Apurba Kr Chakrabarty

Fantasy

4.5  

Apurba Kr Chakrabarty

Fantasy

অতৃপ্ত আত্মা

অতৃপ্ত আত্মা

9 mins
562


কর্মসুত্রে জীবনে, গনতন্ত্রে বড় উৎসব নির্বাচনে অনেক বার অনেক দায়িত্ব পালন করেছি।আর বুথে ভোট করতে যাওয়া একজন প্রিসাইডিং অফিসার হিসাব, অন্তত বার দশকে ডিউটি করেছি। একদিকে যেমন কষ্ট, দায়িত্ব ,রাত জাগা, রাতে শোবার সমস্যা,খাবার সমস্যা, তার চেয়েও ভয়াবহ বাথরুম টয়লেটের সমস্যা। কিন্ত তার মধ্যেই কেমন পিকনিক পিকনিক একটা আনন্দও থাকত।

একবারে গ্রাসরুটের ভোট কর্মীদের প্রধান হিসাবে দায়িত্ব পালন, কোন ফাঁকে যে ভোটের সারাটা দিন কেটে যেত, বুঝতেই পারতাম না।আর থাকত নতুন নতুন অনুভূতি অভিজ্ঞতা। একদম কিছু নিচের স্থরের রাজনৈতিক কর্মীদের সাথে ভাব জমানো ঘনিষ্ঠ হওয়ায় মজা ছিল ।

কোনদিনই কোন কট্টর রাজনৈতিক আদর্শের অন্ধ ভক্ত ছিলাম না। যে দল যেখানে শক্তিশালী,তর্কে বিতর্কে যেতাম না। সবার মন জয় করার চেষ্টা করতাম। শান্তিতে নির্বিঘ্নে ভোট করে নিজে ও টিম কে সুস্থ রেখে বাড়ি ফেরার মুল লক্ষ্য থাকত। ব্লক স্তরে কাজ করা একসময়ের ঝানু নির্বাচন কর্মী ছিলাম, ব্লকে ও সি ইলেকশন থেকে কি করি নি! তাই নির্বাচনের এক দক্ষ পারদর্শী কর্মী হিসাবে, আত্মবিশ্বাস ছিল প্রবল।

ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা এই সব বুথে ভোটে গেছি, সত্তর শতাংশ ভোট বা নির্বাচন হত প্রায় শান্তিপূর্ণ।মানুষ নিজের ভোট নিজে দিতে দেখেছি।যদিও পাঁচসাত শতাংশ জাল ভোট বা সন্ত্রাসে মানুষ ভোট মুখী হয়নি,এমনটাও মনেহত। খোলাখুলি সন্ত্রাস বোমাবাজী গুলি ভোটলুট, কী নিদারুণ সেই সব গনতন্ত্রের লজ্জার অভিজ্ঞতা অন্তত দুবার কাছ থেকে দেখেছি।

অজ গ্রাম থেকে আধুনিক শহর, আটের দশক থেকে, গত লোকসভা। অনেকটা সমযকালের, অনেক অভিজ্ঞতার সাক্ষী। পায়ে কাছে বোমার নিক্ষেপ,দৌড়ে পালিয়ে যেমন বেঁচেছি।

আর মমি সিনেমার সেই সব অবোধ ধরহীন সেনার মত ,রাজনৈতিক দলের ক্যাডারদের নির্বাচন কক্ষে রিডিং করার মহান কর্তব্য পালনের জন্য প্রবেশে দেখেছি। হিংস্র ক্যাডারদের তান্ডব অশান্তি আর বোমাবাজির জন্য স্কুলের মেন গেটে চাবি লাগিয়ে, অতিরিক্ত ফোর্স আসার জন্য অপেক্ষা করছি।রাইফেল ধারী দুজন আমার বুথের রক্ষীর রাইফেল উচিয়ে, আর গ্রিলের গেট টপকে পিল পিল করে ক্যাডারদের ঢুকতে দেখে মনে হয়েছিল যেন, মমি সিনেমার ধরহীন সব মমি সেনা।কোন প্রানের মায়া নেই?

