Unlock solutions to your love life challenges, from choosing the right partner to navigating deception and loneliness, with the book "Lust Love & Liberation ". Click here to get your copy!
Unlock solutions to your love life challenges, from choosing the right partner to navigating deception and loneliness, with the book "Lust Love & Liberation ". Click here to get your copy!

Sayandipa সায়নদীপা

Horror

3  

Sayandipa সায়নদীপা

Horror

সত্যি ভুতের গপ্পো

সত্যি ভুতের গপ্পো

9 mins
2.3K



“কি বলছিস কি! ওখানে?”


“আস্তে দাদা, দেওয়ালেরও কান আছে। 

ওখানকার মত সেফ জায়গা আর কোথায় পাবেন?”


“কিন্তু তা বলে…

আচ্ছা ওখানেই নাহয় লুকোনো যাবে কিন্তু তোকে বিশ্বাস করি কি করে?”


“আমি এতদিন আপনার সাথে আছি আর আপনি এখনও আমায় বিশ্বাস করতে পারবেননা?”


“রাজা তো তোর থেকেও বেশিদিন ছিলো আমার সাথে…

আমাদের ধান্ধায় বিশ্বাস শব্দটা বড় ঠুনকো রে।”


“ঠিক আছে বিশ্বাস করতে হবে না। কিন্তু আমি বিশ্বাসঘাতকতা করলে আমাকে শায়েস্তা করার চাবিকাঠি তো আপনি আগে থাকতেই নিয়ে রেখেছেন।”


“হুমম… দিনকে দিন আরও সেয়ানা হয়ে উঠছিস তুই। এরকম চলতে থাকলে অনেক দূর যাবি।”


                    *****


 “কিরে মিঠি খেলতে যাবি না?”


“মিঠি...এই মিঠি শুনতে পাচ্ছিস?”


“হুঁ?”


“উফফ… এতো মন দিয়ে কি পড়ছিস বলতো? 

এতো ডাকছি তাও শুনতে পেলি না।”


“সরি।”


“কি বই পড়ছিস দেখি।”


“আরে না না এমনি একটা গল্পের বই।”


“হ্যাঁ তো সেটা দেখা না, এতো লুকোছাপা করছিস কেন?”


“না মানে… তুই হাসবি বইটা দেখলে।”


“আরে দেখা না তুই… ছাড় ছাড়… দেখি…

‘বাংলার বিখ্যাত সব ভুতের বাড়ি’ … আরে বাহ্, তুই ভুতে বিশ্বাস করিস?”


“আমি বলেছিলাম না তোরা দেখলে হাসবি।”


“হাসলাম কোথায়? জিজ্ঞেস করছি তো এমনি ভুতে বিশ্বাস করিস নাকি।”


“উমম… জানিনা ঠিক। মানে বিশ্বাস অবিশ্বাস নিয়ে মাথা ঘামাই না খুব একটা তবে যখনই কোথাও এরকম ভুত সম্পর্কিত সত্যি অভিজ্ঞতা সম্পর্কে পড়ি বা কারুর কাছে শুনি তখন খুব থ্রিলিং লাগে ব্যাপারটা। ভারতীয় দর্শন তো শরীরের বাইরে আত্মার অস্তিত্ব স্বীকার করে।”


“হুমম কিন্তু কখনো তোর ইচ্ছে করে না নিজে ওই জায়গায় গিয়ে সত্যি মিথ্যে যাচাই করতে?”


“তুই কি করে জানলি আমার এমন ইচ্ছে করে?”


“হেঁ হেঁ আমি তনয়া মিত্তির, ফেলু মিত্তিরের দূর সম্পর্কের নাতনি।”


“হাঃ হাঃ বুঝলাম।

কিন্তু ইচ্ছে থাকলেও কি আর করবো বল, ওই সব জায়গায় যেতে আর পারি কই!”


“হুমম তা ঠিক। তবে তোকে এমন একটা ভুতুড়ে বাড়ির সন্ধান দিতে পারি যেখানটায় তুই যখন খুশি যেতে পারিস, তবে ভুতের দেখা পাবি কিনা জানিনা।”


“তাই? কোথায় সেটা?”


