জীবন কিছুই হারায় না
জীবন কিছুই হারায় না
আমাদের অনেকে নিয়ে সংসার ,আটত্রিশ জন একটা বাড়িতে থাকি। আমার বিয়ের সময়ে সংখ্যাটা আরও বেশি ছিল।
ফুলসজ্জার পর ভোরবেলা উমাকে বললাম চুপি চুপি মোড়ের দোকানে চা খেতে আসতে। পা টিপে টিপে অনেক ঘুমন্ত মানুষ ডিঙিয়ে বেড়িয়ে আসা গেল। একটু দূরে একটা শিউলি গাছ ,তার তলাটা ফুলে ঢাকা। উমা ছোট্টো মেয়ে -দৌড়ে গিয়ে এক আঁচল ফুল অন্য আর কী খুশী।
শিউলি ফুল দেখলেই আমি দেখি নতুন বৌ উমার খুশি।
একদিন নেমতন্ন খেতে যাবো। অফিস ফেরত কিনলাম জুঁই ফুলের ছোট মালা চুলে পড়বার। লুকিয়ে ঘরে গেলাম। সবার অগোচরে এক্কেবারে গা ঘেঁষে। এখন সব জুঁইতে 'দেখি কেউ দেখে ফেলবে' র লজ্জা আর লুকিয়ে কাছে আসার আনন্দে ভরা উমার লাল হওয়া মুখখানা।
আমাদের প্রথম সন্তান ,একটা সরকারি হাসপাতালে। নতুন মাতৃত্বের গৌরবে ঝলমল করছে উমা। একটা খুদে আঙ্গুল আমরা দুজনে ছুঁলাম। বাড়ীর সামনে দিয়ে বাচ্ছা নিয়ে চলে নতুন মায়েরা ;মাঝে মাঝে আমার ডাকে সামনে আসে। বাচ্ছাটাকে ছুঁই আর ছুঁই উমাকে।
সুন্দরবনের মেয়ে উমা জল তাকে ডাকে। আমাদের ছুটি কাটানো আসে পাশের কোনো জায়গায় যেখানে পুকুর কিংবা নদী আছে। সাঁতার কাটতো উমা খিলখিলিয়ে হাসতে হাসতে। জলে নামলে আমাকে আষ্টে পিষ্টে জড়িয়ে ধরে উমার খিলখিলিয়ে হাসি।
উমার ইচ্ছে আমার আগে ও যেন যেতে পারে। আমি আশীর্বাদ করেছিলাম অনেক দিন আগে আমাদের পঁচিশ বছর বিয়ের তারিখের রাত্তিরে। একটা আবদার করেছিল ওকে যেন কনে সাজিয়ে খাটে তোলা হয়। আমি হাসি মুখে বলেছিলাম ,"তথাস্তু সখি ,তোমার ইচ্ছে পূর্ণ হোক। " আমি আমার কথা রেখেছি। সব নতুন বৌয়ের মাঝে পাই অঙ্গীকার রাখার উমা -ভরা শান্তি।
এইতো আজ ভোরে হাঁটুর ব্যাথায় ঘুম ভেঙ্গে গেল -আবছা আলো -উমার অভিমান করা মুখ। একটু বাদে ঝলমলে রূপোর রঙের সূর্য ,অভিমান কাটানোর পরের উমা।
তাই তাড়াতাড়ি লিখতে বসেছি একটা সুবিশাল শূন্যতার সুখের কথা ,না -পাওয়ার গানের সুর, সব -পেয়েছির আনন্দের ঝংকার।