আমার বুথের দুই তরতাজা সাহসী রক্ষী আমার কাছে পারমিশন চেয়েছে গুলি করার! তাদের ধমকে বলেছি, "প্রানে বাঁচবে তো ! না আমরা কেউ বাঁচব ! আমি প্রিসাইডিং অফিসার হিসাবে,কত সব উচ্চস্তরের  পদাধিকারীদের  ফোনের কতবার যে আরও ফোর্সের আবেদন করছি।কোন ফোর্স কিন্তু আসছে না। তোমরা দুজন কী করবে !ওরা অনেক।আর আমি ভোট নিতে এসেছি, মানুষ খুন করতে গুলি চালানোর আদেশ দিতে নয়।"

তার পর অবাদ বুথ দখল, ভোটলুট, পাঁচ সাত জন মিলেই নব্বই শতাংশ ভোট করেছে, সেটা ইভিএম বা ব্যালটে হোক, ইতর বিশেষ তফাত।

সেই বিতর্কে যাচ্ছি না,সত্য তুলে ধরা,জনসচেতন করা, সাংবাদিকদের কাজ।তবে আমার জীবনের এক বুথে গিয়ে ভোট করার ফাাঁকে এক অলৌকিক ঘটনা আমাকে রীতিমত আশ্চর্য করেছিল।

সেটা ছিল এক লোকসভার নির্বাচন,আউশগ্রামে এক ঘন জঙ্গলে ঘেরা গ্রামে আমার ডিউটি।এই এলাকায় একসময়ে ছিল নকশালদের ঘাঁটি । জঙ্গল মহল কেউ কেউ বলে। রাতে বিচ্ছিন্ন এই গ্রামে, হাতির তান্ডব এক বড় সমস্যা ,ক্ষেতের সর্বনাশ করে ,কাঁচাবাড়ি ঘর ভাঙ্গে। আর বাঁদরের উৎপাতে, ফসল রক্ষা করা দায়। স্থানীয়দের কাছে জানছিলাম।

আমার স্বভাব মত, আগের সন্ধ্যায় সব রাজনৈতিক দলের , চুনোপুঁটি নেতা বা ক্যডার বা কর্মী আর বুথের এজেন্টদের সঙ্গে ,জল সরবরাহকারী আর আমাদের রান্নার জোগারে,স্থানীয়দের সাথে একটু হাল হকিকত আলোচনায়, এলাকার রাজনৈতিক পরিস্থিতি বা কোন অশান্তি হিংসা হবে কিনা যেমন  জানার চেষ্টা করতাম,আর সর্তক থাকতাম। 

খাবারের মিল প্রতি দরদাম নিয়ে কোনদিনই মন কষাকষি করিনা। একদিন মাত্র,একটু ঠকায় দুঃখ নেই,  কিন্তু পরিসেবা আর খাদ্যে গুনটাই আসল।

প্রাইমারী স্কুল, বড় প্রাঙ্গন, চারদিক বন ঝোঁপ জঙ্গল। এই বুথে  গতবার ভোটে একটু অশান্তি মারামারির কারনে, প্যারামিলিটারীর সাত আট জনের টিম একদিন আগে থেকেই এসে স্কুলের ভালো ঘর বাথরুম টয়লেট দখল করেছিল। তাই একটু দুরে আমাদের জন্য বরাদ্দ ছিল একটা বড় ঘর ,তবে কেমন অপরিছন্ন,কোন ক্লাস রুম মনে হচ্ছিল না। বিকাল চারটে পর নির্বাচন কেন্দ্র বা বুথে পৌছালাম।প্রথমে আমাদের স্থানীয় যারা সহকারী,তাদের দিয়ে ঘরে ঝাঁট দেওয়ালাম, আর বিদ্যুতের সংযোগ করালাম, জলের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা ছিল। 