“এই ধরে নে আমাদের শহরেই।”


“রিয়েলি? কোথায়?”


“আছে আছে… তুই এই শহরে নতুন তো তাই জানিস না এসব।”


“ওখানে সত্যি ভুত আছে?”


“সত্যি মিথ্যের দায়িত্ব আমার নয় তবে বাড়িটা সম্পর্কে অনেক গুজব চলে আসছে বহু বছর ধরে।”


“গুজব?”


“হুম। শুনবি?”


“নিশ্চয়।”


“তবে বইটা রাখ, বলছি।”


“ওকে।

নে বল এবার…”


“বাড়িটার বয়স একশো বাহান্ন বছর।”


“এতটা একিউরেটলি জানিস!”


“হুম বাড়িটার গায়েই প্রতিষ্ঠিত হওয়ার বছরটা খোদাই করা আছে যে। 

যাইহোক আর ফোড়ন না কেটে শোন গল্পটা।”


“হ্যাঁ হ্যাঁ বল বল।”


“বাড়িটার বয়স শুনেই বুঝতে পারছিস ইংরেজ আমলে তৈরি। বাড়িটা যিনি তৈরি করেছিলেন তার নাম ছিল রবার্ট মুর, পুলিশের একজন বড় অফিসার ছিলেন তিনি। তাঁর স্ত্রী অগাথা মুর ছিলেন ফরাসি। মিঃ মুর যতটা নির্মম নিষ্ঠুর ছিলেন মিসেস মুর ছিলেন ততটাই শান্ত, স্নেহশীলা। ওই বাড়িটার থেকে কিছুদূরে একটা বিশাল বড় ফাঁকা মাঠ ছিল, সেখানে স্থানীয় রাখাল ছেলেরা ছাগল চরাতে আসতো। মিসেস মুর বাড়ির জানালা থেকে ওদের দেখতেন রোজ। তারপর একদিন চুপিচুপি ওদের কাছে গিয়ে ভাঙা ভাঙা বাংলায় বললেন, ‘এই টুমরা পড়াশুনা করোনা?’ ”


“ধ্যাত তোকে ওই মিসেস মুরকে নকল করতে হবেনা, চটজলদি গল্পটা বল নয়তো ঘন্টা পড়ে যাবে।”


“উফফ তোদের নিয়ে এই সমস্যা গল্প বলার জন্য গল্পটা আগে অনুভব করতে হয় বুঝলি?”


“আচ্ছা বুঝলাম। বাকিটা বল তাড়াতাড়ি।”


“হুঁ। মিসেস মুর এরপর ওই বাচ্চাগুলোকে বাড়িতে নিয়ে গিয়ে পড়াশুনো শেখাতে লাগলেন। এভাবেই বেশ দিনগুলো কেটে যাচ্ছিল কিন্তু তারপর একদিন হঠাৎ…”


“হঠাৎ কি?”


“একদিন বিকেলে সেই সব বাচ্চাগুলো পড়া শেষ করে ছাগল নিতে গেছে মাঠে, তখনই দুজন লোক এসে ঝপ করে মিসেস মুরের মুখ চেপে ধরল, একটুও আওয়াজ করতে পারলেন না তিনি। লোকদুটোর মধ্যে একজন বললেন, ‘আমরা আপনার কোনো ক্ষতি করবো না মা। আমাদের শুধু ওই দুষ্ট পুলিশ মুরকে চাই।’ 


“লোকদুটো কি বিপ্লবী ছিল?”


“হুম। এরপর ওরা ঘাপটি মেরে ওই বাড়িতে লুকিয়ে রইল সুযোগের অপেক্ষায়। কিন্তু মুশকিল হল এই যে ওই রাখাল ছেলেগুলো দূর থেকে পুরো ব্যাপারটা দেখেছিল তো তারা ভাবলো এই লোকদুটো বোধহয় তাদের প্রিয় দিদিমণির ক্ষতি করতে চাইছে তাই তারা ছুটতে ছুটতে থানায় গিয়ে সব বলে দিল।”


“যাহ! তারপর?”


