Sayandipa সায়নদীপা

Fantasy

2  

Sayandipa সায়নদীপা

Fantasy

তোমাকে না লেখা দ্বিতীয় চিঠি

তোমাকে না লেখা দ্বিতীয় চিঠি

3 mins
633


দাদু,


    কলেজে ওঠার পর একটা শব্দ শিখেছিলাম জানো, "Oxymoron"--- দুটো বিপরীতধর্মী শব্দ যখন পাশাপাশি বসে, এই যেমন ধরো হাসি কান্না। "আনন্দাশ্রু" তো আমাদের বাংলায় খুব পরিচিত শব্দ, আনন্দের অশ্রু। কিন্তু কখনও সখনো কষ্টেরও হাসি হয় জানো? প্রচন্ড কষ্টের মাঝেও মাঝেমাঝে আমরা যখন সান্ত্বনা পাই। 


   আজকে কত তারিখ তুমি জানো? "একলা" জানুয়ারি। মনে আছে, সেই ছোট্ট বেলায় বইতে লেখা ১লা জানুয়ারিকে জোরে জোরে উচ্চারণ করেছিলাম "একলা" জানুয়ারি আর তুমি হেসে কূটপাটি খেয়েছিলে? দাদু, তুমি যেখানে গেছো সেখানে দিনক্ষণের হিসেব রাখো এইভাবে? সেখানেও কি রোজ সন্ধ্যা নামে? সেখানেও কি অন্ধকার রাত্রি শেষে ভোর হয়? তুমি এখনও সন্ধ্যা পূজা করো নিয়ম মেনে? নাকি আর এসবের প্রয়োজন পড়ে না! অবশ্য না পড়ারই কথা। তুমি তো এখন সশরীরে ঈশ্বরের কাছে উপস্থিত। সেখানে হয়তো দিনরাত্রির প্রয়োজন পড়ে না, উজ্জ্বল অথচ স্নিগ্ধ আলোয় ভাস্বর হয়ে থাকো এখন। আজকে তোমাকে ভীষণ দেখতে ইচ্ছে করছে দাদু। কেন? বলবো সব। 


   তোমার সাথে বিকেলে যখন বেড়াতে বেরোনো বন্ধ করে দিলাম,মনে মনে কষ্ট পেয়েছিলে হয়তো। জিজ্ঞেসও করেছিলে কেন আর যাই না। আমি বড় হয়ে গিয়েছিলাম দাদু। রোজ রোজ তোমার কাছে বায়না করে জিনিস কিনতে ভালো লাগতো না। তোমাকে সে কথা মুখ ফুটে বলতে পারিনি। এটা সেটা করে বেড়াতে বেরোনো কাটিয়ে দিতাম। তারপর আস্তে আস্তে তুমিও জিজ্ঞেস করা বন্ধ করে দিয়েছিলে। জানো দাদু, আরেকটু যখন বড় হলাম তখন ভাবতাম আমি নিজের পায়ে দাঁড়াবো যখন তখন তোমায় নিয়ে আবার বেড়াতে বেরোবো বিকেলে, তখন আমি তোমার পছন্দের জিনিসগুলো কিনে দেব। তুমি যেমন আমাকে জিলিপি কিনে দিতে তেমন আমি কিনে দেব তোমাকে, তুমি যেমন চুপিচুপি আমাকে নিয়ে গিয়ে চিকেন কিনে আনতে আমিও তেমন করব। কত ভেবেছিলাম চাকরি পেলে তোমার জন্য এই করব সেই করব… কিছুই তো করা হল না দাদু! কেন সেই সুযোগ দিলে না আমাকে? মা বলে আমি জন্মাবার পর নাকি তুমি আমার হাতের রেখা দেখে বলেছিলে, "আমার অনেক পড়াশুনো হবে।" তুমি আগেকার দিনের মানুষ হয়েও সবদিন নিজের পায়ে দাঁড়ানোর জন্য উৎসাহ দিয়ে গেছো। তাহলে কেন দাদু অপেক্ষা করলে না একটু? কেন? 