স্কুলের চারদিক প্রাচীর ঘেরা ,হয়ত হাতির তান্ডব থেকে রক্ষা পেতে। একটা কালো কুকুর কেমন সব সময় ভেক ভেক করছিল ,হয়ত আমরা অপরিচিত মানুষ তাই। মাঝে মধ্যেই ঘরে ঢুকে আসতে চায়।ভাবছিলাম খাবার জন্য, একটা পাউরুটি অংশ ছুড়ে দিলাম। খেল,তারপর আমার দিকে তাকিয়ে কেমন ডাকছিল না কাঁদছিল বুঝতে পারছিলাম না।

আমাদের বাকী কর্মীরা যেন কেমন গা ছাড়া ভাব।বিকালে বের হল, কিছু নিত্য সামগ্রী পেষ্ট, সাবান বা অন্য কিছু কিনতে,গ্রামেরই কোন দোকানে। বললাম, " তিনজন কেন একসাথে যাচ্ছেন !আমি একা থাকব !  আমাদের সঙ্গে তো কোন রক্ষী নেই। অবাঙ্গালী সেন্টার ফোর্স যারা ,ওরা নিজেদের মত একপাশে আছে, আমার ভালো হিন্দি আসে না, কিছু কথাবার্তা জন্য একজন অনন্ত থাকুন !"

রবি ফাস্ট পোলিং বললেন, "স্যার দশ মিনিটের মধ্যেই ঘুরে আসব সবাই, এসে কাজে বসব। ভোটের আগের দিন অনেক কাজ সেড়ে রাখতে হয়।আমি ঘরে ছিলাম, কুকুরটা ঘরে ঢুকে এল, লেজ গুটিয়ে কেমন তাকিয়ে ! আমাকে কিছু যেন বলতে চাইছে। গা টা একা ঘরের মধ্যে কেমন ছম ছম করছে, ঘর থেকেই বেরিয়ে এলাম। সঙ্গে বিস্কুট ছিল, একটা প্যাকেট খুলে, বাইরের প্রাঙ্গনে চেয়ারে বসে বিস্কুট খাচ্ছি ,আর মাঝে মাঝে কুকুরটাকে দিচ্ছি।

এবার গ্রামের গোটা চারেক মানুষ এল,ওরা পরিচয় দিল, এই বুথের এজেন্ট হবে। দুই পরস্পর বিরোধী দলের মানুষ, কিন্ত তাদের কোন শত্রুতা নেই। গত ভোটের অশান্তি জন্য বাইরের কিছু মানুষ নাকি দায়ী। উনাদের পূর্ণ সহযোগিতার আশ্বাস দিলেন। অনেক কথাবার্তার হল, বেশ ভালোমত সম্পর্ক হল। অবশ্য একদিনের সম্পর্ক, আমার ধান্ধাও তাই, কালকের দিন টা ভালোভাবে উতরে দেওয়া।

 

আমার সহকর্মীরা এলেন দশ মিনিট বলে আধ ঘণ্টার পর, রাগলে চলবে না। টিম লিডার হয়ে আমার যেন বড় দায়। কনটিজেন্সির টাকা আগেই বলেছি,খেতে যা খরচ হবে, ওটা আগে দেবার পর,বাকী ব্যালেন্স চার ভাগ হবে। ওরা আমাকে কাগজের ঠোঙ্গায় চপ মুড়ি দিল। নিজেরাও খেতে শুরু করল। দাম দিতে গেলাম নিল না। খিদে ছিল খেলাম। এরপর কাজে বসলাম। মাঝে খাবার পরিবেশনের ঠিকে লোকটি, দুবার করে চা দিল, সব হিসাব কাল হবে।

আমার সেকেন্ড পোলিং অফিসার নরেনের টয়লেট যাবার দরকার। তিনি গেলেন, একটু দুরে বিছিন্ন ভাবে টয়লেট, একটু অন্ধকার টিম টিম বাল্বের আলো, তিনি কেমন ভয়ে যেন দৌড়াচ্ছেন পাল্লা দিয়ে কুকুর টা চিৎকার করছে। টয়লেটের দিকেই মুখ করে। জিজ্ঞেস করলাম "দৌড়ালেন যে!"

