Ajoy Kumar Basu

Abstract

2  

Ajoy Kumar Basu

Abstract

কুড়ি কুড়ি

কুড়ি কুড়ি

4 mins
717


নতুন দশক এসে গেল। কাড়াকাড়ি পরে গেছে ভালো ভালো প্রতিজ্ঞে নেবার। আমি ঐসব ভিড় পছন্দ করিনা। তাই বেশ কিছুদিন আগে থেকেই প্রতিজ্ঞা নেবার খুঁটিপুজো সেরে রেখেছি। তাতে একটা সুবিধে যে প্রতিজ্ঞার পেছনের যুক্তিগুলো সাজিয়ে গুছিয়ে হিসেবে করে ফাইনাল ডিসিশন নিতে পেরেছি। আমি জানি এইরকম হোমওয়ার্ক অনেকেই করেনি। তাদের জন্যে "প্রতিজ্ঞা -নেয়া Made Easy " রচনাটা লিখেছি। আমার দৃঢ় বিশ্বাস জাতি-ধর্ম-জেন্ডার-বয়েস-চামড়ার রং নির্বিশেষে পাঠক কুল উপকৃত হবে। আমার এটা Free Service ,দামের জন্যে ভাবিও না।

১ নম্বর প্রতিজ্ঞা : আমি আর কাউকে ভোট দেবোনা।

  গতবার ভোট দিতে গিয়ে দেখি কোনো এক সজ্জন আমাকে জিজ্ঞেস না করে ভোটার লিস্টি থেকে আমার নামটা কেটে দিয়েছে। আমি তো সেই ছোট বেলা থেকে ভোট দিচ্ছি ,কখনো নিজের নামে ,কখনও বা অনুপস্থিতের নামে যাতে ভোটটা নষ্ট না হয় ,আবার কখনও বা আঙুলের কালির দাগ মুছে তিন চার বার। সেই প্রফেশনাল ভোটারের নাম কাটা ! অপমানিত বোধ করেছি। তাই তো এই প্রতিজ্ঞা।

২ নম্বর প্রতিজ্ঞা : আমি ব্যাঙ্কে কিংবা সরকারের কাছে টাকা রাখবো না।

  সরকার জানিয়ে দিয়েছে আমি যত টাকাই রাখি না কেন তার আসল দাম এক লাখের বেশি নয়। তাহলে বুড়ো বয়সে খাবো কী ? খাবি খাওয়া ছাড়া কিছু জুটবে না। আমি সাবধানী মানুষ। সোনা কিনে মাটির তলায় রাখছি। এদেশে নাম দিয়েছে Cashless লেনদেন। চেষ্টা করছি কোনো উপায়ে ডলারের দেশে পাঠাতে পারি।

৩ নম্বর প্রতিজ্ঞা : আমি আর অঞ্জলি দেব না।

  অঞ্জলিতে সবাই চাইছে টাকা দাও, পুত্রসন্তান দাও। আমার বড় মায়া হলো অজ্ঞাত দাতার ওপর। কম তো দেয়নি আর দিয়েই যাচ্ছে ,তবু কারুর চাওয়ার শেষ নেই। আমি চাইবার দল থেকে voluntary retirement নিয়ে ফেলেছি। মাঝে মাঝে ধন্যবাদ জানাতে যাই, জেক অন্যেরা বলে প্রণাম।

৪ নম্বর প্রতিজ্ঞা : আমি যোগ শিখতে যোগীদের কাছে যাবোনা।

   আমি বুঝে গেছি যোগীর বেশে নানারকম মহাপন্ডিত আছেন -নিজের নিজের বিষয়ে বিশেষজ্ঞ। কেউ মানুষ মারতে, কেউ আইন বানাতে, কেউ রাজ্য চালাতে, কেউ মাল্টি ন্যাশনাল ব্যবসাতে, কেউ ইস্কুল চালিয়ে ছোটদের সর্বনাশ করতে। বাজার যেমন চাইবে পছন্দ মতো পেয়ে যাবে যোগী -Expert Service.আমি ছাপোষা মানুষ খাই আর ঘুমোই, আমার এই সব শ্রী শ্রী ১০৮দের দরকার নেই।

