ঠাকুমার শিবকথা
ঠাকুমার শিবকথা


গ্রামে থাকতো এক চাষি,তার বৌ আর তাদের ছেলে মহাদেব।
চাষিভাই তো সারাদিন থাকে মাঠে,ধান গাছে ফুল এসেছে, পোকা মাকড় না লাগে; কোনো দুস্টু গরু ছাড়া পেয়ে ধান না খেয়ে ফ্যালে। বিশ্রাম নেবার সময় নেই। বৌ থাকে বাড়ীতে। সারা দিন কাজ আর কাজ। রান্না করা,পুকুর থেকে জাল আনা, জঙ্গল থেকে উনুনের কাঠ আনা। আর পোষা এতো জীব। গরুর ঘর পরিষ্কার করে বাইরের খুঁটিতে বাঁধা আর ঘাস, ভাতের ফ্যান দেয়া। মুরগিদের দানা দিতে হবে না? হাঁসগুলোকে ঘর থেকে বার করে আবার সময় মতো ঘরে ঢোকানো; না করলেই তো রাতে শেয়াল মামা কপাৎ করে নিয়ে পালাবে। মুরগি হাঁসগুলো কোথায় কোথায় ডিম্ পারছে খুঁজে বার করা...
মহাদেব সারাদিন ঘুরে বেড়ায়। কোথায় মধু তৈরী করেছে মৌমাছিগুলো দেখতে হবে, সময় মতো মধু বার করতে হবে ;দাসেদের বাগানে পেয়ারাগুলো বড়ো হয়েছে ,তাক বুঝে চুরি করতে হবে। কেবল দুপুরে বাপের জন্যে ভাত,দল ,তরকারি আর জলটা ঠিক মতো পৌঁছলেই ওর দায়িত্ব শেষ। মাঝে মাঝে ফিরতে একটু দেরি হয়। কি করবে বোলো বন্ধুরা ডান্ডাগুলি খেলতে ডাকলো যে।
সব মিলে ভালো আছে সবাই। ক্ষেতের টাটকা সবজি, মাঝে মাঝে পুকুরের চুনো মাছ, গুগলি, পদ্দ ফুলের বিচি -খাবারের অভাব নেই
সেদিন মায়ের একটু দরকার; শিকেতে ঝোলানো হাঁড়ি থেকে একটু গুড় নামাতে হবে পায়েস করবার জন্যে। মহাদেবের পাত্তা নেই। সন্ধে হয়ে আসছে। দুধ ঘন করে পায়েস বানাতে একটু সময় লাগবেই তো।
মা আর কি করে? দুটো জলের কলসি নিয়ে চললো পুকুর ঘাটে, ভাবলো ওখানেই মহাদেবের দেখা হবে। না সেখানেও নেই।
ওরে মহাদেব পোড়ারমুখো গেলি কোথায় রে বলে অনেক চেচালো। কোথায় ছেলে
?
কলসিতে জল ভোরে বেলতলা দিয়ে ফেরার পথ নিলো। অনেক বেলপাতা পড়ে বেলতলা ঢাকা পড়ে আছে। অন্ধকারে সব দেখাও যাচ্ছে না। হটাৎ পা গেল ঢুকে। আলতাল গোবর বেলপাতা ঢাকা দেখবে কি করে ?
মায়ের খুব রাগ হলো। আর সব রাগ মহাদেবের ওপর। মহাদেব, মহাদেব বলে চেঁচিয়ে ডাকলো। কোনো সাড়া নেই। মা আর কি করে। গোবর মাখা পা নিয়েতো বাড়ী ফেরা যায় না। হটাৎ নজরে এলো বেলপাতার মধ্যে একটা পাথর। আগেও দেখেছে ,পাশ কাটিয়ে গ্যাছে।
পাথরটার ওপরে পা ঘসছে ,কলসি থেকে জল ঢালছে আর চেঁচিয়ে মহাদেব মহাদেব ডাকছে।
এইবার শোন কী হলো।
সেদিন ছিল শিব রাত্রি। আর পাথরটা ছিল একটা শিবলিঙ্গ। চাষীর বৌ তো সেসব জানেনা।
জল আর বেলপাতা দিয়ে পা ঘসছে শিবলিঙ্গর ওপর আর মহাদেব মহাদেব নাম ডাকছে,সঙ্গে গালাগাল দিচ্ছে, এত ডাকছি পোড়ামুখো আসছে না। আয় আজ বাড়ীতে,পায়েস খাবে বায়না করেছিলি বলেই তো এত ঝামেলা। বাড়ী আয় তাড়াতাড়ি নইলে একটুও পায়েস দেব না...
কৈলাসে থাকে মহাদেব। আজ শিবরাত্রি। কে ডাকছে এমন চিৎকার করে। শুধু কি তাই,শিবের মাথায় জল আর বেলপাতা দিয়ে বারবার পরিষ্কার করছে, আবার বেলপাতা -জল ঢালছে।
শিব ঠাকুর ভক্তিতে খুশি। সোজা কৈলাস থেকে চাষি বৌয়ের সামনে এসে গেলেন।
জটাধারী, হাতে ত্রিশূল, একটা বাঘছাল কোনোমতে গায়ে। আশীর্বাদের মতো হাত তুলে বললেন, বলো তোমার কী চাই?
চাষীবৌ হটাৎ ঐরকম একটা লোক দেখে হতভম্ব। একটু সম্বিৎ পেতেই লজ্জায় এত বড়ো জিভ বার করে তাড়াতাড়ি ঘোমটা দিয়ে মুখটা ঢাকলো।
শিবঠাকুর আবার বললেন, বলো কী চাই?
চাষীবৌ ঘোমটার ভেতর থেকে,লজ্জায় ফিসফিস করে বললো, আমার কিছু চাই না, আগে তুমি জামা কাপড় পড়ে এসো।