“তারপর তো মিঃ মুর বেশ কয়েকজন পুলিশ নিয়ে এলেন, দিয়ে…”


“এক মিনিট, এতো বড় অফিসারের বাড়িতে পাহারা ছিলো না কোনো?”


“হয়তো ছিল। বিপ্লবী দুজন আগে থাকতেই তাদের হয়তো কিছু করে দিয়েছিল।”


“ওকে ওকে। তারপর বল।”


“তারপর আর কি দু পক্ষের মধ্যে ধুমধুমার গুলির লড়াই চলল। ইংরেজরা অতজন কিন্তু ওই মাত্র দুজন বিপ্লবীই তাদেরকে নাস্তানাবুদ করে ছাড়ল যদিও শেষ রক্ষা হল না।”


“গুলি লেগে গেল ওদের?”


“হুমম রে। তবে কি জানিস ওরা শহীদ হওয়ার আগে কিন্তু ওদের লক্ষ্য পূরণ করতে পেরেছিল। মিঃ মুরকে…”


“গ্রেট! এসব শুনলেই গায়ে কাঁটা দিয়ে ওঠে জানিস, আমরা হয়তো ঠিক করে কল্পনাও করতে পারিনা সেই সময়ের কথা। দেশকে কতটা ভালোবাসলে এভাবে অবলীলায় প্রাণ দেওয়া যায়। আর এরকম কত বিপ্লবী নীরবে চলে গেছেন যাদের আত্মত্যাগের কথা ইতিহাসের পাতায় পাওয়া যায়না, আমরা জানতেও পারিনা কোনোদিনও।”


“ঠিকই বলেছিস। এরপর কি হয়েছিল বলতো?”


“কি?”


“এই বাড়িতে একটা গোপন পথ ছিল যেটা দিয়ে নাকি গেলে এই বাড়িটার ছাদে ওঠার সিঁড়ি ছিল। লড়াই শুরু হতে মিসেস মুর সেখানে গিয়ে লুকিয়েছিলেন। পরিস্থিতি শান্ত হওয়ার পর তিনি বেরিয়ে আসেন বাইরে। তারপর বাড়িটা স্কুল তৈরির জন্য দান করে দিয়ে নিজের দেশে ফিরে যান।”


“স্কুল তৈরি হয়েছিল?”


“হ্যাঁ। হবে না কেন?”


“এখন সেই স্কুলটা আর নেই?”


“থাকবে না কেন?”


“কোথায় আছে?”


“যেখানে তুই বসে আছিস।”


“মানে?”


“মানে এতক্ষণ তোকে আমাদের স্কুলেরই ইতিহাস বলছিলাম।”


“কি! পাজি মেয়ে এতক্ষণ বলিসনি কেন?”


“বললে গল্পের চমক কোথায় থাকতো?”


“আচ্ছা সে নাহয় হলো, কিন্তু এর মধ্যে ভুত কোথায়?”


“আছে আছে। কথায় বলে আমাদের স্কুলের মধ্যে কেউ যদি রাত্রে ঢুকেছে তাহলে সেই হ্যাট গামবুট পরা এক সাহেবকে ঘুরতে দেখেছে, কখনো বা দেখেছে ধুতি পরা দুটো লোককে।”


“ধুরর এসব তো গুজব কথা। এ আবার সত্যি হয় নাকি! এইরকম ভীড়ে আবার ভুত থাকবে!”


“আরে বাবা যারাই ওদের দেখেছে তারা তো রাত্রে বেলা দেখেছে, আর রাত্রে তো পুরো ফাঁকা থাকে ইস্কুল।”


“হ্যাঁ কিন্তু…”


“ওই জন্যই তো এখন দারোয়ানের জন্য বাইরে আলাদা ঘর করা হয়েছে। শুনেছি আগে দারোয়ান নাকি মূল বিল্ডিং এর ভেতরে রাতে থাকতো কিন্তু ওইসব দেখে একের পর এক দারোয়ান পালাতে থাকে আর তাই তো এখন বাইরে বাউন্ডারি ওয়ালের গায়ে আলাদা ঘর করা হয়েছে।”


“তাও আমার মন মানছে না। এই এতগুলো ছেলেমেয়ে আছে, এর মধ্যে ভুত থাকতে পারে নাকি?”