কেমন ভয়ে ভয়ে বলল, "ওদিকটা কেমন অন্ধকার কী সব দেখলাম মনে হল। ওখানে পায়খানা বসলে ভয়ে হবে না। "

"সেন্ট্রাল ফোর্স দের টয়লেট টা তো কাছে ওটাতে যান। " কিন্ত কিন্ত করছে," বললাম আরে যান না!  আমাদের জন্যই ওরা ! কিচ্ছু বলবে না।"

ঐ টয়লেট চাবি ওদের কাছে।তবে আমার আশ্বাস পেয়ে  নরেনবাবু চাবি চাওয়া মাত্রই ফোর্সের এক সদস্য চাবি দিল। আর বলল ,"দরকার হলেই চেয়ে নেবেন, আমরা সারারাত পালা করে জেগে পাহাড়া দেবো।"ভাবছিলাম ওরা অবাঙ্গালী, নিজেদের মধ্যে ওরা হিন্দিতে কথাবার্তা বলছিল,  পরে  জানলাম ওদের দুজন বাঙালি, একজনের বসিরহাটের আর একজন ঘাটালে মানুষ। এরপর আমি প্রান খুলে ওদের সাথে বাঙালায় অনেক কথা বললাম, আর অনেক অভিজ্ঞতার বিনিময় হল।

 

রাতে খাবার নিয়ে এল , নিদিষ্ট খাবার জন্য ঠিকা দেওয়ার লোকটি, সে ফোর্সদেরও খাবার দিচ্ছে গতকাল থেকেই। আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম "ঐ দিকের বাথরুম টয়লেট কী ব্যবহার হয়! "

ও বিস্মিত হয়ে বলল "কেন বলুন তো?"

এবার সেকেন্ড পোলিং এর ভয় পাবার কথা ওকে বললাম, সে বলল, " দিনে যেতে পারেন, রাতে কিন্তু যাবেন না। অন্ধকার বন ঝোঁপ, গরমের দিন তাই বিষধর সাপ তো থাকতে পারে। "

পরদিন ভোট, আগের রাতের কাজ কর্ম প্রায় শেষ খুব সকালে উঠতে হবে। ছটায় মকপোল তার আধ ঘন্টার আগে সব রেডি করতে হবে। আর তার একঘন্টা আগে উঠতে পারলে ভালো, নিত্যকর্ম, স্নান করা ,দাঁতমাজা, পোষাক পড়া,হাল্কা খাওয়া আরও অনেক কিছু নির্বাচনীয় কাজ। 

এগার সময় শুয়ে পড়লাম। দুটো বেঞ্চ জোড়া করে আমি শুয়েছিলাম। নিচে মেঝেতে আমার শোয়ার অভ্যাস নেই। বাকী তিন সহকর্মী মশারি টাঙ্গিয়ে বিছানা করে মেঝে পৃথক পৃথক শুয়ে পড়ল। ক্লান্ত শরীরে ঘুমটা বেশ ধরেছিল। হঠাৎই এক সহকর্মী তীব্র নাক ডাকার আওয়াজে,  এমন ঘুম ভাঙ্গল, আর আসে না।কাল বিরাট কর্মযজ্ঞ,তাই ঘুম খুব দরকার, কিন্ত চোখবুজে থাকলেও ঘুম আর আসে না।

বাইরের কুকুর টা তীব্র চিৎকার করছে, বাইরে ফোর্সরা যদি একটু থামাত ! একটু ডেকে বলব ভাবছি।