   

   আজকে "একলা"জানুয়ারি। আজ থেকে ঠিক এক বছর আমার একাউন্টে কড়কড়ে ৭০০ টাকা ঢুকেছিল একটি প্রকাশনা সংস্থার তরফ থেকে। সেটাই আমার প্রথম রোজগার ছিল দাদু, হ্যাঁ দাদু। আমার প্রথম রোজগার। আর এই রোজগারের খবরটা কবে জানতে পেরেছিলাম জানো? ১১ই ডিসেম্বর… যেদিন তুমি আমাকে ছেড়ে চলে গিয়েছিলে অমৃতলোকে। হ্যাঁ দাদু, ওই দিন অনেক রাতে যখন শ্মশানে তোমার নশ্বর দেহটাকে মুক্ত করে ফিরে ক্লান্ত সবাই, সবার চোখে নেমেছে ঘুম, সেই সময় আচমকা ঢুকেছিল মেইলটা। আমার লেখাটা নির্বাচিত হয়েছে। পারিশ্রমিক ৭০০ টাকা। হ্যাঁ, আমার প্রথম পারিশ্রমিক। সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিত একটা খবর। কোনো আশা না করেই লেখাটা পাঠিয়েছিলাম, ভাবিনি নির্বাচিত হবে। কি আশ্চর্য না দাদু, যে মানুষটা আমাকে সবদিন নিজের পায়ে দাঁড়ানোর জন্য উৎসাহ দিয়ে গেছে, যে মানুষটার হাত ধরেই সেই কোন ছোটবেলায় প্রথম লেখার অনুপ্রেরণা পেয়েছিলাম, সেই মানুষটা যেদিন আমার হাতটা ছেড়ে চিরদিনের মত কোথায় যেন চলে গেল সেই দিনই আমার প্রথম রোজগারের খবর পেলাম! হাউহাউ করে কেঁদে উঠেছিলাম দাদু, বারবার চিৎকার করে ডাকতে ইচ্ছে করছিল তোমায়, ভেতরটা ছটফট করছিল তোমাকে খবরটা জানানোর জন্য। ঈশ্বরকে বারবার বলছিলাম, "ফিরিয়ে দাও ফিরিয়ে দাও…"

তুমি চলে গেছো দাদু, আর ফিরবে না জানি। ঘন্টাখানেক এভাবে ছটফট করার পর আচমকা কেন না জানি শান্ত হয়ে গিয়েছিলাম। হঠাৎ করে উপলব্ধি করেছিলাম এখন তো তুমি যেখানে গেছো সেখানে টেলিফোন লাগেনা যোগাযোগ করার জন্য, তুমি তো সেখান থেকে সব দেখতে পাবে নিশ্চয়। আর… আর হয়তো এই প্রাপ্তিটাও আসলে তোমারই দেওয়া, তোমারই আশীর্বাদের পার্থিব রূপ। হ্যাঁ, তাই হবে নিশ্চয়। তুমি মনে প্রাণে আমার জন্য যা চাইতে তা ঐদিনেই পেলাম! এ তোমার আশীর্বাদ ছাড়া কিচ্ছু হতে পারেনা দাদু। গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠেছিল সেই মুহূর্তে। আমি স্পষ্ট অনুভব করতে পেরেছিলাম হারিয়ে যাওনি তুমি, হারিয়ে যাওনি। কান্না ভেজা ঠোঁট নিয়েই তখন আবার হাসি ফুটেছিল আমার মুখে। তুমি আছো দাদু, আমার কাছেই আছো।


   আমি এখন বড় হয়ে গেছি। আমি এখন জানি আকাশের তারারা আসলে আমাদের প্রিয় মানুষগুলো নয়। তবুও তোমাকে যখন দেখতে ইচ্ছে করে ভীষণ, তখন ওই বিশাল আকাশটার দিকে তাকাই। তোমার চিতার থেকে ধোঁয়াটা উঠে তো ওই আকাশটাতে গিয়েই মিশেছিল। তাই তো অসংখ্য তারাদের মাঝে সবথেকে দ্রুত টিমটিম করে জ্বলতে থাকা তারাটাকে দেখে ধরে নিই তুমি, ধরে নিই তুমিও হাসছো আমায় দেখে। আমিও তোমায় দেখে হাসি দাদু। আমিও বুঝতে পারি তুমি আছো।


                           ইতি,

                              তোমার তাতাই


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Fantasy