টুকি
টুকি


রাত প্রায় বারোটা বাজে। বৌভাত এর সমস্ত অতিথিরা এইমাত্র চলে গেলেন। বিয়ে আর বৌভাত নির্ঝঞ্ঝাটে কেটে যেতে বেশ নিশ্চিন্ত লাগছে নির্মলের। সত্যি কথা বলতে কি জিজো কে নিয়ে বেশ চিন্তায় ছিল সে। ইউনিভার্সিটিতে আলাপের পর থেকে কোন কিছুই বিনা ঝামেলাতে হয়নি। জিজো মানে সুমনা একটা অদ্ভুত মেয়ে। মেয়ে সুলভ কোনো আচরণই তার নেই। চার্লি চ্যাপলিন যদি মহিলা হতেন তবে তার হাবভাব সুমনার সঙ্গে মিলতো। এই রকম একটা কার্টুনকে নিরমলের যে কি করে ভালো লেগে গেল তা উপরওয়ালাই জানে। তার লেখা প্রথম প্রেমপত্রটি জিজো ক্লাসে পড়ে শুনিয়েছিল সবাইকে। ক্লাসের নেকুপুশু লাজবন্তী যেই বলল, “সো সুইট!”, অমনি জিজো বলল, “খুব সুইট না রে? দেখিতো কতটা সুইট।“ বলেই খচমচ করে চিঠিটা চিবিয়ে খেয়ে ফেলল। ক্লাসে হাসির রোল উঠলো। কিন্তু তবু ওর সাথে নির্মলের বিচ্ছেদ হলো না। জিজোর পাগলামি আর ছেলেমানুষিগুলোই নির্মলকে আরো বেশি করে ওর কাছে টানতো।
জিজোকে মায়ের সাথে দেখা করাতে নিয়ে যাবার সময় ভালো করে কাউন্সিলিং করেছিল নির্মল। ওর কথামতো শাড়ি পড়ে সেজেগুজে এসেছিল জিজো। মায়ের পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করে শান্তভাবে বসে ছিল ও। কিন্তু মা যেই বললেন,” বাঃ! তোমার হাসিটা তো খুব সুন্দর!” সেই যে জিজো হাসতে শুরু করলো, সে আর থামে না! ধীরে ধীরে সে হাসি বাড়তে বাড়তে একেবারে অট্টহাসির রূপ নিলো। মা হতভম্ব। জিজো চলে যাবার পর নির্মলকে মা জিজ্ঞাসা করলেন, “ বাবা! যা করছিস ভেবে করছিস তো?”ফুলশয্যার খাটটা নির্মল নিজে হাতে সাজিয়েছে। ঘরে হালকা নীল আলো জ্বলছে। নির্মল মনে মনে ভাবলো, ঘরে ঢুকে একটা থ্যাঙ্ক ইউ বলবে জিজোকে, তার কথামতো বিয়েতে কোন অদ্ভুত আচরণ না করার জন্য। খাটের উপর জড়োসড়ো হয়ে বসে আছে জিজো। নির্মল কাছে গিয়ে ঘোমটাটা সরাতেই ভিতর থেকে একটা বালিশ বেরিয়ে এলো। নির্মল হতবাক। ঘরের চারদিকে তাকালো। কেউ কোথাও নেই। জিজো গেল কোথায় ? কি মনে হতে সে একবার খাটের তলাটায় উঁকি মারতেই সায়া ব্লাউজ পরা জিজো খাটের তলা থেকে বলে উঠলো, “ টুকি!"