“তেনাদের কথা কেই বা বলতে পারে! আমরা কতটুকুই বা জানি তাদের সম্বন্ধে। হয়তো দেখ তাদের আত্মা এখনও এখানেই আছেন, চুপটি করে শুনছেন তোর আমার কথা।”


“এই এরকম বলিস না প্লিজ, আমার কিন্তু গা ছমছম করছে।”



                   *****


  চুপিসারে গেটের মধ্যে ঢুকে হাঁপাতে থাকলো নীল। বাবা, মা বিয়ে বাড়ি থেকে ফেরার আগেই কাজটা সেরে ফেলতে হবে। ছোটোর থেকে লোকের মুখে সে শুনতো যে এই স্কুলের কোথাও নাকি একটা গোপন পথ আছে যেটা দিয়ে মিসেস মুর লুকিয়েছিলেন বাড়ির ছাদে, কিন্তু সেই পথের সন্ধান আজ অবধি আর কেউ পায়নি। কিন্তু নীল পেয়েছে। সবাই ভাবতো স্কুল বিল্ডিংয়ের মধ্যে দিয়ে নিশ্চয় সেই পথ গেছে কিন্তু আসলে তা নয়, স্কুলের পেছন দিকে তেঁতুল তলায় যে বন্ধ কুঁয়াটা আছে তার মধ্যে দিয়ে গেছে সেই পথ। অব্যাহৃত বলে কেউ কুঁয়াটা নিয়ে মাথা ঘামায়নি কোনোদিন, নীলও ঘামাতো না কিন্তু হঠাৎই একদিন কাকতলীয় ভাবে আবিষ্কার করে ফেলে। এই স্কুল নিয়ে কত যে গুজব আছে তার ইয়ত্তা নেই। নীল ওইসব ভুত টুতে বিশ্বাস করেনা, ভুত বলে কিছুই হয়না আসলে। দারোয়ানের চাকরি করে বাবার যে সামান্য রোজগার হয় তাতে করে নীল সন্তুষ্ট হতে পারতো না কোনোদিনই আর সেই জন্যই সে গিয়ে যোগ দেয় রঘু গুন্ডার দলে। সেই থেকে নীল এখন রোজগার বেশ ভালোই করছে। অনেক অসামাজিক কাজকর্মের সাথে যুক্ত রঘুর দল। আজকের এই অস্ত্রগুলো অসৎ পথে বাংলাদেশ সীমান্ত থেকে পাচার হয়ে এসেছে।


  দুই ঠোঁটের ফাঁকে টর্চটা নিয়ে সাবধানে দড়ির মইটা কুঁয়ার মধ্যে ঝুলিয়ে দিলো নীল, কিছুটা নামার পরেই আসলে সেই গোপন পথের মুখ পাওয়া যাবে। সঙ্গের অস্ত্র ভর্তি ব্যাগটা খুব ভারী। সন্তর্পনে নামতে থাকলো নীল। অনেকটা ঘুর পথ পেরিয়ে যখন শেষমেষ ছাদে পৌঁছালো সে তখন রীতিমতো ঘামে ভিজে জবজব করছে তার শরীর। স্কুলের ছাদে কেউ ওঠে না, আসলে সরাসরি ছাদে ওঠার কোনো সিঁড়িই বানায়নি সাহেব তার বাড়িতে, কেন কে জানে! ছাদের এক কোণে ব্যাগটাকে রেখে একটা ত্রিপল ঢাকা দিয়ে দিল সে। তারপর হাতের চেটোয় ঘামটা মুছল। কদিন আগেই পূর্ণিমা গেছে, আকাশের চাঁদটা তাই বেশ উজ্জ্বল। বসা অবস্থাতেই কয়েক সেকেন্ড চাঁদটার দিকে তাকিয়ে রইল নীল, কিন্তু হঠাৎই চাঁদটা যেন ঝপ করে নিভে গেল। কি হলো ব্যাপারটা! মেঘ তো নয়, তাহলে? তারপরেই নীল টের পেল কেউ যেন একটা বড় কালো হ্যাট উঁচিয়ে ধরেছে তার সামনে আর তাই তো সে চাঁদটাকে আর দেখতে পাচ্ছেনা। ঘাবড়ে গেল নীল, ভয়ে ভয়ে বলল, “কে?”