আমার শরীরের ভয়ে কাঁপন ধরে গেল। দেখতে পারছি বন্ধ দরজা ভেদ করে এক মহিলা ঢুকছে, পড়নে তার হালকা হলুদ রঙের শাড়ি,নীল ব্লাউজ, সিঁথিতে সিঁদুর, কপালে সিঁদুরের টিপ,হাতে শাখা। কেমন হন্তদন্ত হয়ে ঘরে এক কোনা থেকে,গামলায় কিছু ভরে যেন বাইরে বেরিয়ে গেল। কুকুরটা এতক্ষণ চুপ ছিল,আবার সে চিৎকার শুরু করল। কিছুক্ষণ পর আবার তার প্রবেশ একই ব্যস্ততায়, হাতে ঝুড়ি।তরকারি কাটার ভঙ্গিমায় খানিক বসে কাটাকাটি করে আবার ঝুড়ি সমেত বের হল। কুকুরের চিৎকার টা আবার শুরু হল।

থার্ড পোলিং উঠেছে বোধহয় বাথরুম যাবে।আমি কিছু বলতে পারছি না।আমার চোখের ভ্রম কী না কে জানে। কপাট খুলে উনি বের হলেন, এবার খোলা দরজা দিয়ে ঐ মহিলা ঢুকল। বড় বড় মায়াভরা চোখ, শ্যামলা রং,কালো এক রাশ চুলে খোঁপা, মুখমন্ডল বেশ ,এক কথায় দরিদ্র্য ঘরের সন্দরী ,বয়স তার মনে হয় ত্রিশের আশপাশে। ,এবার তাকে যেন ক্লান্ত লাগছিল কপালে, মুখ চোখে ঘাম,নীল ব্লাউজ ঘামে সপসপে, ঘরে ঢুকে হেঁট হয়ে বসে কিছু করছে! যেন শীলে বান্না বাটার ভঙ্গিমা। থার্ড পোলিং অমর এবার ঘর ঢুকে কপাট লাগাতে যাবে।আমি এবার কেমন উদভ্রান্ত হয়ে চেঁচিয়ে উঠলাম "কপাট লাগবেন,খোলা থাক। "

"কেন স্যার !"

আমি সাধারণত কর্ম জীবন উগ্রতা দেখাই না আজ আমি উগ্র ভাবেই বললাম, "যা বলছি শুনুন, কপাট খোলা থাক।" হঠাৎই তাকিয়ে দেখি ঐ মহিলা থার্ড পোলিং এর শরীর ভেদ করে বাইরে বেরিয়ে গেল।

অমরকে জিজ্ঞেস করলাম "কিছু দেখলেন বা অনুভব করলেন  ! " 

অমর বাবু ফ্যাল ফ্যাল তাকিয়ে বলল "কি স্যার।"

কুকুর টা আর ডাকছে না ।তবু মনে হল ও আবার আসবে। তাই উঠে বসলাম,ঘরে আলো জ্বালালাম, তখন মোবাইলে দেখলাম রাত সাড়ে তিনটে ।

অমরকে বললাম "আর ঘুমবেন না ।"

"কিন্ত স্যার অনেক রাত!"

"হোক রাত, গল্প করব আসুন। "

"আপনার কী ঘুম আসছে না ?"

"না, ঐ নাক ডাকার শব্দ তারপর," বলে থেমে গেলাম অমর আমার অনুরোধ, আদেশ যাইহোক পালন করেছিল।

ভোট প্রক্রিয়া সুষ্ঠ ভাবেই চলছিল। বেলা তখন দুটো, ছোট বুথে আশি শতাংশ পোল হয়ে গেছে, হাল্কা মুডে সবাই। হঠাৎই আমাদের সেই রান্নার ঠিকাদার কেমন উদভ্রান্ত হয়ে যা বলল,তার মর্মার্থ, খাবারের উৎছিষ্ট গুলো দেবার জন্য মরি নামে কালো কুকুর টার সে খোঁজ করছিল। কুকুরটা পুরোন বাথরুম টয়লেটের পাশের নালায় মরে পড়ে আছে।

আমি আর থাকতে পারলাম না।বললাম "এই ঘরটা কী ক্লাস রুম না আর কিছু !"