৫ নম্বর প্রতিজ্ঞা : আমি কোনো ধর্মসভায় সাধুবচন শুনতে যাবো না।

    একবারই গেলাম গত বছর। মনের মধ্যে কতকগুলো প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছিলো অনেক দিন। এক আত্মীয়র প্ররোচনায় গেলাম গীতা ব্যাখ্যা সভায়। সাধুবাবা করুণাময় ,অনেকের প্রশ্নের জবাব দিলেন। শেষে তাঁর নজর পড়লো আমার দিকে। স -স্নেহে আমার প্রশ্ন জানতে চাইলেন। আমি খুব বিনয়ের সঙ্গে বললাম,"বাবা,আমি গীতা বইটা পড়িনি কিন্তু দেখেছি সব শ্রাদ্ধের সময়ে। রাস্তায় বড় বড় পোস্টার লেগেছে গীতার একটা শ্লোকের। সেখানে লিখছে সাধুদের বাঁচানোর জন্যে আর দুষ্টুদের গলা কতবার জন্যে শ্রীকৃষ্ণ বারবার মানুষ হয়ে জন্মাবেন। " আমার নজর শক্তিতে সাধুবাবা খুশিই হলেন। তখন আমি প্রশ্নটা রাখবার সাহস করলাম;প্রশ্নটা ঠিক নয় একজোড়া প্রশ্ন।

প্রথম প্রশ্ন সাধু হলেই কি এত ক্যাবলা হতেই হবে যাতে দুষ্টু লোকেরা যখন ইচ্ছে ধরে ঠ্যাঙাতে পারে ?

দ্বিতীয় প্রশ্ন ভগবানকে তিতিবিরক্ত করে তাঁকে বৈকুন্ঠ থেকে নামিয়ে তাঁরই হাতে মরলে সেই দুষ্টু কী সোজা স্বর্গে যাবেনা? অন্য দিকে সাধুরা তো বুড়ো হয়ে কাতরাতে কাতরাতে সব্বাইকার পিন্ডি চোটকে মরবে -কিন্তু স্বর্গে যাবে না নরকে তার কি কোনো গ্যারান্টি আছে ?

সাধুবাবা নির্বাক। জনসভায় গুঞ্জন। সাধুবাবা ভাবনা চিন্তা করে রায় দিলেন আমাকে জানলা গলিয়ে তিনতলা থেকে ফেলে দিতে। দরজার কাছেই বসেছিলাম, কেউ পাকড়াবার আগেই আমি দে দৌড়। আর অমুখ হবো না।

৬ নম্বর প্রতিজ্ঞা : কোনো স্কুলে পড়া বাচ্ছাকে পড়ার বিষয়টা শিখতে বলবোনা।

    আমার নাতিটা পড়াশুনায় ভালো। একবার বলেছিলাম বিষয়টা বুঝে নিজের ভাষায় উত্তর লিখতে। আরো বলেছিলাম না -বুঝে মুখস্থ করলে সেটা শেখা হয় না। আমাকে ভালোবাসে খুব। দাদুর কথামতো খেটেখুটে পাঠ্যপুস্তকের বাইরের বই পড়লো ইতিহাসের। আমাকে শোনাতো আর আমার বুকটা গর্বে ফুলে উঠতো। নম্বর এলো ৩৫, টেনে টুনে পাশ - মন্তব্য করলেন মাস্টারমশাই,'ডেপো ছেলে, আমাকে শেখাতে এসেছে।' আমারও জ্ঞানচক্ষু খুললো।

