আমের কুসি
আমের কুসি


সন্ধ্যে নামতেই কালবৈশাখী! ছোটু ছিটকে বেরোল। মায়ের বারণ না শুনেই। নোনাপুকুরের পেছনে ছোট জঙ্গল আছে। ওখানে কয়েকটা আমগাছে ভাল মুকুল ধরেছে। আবছা আলোতে ছোটুর পিসিঠাম্মাও লাঠি নিয়ে হাজির। এদিকটা বড়লোক-পাড়া বলে আমের বিশেষ ভাগীদার নেই। আম পড়ছে বটে ধুপধাপ, কিন্তু একে অন্ধকার তায় ঝোপঝাড়; কোথায় যে সব হারিয়ে যাচ্ছে!
বুড়িকে ওর মা সহ্য করতে পারে না, বলে – ম’লে বাঁচি! ওদের বাড়ির পাশে একানে একটা চালাঘরে থাকে বুড়ি। ম’লে ওখানে একটা মরাই বসাবে ছোটুর বাবা-মা। এর মধ্যেই অনেক আম জমে গেছে বুড়ির সাদা কাপড়ে। ছোটুর হাতে এসেছে খালি কয়েকটা কুসি।
- কটা আম পেলি রে? বুড়ির কাঁপা গলার শব্দগুলো ভেঙে গেল ঝড়ে।
সবে কুড়ানো আমের কুসিটা ঠাম্মার দিকে ছুঁড়ে মারল ছোটু। গিয়ে লাগল সোজা কপালের পাশে, রগে।
- উঃ, মাগো!
ছোটু আর দাঁড়াল না, একদৌড়ে বাড়ি।
ঘুম ভেঙে গেল। আলো ফোটেনি এখনও। বাবা-মার ঘরের দরজাটা আধখোলা। টুলে উঠে সদরের ছিটকিনি খুলতে গিয়ে দেখল খোলাই আছে। আমবাগানে গিয়ে ছোটু আবার বুড়ির মুখোমুখি! ভাবল ছুটে পালাবে; কিন্তু বুড়ি হাতের লাঠি উঁচিয়ে ইশারায় ডাকল। ছোটু এগিয়ে গেলো পায়ে পায়ে। বুড়ি সাদা থানের কোঁচড় থেকে সব আম ঢেলে দিল মাটিতে; তারপর চলে গেল জঙ্গলটার দিকে!
আমগুলো নিয়ে ছোটু যখন বাড়ি ঢুকছে, বাবাও ঢুকল পাড়ার লোক জন নিয়ে। সবার কোমরে গামছা। মা বাড়ি থেকে বেরিয়ে এল আগুন, নিমপাতা আর যাঁতি নিয়ে।
কি গো বুড়িকে পোড়াতে এত সময় নেগে গেল?