্ষা পর্যন্ত ওর বাবা মা ওর আপত্তি তা মেনে নেন।অবশ্য ওনারা চাইত মেয়ে এম.এ পাশটা করুক।কিন্তু আকাশে র বাড়ি থেকে বিয়ের প্রস্তাব আশার পর ওনারা তাদের আদরের মেয়ের বিয়ের দিন স্থির করেন।তাই যেখানে এম.এ পাশ করার পর ওর উচ্চ শিক্ষা র ইচ্ছা থাকলেও সেটা আর হয়ে ওঠেনি,সেখানে ওর সুপ্ত ইচ্ছা একপ্রকার বাতুলতা তুল‍্য ।ওই যে নিয়তি ওকে তখন সেই সুযোগ দেয় নি।পরিবারের সামনে ওর সেই ইচ্ছার বহিঃপ্রকাশ দিয়া সেদিন ঘটাতে পারেনি। হঠাৎ বিয়ের কথা শুনে ও বাস্তব কে বুঝতে পারে।পারিবারিক ও সামাজিক চাপ এর কারনটা ও বুঝতে পারে।ও নিজেকে বোঝায় যা বাস্তবে সম্ভব নয় তার আশায় না থাকা ভালো। বাবা মার পছন্দের পাত্র আকাশের সাথে ও সাতপাকে বাঁধা পড়ে এক বৈশাখের সন্ধ্যায়। আমার আমি র খোঁজ ......….................... দিয়ার আর করা হয়ে ওঠে না। 

    নতুন পরিবার নতুন মানুষের সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নিতে চেষ্টা করে। ওর বর্তমান পরিচয় ও দিয়াশা সেন রায়।কিন্তু হঠাৎ করে তৈরি হওয়া সম্পর্কটাকে ও কয়েক সপ্তাহের মধ্যে সহজে মানিয়ে নিতে পারে না।এদিকে আকাশে র ছুটি শেষ হওয়ায় বিয়েরএক মাসের মধ্যে আকাশের সঙ্গে ওর নতুন ঠিকানা হয় খড়গপুর।ওরা এখানেএই ভাড়া বাড়িতে থাকে ।আকাশ একজন রেল কর্মী হওয়ায় ও ডিউটিতে চলে যাওয়ার পর প্রথম প্রথম দিয়ার যেন সময় কাটতেই চায়না ।সময়ে সঙ্গে আকাশের সাথে ওর বন্ধুত্বটা ধীরে ধীরে গড়ে ওঠে।এই নতুন পরিবেশে মানিয়ে নিতে আকাশ সাহায্য করে।দিয়ার পছন্দের কথা জানার পর সময় কাটানোর জন্যে ওকে বেশ কিছু গল্পের বই কিনে দেয়।কিন্তু অল্প কিছু দিনের মধ্যে সেগুলো পড়া হয়ে যায় ।



   সাংসারিক কাজ শেষে নিজের বাড়িতে ও শশুর বাড়িতে ফোনে কথা বলার পর যখন নিজেকে নিঃসঙ্গ মনে হত তখনই ও আবার লেখা শুরু করে।আজ থেকে প্রায় সাড়ে চার বছর আগে।কিন্তু তা ওর ডাইরির পাতায় সীমাবদ্ধ ছিল।ব‍্যাপারটা জানানর পর আকাশ দিয়াকে উৎসাহ দিতো।আকাশ কে নিয়ে দিয়ার ছোট্ট সংসার।এই বাড়ির পরিবেশ টা দিয়াশা র খুব পছন্দের।তবে মিশুকে চঞ্চল মেয়েটা এখন অনেক শান্ত হয়ে গেছে।



   এর দুই বছর পর ওদের মেয়ে দিশার জন্ম। দিশাকে নিয়ে ওদের সুখের সংসার।দিশাকে নিয়ে ই ও এখন সারাদিন ব‍্যাস্ত।তার মাঝে ও লেখালেখিটা করে।

          ওর চিন্তার ছেদ পড়ল ওর ছোট্ট মেয়ে দিশার ডাকে ।মা মা.......আমার খিদে পেয়েছে।ঘুম জড়ানো গলায় বলে উঠল।দিশা তাড়াতাড়ি উঠে গিয়ে ওর ছোট্ট মেয়েকে কোলে তুলে নিল।মুখ চোখ ধুইয়ে মুছিয়ে ওকে চেয়ারে বসিয়ে রান্নাঘরে গিয়ে খাবার নিয়ে এল।এই নাও তোমার খাবার।মুখ খোল আমি খাইয়ে দেই।খেয়ে আমরা পড়া শিখব।দিশাকে পড়ানোর পাশাপাশি ও কিছুদিন হল ওকে ছবিতে রঙ ভর্তি করা শেখাচ্ছে।দিশার খাওয়া নিয়ে ছোট্ট থেকেই খুব বায়না করে।তাই এক সময় বাধ্য হয়ে দিশা মোবাইল এ ছোটদের ছড়া নীতিমালা র গল্প চালিয়ে দেয়। দেখতে দেখতে খাওয়া হয়ে যায়।