 

 “ইটস অফিসার রবার্ট মুর।” বিলিতি কায়দায় জবাব দিল আগন্তুক আর তারপরেই আস্তে আস্তে তার চেহারা স্পষ্ট হল নীলের সামনে। নীল দেখলো জলপাই রঙের পোশাক আর গামবুট পরিহিত এক সোনালী চুল সাহেব দাঁড়িয়ে তার সামনে। কেঁপে উঠলো নীল, চিৎকার করতে গেল কিন্ত গলার স্বরটা জড়িয়ে এলো। এরপর সাহেবের পাশে এসে দাঁড়ালেন ধুতি আর ফতুয়া পরিহিত দুজন লোক। সাহেব এবার বজ্র গম্ভীর কণ্ঠে বললেন, “টুমার লজ্জা করে না, আমার ওয়াইফের ড্রিম স্কুলকে টুমি এভাবে নোংরা করিটেছ!”


“ছিঃ ছিঃ এতো রক্তক্ষয়ী আন্দোলন, এতো আত্মত্যাগের বিনিময়ে যে স্বাধীনতা পেল আমাদের দেশ সেই স্বাধীনতাকে এইভাবে অপব্যবহার করছো তোমরা? লজ্জা করেনা এই দেশের ছেলে হয়ে দেশ মাতাকে কলুষিত করছো! দেশের ক্ষতি করছো!” বলে উঠলেন ধুতি পরা লোকদুটোর একজন। 


সাহেব বললেন, “দেখিটেছো টো ফটিক, এটো ইয়ার্স গেল টাও টুমাদের নেটিভদের ক্যারেক্টার পাল্টাইলো না। ইহাদের মটো লোক না থাকিলে আমরা টুমাদের দ্যাশে ঢুকিটেই পারিটাম না।”


“চুপ করো সাহেব। আমাদের দেশের সবাই এরকম নয়, তখনও বিশ্বাসঘাতক ছিল, এখনও আছে। তবে দুঃখের কথা এই যে এখন তাদের সংখ্যা অনেক বেড়ে গেছে। এখন আর দেশকে কেউ সেভাবে ভালোবাসে না।”


“শুধু দেশকে বলছো কেন ভাই? এরা তো নিজের মা বাবাকেও ভালোবাসতে পারেনা। এরা নিজেদের ছাড়া কাউকে চেনে না। এই ছেলেটিকে তো অনেকদিন থেকে দেখছি। ওর বাবা যে সৎ পথে উপার্জন করে ওকে মানুষ করার চেষ্টা করছেন, নিজের জন্য না ভেবে ওর সব আব্দার পূরণের চেষ্টা করেছেন, ও সেসব কিছুই দেখলো না। লোভে পড়ে অসাধু লোকের সঙ্গে কাজ করতে গেল।”


“ঠিকই বলেছো ভাই। এমন দুষ্ট ছেলেকে তো ছাড়া যাবে না।”


“না না আমায় দয়া করে ছেড়ে দিন। আমি ভুল করেছি।” কঁকিয়ে উঠলো নীল।


“তোমার ছাড়লে যদি আবার এসব করো।”


“কক্ষনো না। আমি কথা দিচ্ছি আমি আর এসব পাপ কখনো করবো না।”


“করলেও পার পাবে না। শোনো পাপ করে আজ শাস্তি না পেলেও কাল নিশ্চয় পাবে। তাই পাপের পথ ছেড়ে চেষ্টা করো সৎ পথে থাকতে, তাতে স্বাচ্ছন্দ্য বিলাসিতা না থাকলেও মনের শান্তি থাকবে দেখো। যবে থেকে তুমি ওদের হয়ে কাজ করছো তবে থেকে তোমার মনের শান্তি উধাও হয়েছে, সবসময় ভয়ে ভয়ে থাকো… সে কথা কি খেয়াল করেছো কখনো?”