৭ নম্বর প্রতিজ্ঞা : রাস্তায় কেউ বিপদে পড়লে তাকে সাহায্য করবো না।

     একবার দেখি একটা অটো থেকে একজন পড়ে গেল রাস্তায়, বোধহয় পেছনের সিটে জানা পাঁচেক যাচ্ছিলো। অটো পালালো। আমি দেখলাম চোটটা ভালোই, তাড়াতাড়ি নিয়ে গেলাম কাছের হাসপাতালে। আমাকে দিয়ে একটা ফর্ম ভরালো, গ্যারান্টী লেখালো, পুলিশ ডাকলো। তারপর শুরু হলো জেরা। আমার চোদ্দগুষ্টির পরিচয়, আমার নামে কোনো হুলিয়া আছে কিনা, কখনো আদালতে শাস্তি পেয়েছি কিনা আরও কত কি। তারপর শুরু হলো আমার মনোস্তাত্যিক বিশ্লেষণ : আমার স্বার্থ কী, আমি কোন অপরাধীকে আড়াল করছি, আমার অপরাধ বোধ আছে কিনা ইত্যাদি ইত্যাদি। সবশেষে আমার অনেক দশ বেড়োলো, অটোর নম্বর দেখিনি, চালককে চিনতে পারবোনা, অটোতে কজন ছিল জানিনা,আশপাশে আর কারা ছিল দেখিনি ; মোদ্দা কথা আমি একটা গবেট আমার কথার কোনো দাম নেই,আমার কাজে সবাই বিরক্ত। আমি বুঝলাম আমাকে আরও সংযত হতে হবে।

৮ নম্বর প্রতিজ্ঞা : আমি ভুলেও আদালতে যাবো না।

     এই প্রতিজ্ঞার পেছনে কোনো ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা আমার নেই। শুধু কাগজে পড়েছি। তিনটে ঘটনা আমাকে মুগ্ধ করেছে। একজন একটু বেশী মদ খেয়ে গাড়ি চালালো ফুটপাথে শোয়া কটা লোকের ওপর। তার ড্রাইভার দেখেছিলো, সেটাও মরলো গাড়িচাপা খেয়ে কমাস বাদে। দশ বছর বাদে সাক্ষীর অভাবে বেকসুর খালাস। একদল পুলিশ দমাদম গুলি চালিয়ে মারলো কোটা বদমাইশকে, আত্মরক্ষা করতে গিয়ে। কিন্তু বদমাইশগুলোর কাছে কোনো অস্ত্রশস্ত্র নেই। তাতে কি ? তারা অস্ত্র বিনাই আক্রমণ করেছিল সাক্ষী দিলো পুলিশ, সকালের প্রমোশন হলো। আর একটা ঘটনা : একটা বাড়ি দখল করতে একদল আসবাব পত্র নিয়ে ঢুকে পড়লো তারপর চালালো ভাঙচুর। বিচার হলো বাড়ি -জমি তাদেরই দেওয়া হলো। আমার সাহস নেই আদালতে যাবার।

৯ নম্বর প্রতিজ্ঞা : আমি নন্দলাল হয়ে থাকতে চাই

      আমাকে সুস্থ থাকতেই হবে। তাই আমি দিনে দুটো বড় পেগ হুইস্কির বেশী খাবোনা, কড়া জর্দা দেয়া পানের লিমিট দিনে আটটা। বাড়ির ভালো ভালো খাবার আমার পেতেই যেন পড়ে।

১০ নম্বর প্রতিজ্ঞা : আমি কোনোদিন প্রতিজ্ঞা করবো না।

      প্রতিজ্ঞা করলেই ইলেকশনের আগের বিভিন্ন দলের ম্যানিফেস্টো, অঙ্গীকার পত্র মনে আসে। কি বড় বড় প্রতিজ্ঞা। শুধু রেজাল্টের অপেক্ষা -ম্যানিফেস্টো ঠোঙা হয়ে ঝালমুড়ি কোলে চলে। সবাই ভুলে যায়। তাই আমি প্রতিজ্ঞা না করার প্রতিজ্ঞাটা নিয়ে ফেলেছি।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Abstract