               🍁 ২ 🍁

বিয়ের পর যখন প্রথম ওরা এই বাড়িতে এসেছিল তখন মাস দুয়েক লেগেছিল এই বাড়িতে গোছাতে।তখন ও আকাশের সঙ্গে সম্পর্কটা গাঢ় হয়নি।স্বামী স্ত্রী র সম্পর্কে সহজ করার জন্যই আকাশ ই প্রথম বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে ছিল।আকাশ ডিউটি চলে গেলে একদিন গল্প পড়ার উদ্দেশ্য একটি অনলাইন সাহিত্য, উপন্যাস গল্পের অ্যাপ ডাউনলোড করে।নিত্য নতুন গল্প পড়তে থাকে।এই অ্যাপ নাম হীন অর্থাৎ পেশাদার নন এমন লেখক লেখিকাদের লেখা প্রকাশ করা সুযোগ করে দেয়।দিয়ার বেশ মনে আছে ওর ডাইরীর পাতায় বন্দী থাকা গল্প ও প্রথম এখানে প্রকাশিত করে।মনের মধ্যে একপ্রকার দ্বিধা, ভয় নিয়ে ই লেখা প্রকাশ করে ছিল।প্রথম প্রকাশিত হওয়ার সময় ওর মনের মধ্যে চলা এই দ্বন্দ্বের অবসান খুব তাড়াতাড়ি হয়। ।দিয়ার সেই প্রথম রচনা অনেক পাঠকের পছন্দ হয়েছিল।ধীরে ধীরে আরো কিছু গল্প প্রকাশের পর ও অনুসরণকারীদের সংখ্যা বেড়ে যায়।ও দিগুণ উৎসাহে লেখা চালিয়ে যায়।দিয়া মনে করে এখান থেকে ও অনেক কিছু শিখেছে,পেয়েছে অনেক ভালোবাসা।         


   পাঠকবর্গের লেখার উৎকর্ষ কারক মুল‍্যবান মন্তব্য ওর কাঁচা হাতের লেখাকে সুন্দর করতে সাহায্য করছে । আজকের ওর এই সাফল্যের পিছনে "সাহিত্য ঘর" অ্যাপের সাহায্য অনস্বীকার্য।এই পরিবার ই ওর সেই সুপ্ত বাসনা পূরণ করেছে।ও এদের কাছে চির কৃতজ্ঞ থাকবে। এখানে ওর অনেক নতুন বন্ধু হয়েছে।যারা ওকে নানা প‍রামর্শ দিয়ে সাহায্য করেছে ।


        

                 🍁🌿 ৩🌿🍁


      কয়েক বছর আগে কথা ওদের পাড়ায় অনুষ্ঠিত হওয়া কবি সম্মেলনে ও যায় সেখানে অনুষ্ঠান চলাকালীন ওর পাশের আসনে বসা এক মধ্যবয়ষ্কা লেখিকার সাথেই আলাপ হয়।ওনার পরামর্শেই ও সহযোগিতায় দিশা একটি পত্রিকা র সঙ্গে যুক্ত হতে পারে।এই বিষয়ে উনি দিয়াকে খুব সহযোগিতা করেন। সেই পত্রিকায় প্রথম দিয়ার লেখা ছোটগল্প প্রকাশিত হয়। সেই শুরু ডাইরীর মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকা লেখা গুলো ধীরে ধীরে পত্রিকায় প্রকাশিত হতে থাকে ।দিয়ার উপর দিন দিন প্রত্যাশা বাড়তে থাকে।সমসাময়িক নিত্য নতুন বিষয় নিয়ে লেখা র জন‍্য পরবর্তীতে ওকে বলা হয় । 

    

    সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে নতুন নতুন রচনা র সৃষ্টি হতে থাকে। পত্রিকা অফিসে জমা দেওয়া ওর বহু প্রতিক্ষীত উপন্যাস "নতুন দিগন্ত"আজ প্রকাশিত হয়েছে। যার সারাংশ ওর ফেসবুক পেজে প্রকাশিত হওয়ার পর ওর অনুসরণকারীদের মধ্যে বেশ সাড়া ফেলেছিল।

 এই মন্দার বাজারে সরকারি চাকরি না পাওয়া একজন শিক্ষিত বেকার যুবকের সামাজিক অবহেলার যন্ত্রণা থেকে............. মানসিক অবসাদ,হতাশা, আর্থিক অনটন ,আত্মহত্যা করার প্রচেষ্টায় ব‍্যর্থ হয়ে জীবনমুখী চিন্তায় অবতীর্ণ হওয়ার প্রেক্ষাপটে রচিত উপন্যাস।আগে দেখা যাক ওর এই লেখা কতটা পাঠক মনকে নাড়া দেয়।

.

..

.

..

.

..

                  

      গত কয়েক বছরে দিয়ার লেখা বেশ কিছু গল্প ,উপন্যাস বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। ৩ বছর পর দিয়া আজ বাঙালি লেখিকা দিয়াশা সেন রায়।দিয়াশা শেষ পর্যন্ত লেখা প্রকাশের মাধ্যমে আমার আমি কে খুঁজে পেয়েছে।সমাজে ওর অন্য একটি পরিচয় তৈরী হয়েছে।ও এখন ও যদি ও খুবই সাধারণ লেখিকা তবুও এই স্বল্প পরিচত নবপরিচয় ওর বেশ ভালো লাগে।যদি ও প্রকৃত যোগ্য হয় ও নিশ্চিতরূপে আরো এগিয়ে যাবে।তবে ও মনে করে যেটুকু ও পেয়েছে তাতেই ও সন্তুষ্ট।



অবশেষে দিয়া যেন ওর আকাঙ্খিত নবপরিচয়টা পেয়েই গেল।যেটার পাওয়ার আশা ও ছেড়ে ই দিয়েছিল সেটা নিয়তি ওকে আবার ফিরিয়ে দিল।


 



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Abstract