জনৈক ফটিকের কথা শুনে ক্ষণিকের জন্য গুম হয়ে গেল নীল। সত্যিই তো যবে থেকে সে এইসব অসামাজিক কাজে ঢুকেছে তবে থেকে মনটা সবসময় অশান্ত থাকে, সবসময় একটা ভয় কাজ করে মনে। মনে হয় এই বুঝি ধরা পড়ে গেল...


“আপনি ঠিকই বলেছেন। আমার পাপের শাস্তি আমায় পেতেই হবে। সবার আগে বাবার কাছে ক্ষমা চাইতে হবে আমায়।” অস্ফুটে কতগুলো বলল নীল।


“এই তো লক্ষী ছেলে। যাও, এগুলো নিয়ে ফিরে যাও। কোথায় যাবে সে তুমি জানো।”


“আজ্ঞে। কথা দিচ্ছি শাস্তির মেয়াদ ফুরোলেই সৎ পথে জীবন কাটাবো।”


                    *****


“এই মিঠি, তনয়া তোরা এখানে কি গুজগুজ ফুসফুস করছিস বলতো? সেদিকে কি হয়েছে সে খেয়াল আছে?” 

হাঁপাতে হাঁপাতে বলল অনন্যা। 


“কেন? কোথায় কি আবার হলো?”


“আরে আমাদের নীল দা, ঘন্টা জ্যেঠুর ছেলেকে পুলিশ ধরেছে?”


“মানে?”


“হ্যাঁ রে। শহরে যে বেআইনি অস্ত্র পাচার নিয়ে কদিন আগে খবরের কাগজে লিখেছিল সেই দলটার সাথে নাকি নীলদা যুক্ত ছিল। কাল রাতে পুলিশ পুরো দলটাকে ধরেছে, তবে নীল দা নাকি বেআইনি অস্ত্রভর্তি একটা ব্যাগ সুদ্ধ নিজে থানায় গিয়ে আত্মসমর্পণ করেছে।”


“আমি বিশ্বাস করতে পারছিনা, নীলদা শেষমেশ…”


“সেই তো রে। ঘন্টা জ্যেঠুর জন্য বড্ড খারাপ লাগছে। তবে নীলদা যেহেতু নিজে ধরা দিয়েছে হয়তো ওর শাস্তি কিছুটা হলেও কম হবে বোধহয়...”



ঢং ঢং ঢং …


টিফিন শেষের ঘন্টা বাজল তৎক্ষনাৎ। মিঠি, তনয়া, অনন্যা ব্যস্ত হয়ে পড়ল পরবর্তী ক্লাসের প্রস্তুতিতে। ওদের সবার অলক্ষ্যে তখন ক্লাস রুমের সিলিং এর কাছে ভাসতে ভাসতে ফটিকচাঁদ বলল, “যাইহোক ছেলেটা কথা রেখেছে তাহলে।”


“ইয়েস। হামার বাড়ি, হামার ওয়াইফের ড্রিম স্কুল হামি কারুকে নোংরা করিটে দিব না।”


“দেশ মায়ের একটা ছেলেও অন্তত শুধরে গেল।”


“হ্যাঁ রে ফটিক, মনটা ভালো হয়ে গেল রে।”


“চলো ফটিক, চলো মানিক সেই আনন্দে ছাদে গিয়া একটু হাওয়া খাইয়া আসি।”


“হ্যাঁ হ্যাঁ তাই চলো।”


ও আমার দেশের মাটি, তোমার পরে ঠেকাই মাথা… উদাত্ত কণ্ঠে গাইতে গাইতে হাওয়ায় ভেসে চলল ভারতমাতার দুই বীর সন্তান।



শেষ।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Horror