এক বয়স্ক এজেন্ট নাম বলাই বলল "স্যার এটা তো মিড ডে মিলের গুদাম ঘর। চাল ,আনাজ ,সব্জি রাখা  থাকে ।রান্নার, বান্না কাটাকাটিও হয় ,ভোটের জন্য, পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করা হয়েছে ,সেন্ট্রালের ফোর্সরা ভালো ঘরগুলো সব আগেই দখল নিয়ে বসে আছে। "

আমি এবার গতরাতে সব কথা খুলে বললাম।

সবাই বিষ্ময়ে হতবাক।বলাই বলল "মল্লিকা নামে এক মিড মিলের কর্মী আপনার বর্ণনার সাথে হবাহু মিলে যাচ্ছে।গত বছর এই সময়টাতেই বিষধর সাপ ওকে কামড়ায়, ঐ পুরোন বাথরুম টয়লেটের কাছে ।সেদিন রান্নার কাজ করতে করতে বাথরুম গেছিল। হাসপাতালের নিয়ে যাবার আগেই মারা যায়।ওর বাচ্ছা দু টো ছেলে মেয়ে, এই স্কুলেই পড়ে, কেউ কেউ বলে,ও নাকি ভুত হয়েছে ,এই স্কুলের আশপাশে আবছা ছায়া মূর্তি দেখেছে। "

"থার্ড পোলিং অমর বলে স্যার আমি তো দেখলাম না!"

 বললাম "আপনার শরীর ভেদ করে চলে গেল আর দেখলেন না! আজ বরং রাতে এ ঘরে একা থাকুন , নিশ্চিত দেখতে পারেন , খুব দেখার সখ  তো !"

অমর বাবু ভয়ে কেমন থতমত খেয়ে বলল,"তাহলে কুকুরের মত আমাকেও ও মেরে দেবে।"

 বললাম," কুকুরকে ও যে মেরেছে কে বলল! শুনুন অশরীরীরদের বিরুদ্ধে ,কোন প্রমাণ তথ্য ছাড়া হিংসা ঘৃনা ছড়ানো ঠিক নয়। "

বলাই বাবু বলে,  "  আপনি সঠিক স্যার ,যুক্তিযুক্ত কথা।"

আমি এবার ঐ অভাগা অশরীরীর প্রতি কেমন দরদী মনে বললাম,"সে তো আমার বা নরেনবাবু আপনার কোন ক্ষতি করেনি ! আর এক অভাগা  মা , অপত্য স্নেহে যদি তার দুই শিশু সন্তানদের দেখতে এখানে অশরীরী হয়ে থেকে থাকে ,খুব কী দোষের! ওর অতৃপ্ত আত্মার যাতে মুক্তি হয়, তার কষ্ট দুর হয়, সেটা বরং করা দরকার ।"

গ্রামে যত এজেন্ট ছিল, দল নির্বিশেষে  সহমত পোষণ করল।বলাই বাবু বলল, "গ্রামে কেউ কেউ তার কায়া আবছা রূপ রাতে এই স্কুলে দেখেছে । আমরা এভাবে বুঝিনি,তাই হয়ত আপনাকে দেখা দিয়েছে, আপনার দরদী বিচক্ষন মন আমাদের সত্যি চোখ খুলে দিয়েছে। আমরা কথা দিচ্ছি স্যার যত তাড়াতাড়ি, কোন পন্ডিতকে ডেকে ওর অতৃপ্ত আত্মা যাতে মুক্তি হয়,তার জন্য যা ক্রিয়াকর্ম আছে করব।"

তার অতৃপ্ত আত্মা মুক্তির জন্য কোন ক্রিয়াকর্ম যজ্ঞ হয়েছিল কিনা ! তা অবশ্য আমার আজও জানা নেই। 



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Fantasy